সকল প্রশংসা বিশ্ব পালনকর্তা আল্লাহর জন্য সমর্পিত।
দর্শকদের চিৎকার এত নির্ভুল অনুবাদ বিশ্বে সম্ভবত একজন করতে পারেন—ডিন ডুপ্লেসি।
জিম্বাবুয়ের এই জন্মান্ধ ধারাভাষ্যকার এখন ঢাকায়, কাল বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডের সময় বললেন ধারাভাষ্যকার হয়ে ওঠার গল্প
বাংলাদেশে আপনাকে নিয়ে অনেক কৌতূহল। চোখে না দেখেও ধারাভাষ্য দেন কীভাবে?
ডিন ডুপ্লেসি: আমার জন্য স্টাম্প মাইক্রোফোন খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্টাম্প মাইক্রোফোন ঠিকভাবে কাজ করলে আমার জন্য খুব সহজ হয়।
বোলারের পা ক্রিজে পড়ার পর যে শব্দটা হয়, সেটা আমাকে সাহায্য করে। আবার রুবেল হোসেনের কথা ধরুন। ও একজন ফাস্ট বোলার। ফাস্ট বোলাররা বল করার সময় মুখে শব্দ করে এবং একেকজনের শব্দ একেক রকম। প্রথম ম্যাচে ও যখন বল করতে এল, শব্দ শুনেই বুঝেছিলাম ও রুবেল।
তবে স্টাম্প মাইক্রোফোন ঠিকভাবে কাজ না করলে আমার কাজ কঠিন হয়ে যায়।
মাঠে কখন কী হচ্ছে কীভাবে বোঝেন?
ডুপ্লেসি: অনেক সময় দর্শকই আপনাকে বলে দেবে কী হচ্ছে। কেউ যদি পুল করে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে বল পাঠায়, ফিল্ডার সেটা ধরে ফেললে ১ রানের বেশি হবে না। দর্শকেরা তখন এক রকম আচরণ করবে। (হঠাত্ দর্শকদের চিত্কার) ঠিক এই বলটার কথাই ধরুন...যে শব্দটা তারা করল, সেটা ভালো ফিল্ডিংয়ের জন্য।
ক্রিকেটে আগ্রহী হয়ে উঠলেন কীভাবে?
ডুপ্লেসি: ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পর দক্ষিণ আফ্রিকা তিন ম্যাচের একটা ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ভারত সফর করেছিল। ওই সিরিজের পর থেকেই ক্রিকেটে আগ্রহ খুঁজে পেলাম। এর পর ’৯২ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ে ইংল্যান্ডকে হারাল...১৩৪ রান করেও ইংল্যান্ডকে মাত্র ১২৫ রানে অলআউট করে দিয়েছিল তারা। এর পর থেকে ক্রিকেট আমার কাছে এতটাই ভালো লেগে গেল যে, আমার কাছে এখন এর চেয়ে বড় কিছু নয়।
আপনি তো জন্মান্ধ।
ব্যাট-বল-স্টাম্পের চেহারা আপনার কাছে অজানা। তো এসব সম্পর্কে ধারণা কী?
ডুপ্লেসি: এটা আসলে আপনাকে বুঝিয়ে বলতে পারব না। তবে আমাকে যদি একটা ব্যাট এনে দেন, ধরে বলে দিতে পারব এটা একটা ব্যাট। একটা ক্রিকেট বল বা ব্যাট কেমন, সে ব্যাপারে আমার নিজস্ব একটা ধারণা আছে। আমি সবকিছুই অনুভব করি।
মনে মনে ভেবে নিয়েছি ব্যাটটা কেমন, কিন্তু সেই ভাবনাটা কেমন তা বলে বোঝাতে পারব না। আমার একটা ভাই ছিল। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। খুব ভালো সিম বোলার ছিল ও, ভালো ব্যাটও করত। ক্রিকেটের সবকিছু সম্পর্কে তাঁর কাছ থেকেই ধারণা পেয়েছি।
আপনার জন্য ধারাভাষ্য দেওয়ার ইচ্ছাটাই তো একটা দুঃসাহসী ব্যাপার। এ কাজে আসার সাহস করলেন কীভাবে?
ডুপ্লেসি: ভয়ের তো কিছু ছিল না। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট আমাকে প্রথম সুযোগটা করে দেয়। গত সেপ্টেম্বর থেকে বোর্ডের মিডিয়া বিভাগেও আমাকে কাজ দিয়েছে তারা। তো ২০০১ সালে রেডিও ধারাভাষ্য দিয়ে আমার শুরু।
ধারাভাষ্য মানে তখন রিপোর্ট করতাম রেডিওর জন্য। তবে পরে বল বাই বল কমেন্ট্রিও করেছি ক্রিকইনফোর জন্য। এর পর ২০০৩ সালে বুলাওয়েতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের ম্যাচে প্রথম টেলিভিশন ধারাভাষ্যে আসি। বলতে দ্বিধা নেই এত দিন ধরে ধারাভাষ্য দিচ্ছি, কিন্তু ধারাভাষ্য দিয়ে কখনো একটা পয়সাও পাইনি।
টেস্টে ধারাভাষ্য দিয়েছেন?
ডুপ্লেসি: হ্যাঁ, একটা।
জিম্বাবুয়ে-দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০০৫ সালে। সুপার স্পোর্ট পার্কে...।
ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে মজার বা বিব্রতকর কোনো ঘটনা?
ডুপ্লেসি: বিব্রতকর কিছু ঘটেনি। তবে ২০০৪ সালের একটা ঘটনা মনে পড়ছে। ব্রুস ইয়ার্ডলি তখন শ্রীলঙ্কার কোচ।
ঠিক জানি না...কী একটা দুর্ঘটনায় তাঁর একটা চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তো ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের একটা ম্যাচে আমি আর ইয়ার্ডলি একসঙ্গে ধারাভাষ্য দিলাম। ধারাভাষ্যকার আমরা দুজন, কিন্তু কাজ করছিল মাত্র একটা চোখ! হা হা হা...।
ধারাভাষ্যের বাইরে আর কী ভালো লাগে?
ডুপ্লেসি: গান শুনতে ভালো লাগে। মার্শাল আর্টেও খুব আগ্রহ আছে।
কারাতে, তায়কোয়ান্দো সবই এক আধটু পারি।
লেখাটি আজকের প্রথম আলোতে পড়ে না শেয়ার করে থাকতে পারলাম না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।