আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি। ফদক মদিনার নিকটবর্তী হিজাজের(রাসুলের সাঃ দেয়া নাম) ( বর্তমান সউদি আরব) একটা সবুজ গ্রাম এবং এটা শমরুখ নামক দুর্গ দ্বারা সঙ্গরক্ষিত স্থান ছিল(হামাবী,৪র্থ খন্ড,পৃঃ ২৩৮;৩য় খন্ড,পৃঃ ১০১৫;সামহুদী,৪র্থ খন্ড,পৃঃ ১২৮০)। ফদক ইহুদীদের দখলে ছিল। ৭ম হিজরীতে এক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে ফদকের মালিকানা রাসুলের(সাঃ) কাছে চলে যায়। এ চুক্তির মুল কারন হলো খায়বার দুর্গের পতনের পর ইহুদীরা মুসলিম শক্তি অনুধাবন করতে পেরেছিল এবং তাদের মনোবল ভেঙ্গে গিয়েছিল।
তাছাড়া কিছু সংখ্যক ইহুদী রাসুলের(সাঃ) আশ্রয় প্রার্থনা করায় রাসুল(সাঃ) তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। তারা একটা শান্তি প্রস্তাব করেছিল যে, ফদক নিয়ে তাদের অবশিষ্ট এলাকায় কোন যুদ্ব না করার জন্য। ফলে রাসুল(সাঃ) তাদের প্রস্তাব গ্রহন করলেন এবং তাদের জন্য সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করেছিলেন। এ ফদক তাঁর ব্যাক্তিগত সম্পদে পরিনত হলো এবং এতে কারো কোন স্বার্থ ছিল না। এতে কারো কোন স্বার্থ থাক্তেও পারেন।
কারন জিহাদে অর্জিত গনিমতের মালে মুসলমানদের অংশ ছিল। যেহেতু এই সম্পত্তি বিনা জিহাদে পাওয়া গেছে তাই এটাকে ‘ফায়’ বলা হতো এবং রাসুল(সাঃ) একাই এর মালিক ছিলেন। এতে অন্য কারো অংশ ছিল না। তাই আল্লাহ বলেনঃ “ আল্লাহ ইহুদীদের কাছ থেকে তাঁর যে ফায় দিয়েছেন তার জন্য তোমরা অশ্ব বা উটে আরোহন করে যুদ্ব করনি। আল্লাহ যার উপর ইচ্ছা তাঁর রাসুলের কর্তৃ্ত্ব দান করেন”(কোরানঃ৫৯ঃ৬)।
কোন প্রকার যুদ্ব ছাড়াই ফদক অর্জিত হয়েছে এবিষয়ে কারো কোন দ্বিমত নেই। সুতরাং এটা রাসুলের(সাঃ) ব্যক্তিগত সম্পদ ছিল এবং এতে কারো কোন অধিকার ছিল না। ঐতিহাসিকগন লিখেছেনঃ
“যেহেতু মুসলিমগন তাদের ঘোড়া ও উট ব্যবহার করেননি সেহেতু ফদক রাসুলের(সাঃ) ব্যক্তিগর সম্পদ ছিল। (তাবারী,১ম খন্ড,পৃঃ১৫৮২-১৫৮৩,আছীর,২য় খন্ড,পৃঃ২২৪-২২৫;হিশাম,৩য় খন্ড,পৃঃ৩৬৮;খালদুন,২য় খন্ড,পৃঃ৪০;বাকরী,২য় খন্ড,পৃঃ৫৮;শাফী,৩য় খন্ড,পৃঃ৫০;বালাজুরী,১ম খন্ড,পৃঃ)।
২য় খলিফা হযরত উমর ইবনে খাত্তাবও মনে করতেন যে ফদক রাসুলের(সাঃ) অঙ্গশীদারবিহীন সম্পদ।
