আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই আমাদের শহীদ মিনার

সত্যই সুন্দর, সুন্দরই সত্য- জন কীট্স

২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯ দুপুর বেলা। ঢাকা মেডিকেল কলেজে গিয়েছি দুর্ঘটনায় আহত ‍এক আত্মীয়কে দেখতে। রোগীর সাথে সাক্ষাৎ শেষে ফিরে আসছি। শহীদ মিনার সংলগ্ন পথ ধরে হাটছিলাম। হাতে তেমন কোন কাজ ছিলনা।

ভাবলাম আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের এই স্মৃতিস্তম্ভটাকে একবার ‍কাছ থেকে দেখে যাই। শহীদ ‍মিনারে প্রবেশ করলাম কিন্তু শহীদ মিনার ও চারপাশের পরিবেশ দেখে মনে বড় ধাক্কা খেলাম। যদিও আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরের খুব অদূরে, পড়াশোনার স্বার্থে ঢাকায় থাকছি অনেকদিন তবুও এর আগে কখনো শহীদ মিনারে আসা হয়ে ওঠেনি। চারপাশ দিয়ে অরক্ষিত মিনারের ভেতরে এসে মিনার চত্বরে একসাথে ঘাস খাচ্ছে ঘোড়া ও ছাগল (আসলে ঘোড়া ছাগল চড়াচ্ছিল দু’জন লোক, ছবি দেখুন)। মুল বেদীতে ক্রিকেট খেলছে একদল ছেলে।

একপাশে সিগারেট, চকলেট এ জাতীয় খাবারের দোকান সাজিয়ে বসেছে হকার। পাশেই নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে আছে কতগুলো ছিন্নমূল মানুষ। মিনারে ভেতরে সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা আর আবর্জনা। এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বাদামের খোসা, ছেড়া কাগজ, ছেড়া পলিথিন, সিগারেটের খোসা, ব্যবহৃত সিগারেটের ‍ ‍অবশিষ্টাংশ, ছেড়া জুতো, কোমল পানীয়ের বোতল, চিপসের মোড়ক, কলার খোসা, ডাবের খোসা, আইসক্রিমের কাঠি, জুসের মোড়ক, ভাঙ্গা কাচের বোতল, গাছের ঝড়া পাতার স্তুপ- কী নেই এখানে! মিনারের প্রবেশ পথের সিড়িতে গাছের ছায়ায় বসে আছে অলস পথিক আর ঘুরতে ‍আসা দর্শনার্থী। এই স্থানের জন্যে ‍তারা আরো বাদামের খোসা এবং এই জাতীয় পদার্থের যোগান ‍দিয়ে যাচ্ছেন।

প্রবেশ পথের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে রাজনৈতিক পোস্টার। নিরাপত্তার জন্যে এখানে কোন পুলিশ দেখা গেলনা। এই ‍হলো আমাদের মহান ভাষা ‍আন্দোলনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে নির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের চিত্র! ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে শহীদদের পবিত্র স্মৃতির ‍ উদ্দেশ্যে যে মিনারটি নির্মিত হয়েছে, স্বাধীনতার পূর্ব থেকে এখনো পর্যন্ত যে স্থানটিকে ঘিরে পরিচালিত হয়ে আসছে সকল ন্যায্য দাবী আদায়ের আন্দোলন, মহান ভাষা শহীদ দিবসের মূল অনুষ্ঠান যেখানে হয়ে থাকে, যে ঝকঝকে শহীদ ‍মিনারকে ভাষা শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে টেলিভিশনের পর্দায় দেখে থাকি- এটাই কি সেই শহীদ মিনার? ঠিক মেলাতে পারছিনা। আমার সাথে কোন ক্যামেরা ছিলনা। তবুও আমার ফোনের ভিজিএ ক্যামেরা দিয়েই এই দুর্লভ দৃশ্য ধারণ করলাম।

সামহোয়ারইন পাঠকদের জন্যে তা-ই এখানে জুরে দিলাম। একটা দেশের জাতিসত্বা ও আত্মপরিচয়ের আন্দালনের স্মৃতিচিহ্ন জরিয়ে আছে যে স্মৃতিস্তম্ভের সাথে তা এমন অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকতে পারে- শহীদ মিনারের এমন করুণ অবস্থা স্বচক্ষে না দেখলে তা আমার পক্ষে বিশ্বাস করা যেতনা। শহীদ মিনারের এই করুণ অবস্থা দেখে আমার কেবল একটা কথাই বারবার মনে হচ্ছিল বছরের একটি দিন ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের যতো আয়োজন আমরা করি তা সবই মেকি। শহীদদের স্মৃতির প্রতি আমদের যতো শ্রদ্ধাবোধ আছে আমরা বোধহয় তা বছরের এক দিনেই সব ঢেলে দিই। প্রকৃত শ্রদ্ধাবোধ যে কতোখানি আছে তা শহীদ মিনারের করুণ অবস্থাই বলে দেয়।

যতোদূর জানি শহীদ মিনারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ঢাকা ‍বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত, তারা কি শহীদ মিনারের এই দূরাবস্থা চোখে দেখেন না?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।