আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক বৃদ্ধ বয়সের অলস ভাবনা! এডিটেড!

আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!

পার্কের বেন্ঞ্চে একাই বসে, সবুজ ঘাস গুলো ঢেকে গেছে ঝরে পড়া লাল হলুদ ম্যাপলের পাতায়। কিছু দিন আগেও পাতাগুলো সবুজে ছেয়ে ছিলো পুরো পার্কটায়। শীতের সময় আসছে বলেই পাতাগুলো ঝরে পড়েছে। বৃদ্ধ ভাববার চেস্টা করে কতগুলো শীত সে জীবনে যে দেখেছে হাসতে খেলতে।

খুবই সোজা হিসাব, নিজের বয়সের হিসাবের সাথে মিলিয়ে নিলেই হলো! বৃদ্ধ নিজেই আনমনে হেসে ভাবে কতগুলো শীত সে খুব সুখে কাটিয়েছে। স্মৃতির পাতাগুলো মাঝে মাঝে উল্টোতে বিরক্তি লাগলেও স্বল্প দৈর্ঘ্যের দিনে যৌবনের ভাগটার কথা মনে পড়তে বড় সুখ লাগে তার। বাসায় গিয়ে কি আর করবে, দুটো আলু সেদ্ধ আর কিছু লেটুস পাতা। ডাক্তারের কড়া বারন গুরুপাকে! ইদানিং বাসায় থাকতে মোটেও মন টিকছে না, গতকাল টেলিফোন লাইনটা কেটে দিতে বলা হলো, কারন কাউকে ফোন করবার নাই, টেলিভিশনে তেমন কিছু দেখাও যায় না, সব যাচ্ছে তাই। অথবা মুভী....হলিউডের কারনে এখন এদেশে ২-৩ মাসে একটা মুভী মুক্তি পায় আর তাও যা হয় সবই বস্তাপচা।

দেশটা কেমন যেন পাল্টে গেলো। পাল্টে গেলো হয়তো নিজের জীবনটাও। একটা দুঃখের স্মৃতি খুব মনে পড়ে। তখন দেশে থাকতে কাউকে খুব মনে ধরেছিলো। একটা গোলাপ নিয়ে প্রতিদিন বনানীর অন্জ্ঞনসের সামনে অপেক্ষা করতে ভালোই লাগতো।

সে উত্তরা থেকে আসতো। একটা ফোন দিতো অবস্হান জানার জন্য, তারপর অকারন ঘোরাফেরা অথবা ওর শপিং। তারপর কোথাও বসে একটু ফ্রেন্ঞ্চ ফ্রাই অথবা মুড়ি মুড়কি, বেশ ভালোই। একদিন সেই দেখাটা বন্ধ হয়ে গেলো। সম্পর্কগুলো চোখের পলকেই শেষ, হ্রদয়ে তখন গভীর ক্ষত থাকলেও ক্যারিয়ার অথবা আকাশ ছোবার স্বপ্ন গুলোর প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করবার জন্য ছুটা শুরু করলো অবিরাম।

