নীল তিন.
লাউঞ্জে চুড়ান্ত বিস্ফোরনের আগ পর্যন্ত বিপ্লব ও ফারিয়ার দেড় বছরের সম্পর্ক বারবার ভেঙ্গেছে। আর পেশাদারিত্বের কারনেই সে ভাঙ্গনের আর্তনাদ শুনেছে বিপ্লব,ফারিয়া নয়। শেষের দিকে ফারিয়া বিপ্লবের সাথে কীট পতঙ্গ ও পশুবৃত্তিক আচরণ করতে শুরু করে,বিপ্লবকে এক ধরণের দাসে পরিণত করে ফেলে ফারিয়া। সপ্তাহে দু একদিন যোগাযোগ করতে শুরু করে। আবার ফোন দিয়ে আসছে বলে অন্য কোথাও উদযাপনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
এখন আসতে পারছে না জানানোর নূন্যতম এ্ই সৌজন্যতা বোধটুকু পর্যন্ত দেখায় না। নতুন সঙ্গী নতুন সময় নতুন ব্যস্ততা। বিপ্লব এই বিস্ময়ের ব্যখ্যা কখনও করে না,‘‘ফারিয়া অনেক ব্যস্ত,তার অনেক কাজ”। ও শুধু এটি মনে করে হাসে-হ্যা, আমি জানি তোমার ব্যস্ততা।
বিপ্লব নিশ্চিত হয়,জাকী,রবিন,রিসাদ,প্রদীপ,ডায়মন্ড,আবু জালেব আরও অসংখ্যের সাথেই ফারিয়ার শারিরীক সম্পর্কের।
ধানমন্ডি,ধানমন্ডি শংকর,উত্তরা,লালমাটিয়া,মিরপুরের অনেক বাসায়ই ফারিয়া দিনে এবং রাতের পর রাত উদযাপনে ব্যস্ত থাকে। কখনও চট্টগ্রাম,কক্সবাজার,খুলনা ও রাজশাহীতে ট্যুও সঙ্গীও হয় ও। বিপ্লব আরও ভেঙ্গে পরে। ফারিয়া ওর ধারণার চেয়েও বেশি বহুগামী,অশ্লীল চরিত্রহীন। প্রচণ্ড ঘিন লাগে ওর।
কিন্তু তারপরও বিপ্লব ফারিয়াকে ভালবাসার বলয় থেকে বের হতে পারে না।
বিপ্লব আর সহ্য করতে পারেনি। ভয়ংকর অসুস্থ হয়ে ও আইসিইউতে চলে যায়। এই তিনমাসের মধ্যে বিপ্লব বিলীন হওয়া আবার টিকে থাকতে উঠে দাড়ানোর প্রানান্তকর চেষ্টা চালিয়েছে। এসময় ফারিয়াকে তিনটি মেইল করে বিপ্লব।
প্রথম মেইল ঃ ভুল মানুষ ভুল সম্পর্ক
দেড় হাজার বছর আগের ব্রিটিশ এক ফোক গানের কথা ছিল এটি,ভুল মানুষকে ভালবাসতে নেই। আর আমি বলি, ‘মানুষ !’ একটা ভুল মানুষই জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। বিশ্বাস বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য জায়গাটিও মানুষ,তারপরও বেঁচে থাকতে এই মানুষকেই বিশ্বাস করতে হয়। " ভালবাসাটা যুদ্ধের চেয়ে ভয়ংকর। প্রচলিত এই শব্দটিতে আমি কখনও ফিরেও তাকাইনি।
অনুমান নির্ভর বিশ্বাসের স্তম্ভের উপর দাড়িয়ে থাকা এই শব্দটিকে কেটেকুটে অনেক বিলাপ দীর্ঘশ্বাস শরীরে মেখে মেখে অনেকের কাছে আমি বিষাক্ত হয়ে আছি। কিন্তু জীবন ক্ষমা করেনি আমায়। বংশের জৌলুস,স্পর্শকাতর ব্যক্তিত্বের আভিজাত্য এখন লুটোপুটি খায় কারও পায়ে। ফিরে যাওয়ার উপায় নেই,এ এক অবিনশ্বর সত্য। নিজের সততা আর বিশুদ্ধতা এখন নিজেকেই পরিহাস করে।
তোমাকে ঘিরে হৃদয়বৃত্তিক সম্পর্কের পবিত্রতার আরও আগেই বহুগামিতা আমার কাছে অপরিচিত ছিল । অবশ্য অবিশ্বাস করোনি তুমি,কারন তুমি যা তাইতো ভাববে
সবাইকে। কিন্তু আমিতো জানি,জানেন অতিইন্দ্রিয় মহাশক্তি অথবা এই আমি’র বড় সত্যই জানে। আজ দীর্ঘ এক বছরের সম্পর্কের পুরোটাতেই আমি বিশুদ্ধ রয়েছি। তোমার প্রবল একক বিশ্বাস আর সিনক্রিয়েটের আশংকায় আমি হয়ত কখনও তার ব্যাখ্যায় যাব না।
না হয় অবিশ্বাসী আর ভন্ডই হয়ে
থাকলাম তোমার বিশ্বাসে। তাতে আমার বিশুদ্ধতা আরও বাড়ে। কারন,তোমাতে বিলীনতার একটু সুখ সারা জীবনের অবলম্বন আমার,আমি এভাবে ভালবেসেছি। এ তুমি কখনও বুঝবে না। তুমি তোমার মত
করে হৃদয়কে অস্বীকার কর।
মস্তিস্কে সম্পর্ক নিয়ে যে অস্থির অনুভুতি তৈরি হয় তাও তুমি অস্বীকার কর। অথচ এ অনুভূতি তো হৃদয় নামে কোন অরগ্যান থেকেই। অবশ্য সেই অরগ্যানের নাম হৃদয় না হয়ে পাছা হলেই ভাল হতো। হা হা হা। তুমিতো মাঝে মাঝেই বলো,”আমার হৃদয় থাকে পাছায়”।
ক’ দিন আগে অবশ্য বলেছো,সেটা এখন নেমে তোমার উরুতে চলে এসেছে। এসব শুনে ভেতরে ভেতরে আমি হাসতে হাসতে শেষ। ভেবে পাই না কি বলব।
