http://shorob.com/author/bohemian/
জ্যোতির ফেইসবুক পেইজ
বাচ্চা কিভাবে হয়?
ক্লাস ফাইভে থাকতেও আমার ধারণা ছিল বাবুদেরকে মার্কেট থেকে কিনে আনা হয় !
যদিও মাঝে মাঝে একটু আকটু সন্দেহ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতো।
কিন্তু কোন কুলকিনারা করতে পারতাম না ।
না করলেই মনে হয় ভাল হত। যে কুল কিনারা করে দিল তার নাম জ্যোতি। দেখতে সুইট,পড়ুয়া/পাকনা টাইপ একটা মেয়ে ।
এমন ফাযিল মেয়ে আপনি জীবনেও দেখেন নাই এ আমি হলফ করে বলে দিতে পারি !
ওর সাথে একদিন কথা হচ্ছিল । হঠাৎ সে বাবু হওয়া নিয়ে কথা তুলল । আমি আমার মতামত দিলাম ।
জ্যোতি বলল "তুই একটা গাধা!!! বাচ্চা মার্কেটে কেন পাওয়া যাবে?! তাহলে বিয়ে করার দরকারটা কি ? "
আমি গাধা গালিটা হজম করে গম্ভীর ভাবে মাথা নেড়ে বলি "ওরা শুধু বিবাহিত দের কাছেই বাবু দেয় । নাইলে দেয় না ।
"
"হাহা!!! আন্টি তোকে খামাকা গাধা বলে না!!! অংকে পাশ করিস তো?!!! তাহলে মেয়েদের পেট কেন ফুলে যায়?!! "
আমি কোন জবাব দিতে পারি না । আমতা আমতা করি ।
জ্যোতির সাথে কথা বার্তা চলাকালে সব সময়ই এমন হয় । আমতা আমতা করতে হয় ।
সেই দিন ই আমি জানতে পেরেছিলাম বাচ্চারা দুনিয়ায় আসে কিভাবে?!!
একটা বড়সর ধাক্কার ব্যাপার ছিল।
অবশ্য জ্যোতির সাথে কথা হলেই ধাক্কা খাই ।
সেই দিন থেকে শুরু ...
ও পড়াশোনায় খুব ভাল হওয়ায় আমাদের বাসায় কম আসত ।
আসলেই শুরু হত ওর স্পেশাল জ্ঞান দান ।
সেই নিষিদ্ধ জ্ঞান দানের পর থেকেই ওকে আমি এড়িয়ে
চলতাম । আবার জানি কি নোংরা জ্ঞান দান করে !
ক্লাস ফাইভে যখন বৃত্তি পেলাম না আম্মুর বেশ মন খারাপ,আমারো মন খারাপ ।
রেজাল্টের দিন জ্যোতি আমাদের বাসায় মিষ্টি নিয়ে আসল ।
আমার মন খারাপ দেখে বলল "কিরে মন খারাপ কেন? বৃত্তি পাস নাই দেখে?"
আমি মাথা নাড়লাম "হু । "
"তোর এত মন খারাপের কি হল?!" জ্যোতি অবাক হয়ে গেল
"তোর কি বৃত্তি পাবার কথা?!!! তুই তো বেশ বড় মাপের গাধা!!!
ম্যাথ জিনিসটা বুঝিস কিছু?!! ধারার একটা অঙ্ক দিলেই তো কান্না কাটি শুরু করবি!!!তুই কেন বৃত্তি পাবি?! "
আমি তো থ না একেবারে চন্দ্রবিন্দু হয়ে গেলাম!!!
সারা জীবন মানুষকে শান্তনা দিতে দেখেছি। এই রকম কথা বার্তা বলতে শুনি নাই ।
কি বলব বুঝতে পারছিলাম না ।
"দ্যাখ অনেকে অনেক কথা বলবে । সামনের বার পাবা, বাবা! মন খারাপ কোরো না । আমি তোর রিয়েল দোস্ত! সামনের বারও তুই পাবি না বুঝলি আনলেস এনি মিরাকল হ্যাপেন্স! তোর ব্রেইন ট্র্যান্সপ্ল্যণ্ট টাইপ কিছু হলেই কেবল হতে পারে!! তাই মন খারাপ করার দরকারই নাই!!!তোর কাছের বন্ধু এই জিনিয়াস জ্যোতি সারা বাংলাদেশের মধ্যে ফার্স্ট হয়েছে এই আনন্দে তুই মিষ্টি খা । নাচতেও পারিস একটু । নাচলে তোকে একটা জিনিস পুরষ্কার দেব ।
নাচবি?!!! লজ্জা কিসের ? নাচ! আমরা আমরাই তো! "
২।
জ্যোতিরা পাঁচ বছর মালয়শিয়া ছিল । দেখা সাক্ষাত ছিল না ।
আব্বু আম্মু ওদের সাথে হালকা যোগাযোগ রেখেছিলেন ।
আমি ভুলেও ঐ ফাজিলটার খবর জানার চেষ্টা করতাম না ।
ওরা চলে যাওয়ায় বেশ খুশিই হয়েছিলাম ।
যাবার আগেও ওর সাথে দেখা করি নি ।
করলে নিশ্চিত বলত "আহারে! তোর জ্ঞানী ফ্রেণ্ড চলে যাচ্ছে! তুই তো আর মানুষ হতে পারবি না! যেই গাধা সেই গাধাই রয়ে যাবি!"
