স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । তবে স্বপ্ন দেখা নিয়ে কিছুদিন যাবত একটা সমস্যা হয়ে গেছে । নতুন দেখা স্বপ্নগুলো কেন যেন পূরণ হচ্ছে না খুব শীঘ্রই এই সমস্যা কেটে যাবে এই আশাতেই আছি ।
শুরু করার সুযোগটা আমি-ই দিয়েছিলাম । কোন এক অদ্ভুত কারণে আশেপাশের পরিচিতদের সাথে না হয়ে উঠলেও; আমি রিকশাওয়ালাদের সাথে বেশ সুন্দর মন খুলে গল্প করতে পারি, তারাও আমার সাথে ।
কাউকে ডাকি মামা , কাউকে ভাই বা চাচা । তাকে ডেকেছিলাম মামা । শান্তিনগর ইস্টার্ন প্লাস থেকে আজিমপুর অগ্রণী স্কুল , ভাড়া ষাট টাকা । বেশ অনেক লম্বা রাস্তাই বলা যায় । তাই আলাপ জমালাম ।
মাঝ বয়সী লোক, বাড়ি সাতক্ষীরা । সুন্দর করে টেনে টেনে কথা বলেন, শুনতে ভালো লাগে । অভাবী মানুষ ছিলেন না । মোটামুটি ভাবে চলার মতো বিষয় সম্পত্তি বাবার ছিল । কিন্তু বাবা তাকে কিছুই লিখে দেন নি ।
অভিমান করে চলে এসেছেন ঢাকায় সাত বছর । দুই মেয়ে; বড় জনের বিয়ে দিয়েছেন, ছোট জন স্কুলে পড়ছে । আর সবার মতো তিনি সারাদিন ১২০ টাকা চুক্তিতে রিকশা গ্যারেজ থেকে ভাড়া নিয়ে চালান না, টাকা জমিয়ে নিজেই কিনে নিয়েছেন । কিনতে লেগেছে দশ হাজার আর লাইসেন্স প্লেট জোগাড় করতে ১৫ হাজার । সঞ্চয়ী মানুষ ।
তার মেয়েও জানে সেটা । সে তাই বাবার কাছে আবদার করেছে তার স্বামীকে একটা মোটর সাইকেল কিনে দিতে হবে । তার সখ সে মোটর সাইকেলে চড়ে জামাইয়ের সাথে বাবার বাড়ি বেড়াতে আসবে । সব সময় শুনে আসা মেয়ে জামাইদের যৌতুক দাবির সমপর্যায়ের অত্যাচারমূলক বিরক্তিকর আবদার । তবে কে জানে , পেছন থেকে মেয়েকে দিয়ে জামাই-ই হয়তো করাচ্ছে সব ।
মোটর সাইকেল কিনতে টাকা লাগবে এক লক্ষ আট হাজার , তার কাছে আছে ষাট হাজারের মতো । মেয়েকে বলেছেন তার কাছে থাকা টাকাটা নিয়ে যেতে, মোটর সাইকেল কিনে দিতে পারবেন না । এ কথা শুনে মেয়ের হয়েছে অভিমান , সে কয়েকমাস ধরে বাবার বাড়ি আসে না ।
গভীর রাত গুটিসুটি মেরে এগিয়ে আসছে, এগিয়ে আসছে নিঃসঙ্গতা । এমন সময় প্রেস ক্লাব, হাইকোর্টে, কার্জন হলের আশপাশ বেশ ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যায় ।
রাতের ঠাণ্ডা বাতাস কেটে প্রায় উড়ে চলে যেন রিকশা । সিটি কর্পোরেশন জ্বালিয়ে দিয়েছে রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্ট গুলো । চারপাশ ভেবে যাচ্ছে হলুদ আলোয় । হলুদ আলো কেমন যেন বিভ্রম তৈরি করে । বদলে দেয় চারপাশ, হয়তো মানুষকেও ।
পড়নের ধূসর পোশাকটা মনে হয় নীলচে , ফাঁকা রাস্তাটা যেন কোন খোলা মাঠ যার আদিগন্ত ভেসে যাচ্ছে অপার্থিব কোন আলোয় আর আমি যেন তার নিচে অনন্ত কাল ধরে নিজের হারিয়ে ফেলা গন্তব্য খুঁজে ফিরছি । সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরের ফুটপাথে দেখা যায় সাজগোজ করে জবুথুব হয়ে দাড়িয়ে আছে কিছু মেয়ে । নিশি কন্যা । এদের পার হয়েই চোখে পরে আবছা অন্ধকারে বসে থাকা কোন সাহসী কপোত-কপোতী । পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় স্পষ্ট-ই চোখে পরে প্রেমিকের হাত প্রেমিকার গলার কতটা নিচে কোথায় ঘুরাঘুরি করে, হঠাৎ দ্রুত চুমু খাওয়ার দৃশ্য; যাতে কোন আবেগ নেই , আছে কেবল তাড়না ।
এরা ইউনিভার্সিটি হলে থাকা আধুনিক ছাত্রী নিশি কন্যা আর চাকুরীজীবী নিশি মানব । তাদের একটু সামনে পাশাপাশি দাড়িয়ে রাস্তার উপর দাড়িয়ে সিগারেট টানছে দুই পুলিশ । সব কিছু দেখেও তারা কিছুই দেখে না ।
এমন সময় দুঃখ, কষ্ট, হতাশার কথা শুনতে ভালো লাগে না । মন চায় কারো মুখ থেকে প্রেমের কিছু শুনতে, হোক মিথ্যা ।
তার বদলে কানে আসে কারো দুঃখের বর্ণনা । হায় , এই মানুষটা কি জানে না আমরা আরেকজনের কষ্ট অনুভবের ক্ষমতা বহু আগেই হারিয়ে ফেলেছি ?
মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকাই । মরা চাঁদ । হঠাৎ মনে হয় চারপাশটা যেন ছোট হয়ে আসছে, সংকুচিত হয়ে আসছে সব স্বপ্ন , হতাশা , স্মৃতি , বিস্মৃতি । সিগারেটের তৃষ্ণা পায় যেন ।
অপরিচিত অনুভূতি । কোন কিছুকে জ্বলতে জ্বলতে শেষ হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা । ধোঁয়ার সাথে সাথে মাথার ভেতরের দিন রাত তাড়া করে ফেরা দুঃস্বপ্নগুলোর থেকে মুক্তির সম্ভাব্য একটা উপায় যেন । চারপাশে তাকাই । সিগারেটের দোকান চোখে পরে না ।
পেলে হয়তো প্রথম বারের মতো ধরিয়ে ফেলতাম একটা । অসহ্য লাগে চারপাশটাকে, আরও একটু বেশি ।
গন্তব্যের বহু আগে নেমে গিয়ে খালি পায়ে পথ ধরি । কোন তাড়াহুড়া নেই , চারপাশ দেখতে দেখতে ধীরে সুস্থে । মানুষটা কোথায় লুকিয়ে আছে খুঁজে বের করা দরকার ।
বহুদিন পর আজ নিঃসঙ্গতাটা যেন আরও বেশি করে গলা চেপে ধরে । মুক্তি দরকার । আমি মুক্তির জন্য তাঁকে খুঁজে বেড়াই চারপাশে ।
কিন্তু সুখী মানুষদের নগরী আজও বিভ্রান্ত কারো জন্য তার রহস্য ফাঁস করে না । আমি চন্দ্রাহতের মতো আঁধার হাতড়ে বেড়াই ।
“ আজ নগরীতে হয়েছে সময়,
এসেছি বাসবদত্তা । “
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।