ফারিয়া,তোমাকে আমি কখনও তুলনায় এনে ছোট করব না। এতে আমিই ছোট হয়ে যাব।
ভালবাসা এমনিই। আমি অসম্ভব যুক্তিবাদি মানুষ,হৃদয়কে আমি প্রশ্রয় দেই না কিন্তু হৃদয়কে অস্বীকার করি না। মস্তিস্কে সেই অস্থির অনুভুতি সৃষ্টিকারী অরগ্যানের কারনেই আমি মানুষ। অবশ্য তোমার কাছে কখনও কৃমি,কখনও কুকুর,কখনও বা অমানুষ বা জারজ কোন আস্তাকুরে। বিশ্বাস করো বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই আমার।
কারন ভেতর বাহির সম্পূর্ণ নি:স্ব হয়েই আমি তোমাতে বিলীন হয়েছি। ভাবতে পারিনি এটা এক পাক্ষিক,তুমি এতটা পেশাদার। তোমার কাছে আমি কেউ না কেউ না। হয়ত মানুষ বলেই আমি অবদমনকে এড়াতে পারিনি। তবে সে অসম্ভবকেও আমি সম্ভব করে ফেলেছি।
সে অবদমনকে আমি ভস্ম করে ফেলেছি,”যে অবদমনে তোমাকে নিয়ে আমার বিশ্বাস জন্মেছিল যে,আমার সমান্তরালে তুমি অনেকের সাথেই শাররীক সম্পর্কে জড়িয়েছো। সেটা পুরোণো অথবা প্রতিনিয়ত নতুন কিছু সম্পর্ক। কিছু কিছু ঘটনা,বিষয় ও দেখার উপর দাড়িয়ে ক্যালেন্ডারের মার্কিংটা তারই প্রমাণ ছিলো। কারণ এটা তোমার কাছে এখন একটা নীডস,তোমার চরিত্রহীনতা। কোন বন্ধনের প্রতিশ্র“তি বা বিশুদ্ধতা রক্ষার বালাইয়ের তুমি ধারধারে না।
আর যেহেতু তুমি কারও কাছে প্রতিশ্র“ত নও তাই এটা তোমার কাছে পাপ তবে অন্যায় নয়। ঠিক এভাবে যুক্তিবাদী তুমি যেভাবে খুনিও তার সপক্ষে যুক্তি হাজির করতে পারে। আমি আসলে এখানেই গুলিয়ে ফেলি। তোমাকে আমি মাঝে মাঝে বিবাহের মত বন্ধনে প্রতিশ্র“ত প্রিয়তম ভেবে বসে থাকি। তোমার ভাষায় মূলত অন্যায়টা করি আমি।
আমার কাছে কোন দায়বদ্ধতাতো তোমার নেই। তুমি বৃত্ত টেনে দিয়েছো। যে বৃত্তের ভেতরে তুমি অসংখ্য সে বৃত্তের দরজায় আমি অন্ধ। শুধু তোমার আমার যাপিত সময়ের বাইরে তোমাকে বিশ্লেষণ করে আমার কাজ নেই। তোমার বিশ্বাস, তোমার যুক্তিবাদিতা, তোমার উদযাপন সময়ের সহযাত্রী হতে চাওয়াটা আমার সীমালঙ্ঘন হবে- এভাবেই ভাবতে পছন্দ কর তুমি।
ফারিয়া, উত্তর আধুনিকতাবাদ চিন্তাধারা একই সাথে লালন করে প্রচলিত সমাজের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করাটা কঠিন। সেটি তুমি বেশ পার। প্রচলিত সমাজকে তুমি থোরাই কেয়ার করো। তোমার পিডিয়ডের ন্যাকপিনের মতই ছুড়ে ফেলে দাও প্রচলিত সমাজের অনেক কিছূ। তাতে তোমার বিন্দুমাত্র ভাবনার উদ্রেক করে না।
আমি জানি,তুমি এই সমাজের পুরুষ চেনো। আর পুরুষকে চেনো বলেই তুমি নারী নয় আপন অহং নিয়েই নিজের পেশাদারিত্ব প্রমাণ করতে পেরেছো,টিকে থাকছো। তোমার ঘুরে দাড়ানোর, টিকে থাকার অস্বাভাবিক প্রত্যয়কে বাহবা দিই। নিয়ন্ত্রন ক্ষমতাতেও তোমার অনেক পর্যাপ্ততা রয়েছে।
আমার দেখা তুমি একজন সেরা ম্যানাজারও।
তোমার চারপাশের অসংখ্য পরিমান বিষয়,বহু নিষিদ্ধ সম্পর্ক,প্রয়োজন,অপ্রয়োজন নিস্পত্তিতে বেশ ভাল দক্ষতা রয়েছে তোমার।
ফারিয়া,আমি পার্থিব জগতের হিসেব নিকেশ কখনও ঠিকমত বুঝিনি আর বুঝিও না। তুমি সুন্দর। অসম্ভব সুন্দর তুমি। মজনুর চোখেতো লাইলী সুন্দরই।
তারপরও একদম নিরপেক্ষতার ভোটে বললাম।
একধরনের নিস্পাপতার আভা খেলা করে তোমার চোখ-মুখ জুড়ে। অথচ এই লাস্যময়ীতার ওপারে এক বিষ গহবর। আমি বলি ইশ্বরের প্রেমিকা তুমি। অথচ প্রায়ই ইশ্বর তোমার ব্যস্ততার দৃশ্য আমার সামনে
এসে হাজির করে।
ভালবাসি বলেই,শূণ্য হয়েছি বলেই হয়ত আমি তোমার বহুগামীতা মেনে নিতে পারি না। হয়ত আমার ভেতর বাহিরের ভয়ংকর যন্ত্রনায় আমি একদিন শেষ হয়ে যাব,নিশ্চিতভাবেই তা জানবে না তুমি। তারপরও আমি সেই অতল গহবরের ক্রম চক্রবৃদ্ধি গতিতে ডুবে চলেছি। আমার ভেতর বাহিরের পুরোটা জুড়ে শুধু তুমি হয়ে যাচ্ছ,শুধু তুমি। সেদিন তোমার পিছু নিয়ে উল্টো পথে ফিরে এলাম।
