রাজনীতি ও অর্থনীতি এই দুই সাপ পরস্পর পরস্পরকে লেজের দিক থেকে অনবরত খেয়ে যাচ্ছে
আমাদের গাড়ির ড্রাইভার উচ্চশিক্ষিত, মাস্টার্স ডিগ্রি করা। বিষয়ও ফেলে দেয়ার মতো না, অর্থনীতি। দেখতেও মাশাল্লাহ।
এখনও যারা বোঝেন নাই, তাদের জন্য বলি-এই ড্রাইভারটা আসলে আমি। এই রোজার সময় আমাকে ড্রাইভারেরই কাজ করতে হয়।
এমনিতে আমার অফিসটা মজার। যে কোনো অফিসে যাই বলে বাসা থেকে বের হওয়া যায়। আর অফিসে যদি বলি একটা গুরুত্বপূর্ণ নিউজ পেতে সোর্সের সঙ্গে দেখা করতে হবে তাহলেও যে কোনো সময় বাইরে থাকা যায়। সপ্তাহের ৬দিন অফিসে যাই বইলা বউরে এড়াইতে পারছি।
কিন্তু শুক্রবার পুরা ধরা।
শপিং-যেতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিতে না, ড্রাইভার হওয়ার জন্য। আগেই একবার বলছিলাম, টিপাইমূখ বাঁধ, তেল-গ্যাস চুক্তি কিংবা ওবামার স্বাস্থ্যনীতি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাসায় আমিই নেই। আর রান্না কি হবে, ছেলে-মেয়েরা কোথায় পড়বে কিংবা ঈদের সময় কার জন্য কী কিনতে হবে-এ ধরণের ছোট খাট সিদ্ধান্ত আমার বউই নেয়।
এইটা একটা পুরানা জোকস হইলেও এর অন্তত অর্ধেক যে সত্যি তা টের পাইলাম শপিং-এ যাইয়া।
জোকসটা হইল-শপিং আর ‘ওইটা আর কী’ ছেলেরা পাঁচ মিনিটের বেশি ধরে রাখতে পারে না। আমিও শপিং-এ যাই, ৫ মিনিটের মধ্যে আগ্রহ হারাইয়া ফেলি।
গেছি সানরাইজ প্লাজায়, তিনতলা। বউ ঢুকলো চৈতিতে। রাশি রাশি মেয়ে।
কোনটা আমার বউ আর খুঁজে পাই না। মার্কেটে যাইয়া বউ হারাইয়া ফেললাম। কী আর করি খুঁজে বের করলাম সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটিকে। যত কাছে যাওয়া যায় ততটাই যাইয়া বললাম-‘আপনার সঙ্গে দুই মিনিট কথা বলতে পারি। ’ ভয়ে ছিলাম, আবার বলে বসে নাকি- বলেন আংকেল।
তাকিয়ে দেখলাম চোখ দুটা মাছের মতো, তেমন কোনো ভাষা নাই। একটু কপাল কুচকে বললো, ‘কী কথা বলবেন, আর কেন বলবেন। ’ বললাম, আমি আমার বউকে খুঁজে পাচ্ছি না। এখন খুব সুন্দরী কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছি দেখলে আমার বউ ঠিকই কাছে চলে আসবে।
সাথে সাথে ফল।
বউ আমারে টান দিয়ে নিয়ে গেল উল্টো দিকের রং-এ। যাইতে যাইতে বললাম, চৈতিই তো ভাল, সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখা যায়। গোপনে কই-এইটা কিন্তু মাথা খাটাইয়া বলছি। এই কথা শুইনা যদি বউ আমারে নিয়া শপিং-এ আর না আসে।
গেলাম রং-এ।
নতুন একটা বুদ্ধি পাইলাম। একটা শর্ট পাঞ্জাবি ধইরা বললাম এইটা আমি কিনবো। কিনলাম। বউ খালি একবার চিপায় নিয়া কইলো-তোমার জন্য কিছু কিনতে আসছি নাকি?
