জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ৩০ টি বছর। আর সেই সাথে পেয়েছি কিছু স্মৃতি। শৈশবের স্মৃতি সবাইকে কম বেমী নাড়া দেয়, আর আমি ও সে সবার থেকে আলাদা কেউ নই।
ছোট বেলায় ঈদের দিনে খুব বেশি মজা করতাম। সকাল বেলা খুব ভোরে উঠে আব্বার সাথে পুকুরে গোসল সেরে কয়েকদিন আগে কেনা এবং সযত্নে লুকিয়ে রাখা নতুন পোশাক পরতাম আর এ কাজে সব সময় সহযোগীতা পেতাম আম্মার কাছ থেক।
পোশাক পরা হলে আম্মার হাতে মিষ্টিমুখ করে আব্বার সাথে যেতাম ঈদগাহে। নামাজ কি তখন ঠিকমত বুঝতাম না তারপর ও সবার সাথে জামাতে ঈদের নামাজ পড়ে কোলাকুলি পর্ব সেরে নিতাম, আর এর ফাকে ঈদগাহের অস্থায়ী দোকান থেকে খেলনা, মিষ্টিসহ বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয় করে ঈদ সালামীর টাকা আক্কেল সেলামী দিতাম।
ঈদগাহ থেকে ফিরে সব সমবয়সীরা মিলে চালাতাম ঈদ সালামী আদায়ের অভিযান। আর তারপর সমবয়সীদের সাথে খেলা আর ঘোরাঘুরির সাথে ঘন্টায় ঘন্টায় মায়ের হাতের, চাচীর হাতের সুস্বাদু খাবার উদরপূর্তী করে পরম তৃপ্ত হতাম।
এরপর যখন একটু বড় হলাম তখন শুরু হলো নতুন খেলা, ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেনীতে পড়াকালনি সময়ে ঈদের আগের রাতে পাশের বাগান থেকে ডাব চুরি করে খাওয়ার াভিযান আজ ও ভূলিনি।
ক্রমে সে সব দিনগুলি যে কখন হারিয়ে গেল বুঝতে পারিনি। কখন যেন বড় হয়ে গেলাম।
.........................................................................
আজ পড়াশুনা শেষ করে বিয়ে শাদি করে সংসারী হয়েছি, কিন্তু সে দিনের কথা ভূলতে পারিনি। তাইত আজ ও বন্ধুরা মিলে পিরে যেতে চেষ্টা করি সেসব দিনগুলিতে।
আমাদের ঈদের আনন্দ শুরু হয় চাঁন রাত থেকে।
চাঁন রাতের আগেই সব বন্ধুরা গ্রামের বাড়ি ফিরতে হবে। রাত ১২ টা (এ্যানালগ টাইম) এর পর সবাই মিলে পাশের বাগানে ডাব চুরির অভিযান দিয়ে শুরু হবে ঈদের প্রোগ্রাম। আর এ কাজে সব সময় পারদর্শী আমি আর বন্ধু শরীফ। শরীফ হাটতে হাটতে নারকেল গাছে উঠতে পারে। বড় রশি নিয়ে শরীফ গাছে উঠে যাবে আর ঐ রশি ডাবের কাধিতে খৌশলে বেধে কাধিটা কেটে দিবে এবং আস্তে আস্তে সেটা চলে আসবে আমাদের হাতে।
প্রত্যেকে কমপক্ষে ৫ টি ডাব খেতে হবে এ অভিযানে, বেশি খেলে অসুবিধা নেই, কম খেলে প্রতিটি কম কাওয়ার জন্য এক প্যাকেট করে বেনসন সিগারেট দিতে হবে।
ঈদের দিন সকালে উঠে গোসল সারি আজও দল ধরে পুকুরে। সেখানে লুটোপুটি করে গোসল সেরে ঘরে এসে নতুন পাঞ্জাবী পরা, তবে পাঞ্জাবীটা অবশ্যই আম্মার হাত থেকে আসতে হবে। পোশাক পরেআম্মার হাতের মিষ্টি খেয়ে চলে যাই ঈদগাহে। নামাজ শেষে আজ ও চলে কোলাকুলি করার পর্ব এবং নামাজ পড়ে ফেরার পথে আব্বাসহ মুরুব্বীদের কবর জিয়ারত সেরে ঘরে ফিরে সকালের নাস্তা পর্ব সেরে আমরা সবাই (বন্ধুরা) চলে যাব বাড়ির পাশে নদীর চরে।
যাওয়ার পথে নিয়ে নিব দুপুর পর্যন্ত সিগারেটের স্টক আর কয়েক সেট প্লেয়িং কার্ড। নদীর চরে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর কার্ড খেলা, সাথে সিগারেটের ধোঁয়া উড়ানো। অতি অবশ্য এ সময়ে সবার মোবাইল বন্ধ রাখতে হবে।
দুপুরে সবাই যে কোন এক বন্ধুর বাড়িতে খেয়ে, দল ধরে ঘুরতে বের হওয়া। সব বন্ধু, আত্নীয় পরিজনদের বাড়ি ঘুরে অনেক রাতে ঘরে ফেরা আর ফিরে বৌ এর মান ভাংগানো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।