রাতভর আমায় বোঝালে,সব মেনে নিতে আমায় স্বাভাবিক করলে তুমি। তুমি বললে,তোর বুকে উষ্ণ নি:শ্বাসে উরুতে উরুতে মাতাল অস্থিরতায় মেতে থেকে যেভাবে অন্যের কাছে ব্যস্ততা দেখাই সেভাবে অন্যের উরুতে বসে তোকে তো আমি ব্যস্তই বলব,বলব বাসায়। অনেকেই জানে,কিন্তু তোর মত আমায় কেউ বিরক্ত করে না। কষ্ট হলে কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়,মদ খায় কিন্তু আমায় বিরক্ত করে না। আমি বললাম, অন্যেরা তো উদযাপন শেষেই বিদায় নেবে আর আমি পুড়ে পুড়ে ভস্ম হই।
তুমি বললে,আমার জীবন আমি যা ইচ্ছা যা খুশি তাই করব। তুই একটা দোকান আমার কাছে। নীডস শেষে পিছু ফিরে তাকানোর সময় আমার নেই। এমন অসংখ্য দোকানের গ্রাহক আমি। কী অবলীলায় তোমার বহুগামীতার কথা বলে গেলে তুমি।
বললে তোমার দীর্ঘ এক যুগের জীবনের কথা। সে সময়টার পুরোটাই তুমি ছিলে পরিবারের বাইরে। আমি আগে অবাক হতাম,কিভাবে সম্ভব ? কিন্তু উপায়হীন অবশেষে তুমি বললে, এমন কত সম্পর্ক হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই্। এটা মনে রাখার মত কোন বিষয় হল। কতটুক সময়?আধা ঘন্টা বড়জোড় এক ঘন্টা ।
শরীরের উদ্দামতাতো এরপর শেষ। মূল কথা হল,তোমার মত কেউ আমাকে বিরক্ত করে না। আর ভালবাসা! তোমার মত হৃদয় নি:স্ব করে আমাকে সবাই ভালবেসেছে।
আমার ভেতরটা ধ্বসে যেতে থাকে তখন। ইশ্বর বলেন,কেন বুঝলি না,সর্বস্ব হারাতে নেই কখনও।
কারন শূণ্যে ফিরে আসা যায় না যে। তাই তুইও ফিরে আসতে পারবি না। সে ব্যস্ত ব্যস্ত ব্যস্ত। আর তোর যাপিত জীবনের সকল ব্যস্ততা ফুরিয়ে যায়,ব্যস্ত হয়না সময়। ব্যথা দীর্ঘ হয় তোর,অতল ভারে তুই ভেঙ্গেচুরে ভেঙ্গেচুরে যাস।
এমন অনেক রাতের মত রাত আসবে বারবার। তোর ভালবাসার ফুলে সে ব্যস্ত থাকবে অন্যের ফুল শয্যায়। তুমুল উষ্ণশ্বাসে তুফান উঠবে অন্য পুরুষের বুকঘরে আর ভেঙ্গেচুরে ভেঙ্গেচুরে যাবে তোর বুক পাজরের ঘর। আপেক্ষিকতায় নিজের কাছে সে তোমার মনে হলেও তার কোনটাতেই তুমি কখনই ছিলে না আর থাকবেও না।
সত্যিকার অর্থে আমার অতিমাত্রার হৃদ্যতা,বারবার ফোন,যখন তখন কাছে পাওয়ার তীব্রতা তোমার বহুগামীতায় সমস্যা তৈরি করত।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই এবং অস্বাভাবিক নিয়ন্ত্রন গুনেই এই বহু সম্পর্কের পৃথক পৃথক স্বাতন্ত্রতা রক্ষা কর তুমি। আমি চেষ্টা করছি তোমার সেই স্বাতন্ত্রতা রক্ষায় আমি যেন কোন সমস্যা না হই। কতটা ভয়ংকর ভাবে ভালবেসেছি তোমায়। ভালবাসা না থাকলে সেখানে তো আর বিবাহিত সম্পর্কও মূখ্য কিছু নয়। শেষের দিকে আমি তোমার জন্য সমস্যা হয়ে যাচ্ছিলাম শুধু এই কারনেই যে তোমার বহু সম্পর্কের স্বাতন্ত্রতা রক্ষায় আমি বিরক্ত তৈরি করছিলাম।
ফারিয়া,ইশ্বর প্রায়ই তোমার ব্যস্ততার দৃশ্য আমার সামনে এসে হাজির করে। হয়ত আমার ভেতর বাহিরের ভয়ংকর যন্ত্রনায় তিনি মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারেননি। তারপরও আমি সেই বিষ গহবরের উৎকট
মেখে চলেছি আমার ভেতর বাহিরের পুরোটা জুড়ে। তিনি বলেন,হায়রে বোকা –- এই দেখ তোর প্রেমিকার ব্যস্ততা। তোর বুকে উষ্ণ নি:শ্বাসে উরুতে উরুতে মাতাল অস্থিরতায় মেতে থেকে যেভাবে অন্যের কাছে ব্যস্ততা দেখায় সেভাবে অন্যের উরুতে বসে তোর কাছে ব্যস্ত হয়ে যায়।
প্রতারিত
হচ্ছিসতো সবাই,কিন্তু অন্যেরা তো উদযাপন শেষেই বিদায় নেয় আর তুই পুড়ে পুড়ে ভস্ম হস। দীর্ঘ এক বছরে এমন অনেক তুফান তোর বুকঘরের উপর দিয়ে গিয়েছে,টের পাসনি। এতটা সরল আর বিশ্বাসী হতে হয়নারে বোকা। ওর উদযাপনের এমন অসংখ্য তারিখ মনে রেখেই বা কি হবে। আরে গাধা,এমন নারী এবং টাকা কখনও কারও হয় না।