একসময় দেশ ছাড়লো, খুব কস্টে চলছিলো প্রথম দিন গুলো এখানে, আবহাওয়া, চালচলন, অর্থনৈতিক সবকিছু নিয়েই বিদিকিচ্ছিড়ি। হঠাৎ একদিন কোনো এক বন্ধুর দেয়া ভিডিওর লিংকে ওর বিয়ের অনুষ্ঠান দেখলো, মনে পড়ে সেই অনুষ্ঠানে বেজেছিলো বিসমিল্লা খার সানাই: কাভি কাভি মেরে দিল মে....... তারপর কতরাত নির্ঘুম কেটে যায়, শুধু কর্তব্যবোধগুলো রক্তে এ্যাড্রিনালিনে নাড়া দিতো বলেই হয়তো এগিয়ে যাওয়া চলছিলো। একদিন কর্তব্যবোধের দিন ফুরোলো, কিন্তু আয়নায় তাকাতেই দেখে বড্ড দেরী হয়ে গেছে। খুব করে কাদতে মন চাইছিলো তখন, কিন্তু কোনো এক শীতকালে কেউ কাদতে বারন করেছিলো, কারন কাদলে নাকি অশ্রূগুলো জমে যাবে! হাহাহাহাহা......... সবাই যে যার পথে চলে গেলো, কেউ কেউ খুব ঘনিষ্ঠ চিরবিদায়বেলায় নিজেকে বড্ড নিঃসঙ্গ মনে হওয়া শুরু করলো। একবার খুব গো ধরে বসলো, যৌবনে স্বপ্ন ছিলো তার শেষ জীবন কাটুক সাগরে, মন খুব চাইছিলো সাগর পাড়ে একখন্ড জায়গা কিনে কাটিয়ে দিক বাকিটা জীবন।

খুব সুন্দর একটা বাংলো থাকবে থাকবে সেখানে অটবীর আসবাব, যেমনটি তার প্রিয়তমা সাজাতে চেয়েছিলো তার ছোট্ট সবার ঘর আর ড্রয়িং। তবে একটা ডেস্লে লুকোনো থাকবে একটা রিভলবার আরেকটা গুলি। যখন হয়তো মনে হবে এই জীবনটা বেচে থাকা মানে একটা বোঝা বয়ে বেড়ানো তখনই গুলিটা রিভলবারে ভরে মাথার এক কোনায় বসে টেনে দেবে ট্রগার। বন্ধ হোক যত মনের উচাটন! পরে ভাবলো কি মানে হয় এমন কাপুরুষতার, একবার দেখুক না ভবিষ্যতটা, হয়তো কিছু দেখার আছে অদেখার, অথবা জীবনের মানে হয়তো কোনদিন পাল্টাবে! ভাগ্য তো সবারই বদলায়! বাড়িয়ে দিলো কাজের পরিমান, ব্যাংকে জমলো প্রচুর পয়সা, সেই পয়সা দিয়ে হয়তো আকাশের মালিকানাও দাবী করা যেতো, ভাগ্য তার আসলেই বদলাল। কিন্তু এই অর্থহীন মালিকানা নিয়েই কি হবে, কে দেখবে! এখন লাভ ক্ষতির কোনো হিসাব নাই, শুধু হিসাব আর কতদিন এরকম শীত গ্রীস্ম দেখবো ভীন দেশে।

ভীন দেশের শীত গ্রীস্মে দেশের গায়ের সেই সোদা গন্ধ নেই, নেই খেজুড়ের রস খাবার সুযোগ, অথবা মেলার মাঝে হাওয়াই মিঠাই অথাব ক্যান্ডি ফ্লস খাবার বাসনা, অথবা কারো চোখে চোখ রেখে জীবনটা কাটিয়ে দেবার সংকল্প বোধ! বয়স খুব বাজে ভ্রমন সঙ্গী- মনে হয় না; বয়স একটা খুব বাজে বাস্তবতা, যাকে একসময় হাড়ে হাড়ে বুঝা যায়!! হঠাৎ দূর থেকে গীর্জার আওয়াজে ঘোর কাটে, ঘড়িতে দেখে বুঝতে পারে বাড়ি ফেরার সময় হলো, একটু পর সন্ধ্যা নামবে, শীতের সন্ধ্যা! অনেক আগে শোনা মাকসুদের একটা গান দিনের আলো নিভে গেলো রঙ্গের দোকান খেলো ও বেলা গেলো এই বার তুমি সাধের দোকান তোলো এই বার তুমি আপন দেশে চলো! নিজের আপন দেশ কেমন আছে, জানে না বৃদ্ধ, হঠাৎ সেই সানাইয়ের সুর বুকে বাজে আর চারিদিক সব চুরমার হয়ে যায়!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।