আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা-ই সন্তানের প্রধান অভিভাবকঃ

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

মা-ই সন্তানের প্রধান অভিভাবকঃ "She admits to never wanting to have her own children, disregarding them ''too big a responsibility'' তিনি স্বীকার করলেন যে কখনোই নিজের সন্তান চাননি কারণ এ এক বিশাল দায়িত্ব। স্বীকারোক্তিটি বুকার পুরস্কারপ্রাপ্ত বিখ্যাত উপন্যাস "দ্যা গড অব স্মল থিংস"-এর লেখক অরুন্ধতী রায়ের, যিনি শুধু ঔপন্যাসিক হিসেবেই খ্যাতি অর্জন করেন নাই বরং তাঁর কলাম যা সমস্যার গভীরে ঢুকে সত্যকে তুলে আনে আর তিনি তা কোনোরকম ভনিতা ছাড়াই স্পষ্টভাবে প্রকাশের সাহস রাখেন। এহেন দায়িত্বশীল অরুন্ধতী সন্তান ধারণ করতে লালন করতে আগ্রহী নন বিশাল দায়িত্ব বলে, যে দায়িত্ব কিনা নারীরা অহরহই পালন করছে এবং একমাত্র নারীরাই করছে। সারা বিশ্বের তথ্যই বলে দেয় যে নারীরা পিছিয়ে আছে। সৃজনশীল, মননশীল, শিল্প, গবেষণা, ব্যবসা সব ক্ষেত্রেই তারা পিছিয়ে পড়া শ্রেণী।

নারীদের যে দু'চারটি সাফল্য তাও অনেকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনার মতো। সে সব সফল নারীর জীবন পর্যালোচনা করলেও দেখা যায় যে তাঁরা বিশেষ রকম পারিবারিক সুবিধা ভোগ করেছেন বা করছেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে তাঁদের অনেকেই আবার নিঃসন্তানও। যেমন বেগম রোকেয়া, সিমোন দ্য বেভোয়ার, ভার্জিনিয়া উলফ, মার্গারেট স্যাঙ্গার এবং যা অরুন্ধতী রায়ের ক্ষেত্রেও সত্য। তাহলে এ কথা কি বলা যায় না যে পুরুষরা যে এগিয়ে যায় তা তাদের মেধার কারণে নয় বরং তার প্রধান কারণ হচ্ছে তারা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে এবং তাদেরকে সন্তান ধারণ করতে বা লালন করতে হয় না। আমি আমার অনেক লেখাতেই প্রকাশ করেছি-আমার জন্মের সময় আমার মা হারানোর কথা।

জীবনের প্রতিটিক্ষেত্রে আমি আমার মায়ের অভাব অনুভব করেছি। প্রায় ২৪ বছরাধিকাল সন্তানের বাবা হবার পরেও আমার অন্তর থেকে মায়ের আকুতি কমছেনা-এক্টি বারের জন্যও। ব্যক্তি জীবনের ছোট খাট সাফল্যে কিম্বা বিষাদে কখনো মাকে হাইলাইটস করতে পারিনি। আজকাল আমাদের দেশে বহু বছরের বহু চিন্তা-ভাবনার পর একটি "বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত" নেয়া হয়েছে যে বাবার নামের পরে মায়ের নামও লিখতে হবে। আহা কী ভাগ্য মায়ের সন্তানের জীবন বৃত্তান্তে তার স্থান হয়েছে অন্তত।

এখন আমি যখনি বিভিন্ন উপলক্ষে আমার পার্সোনাল ডেটা পুরন করতে যাই-তখন আমি আমার মায়ের নামও লিখতে পারছি। আমার অদেখা মাকে কিছুটা সম্মান জানাতে পারছি। যদিও মায়ের নামটি প্রথমে থাকাই সমীচীন। ১৯১৪-তে মার্গারেট স্যাঙ্গার নারীর স্বাধীনসত্তার মূল্যায়নের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন-" নারীরও মূল্যায়ন হওয়া উচিত কাজ বা দক্ষতার ভিত্তিতে, নারীর প্রজনন নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন, তাঁর ভাষায় যে নারীর শরীর তার নিয়ন্ত্রণে নেই সে নারী মুক্ত নয়"।