আপেক্ষিকতায় তোমার মনে হলেও তার পুরোটা তুমি কখনই পাবে না।
ভালবাসায় শরীরের প্রয়োজনটা আপেক্ষিক কিন্তু তোমার শরীর ভালবাসার স্পর্শের জন্য নয়। বাস্তবতাতো এড়ানো যাবেনা যে শরীরেও মন আছে। একজনের বুকে মাথা রেখে অরেকজনের কথা ভাবা যায়না। তারপর অবশেষে এবং অবশেষে যখন ভাঙ্গন অনিবার্য হয়ে পড়ে তখন ভুলে যাওয়াটা একমাত্র বাস্তবতা হয়ে উপস্থিত হয়।
যদিও যে স্মৃতি জীবন থামিয়ে রাখে সে স্মৃতি শুধুমাত্র একজনের। কারন ভুলে যাওয়াটা তোমার জন্য সহজঃ ঠিক তেমন সহজ,যেমন করে প্রতিটি স্নানে তুমি ধুয়ে ফেলো অসংখ্য পৃথক চুমুর দাগ। আসলে হৃদয়বৃত্তিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পেশাদাররা কতটা মানুষ? শুধু জানা হয়, এখানে তোমরা কর্পোরেট প্রফেশনাল,প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সম্পর্কই তোমাদের জীবন। তোমরা কখনও বদলাও না,বদলাতে পারো না। এক সময় শুধু সময় তোমাদের ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।
তোমরা অনেক হেরে গিয়েও কখনও হারটা স্বীকার করতে পারোনা। পথশিশুর ঐ ঐশ্বরিক হাসি ম্লান করে দিয়ে তোমরা ভাবো তোমরা জিতে গেছে? প্রখর উত্তাপে পুড়ে পুড়ে হাহাকার করা পথিকের তৃষ্ণার জল ফেলে দিয়ে তুমি ভাবো তুমি জিতে গেছ? নিরপরাধ ভালবাসায় নষ্ট মেখে দিয়ে তুমি ভাবো জিতে গেছ? প্রাণবন্ত জীবনের সব নৈসর্গ উপড়ে ফেলে ভাবো জিতে গেছো? কারও সম্মানের প্রতিদানে অসম্মান করে ভাবো জিতে গেছো? তুমি কখনই অন্যের অবলম্বন ও পরগাছা জীবন ছেড়ে শুধু নিজের অবস্থান নিয়ে ভাবতে পারোনা,নিজের কৃতকর্মের উপর জীবন বোধ নিয়ে ভাবতে পারো না। কারন ভাবলে নিজেকে মেরে ফেলেও এতটুকু আড়াল হওয়ার জায়গাও পাবে না। তোমাকে সহসা কেউ ধিক্কার দেয়না,কখনও নষ্ট বলেনা কারণ সময়ই তোমাকে সর্বত্তোম প্রাপ্রতা দেবে,যতটুকু প্রাপ্রতার ধিক্কার আমি দিতে পারবো না,যতটুকু নষ্ট আমি বলতে পারবো না।
জাকী‘র সাথে তোমার শারীরিক সম্পর্ক বহুদিনের।
আমার ভাবতে অবাক লাগে,জাকীকে আমার গু ঘিন লাগে। আমি দেখেছি, অসম্ভব ভালবাসা নিয়ে এমন পবিত্র সুন্দর স্ত্রী ঘরে যার জন্য প্রতিনিয়ত অপেক্ষা
করে তার সাথে বছরের পর বছর কিভাবে প্রতারণা করে যেতে পারে মানুষ। আর তুমি বন্ধুত্বের খোলসে কতটা নোংরা হতে পার,বলত। তোমার কাজিন বলে যাকে তুমি আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দাও সেই রবিন কে আমি ফোনেই তোমাকে চুমু দিতে শুনেছি। তোমাদের কথপোকথনে স্পষ্ট যে তোমাদের
শারিরীক সম্পর্ক তারও আগের।
তুমি বল তোমার এমপ্লয়ী। রিসাদ এর সাথেও তোমার শারিরীক সম্পর্ক রয়েছে। এমন বিষয়ে তুমি একবার বলে ফেলেছিলে,ম্যাডোনারও তো তার ড্রাইভারের সাথে সেক্স্রয়াল সম্পর্ক রয়েছে,তো। আমি শুধু বিস্মিত হই। ডায়মন্ড,আরমান সর্বশেষ আবু জালেব এমন কত সম্পর্ক প্রতিনিয়ত বর্ধিত করছে তোমার চরিত্রহীনতার বলয়।
তোমার শরীর জুড়ে কত অসংখ্য পুরুষের চুমুর ছাপচিত্র রয়ে আছে তা যে আমার অনুমানে আসবে না। আমি কেন যে বুঝি না ওমন সময় কি ফোনে কথা বলা যায়। সেদিন রাতে আমার বুকে থাকা অবস্থায় একজনের এসএমএস এ ‘আই লাভ ইউ’। শেষ দিনটার এসএমএস,হ্যা উদযাপনের সিকিউর জায়গাতেই গিয়েছিলে তুমি। আমার ঘৃণা লাগে।
সব দায় তোমার,আমার ঘৃণার কোন কারন নেই। হ্যা,বেঁচে থাকার প্রয়োজনে তোমার শরীরকে তো তুমি আর অবদমিত রাখতে পার না কিন্তু তোমার চরিত্র!। আমি তোমার এবং তোমার পরিবারের সম্পূর্ণ পরিধিই জানি। ইশ্বর বলেন, কত অসংখ্য মিথ্যা তুই মিথ্যা জেনেই চুপ করে হাসিমুখ করেছিস !