তিনি ঘোষনা করেছিলেন যে,আল্লাহ তাঁর রাসুলকে যা দিয়েছিলেন বনি নজীরের সম্পত্তিও তার অন্ত্ররভুক্ত। এতে কারো ঘোড়া বা উট ব্যবহার করা হয় নি। তাই এটা আল্লাহর রাসুলের(সাঃ) ব্যক্তিগত সম্পদ(বুখারী,৪র্থ খন্ড,পৃঃ৪৬;৭ম খন্ড,পৃঃ৮২;৯ম খন্ড,পৃঃ১২১-১২২;নায়সাবুরী,৫ম খন্ড,পৃঃ১৫১;আশাছ,৩য় খন্ড,পৃঃ১৩৯-১৪১;নাসাঈ,৭ম খন্ড,পৃঃ১৩২;হাম্বল,১ম খন্ড,পৃঃ২৫,৪৮,৬০,২০৮;শাফী,৬ষ্ট খন্ড,পৃঃ২৯৬-২৯৯।
বিশ্বস্ত সুত্রে এটা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত যে,রাসুল(সাঃ) তাঁর জীবদ্দশাতেই উক্ত ফদক তাঁর প্রানপ্রিয় কন্যা ফাতিমাকে দান করেছিলেন। আল-বাজ্জার,আবু ইয়ালা,ইবনে আবি হাতিম,ইবনে মারদুয়াই ও অন্যান্য অনেকে আবু সায়েদ খুদরী ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের বরাত দিয়ে বর্ননা করেছেন যে,যখন কোরানের আয়াত-“নিকটবর্তী আত্নীয় পরিজনকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও”-(১৭ঃ২৬)-নাজিল হয়েছিল তখন রাসুল(সাঃ) ফাতিমাকে ডেকে এনে তাঁকে ফদক দান করেছিলেন( শাফী,৪র্থ খন্ড,পৃঃ১৭৭;শাফী,৭ম খন্ড,পৃঃ৪৬;হিন্দি,৩য় খন্ড,পৃঃ৪৯৩;শাফী,১৫শ খন্ড,পৃঃ৬২)।
১ম খলিফা হযরত আবুবকর(রাঃ) যখন ক্ষমতা দখল করেছিলেন তখন ফাতিমাকে বঞ্ছিত ও দখলচ্যুত করে ফদক রাষ্টায়ত্ব করেছিলেন। ঐতিহাসিকগন লিখেছেনঃ
“ নিশ্চয়ই,আবুবকর ফাতিমার কাছ থেকে ফদক কেড়ে নিয়েছেন”( হাদীদ,১৬ খন্ড,পৃঃ২১৯;সামহুদী,৩য় খন্ড,পৃঃ১০০০; হায়তামী,পৃঃ৩২)।
আবুবকরের এহেন কাজে ফাতিমা সোচ্চার হয়ে উঠলেন এবং তিনি প্রতিবাদ করে বললেন, “রাসুল(সাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় আমাকে ফদক দান করে গিয়েছিলেন অথচ আপনি তা দখল করে নিয়ে নিয়েছেন। “ এতে আবুবকর সাক্ষী উপস্থাপন করার জন্য বললেন। ফলে,আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী(আঃ) ও উম্মে আয়মন ফাতিমার পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন ।
এখানে উল্লেখ্য যে, উম্মে আয়মন রাসুলের(সাঃ) একজন মুক্তিপ্রাপ্ত দাসী ছিলেন। তিনি উসামা ইবনে জায়েদ ইবনে আল-হারিছাহর মাতা ছিলেন। রাসুল(সাঃ) প্রায়ই বলতেন, “ আমার মাতার ইন্তেকালের পর আয়মন আমার মাতা”। রাসুল(সাঃ) তাঁকে বেহেস্তবাসীর একজন বলে আখ্যায়িত করে ছিলেন(নায়সাবুরী,৪র্থ খন্ড,পৃঃ৬৩;তাবারী,৩য় খন্ড,পৃঃ৩৪৬০;বার,৪র্থ খন্ড,পৃঃ১৭৯৩;আছির,৫ম খন্ড,পৃঃ৫৬৭;সাদ,৮ম খন্ড,পৃঃ১৯২;হাজর,৪র্থ খন্ড,পৃঃ৪৩২)।
ফাতিমা আবুবকরকে বলেছিলেন,আল্লাহর রাসুল ফদক আলাদা করে আমাকে দিয়েছিলেন।
