আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ । একটু অন্তর্মুখী, নিজের মনের নিভৃত কোণেই বড্ড বেশি বিচরণ আমার । ভালবাসি সাহিত্যের খোলা পাতা, ভালবাসি প্রযুক্তির আঙ্গিনা আর ভালবাসি প্রাণের স্পন্দন । ফেসবুকে আমিঃ http://facebook.com/rupkotharkabbik সকাল সকাল তাসনিয়ার ফোন পেয়ে অবাক হলাম । যে মেয়ে সারা রাত চ্যাটিং করে সকাল সাড়ে ছয়টায় ঘুমায় তার তো এত সকালে জেগে ওঠার কথা না ।
ঘটনা কি? আমার টেবিল ক্লকের ব্যাটারি শেষ নাকি! ফোন ধরলাম ।
আজকে তোর কোন প্রোগ্রাম আছে?
যদি খাওয়াইতে চাস তাহলে কোন প্রোগ্রাম নাই ।
মুভি দেখতে যাবি?
হঠাত্ মুভি?
ভালবাসা দিবস পার হয়ে গেল দোস্ত, তাও ডাবল হইতে পারলাম না । চল এই দুঃখে দুই সিঙ্গেল মিলে সিনেমা দেইখা আসি ।
কি আর করা? চল ।
রেডি থাকিস ।
যথা সময়ে দুই বান্ধবী হলে ঢুকলাম । ও, মুভির নাম "অন্য রকম ভালবাসা" । জাজ মাল্টিমিডিয়া, বাপ্পি-মাহি জুটির দ্বিতীয় ছবি । একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, মুভি দেখতে গিয়ে বেশিরভাগ জুটিই এনার্জি ড্রিংক খান ।
এত এনার্জি দিয়ে তারা কি করেন? কথাটা তাসনিয়াকে বলতেই ও বলল, তোর মত নাদানরে দিয়া কিছু হইব না । তুই মুড়ি খা । ওরে বললাম, দোস্ত আমার লাইগা ম্যাংগো জুস আন । এনার্জি ড্রিংক খেয়ে আমাগো লাভ নাই । ও কিছু বলার আগেই মুভি শুরু হল ।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শুভ (বাপ্পি) । তিনি অসম্ভব মেধাবি! তিনবারের চেষ্টায় থার্ডক্লাস পেয়ে অনার্স পাস করেছেন! কিন্তু জাতি তার এই মেধার স্বীকৃতি দিতে পারছে না । তাই তিনি বিদেশে যেতে চান । প্রতিদিন আমেরিকা, ইতালির দুতাবাসে ঢু মারেন । এদিকে তার আব্বাজান আবার দুই বিয়ে করেছেন ।
তার সত্মা নূতন তাকে সকাল বিকাল নিয়ম করে সত্ভাবে সত্ উপদেশ দেন আর উনিও ঝগড়া চালিয়ে যান । তবে সত্ বোন আর সত্মামা কাবিলা শুভর পক্ষে আছেন । যাই হোক, শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে প্রচলিত বুদ্ধিটাই তার মাথায় সবচেয়ে পরে এল । ভিসা পাওয়া কাউকে বিয়ে করলেই তো হয়! (কস কি মমিন! আম্রিকা যাওন এখন এত্তো সোজা!!) এরপর আমেরিকান দুতাবাসের সামনে গিয়ে শিকার মানে বৌ খুঁজতে থাকেন । এখানে এসেই পেয়ে গেলেন নিঝুমের (সারা) দেখা (ও না আসলে নায়ক ভিসা পাইবো ক্যামনে) ।
নিঝুম ভিসা পেয়ে যেভাবে চিত্কার করে আসছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল উনি বেহেশতের টিকেট পেয়েছেন । সেলিব্রেট করার জন্য বান্ধবীদের নিয়ে রেস্তোরায় গেলেন । পিছনে পিছনে শুভ আর তার মামাকে নিয়ে হাজির । শুভ তার মামাকে বলল, মামা তুমি গিয়ে প্রপোজ কর । চিন্তা করেন অবস্থা! মামা গিয়ে প্রপোজ করলেন ।
নিঝুম বলল, আগে ৩টা প্রশ্লের জবাব দাও । সিগারেট খাও? ড্রিংক কর? আগে কখনও প্রেম করেছ? তিনটা প্রশ্লেরই না এনসার দিয়ে তিন পিস থাপ্পড় খাইলেন মামা (এদের জন্য সত্যিই কষ্ট হয় । আগে ভিলেন হয়ে নায়িকার থাপ্পড় খেত । এখন ভাল মানুষের পার্ট করেও থাপ্পড় খায় । আফসুস) ।
দিন সত্যই বদলাইয়া গেছে । আধুনিকা মাইয়া তো! তাই একটু আধটু মদ গাঁজা খাওয়া পোলাপাইন না হইলে তিনি ভালবাসবেন না । শুভ তো মহাখুশি! সে তো রাস্তা পেয়ে গেছে । ব্যর্থ প্রেমিক সেজে নিঝুমের সামনে মদ আর সিগারেট খাওয়ার অভিনয় করে গেল । নিঝুম তো ফিদা ।
শুভর ফোন নাম্বার নিল । রাত্রিবেলা ফোন দিয়ে শুভকে দেখা করতে বলল । সে শুভর ভালবাসার গল্প শুনতে চায় । শুভ বাসায় বসে বসে গল্প বানায় । গল্পের নায়িকা হিসেবে একজনের ছবি যোগাড় করে স্টুডিও থেকে ।
কার ছবি জানেন তো? জানেন না! আজব তো । মিষ্টি আহমেদের মানে মাহির । এতকাল বাংলা ছবি দেখেও এই সামান্য জিনিসটা বুঝতে পারলেন না । আম্মুকে বলেন কমপ্ল্যান দিতে!