আমার এসএসসি পরীক্ষার পর ওরা আবার দেশে আসল এবং আমাদের কাছাকাছি একটা বাসা নিল ।
আমি কিছুটা হলেও ভয়ে ছিলাম এই মেয়ে এখন কেমন হয়েছে কে জানে! দেখা হলেই কি বলে বসে! মান ইজ্জত ধুলায় মিশায়ে দিবে! আবার একটু আনন্দিতও ছিলাম । ও ছোট্টবেলায় খুব সুইট ছিল ।
এখনও যদি সে রকম হয়!!
আহা! আহা!! (তখন আমার বয়স ১৬ বছর! বুঝতেই পারছেন! শরীর মনে / নাচানাচি হরমোনে ! )
আমাদের বাসায় ওরা দেখা করতে আসল । ও এসেই আমার রুমে ঢুকে গেল ।
ওকে দেখে তো আমি টাশকি খেয়ে গেলাম!! এই শয়তানটা এত সুন্দর হয়েছে?!!!
শয়তানরাই পৃথিবীতে সব পায়!!! আমি তো বান্দর হয়ে গেছি, মুখ ভরে গেছে ব্রণ দিয়ে!!
আমি ওকে দেখে একটু জড়তা বোধ করলাম । বললাম "কেমন আছ?"
ও তো হেসেই গড়াগড়ি । "কিরে তুই আমাকে তুমি করে বলছিস কেন? সুন্দরী মেয়েদেরকে তুই করে বলতে কষ্ট হয়?!! " এই বলেই হাসি!
আমার পিত্তি কলিজা আরো জানি কি কি আছে বুকে/পেটের ভিতর সব জ্বলে গেল ।
এই বদমাইশটা একদম চেইঞ্জ হয় নাই!!!
দেশে আসার পর থেকে আমাকে জ্বালিয়ে যাচ্ছে ।
যখন শুনল আমি টুকটাক লেখালেখি করি তখন খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতে চাইল ।
ভাবলাম কিছুটা হলেও অহংকারী মনোভাব দূর হয়েছে । দেখানো যেতে পারে ।
আমার লেখা একটা সায়েন্স ফিকশান দিলাম ।
ফেইক ইউটোপিয়া নিয়ে কন্সপিরেসি ।
বেশ জটিল একটা প্লট । ওর উলটাপালটা কমেণ্টের একটা উত্তর দেয়া হয়ে যাবে! আমিও পারি!
পুরোটা পড়ল । পড়ার পর বলল "বাহ!!! তোর গল্পটার প্লট ভাল তো!!! সমস্যা একটাই!"
"বাহ" শুনে আমার মুখে একটা হাসি এনেছিলাম , "সমস্যা" শুনে হাসিটা পেটের ভিতর পাঠিয়ে দিলাম । এখন যে কি বলবে!!
"কি সমস্যা?!" দুর্বল গলায় বললাম ।
"তোর লেখার হাত খারাপ! প্রচণ্ড খারাপ!!"