সুতরাং আপনি আমাকে তা ফেরত দিন। এতে আবুবকর তাঁকে বললেন তিনি যেন উম্মে আয়মন ছাড়া আরো ১জন সাক্ষী হাজির করেন। আবুবকর আরো বললেন,হে রাসুলের কন্যা,আপনি জানেন যে, ২জন পুরুষ বা ১জন পুরুষ ও ২জন মহিলা ছাড়া সাক্ষ্য গ্রহনীয় হয় না।
এসব ঘটনার পর একথা অস্বীকার করার উপায় থাকে না যে,ফদক রাসুলের(সাঃ) ব্যক্তিগত সম্পদ ছিল এবং তাঁর জীবদ্দশায় তিনি এর দখল ফাতিমার হাতে তুলে দিয়ে তাঁকে তা দান করেছিলেন। কিন্তু আবুবকর তা বেদখল করে ফদক নিয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে তিনি আলী ও উম্মে আয়মনের সাক্ষী বাতিল করেছিলেন। এ বাতিলের ক্ষেত্র হিসাবে তিনি উল্লেখ করলেন যে, ১জন পুরুষ ও ১জন মহিলার সাক্ষ্য পরিপুর্ন হয় না। এছাড়াও ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ফাতিমার বক্তব্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। কিন্তু পিতামাতার পক্ষে সন্তানের সাক্ষ্য গ্রহনযোগ্য নয় বলে উল্লেখ করে আবুবকর তা বাতিল করে দিয়েছিলেন। তারপর রাসুলের(সাঃ) গোলাম রাবাহকে সাক্ষী হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল,কিন্তু তাকেও প্রত্যাখ্যান করা হলো( বালাজুরী,১ম খন্ড,পৃঃ৩৫;ইয়াকুবী,৩য় খন্ড,পৃঃ১৯৫;মাসুদী,৩য় খন্ড, পৃঃ২৩৭;আশকারী,পৃঃ২০৯;সামহুদী,৩য় খন্ড,পৃঃ৯৯৯-১০০১;হামাবি,৪র্থ খন্ড,পৃঃ২৩৯;হাদীদ,১৬শ খন্ড,পৃঃ২১৬-২২০;হাজম,৬ষ্ট খন্ড,পৃঃ৫০৭; শাফী,৩য় খন্ড,পৃঃ৩৬১;রাজী,২৯তম খন্ড,পৃঃ২৮৪)।
এ পরযায়ে একটা বিষয় বিবেচনার দাবী রাখে-তা হলো এটা ষ্পষ্ট হয়েছে যে,ফদক ফাতিমার দখলে ছিল এবং আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী তাঁর এক পত্রে উল্লেখ করেছেন, “ফদক আমাদের দখলে ছিল”। এ ক্ষেত্রে সাক্ষী উপস্থাপন করতে বলাটা কোন অর্থবহ নয়;এটা জুলুম করে অন্যের জমি দখল করার তাল্বাহানা মাত্র। কারন যার দখলে আছে তার সাক্ষী উপস্থাপন করার প্রয়োজন নেই-বরং যে দখলকারীকে উচ্ছেদ করতে চায় তার দাবীর জন্যই সাক্ষীর প্রয়োজন। কাজেই ফাতিমার সম্পত্তি দখল করার জন্য আবুবকরের সাক্ষী উপস্থাপন করা আইনসিদ্ব ছিল। যেহেতু আবুবকর এমন কোন প্রমান উপস্থিত করতে পারেন নাই সেহেতু ফদকে ফাতিমার মালিকানাই আইনের চোখে সঠিক।
কাজেই আরো সাক্ষী বা প্রমান হাজির করার জন্য তাকে বলাটা অন্যায় ছাড়া কিছু নয়।
এটা একটা অবাক করা বিষয় যে,আবুবকরের কাছে অনেকেই এরকম দাবী পেশ করেছিলেন। তিনি কোন সাক্ষী প্রমানের প্রশ্ন না তুলেই দাবিদারকে তাদের দাবীকৃত সম্পত্তি দিয়েছিলেন। অথচ ফাতিমার বেলায় তিনি এসব তালবাহানা করে তাঁদেরকে দুঃখ-কষ্ট ফেলেছিলেন। এবিষয়ে হাদিসবেত্তাগন লিখেছেনঃ