ফারিয়া,সম্পর্কের প্রথম দিকে আমি ছিলাম তোমার স্লিপিং পিল। সেই সাংবাদিকের বাসা থেকে শুরু করে মোহাম্মদপুরের দুটি বাসা,পান্থপথের দুটি বাসা।
দীর্ঘ এক বছরে অনেক স্মৃতি ,অনেকেই জানে তুমি আমার বউ,হা হা হা-কি হাস্যকর না।
তুমি অনেককেই কিসব বলেছো। অনেক কষ্ট পেয়েছি আমি,যদিও এই কষ্টে রং টা কেমন আমি জানি না। আমি নিশ্চিতভাবে এটুকু বলতে পারি, আমার দেখা তোমার সার্কেল থেকে আমি অনেক অনেক ভাল মানুষ। কি ব্যক্তিত্ব্যে কি মানুষিকতায়।
ফারিয়া,সত্যিকার আভিজাত্য কিসে জানো তুমি? মহত্ত্বে,ক্ষমায়,শালীনতায়,ধর্য্য,েদয়াশীলতায়,ব্যক্তিত্বে,মানুষকে সম্মান দেয়ার ক্ষমতায়,সভ্যতায়,সততায়,চরিত্রে,সুশিক্ষায়। এসবের কোন জৌলুস আছে কি তোমার? আমি জানিনা,তুমি কিসের আভিজাত্যের প্রকাশ করতে চাও। উত্তরাধিকারের বংশীয় সম্ভ্রমতো মিরজাফরের পূর্বসূরীদেরও আছে। বললে,নিজের কাছেই নিজেকে সিলি মনে হয়,পরম্পরায় আমার নামের শেষের শব্দটিও বেশ ভারী আভিজাত্যের জৌলুস বহন করে চলেছে।
ফারিয়া,তোমার সাথে আমার শত বারেরও বেশি শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে।
বলা যায় এক বছরের বিবাহিত সম্পর্কের মতই। তোমার শরীরের প্রতিটি ভাঁজ আর দাগ আমার স্মৃতিতে চলচ্চিত্রের মত পরিস্কার। কি হওয়ার কথা ছিল? প্রচলিত চিন্তায় হতে পারতো,তোমায় আমার আর কি দরকার? আর কিসের এক্সপেক্টেশন। তুমি যাদের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িত তারাও যে বহুগামী,ঠিক এই মানুষিকতার। কিন্তু আমি নই,সব জেনেশুনে তোমাকে বদলাতে চেয়েছিলাম,কিন্তু তুমি তো বদলাবে না,এটাই চরম সত্য।
সব কিছু বিস্মৃতিতে ফেলে দিয়ে তারপরও আমি তোমায় বন্ধনের এক্সপেক্টশন লালন করেছি।
চার.
ফারিয়ার বহু সম্পর্কের কারন খুঁেজ বের করার চেষ্টা করত বিপ্লব,কিন্তু পারত না। বিপ্লব ভাবে,জাকীর সাথে শারিরীক সম্পর্ক কিভাবে হতে পারে? লালমাটিয়ায় জালেব এর সাথে পরিচিতিটা সম্পর্কের ঘনিষ্টতায় এত দ্রুত শারিরীক সম্পর্কে অগ্রগামী হয় কী করে? সপ্তাহে কত দিন রাত এখন তুমি থাক ওখানে তাতো বিপ্লব চাইলেই জানতে পারে। তোমার কথিত কাজিন রবিন এর সাথে সম্পর্কটা ভাল যাচ্ছে না বলেই কি এখানেই তোমার ভাল লাগছে,নাকি প্রয়োজন তোমাকে বাধ্য করছে? আচ্ছা এরপর কে? শেষের দিকে বিপ্লব বুঝতে শুরু করে, ফারিয়া বিপ্লবের সামনে নিজের ফোন কথপোকথনে বিপ্লবের ভাবনাকে প্রভাবিত করতে চায় যে তুমি যা ভাবছ তা নয় আমি আমার বাসা থেকেই এসেছি,কাল রাতে আমি লালমাটিয়া ছিলাম না।
কিন্তু বিপ্লবের ঘটে সব অদ্ভুত ঘটনা,লালমাটিয়ায় যে বাসাটিতে ফারিয়া যায় ঠিক সেই বিল্ডিংয়েই বিপ্লবের এক বন্ধুর বাসা।
পাশের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বামের বিল্ডিংয়েও স্বপরিবারে থাকে বিপ্লবের পরিচিত এক আপু। বিপ্লব রাতে ও দিনে চার পাঁচ বার ফারিয়াকে দেখার পর মার্কের প্রিন্টিং কাজেও লালমাটিয়ায় যাওয়া বন্ধ করে দেয়। একই ঘটনা ঘটে ধানমন্ডির শংকরেও। এছাড়া ফারিয়ার যেখানে বাসা ঠিক সেই এলাকাতেই ওর খুব কাছের এক বন্ধুর স্থায়ী বাড়ি,স্থানীয় এলাকা। ওর এই বন্ধুটি আর ওদের পরিবারের অনেক অনেক আন্তরিক ও অধিকারসুলভ আমন্ত্রের পরও বিপ্লব ওই বন্ধুটির বাসায় যায় না।
বিপ্লব এত বিষন্নতার মধ্যেও চায় না,রাস্তায় এখানে সেখানে ফারিয়ার সাথে ওর দেখা হোক। নিজে বিব্রত হোক অথবা ফারিয়ার। এসব সবই শেষের দিকে। ভালবাসার তীব্রতা থাকলেও এসময় বিপ্লব ফারিয়া সম্পর্কে কোন আগ্রহ বা এক্সপেক্টেশন রাখে না। প্রথম দিককার মতো বিপ্লব ফারিয়াকে কোনভাবেই ফলো করে না এমনকি রাস্তায় দেখলে দ্বিতীয়বার তাকায় পর্যন্ত না।
আর অন্য সবতো প্রশ্নই আসেনা,নিজে থেকে কোন যোগাযোগ বা যোগাযোগের চেষ্টা,ফোন বা এসএমএস তো মনে হয় পৃথিবী উল্টে গেলেও বিপ্লব করবে না।
বিপ্লব বলতে চায়,প্রমানের পর ভাবনা আর বিশ্বাস এসবের কি কোন মূল্য থাকে? আর সেক্স করার জন্য রাত আর দিন কি বলত? বিপ্লব বলতে চায়,আল্লাহ কত বড় পাপ করেছিলাম আমি যে এত মিথ্যা মিথ্যা আর প্রতারনা প্রহসনের গহবরে আমায় ফেলে দিলে। ও দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে,ফারিয়া আমি তোমাকে ভালবাসি,আমার ভালবাসার আহবান তোমার অনত্র রাত্রি উদযাপন রুখতে পারে না। প্রতিটা রাত আমি অপেক্ষায় থাকি আমার ভালবাসার উষ্ণ নিশ্বাসের জন্য,পবিত্র চুম্বনের জন্য। অথচ তুমি পাপ চুম্বনেই কামনা কর।
ফারিয়া কখনও কারো কথা শুনতো না,নিজেকে সে সবসময় সর্বজ্ঞানী ও যুক্তি তর্কের সঠিকতায় প্রথম এবং শেষ মনে করত। নিজের কর্মকান্ড নিয়ে ভাবতে পারতো না। ফারিয়ার গোপনীয়তা,পৃথক সার্কেলের সতর্ক পৃথক ব্যবস্থাপনা,প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া বা না শুনতে চাওয়ার রুটিন জীবনে শেষদিকে
