আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীল জল শৈশব



আমার ঘোর শৈশবের প্রথম চার বছর কেটেছে সাগরের অথৈ নীল জলে ঘেরা হাতিয়ায়। মায়ের কাছে শুনেছি আড়াই মাস বয়সে হেলিকপ্টারে চড়ে আমার প্রথম হাতিয়া গমনের গল্প। সেই কালে এখনকার প্লেন সার্ভিসের মতো হেলিকপ্টার সার্ভিস ছিলো। চট্টগ্রাম,সন্দ্বীপ,হাতিয়া, চাঁদপুর, বেগমগঞ্জ প্রভৃতি স্থানে হেলিপ্যাড ছিলো। আমার সেই ভ্রমন ছিলো বেগমগঞ্জ টু হাতিয়া।

চার বছর বয়সে ১৯৬৮সালে শুরুতে হাতিয়া ছেড়ে এলেও সেই সব ঘোর শৈশবের টুকরো কিছু স্মৃতি এখনো ছবির মতো আমার চোখে ভাসে। সেসব ঘটনার বর্ণনা দেবার পর আম্মা এর সঠিকতায় অবাক হয়েছেন। কারণ অনেকগুলো তিন বছর বয়সের আগের। যাই হোক, মজার ব্যাপার হলো সেই চলে আসার পর আমি আর হাতিয়া যাইনি। বড়ো হয়ে একবার সেখানে যাবার কথা ভেবেছিলাম।

কিন্তু আব্বার কাছে যখন জানলাম আমার শৈশবের স্মৃতিময় সব জায়গা সাগর গর্ভে হারিয়ে গেছে তখন সেখানে যাবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। সাগরের নীল জলে হারিয়ে যাওয়া আমার শৈশবের সেই গ্রামপ্রতীম শহরের এক প্রান্তে থাকতাম আমরা। বাড়ির মালিকের নাম ছিল শফু মুন্সী। চৌচালা টিনের বাসা। পাকা ভিটি, সামনে পেছনে বারান্দা।

পশ্চিমে একটা পানাপুকুর। তার পশ্চিমে উত্তরে দক্ষিণে কাঁচা রাস্তা। তার পশ্চিমে বিশাল এক দীঘি খুব সুন্দর করে লাগানো নারকেল গাছের সারিতে সাজানো। একপাশে আটচালা ডাকবাংলো। বড়ো সাহেবদের সরকারী রাত্রিবাসের কাব্যিক আয়োজন।

বাড়িওয়ালা থাকতেন পূবপাশে দোতলা টিনের বাড়িতে। দক্ষিনে থাকতেন ওভারশিয়ার সাহেব। তাঁর মেয়ে শম্পা ছিলেন আমার বড়ো, ছেলে টুটু ছিলো আমার ছোট। এই দুই অসমবয়েসীই ছিলো আমার ল্যাংটাবেলার বন্ধু। ( কানেকানে বলে রাখি, শম্পাপা মাস্টার্স করে চাকরী আর সংসারে নিমজ্জিত।

টুটু ব্যবসায়। কলেজ বেলায় আবার তাদের কাছাকাছি থেকেছিলাম। সম্পাপা যখন চোখ পাকিয়ে বলতেন, এই ছেলে আসতে এতো দেরী কেন ? তখন কেমন জানি করতো বুকের ভেতর ! সেটা ভয়ে না অন্যকিছুতে তার জবাব কিন্তু জানি না। ) বাকী রইলো উত্তরের ছবি। বাসার সামনে রাস্তা এবং ফাঁকা মাঠে ডোবায় কানাকানি।

পশ্চিমের পানাপুকুরটি জানালা দিয়ে চোখে পড়তো। অনেক মজার মজার (বিপদে পড়াদের জন্য বেদনার) ঘটনা চোখে পড়তো পানাপুকুরে। কাঁচা রাস্তা বর্ষায় খানাখন্দে ভরে যেত। তারওপর পিচ্ছিল হয়ে থাকতো। কতো রিকসা আর স্কুটার যে এই পানাপুকুরে যাত্রীসমেত হাবুডুবু খেয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।

রিকসা,স্কুটার টেনে তোলা আর কচুরিস্নান করে উঠে আসা বহু বিপন্ন মানুষের ছবি আমার চোখে ভাসছে। মহিলাদের করুণ বেদনা যেন এখনো নীলঢেউগুলোকে আরো নীলাভ করে তুলছে। একদিন সন্ধ্যার সামান্য আগে দেখি বেশ কিছু লোক মিলে পানাপুকুরে কাদাজলে মাখামাখি হওয় নতুন বউ আর বরকে তুলে আনছে। স্কুটার তিনপা শূন্যে তুলে পানাপুকুরে গোসলে ব্যস্ত। (চলবে)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।