এর পর গেলাম পাশেই নবরূপায়। নবরূপায় কখনো আমি সুন্দরী মেয়ে দেখি না।
এইটা আমার আবিস্কার। ঐ খানেও আমি আগের বুদ্ধি ধরলাম। একটা সাদার মধ্যে কাজ করা শার্ট ধইরা বললাম, এইটা আমার পছন্দ হইছে। পুরা নবরূপায় ঐ একটা শার্টই কেনা হইলো। বউ হালকা ঝাড়ি দিয়া কইলো তোমারে আর নিয়া আসা যাবে না।
বুঝলাম বুদ্ধি কাজে লাগতাছে।
নতুন আরেকটা বুদ্ধির বাইর করছিলাম। আর সেইটা হইল একটা ঝগড়া লাগানো। সফলও হইলাম। চোখ কান খোলা রাখলে অজুহাতের অভাব হয়না।
একটা ঝগড়া লাগাইতে পারলে আমি নিশ্চিত ছিলাম এক সপ্তাহ অন্তত শপিং থেকে বাইচা যাবো। গত মঙ্গলবার এক অজুহাত আপনিই আইসা ধরা দিল। আমিও জন্টি রোডস-এর মতো খপ কইরা ক্যাচটা ধরলাম। তারপর দেখি বউ কথা বলে না। আমিও মহা ফূর্তিতে দিন কাটাইতে লাগলাম।
অফিস করি, সিনেমা দেখি, ঈদ আর পূজা সংখ্যা পড়ি। এইসব কইরা শুক্রবারও পার কইরা দিলাম। বউ মনে হয় ঘটনা টের পাইয়া রোববার থেইকা নিজে থেকেই কথা বলা শুরু করছে।
আগামি শুক্রবার কেমনে শপিং এড়াবো ভাবতাছি। কারো কাছে কী কোনো বুদ্ধি আছে??
মেয়েদের কেনাকাটা নিয়া একটা ফাও গল্প কই।
৬ তলা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। এই স্টোরে কেবলমাত্র স্বামী বিক্রি হয়। মেয়েরা যায়, পছন্দ হলে স্বামী কিনে নিয়ে বাসায় চলে আসে। তবে শর্ত হচ্ছে একবার এক তলা দেখে অন্য তলায় চলে গেলে আবার আগের জায়গায় ফিরতে পারবে না। মানে আগেরটার সাথে যাচাই করা যাবে না।
শেফালী রানী গেল এই স্টোরে, স্বামী কিনতে। এক তলায় যেয়ে দেখে লেখা-এই ফ্লোরের ছেলেদের একটা চাকরী আছে। শেফালী ভাবলো খারাপ না, চাকরি তো একটা আছে। তারপর সে মনস্থির করতে না পেরে দোতালায় গেলো।
দোতালায় লেখা-এই ফ্লোরের ছেলেদের চাকরি আছে এবং তারা বাচ্চা পছন্দ করে।
শেফালী রাণীর পছন্দ হইল। চাকরিও করবে আবার বাচ্চা পালবে। বাহ..। তাহলে একবার তিনতলায় দেখে আসা যাক। শেফালি রানী গেল তিন তলায়।
তিন তলায় লেখা-এই ফ্লোরের ছেলেদের চাকরি আছে, তারা বাচ্চাদের পছন্দ করে এবং ছেলেগুলো দেখতেও খুব সুন্দর। এইবার শেফালী রানী ভাবলো এর পরের তলায় তাহলে আরও ভাল ছেলে পাওয়া যাবে।
গেল চার তলায়। এখানে লেখা আছে--এই ফ্লোরের ছেলেদের চাকরি আছে, তারা বাচ্চাদের পছন্দ করে, ছেলেগুলো দেখতে খুব সুন্দর এবং ঘরের কাছে সাহায্য করে।
শেফালী রানী ভাবলো এরপরের তলায় আরও ভাল স্বামী পাওয়া যাবে।
গেল সেখানে। এখানে লেখা দেখলো-এই ফ্লোরের ছেলেদের চাকরি আছে, তারা বাচ্চাদের পছন্দ করে, ছেলেগুলো দেখতে খুব সুন্দর, ঘরের কাছে সাহায্য করে এবং অত্যন্ত রোমান্টিক।
তারপরেও শেফালী রানীর আগ্রহ কমলো না। ভাবলো ৬ তলায় নিশ্চই আরো ভাল ছেলে আছে। ৬ তলার এক ছেলেকেই কিনে নেওয়ার আশা করে গেল ৬ তলায়।
৬ তলা পুরোটা খালি। ডিসপ্লেতে একটি ছেলেও নেই। খালি লেখা রয়েছে, ‘আপনি এই ফ্লোরের ৬,৮৭৫,৯৫৩,০১২ নম্বর ভিজিটর। আপনি কিভাবে আশা করেন এখনও এই ফ্লোরে কোনো ছেলে অবশিষ্ট থাকবে!!
শিক্ষা: মেয়েদের সন্তুষ্ট করার সাধ্য কারোই নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।