পুরুষতন্ত্র সম্ভবত এ কারণেই মেধাবী নারী পছন্দ করে না। তাই মার্গারেট স্যাঙ্গার-এর পর এত বছর গিয়েছে তবু নারীর অবস্থান যেই কে সেই। নারীকে অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত রেখে, কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে পুরুষের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখে এ সমাজ। এ যেন মাথাব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য মাথা কেটে নেয়া। হুমায়ুন আজাদের "আমাদের মা" কবিতার ছত্রে ছত্রে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে সংসারে আমাদের নারীদের বাস্তব অবস্থান।

আমাদের মাকে আমরা বলতাম তুমি বাবাকে আপনি। /আমাদের মা গরিব প্রজার মতো দাঁড়াতো বাবার সামনে/কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ ক'রে উঠতে পারতো না/আমাদের মাকে বাবার সামনে এমন তুচ্ছ দেখাতো যে/মাকে আপনি বলার কথা আমাদের কোনোদিন মনেই হয় নি/ আমাদের মা ছিলো অশ্রুবিন্দু! দিনরাত টলমল করতো/ আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি। । সারাদিন ঝ'রে ঝ'রে পড়তো/ আমাদের মা ছিলো ধানখেত। ।

সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো/আমাদের মা ছিলো দুধভাত। । তিন বেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো/আমাদের মা ছিলো ছোট্ট পুকুর। । আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম।

/ আমাদের মার কোনো ব্যক্তিগত জীবন ছিলো কি না আমরা জানি না/ আমরা ছোটো ছিলাম, কিন্তু বছর বছর আমরা বড়ো হ'তে থাকি/ আমাদের মা বড়ো ছিলো, কিন্তু বছর বছর মা ছোটো হতে থাকে/ আমাদের মা দিন দিন ছোটো হ'তে থাকে/আমাদের মা দিন দিন ভয় পেতে থাকে। /আমাদের মা আর বনফুলের পাপড়ি নয়, সারাদিন ঝ'রে ঝ'রে পড়ে না/আমাদের মা আর ধানখেত নয়, সোনা হয়ে বিছিয়ে থাকে না/আমাদের মা আর দুধভাত নয়, আমরা আর দুধভাত পছন্দ করি না/আমাদের মা আর ছোট্ট পুকুর নয়, পুকুরে সাঁতার কাটতে আমরা কবে ভুলে গেছি/ কিন্তু আমাদের মা আজো অশ্রুবিন্দু, গ্রাম থেকে নগর পর্যন্ত/ আমাদের মা আজো টলমল করে। ছোটবেলা থেকেই ব্যক্তিত্ব গঠনের চেষ্টা না করে বহুক্ষেত্রেই কখনো স্নেহের নিগড়ে কখনো বা নানারকম বিধিনিষেধ, অশিক্ষা আর ভুল শিক্ষায় ভরে দিয়ে মানসিকভাবে পঙ্গু করে তোলা হয় মেয়ে সন্তানটিকেঃ রবীন্দ্রনাথের আধাআধি মেয়ে যাকে বিধাতা পুরো সময় দেননি মানুষ করে গড়তে। এভাবেই পরবর্তী জীবনে স্বামীর সংসারেও তার অবমূল্যায়নের ভিত রচিত হয়। স্বামীর সংসারে মেয়েটি অত্যাচারে অনাদরে নিজের অধিকারের কথা ভুলে গিয়ে, কখনো বা নিজের সত্তাকে বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের আঁকড়ে ধরে জীবন কাটায়।

কিন্তু সন্তানরাও মাকে অনেক সময় এভাবে দেখতে দেখতে তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যই করতে শেখে। আর ছেলেরা তো প্রথমে মা তারপর বোন আর পরবর্তী সময়ে স্ত্রীর প্রতি এরকম মানসিকতাই ধারণ করে। আবার শুরু হয় সেই একই চক্র। নারীও যে সন্তানের প্রধান অভিভাবক। ।

এ সত্যটি ধামাচাপা না দিয়ে এজন্য তাকে সম্মান জানানোর বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তাকে এই বিশাল দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়ানো এবং বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেয়া প্রয়োজন। যতোই চেষ্টা করা হোক নারী জাগছে, জাগবে। একসময় নারী তার প্রতি এই বৈষম্য মেনে নেবে না। সময় এসেছে এ কথা ভেবে দেখার যে প্রতিটি নারী তার প্রতি এই অবহেলা আর বৈষম্যের জন্য যদি সমাজ-সংসারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে তার নিজের ক্যারিয়ার, নিজের জীবনের উন্নতি, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে গুরুত্ব দিয়ে সন্তান ধারণে অনাগ্রহী হয় তখন কী হবে!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।