অন্য কেউ বললে ঠিক হার্ট এটাক হয়ে যেত । জ্যোতিকে চিনি বলেই হার্ট এটাক হল না ।
"আইচ্ছা" ছাড়া আর কোন কথা মুখ দিয়ে বেরুলো না ।
"জাফর ইকবাল এর ছায়া নেই তোর গল্পে । সাব্বাস দেই।
তোর কাছে এটাও আমি আশা করি নাই!! এখনকার তরুণরা কিছু লিখলেই জাফর ইকবাল এর ছায়া থাকে ।
জাফর ইকবাল এই দেশে সায়েন্স ফিকশান কে জনপ্রিয় করেছেন। তরুণরা আলাদা কিছু না লিখলে
সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখা যাবে না । বাংলা সায়েন্স ফিকশান এগুবে না ... ইউটোপিয়া নিয়ে লিখেছিস ভাল কথা,কিন্তু আরোপিত ইউটোপিয়া...আজিমভ, আর্থার সি ক্লার্ক, (কি কি সব হাবি জাবি জিনিস ১ ঘণ্টা ধরে বলল সব মাথার তিন কিলোমিটার উপর দিয়ে গেল । )... বলা শেষ করে বলল "আজ উঠি ।
কিছুই যে বুঝিস নাই জানি!!! তোর ব্রেইন এখন ও আগের মতই আছে! আমি যখন এসে গেছি তোর আর চিন্তা নাই! গাধা কে মানুষ করে ফেলা আমার কাছে ব্যাপার না! তোর যত প্রবলেম আছে সব সলভ করে ফেলব। ম্যাথ থেকে শুরু করে লেখা লেখি সব কিছুতেই হেল্প করব! সো ডোন্ট ওরি! "
আমি কিছুই বলতে পারি নি এর মাঝে । শুধু শুনে গেছি ।
৩ ।
জ্যোতি কে এড়িয়ে চলার একটা চেষ্টা ছিল ।
লাভ হয় নাই ।
কয়েক দিন এড়িয়ে চলার পর যখন ধরা খেলাম তখন বলল "কিরে তুই আমাকে এড়িয়ে চলছিস?! আমার প্রেমে পড়িসনি তো?!!!"
আমি আবারো চন্দ্রবিন্দু হয়ে গেলাম । কি বলব বুঝতে পারছিলাম না । সব সময় ওর কাছে সবচেয়ে আনএক্সপেক্টেড প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় ।
"আরে এই বয়সে প্রেমে পড়বি না?!!লজ্জা পাচ্ছিস কেন?আর আমার প্রেমে পড়াটা তো স্বাভাবিক! আমার প্রেমে না পড়লে বুঝতে হবে তোর শরীরে সমস্যা আছে !!জানিস ঢাকায় আসার ১৯ দিনের মধ্যে ৩৭ টা প্রেমপত্র পেয়েছি ।
জবাব দিতে দিতে শেষ!"
"তুই ওদের লেখার জবাব দিচ্ছিস?!!" আমি অবাক হয়ে বললাম ।
"ওমা!! জেলাস!!!(এই বলে কনুই দিয়ে আমার বুকে একটা খোঁচা দিল ) দিব না? বেচারারা এত সুন্দর একটা ডিসিশান নিল!! মানে আমার মত রূপবতীর প্রেমে পড়ে!!! বুঝিসই তো ! আমার মত সুন্দরী,মেধাবী মেয়ে তো আর একটা ও নাই!!"
আমি কিছু বললাম না!সাধারণ কথার জবাবই আমি দিতে পারি না । সেখানে আবার এই রকম উদ্ভট কথা বার্তার জবাব !
"যাই হোক । এই বয়সে কেন প্রেমে পড়বি সেটা নিয়ে বলছিলাম । এই সময়ে হরমোনের ব্যাপার আছে ।
বিপরীত সেক্সের প্রতি ইন্টারেস্টের ব্যাপার আছে । নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি আগ্রহের ব্যাপার আছে । ও ভাল কথা তোর পিউবার্টি কবে শুরু হয়েছিল রে?! এই বলে চোখটিপল!
--------------------------
আমার কথা :
আমি লেখালেখি পারি না ঠিকই ,কিন্তু আমার মাথায় অনেক চরিত্র ঘোরাফেরা করে ।
তাদের সাথে একাকী আমার সময় বেশ ভাল কেটে যায় ।
একদম আনসিরিয়াস টাইপ কথামালা আপনাদের জন্য তুলে দিলাম।
লেখার সময় খুব ভাল লাগছিল ।
আপনাদের ভাল লাগলে আমি খুব খুশি হব । পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
এই চরিত্র টি স্বপ্নে তুমি র আংকেল এর মত কথাবার্তা শুরু করতে পারে তাই সাবধান! ওকে নিয়ে আরো লেখার ইচ্ছে আছে ।
আপডেট : দ্বিতীয় পর্ব **জ্যোতির্ময় বয়ফ্রেণ্ড ** (এক রূপবতীর সাথে ডেটিং...!)
আমার গল্প সমুহ
বাজার অথবা পাত্র পাত্রী বিষয়ক কথোপকথন
**আলো ও অন্ধকারের গল্প**
** স্বপ্নে তুমি **(১৮+, হাসির রোমাণ্টিক গল্প)
** শিকার ** (প্রায়) থ্রিলার গল্প
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।