তৃতীয় বিশ্ব নয়, বাংলাদেশকে দেখতে চাই প্রথম বিশ্বের কাতারে
ডে-লাইট সেভিং টাইম এবং আমাদের মহাজ্ঞানী মণ্ত্রী
ইতিহাস থেকে জানা যায় আধুনিক ডে-লাইট সেভিং টাইম প্রথম প্রস্তাব করেন জর্জ ভারনন হাডসন ১৮৯৫ সালে। এর উদ্দেশ্য ছিল অপরাহ্নে বেশিক্ষণ দিনের আলো ব্যবহার করা।
গ্রীষ্মকালে দিনের দৈর্ঘ বেশি (গড়ে ১৩ ঘন্টা) আর শীতকালে দিনের দৈর্ঘ কম (গড়ে ১০ ঘন্টা)। প্রচলিত সময় ব্যবস্থায় গ্রীষ্মকালে পূর্বাহ্নে অনেক সময় অপচয় হয়। তাই ঘড়ির কাটা এগিয়ে দিয়ে সেই অপচয়টা কমানো যায় এবং অপরাহ্নে বেশিক্ষণ সূর্যের আলো পাওয়া যায়।
এতে করে বাজার-সদাই, ঘোরাঘুরি, খেলাধূলা ও অন্যান্য কাজের জন্য একটু বেশি সময় পাওয়া যায় অফিস সময়ের শেষে। তাছাড়া দেড়িতে সন্ধ্যা হয় বলে ঘর-বাড়ী, দোকান-পাট, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদিতে বাতি, পাখা, শীতাতপ যন্ত্র এগুলোও চালাতে হয় দেরি করে। ফলে বেশ খানিকটা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়।
এ উদ্দেশ্যে বিশ্বের অনেক দেশেই এটা প্রচলিত আছে। যদিও অনেক দেশে বিতর্কের কারনে এ পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে।
তারপরও যারাই এ পদ্ধতি অনুসরন করছে তারা সবাই প্রায় একই ধরনের সময় মেনে চলেছে। যেমনঃ
=> যুক্তরাষ্ট্রে এপ্রিলের প্রথম রোববার থেকে অক্টোবরের শেষ রোববার পর্যন্ত ডে-লাইট সেভিং টাইম
=> কানাডায় মার্চের দ্বিতীয় রোববার থেকে নভেম্বরের প্রথম রোববার পর্যন্ত
=> ইউরোপের প্রায় সব দেশে মার্চের শেষ রোববার থেকে অক্টোবরের শেষ রোববার পর্যন্ত
=> মিশরে এপ্রিলের শেষ শুক্রবার থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত
=> পাকিস্তানে ১৫ই এপ্রিল থেকে ১লা নভেম্বর পর্যন্ত
=> অস্ট্রেলিয়ায় অক্টোবরের প্রথম রোববার থেকে এপ্রিলের প্রথম রোবার পর্যন্ত
=> নিউজিল্যান্ডে সেপ্টেম্বরের শেষ রোববার থেকে এপ্রিলের প্রথম রোবার পর্যন্ত
খুশির কথা হচ্ছে আমাদের দেশেও এ পদ্ধতি চালু হয়েছে। প্রথম দিকে নতুন সময়ের সাথে মানিয়ে নিতে লোকজনকে একটু সমস্যায় পড়তে হলেও এখন সবাই মানিয়ে নিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে ভাল উদ্দোগ। বিদ্যুৎ কতটা সাশ্রয় হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও কিছুটা যে সাশ্রয় হয়েছে তা সবাই মানবেন।
সবচেয়ে ভাল যেটা হয়েছে তা হচ্ছে অফিস ছুটির পরও বেশ খানিকটা সময় পাওয়া গেছে যা উপভোগ্য হয়েছে।
কিন্তু এতসব ভালর পরও কিছু ব্যাপার আমাদের হতাশ করেছে। তার মধ্যে একটা হচ্ছে এই সময় ব্যবস্থা কবে তুলে নেয়া হবে এবং আবার আগের সময় চালু করা হবে তার নির্দিষ্ট কোন ঘোষণা আমরা সরকারের কাছ থেকে পাই নি। বরং কিছুদিন আগে এমনই এক প্রশ্নের জবাবে এক মাননীয় মণ্ত্রী বিষ্ময় প্রকাশ করলেন এই বলে যে, আগের সময় আবার কি? এবং এও বললেন এই সময় পরিবর্তন করার কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই। যদি তাই হয় তাহলে ভয়ের কথা!
কারন যখন ডে-লাইট সেভিং টাইম চালু করা হল ( ১৯শে জুন) তখন সূর্যোদয় হত ভোর ৫ টা ১২ মিনিটে এবং সূর্য অস্ত যেত সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিটে।
অর্থাৎ দিনের দৈর্ঘ ছিল ১৩ ঘন্টা ৩৬ মিনিট। পরিবর্তিত সময় অনুযায়ী যা দাঁড়ায় সুর্যোদয় ৬ টা ১২ মিনিট এবং সূর্যাস্ত ৭ টা ৪৮ মিনিট। সকালের জ্যামের কথা মাথায় রেখে সবাই একটু আগেভাগেই ঘর থেকে বের হয়। আমি বের হই সকাল ৮ টায়। তাতেও সাড়ে নয়টার আগে অফিসে পৌছা যায়না।
যদি এই সময় চালু থাকে তাহলে ডিসেম্বর মাসে কি অবস্থা হবে তা কি সরকার ভেবে দেখেছে?
১০ই ডিসেম্বর বর্তমান সময় অনুযায়ী সুর্যোদয় ৭ টা ৩০ মিনিটে এবং সূর্যাস্ত ৬ টা ১৩ মিনিটে। তাহলে একবার ভেবে দেখুন সাড়ে ৭ টায় যেখানে সূর্য উঠবে সেখানে একজন লোক কিভাবে ৮ টায় ঘর থেকে বের হবে অফিসে যাওয়ার জন্য? ৮টায় বের হতে হলে তাকে প্রাতঃক্রিয়া, গোসল ও নাস্তা সারার জন্য ঘুম থেকে উঠতে হবে অন্ততঃ ৬ টায়, যার মানে ফজরের আযানেরও আগে। যা জানুয়ারী মাসে আরও প্রকট আকার ধারন করবে, কারন ১০ই জানুয়ারী সুর্যোদয় ৭ টা ৪৩ মিনিটে এবং সূর্যাস্ত ৬ টা ৩০ মিনিটে।
অনেক স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে সকাল ৮ টায় ক্লাশ শুরু হয়। তাদের অবস্থা কি হবে একবার ভেবে দেখুন।
এসব পরিস্থিতির কথা কি সরকার একবারও ভেবেছে? যদি ভেবে থাকে তাহলে কিকরে সরকারের একজন মণ্ত্রী বলতে পারেন সময় পরিবর্তন করার কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই?
সেক্ষেত্রে আমার কথা হল এমন মহাজ্ঞানী মণ্ত্রী আমাদের দরকার নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।