৭ম শ্রেণীর ছাত্রী নাসরীন । লেখাপড়া শেষ করে ঘুমাতে গেল বিছানায়। ছোট ভাই আর তার বিছানা পাশাপাশি। ভাইটি ঘুমিয়ে গেছে। তার গা কেন জানি ছমছম ..করছে।
এটা তাদের নতুন বাড়ি। তার বাবা কিছুদিন হলো তাদেরকে নিয়ে এই ভাড়া বাড়িতে উঠেছে। শুরু থেকেই এই বাড়ি ওর নানা কারনে পছন্দ হয়নি। এসব ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে গেল ঘুমে। নাসরীনের ঘুম খুব গভীর।
ছেলেবেলা থেকেই সে বিছানায় গেলেই গভীর ঘুমে হারিয়ে যায়। কিন্তু আজকে মাঝরাতে তার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। তার বুকের উপর কি জেন উঠে বসছে। সে চিৎকার করছে কেউ শুনছেনা। তার ইন্দ্রিয় শক্তি কাজ করছে।
সে বুঝতে পারছে কেউ একজন তার বুকে চেপে ধরেছে। কে হতে পারে? ছোট ভাই / না অন্য কেউ???হঠাৎ সে তাকাতে .পারলেই সে দেখল একটি কালো রঙ্গের পশু বড় বড় দাত বের করা একটা চিৎকার করে সে জ্ঞান হারালো।
দেখতে দেখতে অনেক বছর কেটে গেল। ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী নাসরীন এখন অনেক বড় হয়েছে। তার এখন সংসার জীবন হয়েছে, বাচ্চা হয়েছে তিনটা।
সেই ছোট বেলার দুঃসহ স্মৃতি সে ভুলে গেছে প্রায়। সেই ঘটনার সাথে সাথে তার বাবা তাকে মসজিদের ঈমাম সাহেবকে দিয়ে দোআ পড়ে এবং তাবিজ দিয়েছিল। এরপর আর কোন দুঃস্বপ্ন সে দেখেনি ।
কিছু দিন হলো সে খুব দুর্বল অনুভব করছে। আর সংসার জীবনে খুব চিন্তিত সময় কাটছে।
প্রতিদিনই আগে আগে ঘুমাতে যায় সে। ওর বর মাহফুজ সাহেব অনেক রাত অবধি বই পড়েন। আজও বরকে রেখে সে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেল।
রাত প্রায় ৩:৩০মি.। নাসরীনের হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল।
সে হাত পা শরীর কোনটাই নাড়াতে পারছেনা। কথা বলতে পারছেনা। কিন্তু সে দেখতে পারছে এবং সব কিছু বুঝতে পারছে। এমন কি মনে মনে দোআও পড়তে পারছে। সে বুঝতে পারছে তাকে অন্য কোন কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে।
ছাদের দিকে তাকিয়ে সে অনেক বড় একটা দানব দেখতে পেল। তার দিকে তাকিয়ে আছে। নাসরীন কালেমা পড়তে পড়তে এক সময় আর পড়তে পারছেনা। দানবটি তাকে পড়তে দিচ্ছেনা। তাকে বলছে আজকে নাসিরীনকে সে নিয়ে যেতে এসেছে।
নাসরীন বুঝতে পারছে মৃত্যু তাকে ডাকছে।
নাসরীনের বর হঠাৎ লক্ষ করল- নাসরীন গোঙাচ্ছে। আর চোথ বর বর করে কিছু বলার চেষ্টা করছে। মাহফুজ সাহেব তাকে ডাকছে-নাসরীন !! নাসরীন!! কথা বলতে পারছো না ? কেন ? কি হয়েছে?। নাসরীনকে সে স্বাভাবিক করতেই পারছেনা।
বাড়ির সব মুরুব্বিদেরকে সে ডাকছে। সবাইকে নাসরীন কি যেন বলতে চাইছে। ছাদের দিকে তাকিয়ে নাসরীন বির বির করে সবাইকে দোআ পড়তে বলছে। অস্পষ্ট...খুবই অস্পষ্ট সে ভাষা। কিছুক্ষণ পরে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
ভোর ৫ টা। হাসপাতালের এম্বুলেন্স আসছে। অচেতন নাসরীনকে এম্বুলেন্স তোলা হলো। ওর বাচ্চারা ঘুম ভেঙ্গে ভয়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মাহফুজ সাহেব ওদেরকে শাশুরীর কাছে রেখে হাসপাতালের পথে রওয়ানা হলেন।
হাসপাতালে নাসরীনকে স্যালাইন দেওয়া হলো। কর্তব্যরত ইমার্জেন্সি ডা. এসে তাকে চেক-আপ করলেন। তিনি কোন অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পান নি। সে বলল অনেক দুর্বলতা আর দুঃশ্চিন্তার কারনে সে এমন নিস্তেজ হয়ে গেছে। স্যালাইন চলবে।
নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাবে এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকবে। সকাল হতেই নাসরীন একটু একটু কথা বলতে শক্তি পাচ্ছে। সে প্রথমে মাহফুজ সাহেবকে অভিযোগের সূরে বলল, গত রাতে বিশাল যে সাদা দানবটা আমাকে নিতে আসছিল। মৃত্যুর জন্য ডাকছিল। আমি কালেমা পড়তে গেলাম আমাকে মারতে এলো।
আমি কতবার তোমাকে সেকথা বললাম!! তুমি না শুনে আর সবার সাথে কথা বলছিলে কেন? আমার কষ্ট হচ্ছিল। আমি বললাম যে তোমরা সবাই দোআ কর। আমাকে দানবটা দোআ পড়তে দিচ্ছেনা। শুনলেনা। আমি কত কাঁদলাম।
মাহফুজ সাহেব হতভম্ব চোখে স্ত্রীকে দেখছে। কি বলছে নাসরীণ!!!
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
তানিয়া হাসান খান
সময়:১:০৭ মি (দিবা)
তারিখ:৩০/৮/২০১৩ইং
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।