মৃত্যুর ১৫ বছরেও সুলতানের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়নি। নির্মাণের ৬ বছর অতিবাহিত হলেও খুলে দেয়া হয়নি সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা। দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকায় সুলতানের দুর্লভ চিত্রকর্মসহ তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র কিউরেটরের অভাবে পৌনে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সংগ্রহশালা কোনো কাজে আসছে না। বারবার মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও এমপিদের কোনো আশ্বাসই কাজে লাগেনি।
ফলে সুলতান প্রেমী দর্শকরা সুলতানের শিল্পকর্ম ও স্মৃতিগুলো দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
জানা যায়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে স্থ্ানীয় গণপূর্ত বিভাগ ২০০১ সালের জুলাইয়ে সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার নির্মাণ কাজ শুরু করে ২০০৩ সালের জুনে শেষ করে। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পরে কিউরেটরসহ চুক্তিভিত্তিক ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ হলেও তা বাতিল হয়ে যায়। ফলে শিল্পীর মূল্যবান চিত্রকর্মগুলো সুষ্ঠু পরিচর্যার অভাবে বিনষ্ট হতে চলেছে। বন্ধ হয়ে গেছে শিশু স্বর্গের নিয়মিত কার্যক্রমও।
তালাবদ্ধ এ সংগ্রহশালাসহ সুলতান কমপ্লেক্স দেখাশোনা করছেন তিনজন আনসার সদস্য ও একজন মালি। নষ্ট হয়ে গেছে একটি এসি। জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা সাইফুল হাসান মিলন অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সংগ্রহশালার কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করলেও তা জনবলের অভাবে তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। কিন্তু কেন এই অবস্থা? বারবার আশ্বস্ত করেও সুলতান সংগ্রহশালার প্রতি কেন এমন অবহেলা? বাগেরহাট থেকে সুলতান সংগ্রহশালা দেখতে আসা চাকরিজীবী রত্না খানম (২৯), খুলনায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরিরত গোলাম রসুল ফারুকী ও করিমুল ইসলামসহ দর্শনার্থীরা সাংবাদিকসহ স্থানীয়দের কাছে এমনই প্রশ্ন করছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক ও কলাম লেখক প্রদ্যোৎ ভট্টচার্য জানান, স্বপ্নচারী সুলতান যা চাইতেন তা হলো না।
আর কতকাল তালাবদ্ধ থাকবে? যথাযথ কর্তৃপরে আন্তরিকতার অভাবেই সংগ্রহশালা নিয়মিত খোলা হচ্ছে না বলে প্রতীয়মান হয়। এËেত্র তার (সুলতান) স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটছে। চিত্রশিল্পী বলদেব অধিকারী বলেন, প্রকৃতি ও পশু-পাখি প্রিয় সুলতানের হাতে গড়ে তোলা চিড়িয়াখানাও বিলুপ্ত করা হয়েছে। তার পোষা ভল্লুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিক, মুনিয়া, সাপ, ষাড়সহ বিভিন্ন পশু-পাখি গুলো ঢাকা চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঢাকা চিড়িয়াখানা কর্তৃপ সুলতানের নামে একটি কর্ণার করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও আজো বাস্তবায়িত হয়নি।
আমাদের দাবি পশু-পাখিগুলো ফিরিয়ে এনে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়ে সুলতান প্রেমীদের প্রত্যাশা পূরণসহ একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হোক। ১৯৭০ সাল থেকে সুলতানের সান্দিধ্য পাওয়া নীহার বালা বলেন, সুলতান আমাকে কন্যা হিসেবেই সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিতেন এবং আমাকে আপনি সম্বোধন করতেন। আমিও বাবাকে পরম শ্রদ্ধায় দেখাশোনা করতাম। তিনি মৃত্যুর আগে আমাকে হাতধরে একটি কথাই বলেছিলেন- আপনি (নীহার বালা) থাকলেন আর আমার শিশু স্বর্গ রইল। শিশু স্বর্গ যেন বেঁচে থাকে।
আপনি দেখবেন, দেখে রাখবেন তো? সেদিনের সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে বিনয়ী নীহার বালা আরও বলেন-না, পারলাম না। বাবার কথা রাখতে পারলাম না। এখন বাবার শেষ কথাটা মনে পড়লে কান্না পায়। নিজেকে অপরাধী মনে হয়। আমার দাবি সুলতান সংগ্রহশালা ও শিশু স্বর্গ নিয়মিত চালু করে বাবার শেষ ইচ্ছেটার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হোক।
জানা যায়, বর্তমানে ‘শিশু স্বর্গ’ অনেকটা ম্রিয়মান হয়ে পড়েছে। ১৯৮০ সালে শিল্পী নিজ বাড়িতে শিশু স্বর্গের নির্মাণকাজ শুরু করিয়েছিলেন। তবে শেষ করতে পারেননি। পরে সরকারিভাবে করা হলেও এর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। স্থানীয় চিত্রশিল্পী দুলাল চন্দ্র সাহা সুলতানের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে শিশু স্বর্গে এখনো শিশু-কিশোরদের প্রতি শুক্রবারে চিত্রাংকন শিখিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে ১৯৯২ সালে ৯ লাখ মতান্তরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘø ও ১৫ ফুট প্রস্থের সুলতানের নির্মিত দ্বিতল নৌকাটিও (ভ্রামমাণ শিশু স্বর্গ) এখন চিত্রা নদীতে ভাসে না। সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার বাইরে নদীর কিনারায় অরতি থাকায় নৌকাটি নষ্ট হচ্ছে। নৌকায় ওঠা নিষেধ থাকলেও অনেকেই উঠছে।
এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব অধ্য (অব) প্রফেসর মুন্সী হাফিজুর রহমান বলেন, নড়াইলবাসী ও হাজারো দর্শনার্থীদের দাবির প্রেËিত সংগ্রহশালা নিয়মিত খুলে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। অথচ কর্তৃপরে উদাসীনতায় তা হচ্ছে না।
প্রয়োজনে দর্শনার্থীদের জন্য টিকিটের ব্যবস্থা করেও সংগ্রহশালা খোলা যেতে পারে। গেল তত্ত্বাবধায়ক সরকার একজন মহিলা কিউরেটরকে নিয়োগ দিলেও তিনি ঠিকমত কাজে যোগদান করেননি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, সুলতান সংগ্রহশালার জন্য কিউরেটরসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকে জানানো হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।