``চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল। ' -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
…
১৬ জানুয়ারি ২০০৯, ছুটির দিন থাকায় দুই-মেগাপিক্সেলটা সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য রায়েরবাজার বধ্যভূমি। এর আগে যাইনি কখনো।
লোকেশান নিয়ে জানলাম, মিরপুর থেকে ‘শতাব্দী’ টাউন সার্ভিসে ‘শংকর’ নামক জায়গায় নেমে রিক্সায় গন্তব্যস্থল। আমি তো আর চিনি না, গাবর যাত্রী পেয়ে বাসঅলা আমাকে নামিয়ে দিলো পিলখানার রাইফেল স্কয়ারের কাছে। কী আর করা ! বাংলাদেশ রাইফেলস-এর সুদৃশ্য ফটকটি তাক করে দিলাম সাটার টিপে।
এরপর এখান থেকেই রিক্সায় উঠলাম। চিপা-চাপা গলি-গালা পেরিয়ে ভেড়িবাধের খা খা শূন্যতায় এসে ঢাকাকে কেমন অপরিচিত লাগলো।
দূর থেকে বধ্যভূমি নজরে এলো। ঝিম ঝিম করা দুপুর। কোলাহলহীন অদ্ভুত ফাঁকা পরিবেশ দেখে কল্পনা করার চেষ্টা করলাম ছত্রিশ বছর আগের সেই একাত্তরে এলাকাটা কেমোন নির্জন ভয়াল আর দুর্গম ছিলো।
অনেক বড় এরিয়া নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমি। এখানে এলে ভেতরটা সত্যি সত্যি ফাঁকা হয়ে যায়।
ইচ্ছেমতো সাটার টিপছি। দুটো উদোম গতরের বাচ্চা ছেলে এসে সামনে দাঁড়ালো। নিজেকে দেখা ও দেখানোর ইচ্ছা মানুষের চিরন্তন। সম্ভবত জেনেটিক কোডেই তা গাঁথা থাকে। এরাও তো এর বাইরে নয়।
সাটার টিপলাম তাদের দিকে। একটুকু চাওয়া, মনিটরে নিজেদের চেহারা দেখে সে কী খুশি ! আহা, কতো অল্পেই তুষ্ট এরা !
আবার রিক্সায় ফেরা। গলি-গালা পেরিয়ে মূল সড়কে পৌঁছেই হাঁটা ধরলাম। যাবার সময় এদিকে চমৎকার কিছু স্থাপনা চোখে পড়েছিলো। এখনকার লক্ষ্য সেগুলোই।
কিন্তু চোখে পড়ছে না একটাও। তাহলে কি ভিন্ন ভিন্ন রাস্তায় আসা যাওয়া ! ইবনে সিনা’র সুদৃশ্য স্থাপনাটা চোখে পড়তেই ক্লিক।
এবার সামনে পড়লো ‘ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’। ভাবলাম দেই ক্লিক করে।
আরেকটু এগুতেই বাঁ পাশে লেকের লাগোয়া সেই লাল বাড়িটা।
জাহাজের আদলে তৈরি বাড়িটার ছবি দূর থেকে অনেককেই তুলতে দেখলাম। আমি আর ভীড়ের মধ্যে না গিয়ে আড়াআড়ি গিয়েই ক্লিক করলাম। একটুকু গাছের আড়াল না হয় থাকলোই !
বিকেলের আলো ততক্ষণে মজে এসেছে। ‘ইউল্যাব’-এর স্থাপনাটা যেদিকে, দুই-মেগাপিক্সেল তাক করতে গিয়ে শেষ সূর্যটা ডিসটার্ব করলো। করলে করুক।
হাঁটতে হাঁটতে রাইফেলস স্কয়ার পেরিয়ে সিটি কলেজ মোড়ের কাছে এসে ফিরতি বাসে উঠলাম। ততক্ষণে সন্ধ্যা নামি নামি। বাসের জানালা দিয়ে চোখ পড়লো মৃনাল হকের তৈরি আরেকটা ভাস্কর্য ‘অর্ঘ্য’। চলন্ত বাস থেকেই ক্লিক করলাম। হলো না।
ওটার জন্য আরেকদিন বাসের জানালায় বসতে হবে।
বাসায় ফিরে দেখি স্ত্রীর শ্বাসকষ্টটা উঁকিঝুকি মারছে ফের। কিন্তু ইনহেলারটা কোথায় রাখলো খুঁজেই পাচ্ছে না সে।
…
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।