যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।
আল্লার দুনিয়ায় কতকিছুই না হয়। ঈদের দিনে বৃষ্টি হয়, কক্সবাজারে লুকজন পানিতে ডুবে ডুবে, জলিল মিয়া সাকা মিয়া হাডুডু কাবাডি খেলে আর আমার বউ এডভোকেট হয়, আমার বাচ্চারা স্কুলে পড়ে। ক্যামনে কি?
ঈদের দিনে বইনে কইলো সালামী তো দিতে পারুম না, তুমি বড় হইয়া গেছ তবে গাড়ী নিয়া ঘুরতে পার।
মাগার কথা একটাই সব দায় দায়িত্ব তোমার; মানে ট্রাফিক পুলিশের হুজ্জতি থেইক্কা, গাড়ী নষ্ট টু হাজতবাস সবগুলাই, সে কিসু জানে না। হে হে হে কম দামে গাড়ী কিনা কাগজপত্র অর্ধেক পাইছে আর বাকী অর্ধেক এখনো পায় নাই তাই গাড়ী নিয়া তার দুশ্চিন্তার শ্যাষ নাই। প্রথমে মনে হইল নিমুনা, পরে আবার ভাবলাম ঈদের দিনে গাড়ী সাবধানে চালাইলে কাকারা ধরবোনা। আমি কিন্তু গাড়ী চালাইতে পারি না, সাবধানে মানে ইয়াং ড্রাইভার লইয়া কারো গায়ের উপর না চাপাইয়া চিকনে বাইর হইয়া যাওন। আমি দোনোমোনোতে আছি।
আমার এক বন্ধুর বহুদিন ধইরাই গাড়ী আছে, সুযোগ পাইলেই সে ফাটাইয়া গাড়ী চালায় আর ডেটিং মারে, আমি গোপন ঈর্ষায় মরি। কিন্তু কিছু কই না।
সেইদিন ভাবলাম যাক সুযোগ আসছে, যতই দরিদ্র হই আর যতই রিস্ক থাকুক এইবার গাড়ী নিয়া বাইরামুই। বইনে গাড়ীর লোভে হইলেও জেল থেইক্কা ছুটায়া নিয়া যাইবো। তো ঈদের দিন বিকালে বুকে সাহস কইরা গাড়ী নিয়া বাইরাইলাম, মানে দুরুদুর বুকে মাঝের সিটে বামদিক ঘেইসা বসলাম।
গাড়ী টয়োটা ক্যাডিলিনা, বাইরে থেকে দেখলে কত পুরান ঠিক বোঝন যায় না। কিন্তু আমার দুরুদুরু তো কমে না। একটা কইরা পুলিশের গাড়ী দেখি আর মনে হয় এই আটকাইলো এই ধরলো। এমন সময় সেই গাড়ীওয়ালা বন্ধু ফোনে জানাইলো সে গুলশানে মুভএনপিক এ আছে তার গার্লফ্রেন্ড নিয়া, আমি জামু কিনা। প্রথমে ভাবলাম থাক কাবাবে হাড্ডি হইয়া কি হইবো, কিন্তু সেদিন আমার অবস্থা আসলেই খারাপ।
যাগো লগে প্রমউম ছাম্মাকছাল্লো হইতে পারতো তারা টপাটপ বিয়া কইরা ফেলতাছে আর নতুন জামাই সংসার নিয়া ঈদ করতাছে। আর যারা বন্ধু তাগে বাড়ীত যাইয়া দেখি কেউ নাই, বেড়াইতে গেছে।
আর বাকীগুলা সব দেশের বাইরে, পুরা মাইনকার চিপা যারে কয়। আমি তখন টিএসসিতে বন্ধুরে কইলাম আইতাসি গুলশান। গাড়ীর সাথে ততক্ষণে আমার দূরত্ব কমা শুরু করছে কেমন যেন ভালোও লাগতাছে।
পুলিশ নিয়া চিন্তাও কমতাছে..আত্মবিশ্বাস বাড়তাছে। গাড়ী ফার্মগেট মাত্র ছাড়াইছে এমন সময় বা দিকে ক্রস করতে থাকা একটা মোটরসাইকেল গতি কমাইতে শুরু করল।
মোটরসাইকেলে দুজন আরোহী দুজনই মধ্যবয়সী সাদা পাঞ্জাবী পড়ে আছে। গতি কমাইতে কমাইতে একেবারে জানালার কাছে এসে হুট করে চালক বলল,
-আস্সালামু আলাইকুম ভাইজান
-ঈদ মোবারক
-ভালো আছেন তো?
আমি তো ভেতরে ভেতরে একটু নার্ভাস ভাবলাম সাদা পোশাকের পুলিশ নাকি।
বললাম,
-আপনাকেও ঈদ মোবারক
-ভালো আছেন?
চালক সহজেই বুঝলেন আমি তারে চিনতে পারি নাই
-সে মোটরবাইক চালাতে চালাতেই বলল
-ভাইবেরাদার গো তো অহন আর চিনতে পারবেন না
-ঈদে তো একটা খোঁজও নিলেন না
-হয় হয় এমনি হয়
-আমাগো কি অহন আর চিনবেন
-যাইহোক এখন কন ভাবী কেমুন আছে?
-বাচ্চা দুইটা?
-আপনারে এত কইলাম একদিনও বাসায় গেলেন না,
-আজকে কি বস খাইবেনটাইবেন নাকি, লাগলে কইয়েন ম্যানেজ কইরা দিমু
আমি তখন হতভম্ব হবার কাছাকাছি, ফোন এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম তার ক'দিন আগেই বাচ্চা হয়েছে।
সে দেখি কোন কথা না বলে মনোযোগ দিয়ে এই চলমান আলাপ শুনছে...
চলতে চলতেই সে বলল,
- ভাই কি বাসায় যাইতেও কইবেন না?
আমি নিশ্চুপ, হতভম্ভ থেকে মুচকি মুচকি হাসতে শুরু করেছি
-সেও মোটর সাইকেল চালাতে চালাতে বুঝলো কোথাও একটা বড় ঘাপলা আছে বোধহয়।
সে বলল,
-ভাই আপনে ১০ নম্বর থাকেন না?
-আপনার বউ এডভোকেট না?
আমি বললাম না, আমি তো এখন বিয়েই করি নাই।
লোকটা আর কোন কথা বললো না, পিছনের সঙ্গীর দিকে একবার তাকিয়ে
বিজয় সরণীর দিকে একটানে বেরিয়ে গেল। আমি আর আমার ফোনের সেই বন্ধু
একসাথো হো হো করে হেসে উঠলাম। হাসির মধ্যেই ও বলল, শরৎ তুমি যে বিয়ে করে দুই বাচ্চার বাপ সেইটা তুমি আমাকে বলোনাই।
দাড়াও তোমার এডভোকেট বউকে এখনি বলতাসি........
ফলাফল: বিনা কাগজের গাড়ীতে চড়ার দুইটা খারপা দিক..
১.পুলিশে আপনারে জেলে দিতে পারে
২. আপনার বিয়া না করা এডভোকেট বউও আপনারে বিয়া গোপনের অপরাধে জেলে দিতে পারে.....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।