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী থেকে বর্নিত হয়েছে যে,আল্লাহর রাসুল বলেছেন যে,যখন বাহরাইন থেকে যুদ্বলব্ধ্ব মাল পৌঁছবে তখন জাবির অমুক অমুক জিনিসগুলো পাবে।
কিন্তু রাসুলের ওফাতের আগে সেই মাল্গলি এসে পৌঁছায় নি। আবুবকরের খেলাফতকালে তা মদীনায় পৌঁছালে জাবির আবুবকরের কাচজে গিয়েছিল। তখন আবুবকর ঘোষনা করলেন যে, রাসুলের বিরুদ্বে যাদের কোন দাবি-দাওয়া আছে অথবা রাসুল যদি কাউকে কোন প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন সে যেন তার দাবী নিয়ে আসে। এতে জাবির বললো,রাসুল(সাঃ) আমাকে অমুক অমুক মালগুলো দেয়ার কথা বলেছিলেন। আবুবকর বাহরাইনের যুদ্বলব্ধ্ব মাল হতে জাবিরকে তা দিয়েছিলেন(বুখারী,৩য় খন্ড,পৃঃ১১৯,২০৯,২৩৬;৪র্থ খন্ড,পৃঃ১১০;৫ম খন্ড,পৃঃ২১৮;নায়সাবুরী,৩য় খন্ড,পৃঃ৭৫-৭৬;তিরমিজী,৫ম খন্ড,পৃঃ১২৯;হাম্বল,৩য় খন্ড,পৃঃ ৩০৭-৩০৮;সাদ,২য় খন্ড,পৃঃ৮৮-৮৯)।
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় আসকালানী(হিঃ৭৭৩/১৩৭২-৮৫২/১৪৪৯) এবং হানাফী(৭৬২/১৩৬১-৮৮৫/১৪৫১)লিখেছেনঃ
এ হাদিস থেকে ষ্পষ্ট বুঝা যায় যে,শুধুমাত্র একজন সাহাবীর পুর্ন সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহন করা জায়েজ-এমনকি যদি সে সাক্ষ্য তার নিজের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যও হয়। কারন আবুবকর জাবিরকে তার দাবীর স্বপক্ষে কোন সাক্ষী হাজির করতে বলেননি(আসকালানী,৫ম খন্ড,পৃঃ৩৮০;হানাফী,১২শ খন্ড,পৃঃ১২১)।
এখন প্রশ্ন হলো কোন সাক্ষ্য প্রমান ছাড়াই যখন জাবিরের দাবিকৃ্ত সম্পত্তি একইভাবে ফেরত দিতে কিসে আবুবকরকে বাধা দিয়েছিল?জাবিরের প্রতি তার যদি এমন ধারনা হয়ে থাকে যে, সে মিথ্যা বলে স্বীয় স্বার্থ উদ্বার করবে না;তবে ফাতিমার প্রতি তার এ ধারনা গ্রহনে কিসে তাকে বাধাগ্রস্ত করেছে যে, ফাতিমা এক টুকরা জমির জন্য রাসুল(সাঃ) সম্বন্ধ্বে মিথ্যা বলতে পারে না। ফাতিমার সর্বজন স্বীকৃ্ত সত্যবাদীতা ও সততাই তো তাঁর দাবীর সত্যতা সম্পর্কে যথেষ্ট ছিল। তবু আবুবকরের সন্তুষ্টির জন্য তিনি আলী ও উম্মে আয়মনের মতো সম্মানিত সাক্ষী উপস্তিত করেছিলেন।
একথা বলা হয়ে থাকে কোরানের নীচের আয়াতের নীতি অনুসারে ফাতিমার দাবী প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলঃ
“২জন পুরুষ সাক্ষী রাখবে;২ জন পুরুষ সাক্ষী পাওয়া না গেলে ১জন পুরুষ ও ২জন নারী সাক্ষী রাখবে “(কোরানঃ ২ঃ২৮২)।