বিপ্লব ব্যঘাত ঘটাচ্ছিল। বিপ্লব ফারিয়ার আভিজাত্যের অহংকারের বিশ্লেষন করতে চায়,কিন্তু কোন ভিত্তি খুঁজে পায় না।
বিপ্লব সহজ ভাবে ভাবতে চায়।
বলে,তুমি তোমার প্রয়োজনীয় উদযাপন শেষ পর্যন্ত থামিয়ে রাখনি। অবয়ব তোমার সে সাক্ষীই দেয় প্রতিনিয়ত। ভাগাড়ের নষ্ট বাতাস তুমি শরীরে মেখে ফেলেছো,এখন সমাজও সেই গন্ধ পায়। অথচ আমি! কী এক বিভৎসতায় প্রতিটি মূহুর্ত গুণে রাখি। নিজ অস্থিত্ব বিলীন করে চেষ্টা করি সেই নষ্ট বাতাসের বলয় থেকে তোমায় পবিত্র রাখতে।
তুমি কেন বোঝনা,তোমার চারপাশের যাদেরকে ঘিরে তুমি আবর্তিত হও তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই একটা নিজস্ব বৃত্ত আছে। তাদের সেই বৃত্তে তুমি নেই। থাকবে না এটাই বাস্তবতা। কারো সাংসারিক নিজস্বতা,কারো নিজস্ব পারিবারিক জীবন,কারো স্ত্রী -বর,ছেলে-মেয়ে,বাবা-মা আরো পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে একেবারে একান্ত স্থিতিময় স্বীকৃত সামাজিক জীবন। তুমি কি তোমার নিজের জীবন বলতে কিছু রেখেছো? তুমি একটি বারও বোঝনা,তোমার চারপাশের যত সম্পর্ক রয়েছে সবার কাছে-তুমি বাস্তবিক অর্থেই আড্ডা সঙ্গী মাত্র।
আড্ডা সঙ্গীর ব্যাখ্যাটা দেই না হলে ভুল বুঝতে পার- তোমারা বা আমারা আড্ডা দেই আমাদের খুব কাছের মানুষদের সাথেই। ধরে নিলাম এদের সবাইই আপাদমস্তক ভাল মানুষ যারা তোমার বা আমার বা আরেকজনের জন্য অনেককিছুই করবে,পাশে দাড়াবে। কিন্তু আড্ডা ভেঙ্গে সবাই যে যার ঘরেই ফেরে,কারও জন্য অপেক্ষা করে তার স্ত্রী,কারও বর,একটা সময় পর্যন্ত কারও মা-বাবা বা অন্য আতœীয়স্বজন। প্রত্যেকেই এই যে নিজস্ব বৃত্ত-এ বৃত্তের বাইরেই কি পরে থাকবে তুমি? তোমার প্রয়োজনে,অপ্রয়োজনে তুমি কি চিরকালই অপেক্ষায় থাকবে?- কখন তোমার প্রিয় মানুষ গুলো তাদের নিজস্ব বৃত্ত থেকে বাইরে এসে তোমার প্রয়োজন বা অপ্রয়োজন মিটিয়ে আবার বৃত্তে ফিরে যাবে। তুমি কি
চিরকাল এই অন্য বৃত্তের মানুষদের কাছে নির্ভরশীল হয়ে থাকবে? তোমার কাছে অনেক অনেক টাকা থাকল কিন্তু তোমাকে নিয়শ্চয়ই বলতে হবে না যে,টাকা যে প্রয়োজন মেটাবে তা জীবন যাপনের,জীবনের নয়।
বয়স ও সময়ের কাছে আমাদের সবার নিয়তি।
বিপ্লব ফারিয়ার প্রতিটি মুভমেন্ট নিয়ে ভাবতে থাকে। কিন্তু ফারিয়ার চরিত্র নিয়ে ও হতাশার বৃত্ত থেকে বের হতে পারে না। ও কি ফারিয়াকে শেষ পর্যন্ত বদলাতে পারবে না!
দ্বিতীয় মেইল : তবুও ভাঙ্গনের আর্তনাদ
ফারিয়া,মাঝরাতে দুঃস্বপ্নে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে এক অতল যন্ত্রনার আর্তনাদে তুমি প্রায়ই বলে উঠতে Ñ আমি আব্বুর কাছে যাব,আমি আব্বুর কাছে যাব। কখনও কখনও বলতে - আল্লাহ আমি কোথায়?আমি কি করি? আমি কই যাই? বালিশ ফেলে উঠে বসে যেতে তুমি তখন।
ডুকরে ডুকরে কাঁদতে। আমি তখন তোমায় কোমল উষ্ণতায় কাছে টেনে নিতাম,আরো কাছে। চোখের পাপড়িতে মুছে দিতাম তোমার অশ্র“। তুমি আমার বুকে নাক ঠোঁট ঘষে ঘষে জড়সড় হতে হতে বলতে - এইখানে? আমি বলতাম,হু। এরপর কম্পিত তীব্রতায় আমার ডান বাহুর আরো উপরে মাথা এনে মিশে যেতে আমার বুকে,শরীরে।
ধীরে ধীরে এক পরম নির্ভরতায়,প্রশান্তিতে ঘুমিয়ে পড়তে তুমি। আর আমি জেগে থাকতাম,সকাল,বর্ধিত সকাল,ঠিক তোমার ঘুম ভাঙ্গার আগ পর্যন্ত। আমার ডান বাহুর অগ্রভাগে আঙ্গুলসহ হাতের অর্ধেক রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে ফ্যাকাশে রংয়ে অবশ হয়ে যেত আর উপরের অংশে ব্যথার তীব্রতায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসত। প্রচন্ড হিসুর চাপে ভেতরে ভেতরে আমার ভয়াবহ হাসফাস শুরু হয়ে যেত। তবুও আমি এতটুকুও নড়তাম না- শুধু তোমার ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে এই আশংকায়।
একদিন কি করলে তুমি? মাঝরাতে হুট করে তুমি ঝগড়া শুরু করলে। ঝগড়ার ইস্যূ দেখে তো আমি হতভম্ব । -‘‘বাবুজী জারা ধীরে চলো,বিজলী খাড়ি ইয়াহা বিজলী খাড়ি” গানটি কোন মুভির?- এই নিয়ে ঝগড়া শুরু করলে তুমি। আমি বললাম ‘দম’ মুভির গান। তুমি বললে, না।
কাকে যেন তুমি জিজ্ঞেস করেছ,সে বলতে পারেনি তাই আমিও পারব না, এটা আমার জানার কথা না। আমি কেন নাম বলতে পারলাম, সেই জেদে তোমার সে কি ঝগড়া! শেষমেস ল্যাপটপ-সিডি সব ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিলে। এরপর দু’জন দুদিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষন পর মাঝখানে দিলে পাঁচ ফিটের এক কোলবালিশ। তারপর হুট করে তোমার সে কী হাসি।
সে হাসি আমি আর থামাতে পারিনা। বালিশ কোল বালিশ ছুড়েটুরে শুরু করলে দুষ্টুমি। শেষমেস আমিও হেসে ফেলেছিলাম যখন দেখি তোমার অহং হারাতে থাকা আচরে আচরে যতটা নই আমি রক্তাক্ত তার থেকে তুমি বেশি মাখামাখি। প্রিয়, তোমার দাতের ক্ষতে এখনও অমৃসণ আমার কাধ। এখনও কি বর্ধিত সকালে তোমার এক চোখে আরেকটু ঘুম থাকে?
