আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাণ এসেছে চোখের জলে, নৌকো ভাসা বন্ধুরে...............

পরাঞ্জয়ী...

জ্বর টা কিছুতেই নামছে না। উহ! কি যে করি! অসহ্য!! কত আর শুয়ে থাকতে ভাল লাগে?!! পুরোনো ডায়রীটার পাতা উল্টালাম। মনে পড়ে গেল কত কথা.............. এমনই জ্বরে পড়েছিলাম একবার। তখন আমি মিরপুর ১০ নাম্বারে একটা হোস্টেলে থাকি। ছুটে আসলি রাত ১২:৩০ টায়।

হোস্টেলের গেইট বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এত করে বললাম,কে শোনে কার কথা। স্পেশাল পারমিশনে ঢুকে পড়লি। তারপর হাত ধরে বসে থাকলি কিছুক্ষন। হুট করে কি যেন মনে পড়ে গেছে এমন একটা ভাব নিয়ে বললি "চল"।

আমি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলাম "কোথায়?"। বললি "আপার বাসায়", "এত রাতে? পাগল হইছিস তুই?" "চুপ কর্, এই জ্বর নিয়ে তোমাকে এইখনে রেখে যাবো আমি? ফাজলামো না?" হোস্টেল সুপার জ্বরের পরিমান দেখে যাও্যার অনুমতি দিলেন। আপার বাসায় গিয়ে সারারাত জেগে আমার মাথায় জল পট্টি দিলি। তোর কান্ড দেখে আপা দূলাভাই পর্যন্ত অবাক হল, বাঁকা চোখে চাইলো। রাতভরে গজ গজ করলি রাগে।

"খেতে বললে খাবে না, ঘুমাবেনা, চাঁদ তারা না দেখলে ওনার খাদ্য পরিপাকে ঝামেলা হয়, বৃষ্টিতে না ভিজলে গায়ের জালা জুড়ায় না" ইত্যাদি ইত্যাদি আরও কত কি। কিছু বলিনি তোকে। কারন আমি জানতাম আমার কষ্ট হলে তোর কষ্ট হয়। সেই ঝাল ঝাড়িস এসব বলে। সকালে জ্বরটা কমে গেল।

আপা হেসে বললো " রাত্রি, অতনুকে বিয়ে করবি? ভাল সেবা যত্ন পাবি!" আমি বললাম "সাথে রাতভর বকা ফ্রী" । সবাই হেসে উঠলো। তারপরদিন হোস্টেলে ফিরলাম। পৌঁছে দবার পথে সারাটা সময় শুনলাম তোর সোলেমানী হুমকি " এটা না করলে এটা কোরবো, সেটা না খেলে মাইর খাবি" আরও কত কি। সেইদিন টা আজও মনে পড়ে স্পষ্ট।

কি একটা কাজে যেন আইন অনুষদে গিয়েছিলাম। ভাবলাম তোর সাথে দেখাটা করে যাই। ঢাকা মেডিকেলের গেইটে দাঁড়িয়ে ফোন দিলাম তোকে। লাইন কেটে দিয়ে এস.এম.এস করলি " ক্লাশ চলছে"। কি আর করা অপেক্ষা করতে থাকলাম।

পায়চারি করতে করতে শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে দেখি ফুচকা। ওহ!! দেরী না করে বসলাম ফুচকা নিয়ে। একটি মাত্র সাবাড় করতে বাকি, তুই এসে হাজির। কানটা ধরে বললি " তোকে না মানা করছি এসব খাবিনা?" এভাবে কান ধরা দেখে আশে পাশের সব মানুষ "মিস্টার বিন" দেখছে এমন একটা হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে থাকলো। আমার খুব রাগ উঠেছিল সেদিন।

আমি কি এখনো ছোট? অনেক পরে রাগ ভাঙলে বললি " আজ একটা কথা বোলবো তোকে"। বললাম "বল"। বললি " তুই তো জানিস আমার পরীক্ষা আগামী মাস থেকে। তারপর রেজাল্ট, ইন্টারনী অনেক ঝামেলা। আমি আপাকে বলেছি যেন অন্তঃত আমাদের এনগেজমেন্ট টা হয়ে থাকে।

" আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। " কি বলছিস তুই? আমাদের এনগেজমেন্ট মানে? অতনু কি বলছিস এসব?!!!" তুই তার চেয়ে বেশি অবাক হয়ে বললি" কেন ভুল কি বললাম?" আমি এবার রেগে গিয়ে বললাম " আমি কখনও তোকে বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু ভাবিনি, আর তুই কিনা.............। " ততক্ষনে তুই বুঝে নিয়েছিলি আমার মনের হালচাল। বললি " আরে গাধি, আমি কি তোর কথা বলছি আমি তো আমার ক্লাশ মেট নীরার কথা বলছি" আমি সেদিন বোকার মত বিশ্বাস করেছিলাম তোর কথা। একবারও ভেবে দেখিনি যে ছেলেটি সারাদিন আমার সাথে পাছে ঘোরে তার প্রেমিকা জোটানো টা কতটা যুক্তিযুক্ত।

কতদিন ভুল করে তোর সেল ফোনটা আমর ব্যাগে রেখে গিয়েছিস এমন একটি এস এম এস বা ফোন কল আসেনি যা দিয়ে ভাবা যায় তুই অন্য কাউকে ভালবাসিস। এত টুকুও সেদিন ভেবে দেখিনি আমি। কারন আমি তোকে না জানিয়ে চুপিচুপি প্রেমে পড়েছিলাম অরিত্রের। অরিত্র কেমন যেন ছিল শুরু থেকেই। সবার কাছ থেকে আড়াল করে রাখতে চাইতো আমাকে।

যেন আমি তার বড় এক দূর্বলতা। তাই আমিও বলিনি তোকে। কতদিন ওর কত উপমা শুনে ভেবেছি সে বুঝি আমি!!! কিন্তু পরে জেনেছি অন্য কেউ। তারপরও ভালবাসা। যে দেয় সে তো নিজ গরজেই দেয়।

নইলে আমি কি করে সইতাম তাকে? তুই ই বা নীরবে এতটা ভালবাসতি কি করে আমাকে?। তোকে আমার মা খুব পছন্দ কোরতো। কিন্তু সবার মতের বাইরে বিয়ে করলাম অরিত্র কে। তুই ততদিনে প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। নামের আগে পিছে কত রকমের টাইটেল! অরিত্র ভীষন রগচটা ছিল।

কথায় কথায় আমাকে তুলনা কোরতো তার খুব অপছন্দের একটি চরিত্রের সাথে। আমিও যে মানুষ, আমার রাগ,অভিমান, সুখ, দুঃখ থাকতে পারে তা যেন সে ভুলে গিয়েছিল। আমি ছিলাম ওর কাছে একজন নীরব শ্রোতা। ওর জানা চেনা কত শত লক্ষী মেয়েদের গল্প শোনাতো ২৪ টি ঘন্টা। সেখানে আমি নেই, আমরা নেই, আমাদের গল্পও নেই।

আমি দেখতে সুন্দর নই এই কথাটা মনে করিয়ে দিত সদা সর্বদা যাতে আমি ভুলে না যাই আমাকে বিয়ে করে 'সে আমাকে উদ্ধার করেছে"। এভাবেই চলছিল দিনযাপন। একদিন ওর সত্যিই মনে হল আমি হলাম সেই চরিত্রের মেয়ে যে স্বভাবের কারনে ওর আগে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। তারপর? আর পারলাম না। ফিরে এলাম আগের ঠিকানায়।

আত্মীয়- স্বজন দের কাছে গিয়ে লাভ নেই। আমি সেই পরিবারে জন্মেছি যেখানে খিড়কি দরজা দিয়ে একবার বের হলে ফিরে যাবার জন্য সদর দরজা বা খিড়কি কোনটায় খোলা থাকেনা। চাকরীটা ছিল তাই রক্ষা। এমনি করেই কাটছে দিন। মনে মনে তোকে অনেক খুঁজি।

দেখ কত স্বার্থপর আমি। সুখের দিনে তোকে ছুড়ে ফেলেছিলাম খুব সহজেই। আজ আমার চোখের জলে যখন বাণ এসেছে তখন নৌকো ভাসাতে খুঁজছি তোকে!!! নিজেকে ধিক্কার দিতেও লজ্জা পাই আমি। তারপরও জীবন বড় লোভ দেখায় আমাকে, বাঁচার লোভ, একটা সংসারের লোভ, দু তিনটে কচি কন্ঠের "মা" ডাক শোনার লোভ, যাদের নাম রাখতে চেয়েছিলাম লগ্ন আর কাব্য!!!!! জ্বরে পুড়ছে শরীরটা। পুড়ুক।

পুড়েও যদি খাঁটি হওয়া যায়!!!! তারপরও যদি পাই তোকে, আমার জীবন তরীর মাঝি!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।