কোরানের উক্ত নীতি যদি সর্বক্ষেত্রে সার্বজনীন হয়ে থাকে তবে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই এর প্রয়োগ থাকবে। কিন্তু একদিন একজন আরববাসী রাসুলের(সাঃ) সাথে একটি উট নিয়ে বিরোধ করে। এতে খুজায়মা ইবনে সাবিত আনসারী রাসুলের পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করলেন। এই একজনের সাক্ষীকে ২ জনের সাক্ষীর সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহন করা হয়েছিল।
কারন তার সততা ও সত্যবাদীতা সম্পর্কে কারো কোন সঙ্গশয় ছিল না। এ কারনেই রাসুল(সাঃ) তাকে “জুশ শাহাদাতাইন”(২জন সাক্ষীর সমান) উপাধীতে ভুষিত করেছিলেন(বুখারী,৪র্থ খন্ড,পৃঃ২৪;৬ষ্ট খন্ড,পৃঃ১৪৬;তায়ালিসী,৩য় খন্ড,পৃঃ৩০২; হাম্বল ,৫ম খন্ড,পৃঃ১৮৮,১৮৯,২১৬;বার,২য় খন্ড,পৃঃ৪৪৮;আছীর,২য় খন্ড,পৃঃ১১৪;সানানী,৮ম খন্ড,পৃঃ৩৬৬-৩৬৮)।
ফলত এব্যাবস্থার কারনে আয়াতটির সাধারনত্ব প্রভাবিত হয় নি বা এটা সাক্ষ্য সংক্রান্ত বিধানের বিপরীত কিছু নয়। সুতরাং রাসুলের মতানুসারে সত্যবাদিতা গুনের জন্য একজন সাক্ষীকে ২জন সাক্ষীর সমান ধরে নায়া হয়ে থাকে। তাহলে ফাতিমার পক্ষে আলী ও উম্মে আয়মনের সাক্ষ্য কি তাদের নৈ্তিক মহত্ব ও সত্যবাদীতার জন্য যথেষ্ট ছিল না? এছাড়া উক্ত আয়াতে এ দুপথ ছাড়া দাবী প্রতিষ্টা করার আর কোন পথ উল্লেখ করা হয় নি।
এ বিষয়ে কাজী নুরুল্লা মারআশী(৯৫৬/১৫৪৯-১০১৯/১৬১০) লিখেছেনঃ
উম্মে আয়মনের সাক্ষ্য অসম্পুর্ন বলে যারা প্রত্যাখ্যান করেছে তারা প্রকৃতপক্ষে ভুল করেছে। কারন কোন কোন হাদিসে দেখা যায় ১জন সাক্ষীর ভিত্তিতে সিদ্বান্ত প্রদান করা বৈ্ধ এবং তাতে কোরানের নির্দেশ ভংগ হয়েছে বলে মনে করা হয় নি। কারন এ আয়াতের গুঢ়ার্থ হলো ২জন পুরুষ অথবা ১জন পুরুষ ও ২জন নারী সাক্ষীর ভিত্তিতে সিদ্বান্ত নেয়া যেতে পারে এবং তাদের সাক্ষ্যই যথেষ্ট। একথা দ্বারা এটা বুঝায় না যে, যদি সাক্ষীর সাক্ষ্য ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্র থেকে থাকে তা গ্রহনীয় হবে না এবং সে ভিত্তিতে রায় দেয়া যাবে না- এটাই হচ্ছে আয়াতটির মুল ভাব। কোন কিছুর ভাবার্থ চুড়ান্ত যুক্তি নয়।
তাই এ ভাবার্থও গ্রাহ্য করা যায় না। বিশেষ করে হাদিসের বিপরীত ভাব ব্যাক্ত করেছে। এ ভাবার্থকে এড়িয়ে গেলে তা আয়াত অমান্য করা বুঝায় না। দ্বিতীয়ত আয়াতটি দুটি বিষয়ের যে কোন একটিকে বেছে অনুমতি দেয়া হয়েছে। তা হলো ২ জন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও ২ জন নারী।