ফারিয়া,শূন্যতায় জীবন থাকে না।
শূন্যতা পূরণ করে ফেলার অর্থ মনে না রাখা নয়। আবার মনে না রাখা আর ভুলে যাওয়াও এক নয়। শূণ্যতা আমার অতীত আর ভরাট বর্তমান। আসলে‘অ্যাবসলিউট ট্রুথ’ বলে কিছু আছে কি? নাকি সবই পিউর অ্যাবসলিউট ভদকা‘র মত ‘আছে আছি আবার নাহ নাই’ অথবা শেক্সপিয়রের ‘টু বি অর নট টু বি’! মনস্তত্ত্ব-পৃথিবীর এ গূঢ় রহস্যময় অন্ধকার অংশে কতটাই বা আলো ফেলতে পারি আমরা। কল্প ব্যাপ্তির সীমা পরিসীমা নেই।
একবার চলতে শুরু করলে তা অসীমের গন্তব্য চায় আবার থামিয়ে দিলে সেখানে অতৃপ্তি সংসার ছড়িয়ে বসে। ভালবাসার দুই প্রান্তেই সর্বোচ্চ অনুভবের পর আমরা আর নিচে নামতে পারিনা। অনুভুতি তখন এগুবার পথ পায় না,আমরা বিভাজিত হতে শুরু করি। বিভাজন অবশ্যম্ভাবী নয়তো বিকৃতিই পরিণতি।
আমি পারছি না।
ভুল মানুষে ভুল সম্পর্কের জন্য চরম মূল্য দিতে হচ্ছে আমাকে। অস্থিত্বজুড়ে প্রতিটি নিশ্বাস বিদীর্ণ করে স্মৃতি আসে যায় এখন। ছোট্ট টী টেবিলটার দিকে যখন চোখ পরে,রঙ দেখে থমকে থাকি। বেতের ঘোমটা দেয়া বুক শেলফে দীর্ঘশ্বাসের ধুলা জমছে প্রতিদিন,প্রতিটি মূহুর্তে। তোমার ভাল লাগায় নতুন কেনা ওয়ারড্রপের দ্বিতীয় ড্রয়ারও খালি-সাজিয়ে রাখা হয়নি নিউমার্কেট আর গাউছিয়া থেকে কিনে কিছু স্কাট ও টপসে, থ্রি কোয়ার্টার হাতা ছোট হয়ে যাওয়া কালো চিকেন ব্লাউজটির হাতে লাগানো হয়নি লেইছ,কমদামী সিল্কের সেই সেলোয়ার কামিছটির কাধের ছেড়াটিও আর সেলানো যায়নি,আলতো করে তুলে রাখা হয়নি তোমার একটি সিল্ক শাড়ি।
ওয়ারড্রপটির প্রতিটি বক্স এখন আমার একেকটি কফিন। আজ সেখানে আমার বিবস্ত্র মৃতদেহ।
চারপায়ে দাড়িয়ে থাকা লাল আলনাটায় তোমার একটি মাত্র স্কাট আর টপস এখন বিলাপ বাতাসে আমার অশরীরী আত্মার কাফন হয়ে দুলে উঠে। টী টেবিল থেকে ইটের মত শক্ত টোস্টগুলো তাকিয়ে থাকে প্রতিদিন, পরিহাসের হাসি হাসে। কী শক্ত টোস্টই না তোমার জন্য কিনে এনেছিলাম আমি।
অর্ধবাটি গুড়ো দুধ সমেত ছোট্ট বাটিটির ঢাকনা আর খোলা হয়নি। পরে আছে সেভাবেই। মিরপুর দশ নাম্বারের ফুটপাথ থেকে কিনে দেয়া একপায়ের রিচার্জার টেবিল লাইটটি রিচার্জের আশায় আশায় মরে গেছে এখন। বালিশের পাশে চার তাকের র্যাকটির দ্বিতীয়টিতে প্রসাধণীর নতুন শ্রেনীবিন্যাস হয় না আর। পরে আছে ক্রিস্টাল মর্সারাইজিং ক্রীম,গ্রীভেন ক্লিয়ার ওয়াইট ফেসিয়াল ফোম,ডাবর আমলা হেয়ার ওয়েল,মেরিল ভ্যাসলিন,কিউট ট্যালকম পাউডার,নবরতœ আর ব্লাক পেইন্টিন শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক।
তৃতীয় তাকটিতে সবুজ ঝান্ডু বামের ছোট্ট কৌটোটি-প্রচন্ড ব্যাথায় এই দুর্ভাগা মাথাটি তোমার কোলের বালিশে শুয়ে আঙ্গুলের নরম প্রলেপে প্রশান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিল কোন একদিন।
অগোছালো পরে আছে মুভ,স্যাভলন ক্রীম আর অবশিষ্ট দুটি সেনশেসন কনডম। টপটেনের লাল ব্যাগটিতেই মোড়ানো আছে সাতটি প্যাডসহ সেনোরার প্যাকেটটি। তবে হ্যা,দ্রুত শেষ হয়ে গেছে তোমার ঘুমের ওষুধ ডিসোপেন ও নোটেনস,কিন্তু খালি রাখিনি সেখানে এখন এক বক্স ডিসোপেন-ক্রমাগত ফুরিয়ে যাচ্ছে এই একটি জিনিসই। একদম নীচের তাকের সুই-সুতো আর বের হয়নি,আমাকে দিয়ে তুলো বের হয়ে যাওয়া যে বালিশটি তুমি সেলাই করিয়েছিলে তা আবার ছেড়েনি।