পার্কে বসে নিঝুমকে ভালবাসার গল্প শোনায় শুভ । সে যখন ইতালিতে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রাঞ্চে (!) পড়ত তখন টেমস নদীর ব্রিজের (!) উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মিষ্টির সাথে তার দেখা (মাফ কইরা দেন ।
থার্ডক্লাস পাওয়া ছাত্র ভূগোলে একটু দূর্বল হতেই পারে) । তারপর প্রেমিকার ছবি দেখতে চাইলে মিষ্টির ছবি দেখিয়ে দেয় । সেদিনের মত ঘটনা এখানেই শেষ ।
পরের দিন শুভ আর নিঝুম দুজনেই পার্কে এসেছে । নিঝুম ভালবাসার কথা বলে ফেলেছে (ক্যামন মাইয়া! একটুও ধৈর্য নাই)।
শুভ ভালবাসার কথা বলবে এমন সময় বলা নেই কওয়া নেই শুভর পেছনে এসে একটা মেয়ে এসে বসলো । সে আর কেউ নয়, আমাদের মিষ্টি মেয়ে মাহি । (আসবোই তো! সাইড নায়িকারে এতক্ষণ দেখাইলে নায়িকার বুঝি মন খারাপ হয় না!) । পিছনে তাকিয়ে শুভর তো হার্টে এটাক হওয়ার দশা । রেগে মেগে নিঝুম চলে গেল ।
এদিকে মিষ্টি যাওয়ার সময় তার এসএসসির সার্টিফিকেট রেখে গেলেন । ঐদিন আবার তার চাকরির এপয়েন্টমেন্ট লেটার দেবার কথা । কিন্তু কাগজপত্র নেন নি বলে চাকরি হবে না । মহাপুরুষ শুভ কাগজপত্র নিয়ে পৌঁছে দিলেন । চাকরি হল এবং সেই সাথে হল ভালবাসা ।
মিষ্টি গরীব ঘরের মেয়ে কিন্তু তিনি যে পরিমাণ মেকাপ করেন তাতে তার ফেসপাউডার কিনতেই দুতিনটা মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির সারামাস চলে যাওয়ার কথা! পরিচয়ের দ্বিতীয় দিনে মিষ্টি বাপ্পিকে তার বাসায় নিয়ে গেল । মিষ্টির মা আবার এক কাঠি সরেস! চেনা নাই জানা নাই প্রথম পরিচয়েই তিনি জামাই হিসেবে শুভকে পছন্দ করে ফেলেছেন । আর মিষ্টির কথা নাই বা বললাম ।
এদিকে দুঃখে নিঝুম রগ কেটে আত্নহত্যার চেষ্টা করলো । তার ভাই আজগর চৌধুরী ওরফে কাটা আজগর (তার কোন জায়গায় কাটা নেই ।
তিনিই অন্যের গলা কাটতেন । এখন তিনি পুত পবিত্র ভাল মানুষ । তবে বোঝেনই তো ইজ্জত যায় না ধুলে আর স্বভাব যায় না মলে) শুভকে রিকোয়েস্ট এবং অতঃপর মারধর করে নিঝুমের সাথে বিয়েতে রাজি করাতে চাইল । কিন্তু শুভ তো রাজি না । আজগর তার প্রভাব খাটিয়ে শুভর বাবাকে জেলে পাঠাল ।
সেখানে বাবার হার্টএটাক । চিকিত্সার জন্য তিনলাখ টাকা দরকার । অসুবিধা নেই । লাগে টাকা দেবে গৌরি সেন মানে আজগর চৌধুরী । বাধ্য হয়ে নিঝুমকে বিয়ে করতে রাজি হল শুভ ।
এদিকে মিষ্টিকে খুন করতে গেল আজগর । সুপার হিরো শুভ তাকে বাঁচাল । উদার মনের নিঝুম শেষ পর্যন্ত শুভকে মিষ্টির হাতে তুলে দিয়ে ভাইকে নিয়ে উড়াল দিল আমেরিকার পথে ।
এই হল সিনেমার কাহিনী । এবারও মাহির এটিচিউড এবং অভিনয় ভাল লেগেছে ।
তিনি গতবারের চেয়ে কিছুটা উন্নতিও করেছেন । সম্ভবত বাংলা ছবিতে বেশ ভালভাবেই টিকে যাবেন এই অভিনেত্রী । সিনেমার স্ক্রিপ্ট কিংবা সংলাপ ছিল অসাধারণ । কারিগরি আর প্রযুক্তিগত দিক থেকে যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে তাতে বাংলা ছবি বেশ লাভবানই হচ্ছে ।
সিনেমা হল থেকে বের হবার সময় অনেকের লাল চোখমুখ দেখে মনে হল উনাদের আরও এনার্জি ড্রিংকের দরকার ছিল ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।