যদি হাদিস দ্বারা ৩য় একটি বিষয় বেছে নেয়ার জন্য যোগ করা হয় তাতে কিকোরানের আয়াত লংঘিত হয়েছে বলা যাবে?যাহোক এতে বুঝা যাচ্ছে যে,দাবীদার ২জন পুরুষ বা ১জন নারী ও ২জন নারী সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত করতে বাধ্য নয় কারন যদি কোন দাবীতে কোন সাক্ষী না থাকে তাহলে আল্লাহর নামে শপথ করে বললেই তার দাবী আইন্সিদ্ব হবে এবং তার অনুকুলে সিদ্বান্ত দেয়া যাবে। এতদ সংক্রান্ত বিষয়ে ১২ জনের অধিক সাহাবী বর্ননা করেছেন যে, আল্লাহর রাসুল শপথ গ্রহন পুর্বক ১জন সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিদ্বান্ত গ্রহন করতেন।
রাসুলের(সাঃ) কতিপয় সাহাবা ও জুরিস্প্রুডেন্সের কতিপয় পন্ডিত ব্যক্তি বর্ননা করেছেন যে, এ সিদ্বান্ত বিশেষভাবে অধিকার, সম্পদ ও লেনদেনের সাথে সম্পৃক্ত এবং এ সিদ্বান্ত আবুবকর ,উমর ও উসমান খলিফাত্রয়ও মেনে চলতেন(নায়সাবুরী,৫ম খন্ড,পৃঃ১২৮; তায়ালিসী, ৩য় খন্ড,পৃঃ৩০৮-৩০৯;তিরমিজী,৩য় খন্ড,পৃঃ৬২৭-৬২৯;মাযাহ,২য় খন্ড, পৃঃ৭৯৩;হাম্বল,১ম খন্ড,পৃঃ২৪৮,৩১৫,৩২৩;৩য় খন্ড,পৃঃ৩০৫;৫ম খন্ড,পৃঃ২৮৫;আনাস,২য় খন্ড,পৃঃ৭২১-৭২৫;শাফী,১০ম খন্ড,পৃঃ১৬৭-১৭৬;কুন্তি,৪র্থ খন্ড,পৃঃ২১২-২১৫;শাফী,৪র্থ খন্ড,পৃঃ২০২;হিন্দি,৭ম খন্ড,পৃঃ১৩)।
যেখানে শপথ করে সাক্ষ্য দিলে একজন সাক্ষীর ভিত্তিতে সিদ্বান্ত দেয়ার বিধান রয়েছে সেক্ষেত্রে যেহেতু আবু বকরের দৃষ্টিতে ফাতিমার সাক্ষী অসম্পুর্ন ছিল,সেহেতু তিনি ফাতিমার শপথ নিয়ে তাঁর অনুকুলে রায় দিতে পারতেন। কিন্তু এখানে মুল উদ্দেশ্য ছিল ফাতিমাকে বঞ্চিত করে আলী পরিবারকে অভাব-অনটনে নিপতিত করা এবং ফাতিমার সত্যবাদীতাকে কলঙ্কিত করা যাতে যাতে করে ভবিষতে তাঁর প্রশংসা চাপা পড়ে যায়।
যাহোক রাসুলের দানের ভিত্তিতে ফাতিমার দাব এসব তালবাহানা করে বাতিল করে দেয়া হয়েছিল তখন তিনি দাবী করলেন যে,রাসুলের উত্তরাধিকারিনী হিসাবে তিনিই ফদকের মালিক। এ বিষয়ে ফাতিমা বলেছিলেনঃ
যদিও আপনি রাসুলের দানকে অস্বীকার করেছেন,কিন্তু ফদক ও খাইবারের রাজস্ব এবং মদিনার কাছে কিছু জমি যে রাসুলের ব্যক্তিগত সম্পত্তি রকথা অস্বীকার করতে পারবেন না। কাজেই আমিই রাসুলের একমাত্র উত্তরাধিকারী। কিন্তু আবুবকর নিজেই একটি হাদিস ব্যক্ত করে ফাতিমার উত্তরাধিকারীত্ব অস্বীকার করলেন। তিনি বললেন রাসুল বলেছেন, “ আমরা নবীগনের কোন উত্তরাধিকারী নেই;আমরা যা কিছু রেখে যাই