জানো,উপরের তাকে ফে এয়ার ফ্রেশনার,ফা ডিও রোল আর হ্যাভক বডি ¯েপ্র ফুরায় না,কিভাবে ফুরাবে তুমি না থাকলে যে আমি তার ধারে কাছেও যাই না। বিছানার কোনে গোলাপী ডাস্ট ঝুড়িটি ভরে আছে,ফেলা হয় না। ধুলোয় ধুলোয় মেঝে বিছানা একাকার। কিভাবে পরিস্কার হবে বলো-তুমিতো এখন আর আমায় বকো না শাসন করো না। আজও ধুইনি তোমার শেষ কফি খাওয়া মগটি।
পরে আছে চারটি কফির মিনি প্যাক। জানালায় তোমার লাল পর্দার সাথে আজও ঝুলছে তোমার অর্ধপূর্ণ ডেক্সোরাইড স্যালাইনের টিউবটি। ত্রিকোণ দেয়াল র্যাকটিতে ঝুলে আছে তোমার কিনে দেয়া পূণাঙ্গ অজিফা শরীফ ও নূরানী নামাজ শিক্ষা,ঝুলছে তসবীহটি। বুকশেলফের সাথেই হেলান দেয়া আছে শীতল জায়নামাজটি,যেটি তুমি মিরপুর দশ নম্বর ফলবাজার থেকে কিনিয়েছিলে।
রান্নাঘরের ট্রিকস ডিস ওয়াসিং হতে শুরু করে ঘরের ফ্লোর ক্লিানার রক ক্লীলন্ড সবই তো তুমি টুকটুক করে কিনিয়েছ আমায়।
ঝাড়–,দেয়ালকোন পরিস্কার করার ডাস্টার,ধুলো রুমাল কিছুই কি বাদ দিয়েছিলে তুমি? অ্যাশট্রে,সেখানে এখন জীবন পুড়ে সিগারেটের ছাইয়ের সাথে আমার হাহাকারের দীর্ঘশ্বাস জমে।
প্রিয়,
ওমন আহ্লাদ আহবান ফিরিয়ে দেবার সাধ্য আমার কোন কালেই হবে না
হয়তবা তাই এখন আমার বিমূর্ত সময়।
ঠিকই জানতে তুমি,
আঙ্গুল ঠোঁটে নিয়ে ফিরিয়ে আনতে আমায়-
‘আমার এক চোখে আরেকটু ঘুম আছে,একটু থাক না’
ওমন অসম ভালবাসার সমীকরণ সমাধানের সাধ্য আমার কোন কালেই হবে না
হয়তবা তাই এখনও আমি অনুমতিহীন।
ঠিকই বুঝতে তুমি,
তাইতো সৃত্মি ভ্রষ্টা হয়ে কী অনায়াসে চলে যেতে পার-
‘যা দিয়েছি তা তোমারি,আমি দূর্লভা,বৃথা ভুলতে চেয়ো না’
ওমন বিশুদ্ধ ভালবাসার অনুভুতি আমার আর কখনও নিবেদিত হবে না
হয়তবা তাই আজও আমি শূণ্য সংসারী।
ঠিকই হিসেব করেছিলে তুমি-
হৃদয়হীন প্রকোষ্ঠে বেহিসেবী চুমু স্নানের জলে ভাসিয়ে-
‘না মুসলিম,না হিন্দু,না খ্রিষ্টান,প্রস্টিটিউটের যোনি শিশ্নের পার্থক্য বোঝে না’
কি করে ফিরে যাব, প্রতিটি স্পন্দনে স্পন্দনে মিশে গিয়ে আমায় পূর্ণ করেছো এক মহাশূণ্যতার জীবনে।
তোমার বা বুকের ঠিক নীচে কালো দাগটি আমি প্রথম দেখে ভেবেছিলাম কারো চুমুর দাগ। শেষের দিকে যখন,তোমার সাথে আমার খুটখাট বেড়েই চলেছে তারমধ্যেই একদিন আমার চোখে পড়ে। তবে সেদিন রাতে তোমায় জিজ্ঞেস করেছিলাম,তুমি বললে জন্মদাগ। আর প্রশ্নটি আমি করেছিলাম দাগটি চোখে পরার মাসখানেক পরে। তখন দাগটি ছিল না।
আমি মাত্র একটি ব্যারনস খাই,তোমর এ কথা মনে পড়লে আমার এখনও হাসি পায়। কাজীপাড়ায় সেই প্রথম দিন তুমি একটি ব্যারনস খেয়েই বমি করে করে ভাসিয়েছিলে সব। আমি হাত দিয়ে তুলে তুলে তোমার বমি পরিস্কার করছিলাম। টানা তিনদিন তুমি আমি মিশে ছিলাম। চালের গুড়ার স্যালাইন ও ওষুধ আর শ্র“শুষায় তিনদিন পর তুমি সুস্থ হলে।
সেই প্রথম রাতেই তুমি-আমি কী করে কীভাবে যে মিশে গেলাম তার কোন ভুমিকা নেই,যদিও এই উপহারের ইঙ্গিত তুমি ফেইসবুকে আগেই দিয়েছিলে। তবে ঐ সাংবাদিক বারবার এটাসেটা দিতে দরজা নক করলে তুমি বিরক্ত হতে। পরে বলেছিলে আমার ক্ষণিক অনুপস্থিতে সে তোমার পেটে হাত দিয়েছিল কোন ওজুহাতে। আমি এই প্রথম কোন নারীকে নিয়ে দ্বিধায় পরলাম-প্রথম মুখোমুখি পরিচয়ের রাতেই আমারা শারীরিক সম্পর্কে জড়ালাম। দুই- এতটা উত্তেজিত অবস্থায়ও তোমার লুব্রিকেন্ট আসছিল না।
তুমি এলোমেলো পারফর্ম করছিলে। আর তিন দিনে বললে তোমার দীর্ঘ ১৩ বছরের ইতিহাস।
চলবে..
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।