আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হয়ত একটা উপন্যাসের প্লট

মাহবুব লীলেন

এই অফিসে আপনারা কাজ করেন আর আমি শুই। বসেন আপনি। সামনের সপ্তায় আপনাদের বস দেশের বাইরে চলে গেলে অফিসের সাথে সাথে আমারও শোয়ার জায়গা থাকবে না। যদিও একই ছাদের নিচে আমরা ছয়মাস ধরে আছি কিন্তু দিনে যখন আপনারা কাজ করেন তখন আমি থাকি দরজা বন্ধ করে আর আপনারা অফিস বন্ধ করে চলে গেলে শুরু হয় আমার কাজ। অবশ্য আমার কাজকে আপনারা কাজ না বলে বলেন কাম এই শহরে আপনাদের বসকে ট্রাফিকজ্যাম ঠেলতে হয় না কোনোদিন।

ঘর থেকে পা বাড়ালেই অফিস আর অফিস থেকে উঁকি দিলেই ঘর। কিন্তু বাড়িটা বানানোর সময় বেডরুমের পেছন দরজা থেকে শুরু হয়ে যে বারান্দাটা অফিস রুমের পেছন দরজায় গিয়ে শেষ হয়েছিল। ঘটনাক্রমে আপনাদের বস সেটাকে ভাগ করেননি অফিস আর ঘরে। ফলে ব্যক্তিগত ফোন ধরতে আপনারা যেমন বারান্দাটায় এসে দাঁড়ান। তেমনি আমিও মাঝে মাঝে চলে যাই কমন বারান্দাটায়।

আর বারান্দার কথাগুলোও তেমনি যাতায়াত করে অফিস থেকে ঘরে। ঘর থেকে অফিসে অবলীলায় সেই প্রথম দিকে আপনি একদিন ফোনে কথা বলছিলেন আপনার কোনো এক বন্ধুর সাথে। চাকরিটা ছেড়ে দিতে চাচ্ছিলেন আপনি। সেদিন সকালে আপনাদের বসের বেডরুমে আমাকে দেখে আপনি খুব শক্ড হয়েছিলেন। ফোনে আপনার বন্ধুকে বলছিলেন- কলর্গাল আনলে সে তার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী আনবে।

তাই বলে করতাছি-খাইতাছি টাইপের একটা স্ট্রিট গার্ল? অসম্ভব... আপনাদেরকে শিল্প তৈরি করতে হয় বলে নিজের আলাজিহ্বা পর্যন্ত ব্যায়াম করে শিল্পের উপযোগী করে তোলেন। কোনভাবে শব্দ উচ্চারণ করলে তা শিল্প আর সভ্য হয় কিংবা কীভাবে হাসতে হয় তা আপনার ভালো জানেন। হয়ত স্ট্যান্ডার্ড সেক্সের জন্যও আপনারা বিশেষ কোনো ব্যায়াম কিংবা ট্রেনিংয়ে এটেন্ড করেন। আমি সেসব জানি না। আমি শুধু জানি যে আপনাদের বস আপনাকে রেখেছেন অনুষ্ঠান উপস্থাপনার জন্য আর আমার কাজ তার কাছে নিজেকে উপস্থাপন।

এবং আমি যেমন স্বীকার করি যে আপনি আমার থেকে কয়েক লক্ষগুণ শুদ্ধসভ্য বাংলা বলতে পারেন; তেমনি আপনি অন্তত এটুকু স্বীকার করবেন যে শরীরে আমি দুয়েকটা পয়েন্ট বেশি পেয়ে যাব আপনার থেকে। তাই বস আপনার কথায় অশুদ্ধতা খুঁজে পেলেও আমার করতাছি খাইতাছিতে কোনো ভুল দেখেন না তিনি আমার কিন্তু একটা সংসার ছিল। সেই সংসারটা ভাঙেওনি...। বিয়েটা হয়েছিল এপ্রিলের প্রথম সপ্তায় আর দ্বিতীয় সপ্তায় স্বামী চলে যায় বিদেশে। একেবারেই তাড়াহুড়োর বিয়ে।

বাবা মায়ের সাথেই আমি থাকতাম। তারপর জুনে সে ফিরে। আমি আমাদের জন্য নতুন বাসা ঠিক করে রাখি। সে এলে উঠব। এসে প্রথম দিন সে চলে যায় তার বোনের বাড়িতে।

পরের দিন সকালে আমার এখানে আসার কথা তার বোনের বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ি বড়োজোর দুঘণ্টার রাস্তা। সে রওয়ানা দিয়েছে সকাল আটটায়। এগারোটায় আমি তাকে ফোন করি। ফোন বন্ধ। ...আবার করি।

বন্ধ... একটায় ফোন করি তার বোনকে... বিকেল তিনটায় আবার ফোন করি। বোনের ছেলে জানায় আমাদের পাড়ায় তার এক বন্ধুর বাসা। গতকাল বলেছিল সে ওখানে যাবে। হয়ত বন্ধুর বাসায় চলে গেছে... আমি আর ফোন করি না। ...রাত এগারোটায় ফোন করি।

কেউ একজন ধরে আমাকে নাম জিজ্ঞেস। আমি ফোন রেখে দেই। বন্ধুকে দিয়ে আমার সাথে ফাজলামি করাচ্ছে সে... ভোর বেলা তার বোনের ফোন পাই। হাসপাতালে গিয়ে তাকে চিনতে পারি আমরা। তারপর তার লাশ নিয়ে প্রথম এবং শেষবার শ্বশুরবাড়ি যাই... আপনার বস দেশের বাইরে তার সাথে পরিচিত ছিলেন।

কয়েকমাস পরে দেশে ফিরে তিনি আমাকে সান্ত্বনা দিতে আসেন... তারপর তিনি এই অফিসবাসা করেন। আপনারও আসেন। আমিও আসি... বাড়িতে জানে চাকরি করছি আর একসপ্তা পরে অফিস উঠে গেলে আপনাদের মতো আমিও বাড়ি ফিরে যাব... মেয়েটা উঠে যাবার পরেও ঝিম মেরে বসে থাকে রুন্তি। মোবাইল বের করে সকালে আসা এসএমএসটা পড়ে... ০২ রুন্তির নিজের একটা প্রেম ছিল কিন্তু বিয়েটা হয় অন্যজনের সাথে। প্রেমটা থেকে যায়।

থেকে যায় সর্বক্ষণের ভরসা...। চাকরিটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। অন্য অনেকের সাথে তাকেও জানানো হয়। সে আরো ভালো করে জানে প্রতিমাসে রুন্তির দরকার নির্দিষ্ট কিছু টাকা। তাই আজ সকালে সে রুন্তিকে এসএমএসটা পাঠায়।

সে বেড়াতে যাবে ঢাকার বাইরে। প্রতি রাতের জন্য রুন্তি পাবে অত করে টাকা। রাজি হলে টিকিট কাটবে সে... রুন্তি এসএমএসটা পড়তে থাকে বারবার। আবারও সামনে এসে দাঁড়ায় মেয়েটা। হাতে লাগেজ- আপনাদের তো অফিস বন্ধ হয়ে গেলেও গোছানোর কিছু কাজ থেকে যায়।

কিন্তু কামের তো আর কোনো প্রস্তুতিও নেই গোছানোও নেই। তাই আজকেই যাচ্ছি- বাই ২০০৯.০৮.০৪ মঙ্গলবার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।