তার সবই জাকাত হিসাবে বায়তুল”( বুখারী,৪র্থ খন্ড,পৃঃ৯৬;৫ম খন্ড,পৃঃ২৫, ২৬,১১৫,১১৭;৮ম খন্ড,পৃঃ১৮৫;নায়সাবুরি,৫ম খন্ড,পৃঃ১৫৩-১৫৫; তিরমিজী,৪র্থ খন্ড,পৃঃ১৫৭-১৫৮;তায়লিসী,৩উ খন্ড,পৃঃ১৪২-১৪৩; নাসাঈ, ৭ম খন্ড,পৃঃ১৩২;হাম্বল,৪র্থ খন্ড,পৃঃ৪,৬,৯,১০;শাফী,৬ষ্ট খন্ড,পৃঃ৩০০; সাদ,২য় খন্ড,পৃঃ৮৬-৮৭;তাবারী,১ম খন্ড,পৃঃ১৮২৫;বাকরী,২য় খন্ড,পৃঃ১৭৩-১৭৪)।
আবুবকর ছাড়া রাসুলের এহেন উক্তি কারো জানা ছিল না। এমনকি সাহাবীদের মধ্যে আর কেউ এমন কথা শুনেননি। জালালুদ্দিন আবদার রহমান সয়ুতী(৮৪৯/১৪৪৫-৯১১/১৫০৫) এবং শিহাবুদ্দিন ইবনে হাজর হায়তামী (৯০৯/১৫০৪-৯৭৪/১৫৬৭) লিখেছেনঃ
রাসুলের(সাঃ) ইন্তেকালের পর তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল। আবু বকর বলেছিলেন যে,রাসুল(সাঃ) নাকি তাকে বলেছিলেন, “ আমরা অর্থাৎ নবীদের কোন উত্তরাধিকারী নেই এবং আমরা যা কিছু রেখে যাই সবই জাকাত হয়ে যায়”। এ বীষয়ে অন্য কেউ কোন কিছুই জ্ঞাত ছিলেন না(সয়ুতী,পৃঃ৭৩;হায়তামী,পৃঃ১৯১)।
কোন বিচার বুদ্বিসম্পন্ন মানুষ একথা বিশ্বাস করতে পারে না যে, যারা রাসুলের ওয়ারিশ ছিলেন তাদের কাউকে কিছু না বলে ৩য় ব্যক্তির নিকট বলে গেছেন যে তাঁর কোন উত্তরাধিকারী নেই এবং সবচাইতে বিস্ময়কর হলো এ গুরুত্বপুর্ন বিষয়টি সম্বন্ধ্বে সাহাবাগন অবহিত ছিলেন না। আর এটা তখনই প্রকাশ করা হলো যখন ফাতিমা ফদক ফেরত দেয়ার জন্য দাবী করলেন যা আর কারো জানা ছিল না। কিভাবে এ হাদিসটি গ্রহনীয় হতে পারে। যদি একথা বলা হয় যে,আবুবকরের মহৎ মরযাদার কারনে এ হাদিসটি নির্ভরযোগ্য তাহলে ফাতিমার সত্যবাদিতা,সততা ও মহৎ মরযাদার কারনে কেন রাসুলের দান সংক্রান্ত তাঁর দাবী করা হলো না?তাছাড়া আমিরুল মু’মিনিন ও উম্মে আয়মনের সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। যদি ফাতিমার দাবীর জন্য আরো সাক্ষীর প্রয়োজনীয়তা থেকে থাকে তা হলো এ হাদিসটি প্রনাএর জন্য অবশ্যই সাক্ষীর দরকার রয়েছে।
কারন এ হাদিসটি উত্তরাধীকার সংক্রান্ত কোরানের নির্দেশের পরিপন্থী। নবীদের উত্তরাধিকার সম্বন্ধ্বে কোরানে বর্নিত হয়েছেঃ
“ এবং সোলায়মান ছিল দাউদের উত্তরাধিকারী(২৭ঃ১৬)। সুতরাং তোমরা নিজের থেকে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দাও যে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকুবের পরিবারের উত্তরাধীকারী হবে-বললেন জাকারিয়া(১৯ঃ৫-৬)।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।