সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধে বাজার সয়লাব
ঢাকা শহরের নামকরা একটা ঔষধের দোকান থেকে একজন 'বোন ক্যান্সার' পেশেন্ট জীবন রক্ষাকারী একটি ইঞ্জেকশন পেগ্লিটক্সিল-বি, ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় এবং একটি ঝোলাডেক্স ইঞ্জেকশন কিনেন ৯ হাজার টাকায়। দুটো ইঞ্জেকশনই সুইডেনের তৈরী। অন্যান্য ইঞ্জেকশনের সাথে পেশেন্ট যথা রীতি উল্ল্যেখিত ২ টি ইঞ্জেকশন সহ ৩ সাইকেলের একটা কেমোথেরাপী নিতে ভর্তি হয় ডেল্টা ক্যান্সার হাসপাতালে। পেশেন্টের জন্য এটা তাঁর ১৬ তম কেমোথেরাপী। তিনি আগেও এই হাসপাতালে ৩ বার কেমোথেরাপী নিয়েছিলেন।
এবার কেমোথেরাপী শুরুর ২/৩ ঘন্টা পরই নিয়মের বাইরে পেশেন্টের হার্ট বিট কমে যাচ্ছিল এবং শরির হীমশীতল হয়ে যাচ্ছিল দেখে ডাক্তার নার্স কেমোথেরাপী বন্ধ করে দেন। উল্লেখিত ২ টি ইঞ্জেকশনের তলানীর ঔষধ ল্যবোরেটরিতে টেস্ট করে জানতে পারেন-ঐ ইঞ্জেকশন ২ টি মেয়াদ উত্তীর্ণ! পেশেন্ট উক্ত ঔষধের দোকানের নামে মামলা করে । পুলিশ ঐ দোকানে তল্লাশী চালিয়ে আরো কিছু বিদেশী মেয়াদউত্তীর্ণ ইঞ্জেকশন/ঔষধ সীজ করে। লক্ষ করে দেখা যায়-সব ঔষধের লেবেলেই এক্সপায়েরিটি ডেট আরো এক বতসর বেশী লেখাছিল। দোকানী স্বীকার করতে বাধ্য হয়-দামী ঔষধ বলেই মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধের লেবেল প্রিন্ট করে লাগিয়ে নিয়েছিল! উল্লেখিত ঘটনা কোন কল্প কাহিনী নয়।
সম্পুর্ণ সত্য!
দেশের সর্বত্রই এখন নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধে বাজার ছেয়ে গেছে। এসব নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের অপ্রতিরোধ্য দাপটে আসল ও গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধ আড়াল হয়ে গেছে। ভেজালের এতই ছড়াছড়ি যে, নকলের ভিড়ে আসল পাওয়া দুর্লভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুষ্ঠু ও যথাযথ তদারকির অভাবে দিন দিন অকল্পনীয় হারে বেড়ে চলেছে এসব নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ। ভেজাল নির্মূলে "মোবাইল কোর্ট" যতসামান্য অব্যাহত রাখা হলেও নকল ও ভেজালের প্রবণতা আশানুরূপ কমছে না।
বরং উল্টো আরো বেশি দেদারসে উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি হচ্ছে। ভেজাল নির্মূলে আইনের শিথিলতার কারণে বহুগুণে বাড়ছে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রি।
পৃথিবীর প্রায় ৩০ ভাগ নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরী হয়ে থাকে ভারতে। ভারতেই এসব নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ অবাধে এদেশে প্রবেশ করছে। এর পাশাপাশি দেশের কিছু নাম-সর্বস্ব ওষুধ কোম্পানিও পাল্লা দিয়ে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন করে একেবারেই সস্তায় বাজারে ছাড়ছে।
তবে উৎপাদিত ওষুধের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ওষুধ কোম্পানিই গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধ তৈরী করছে। বাংলাদেশের গুটিকয়েক স্বনামখ্যাত ওষুধ কোম্পানির ওষুধগুলোই আজ পৃথিবীর ৫৭টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু যে-হারে দেশে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের ছড়াছড়ি এতে করে দেশের রপ্তানিমুখি ওষুধের বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তরের প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে চলছে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ। এ বিষয়ে তদারকির জন্য বিভিন্ন থানা ও জেলা পর্যায়ে নিয়োজিত রয়েছে ড্রাগসুপাররা।
কিন্তু সারাদেশে ড্রাগসুপার রয়েছে মাত্র ৩৩ জন, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। দায়িত্বে নিয়োজিত এ স্বল্পসংখ্যক ড্রাগসুপারও ভেজাল ধরার ব্যাপারে একেবারেই নির্বিকার। অভিযোগ রয়েছে, এসব ড্রাগসুপার ফার্মেসির লোকজন থেকে উচ্চহারে মাসোহারা নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে। কতিপয় ড্রাগসুপারের দুর্নীতি, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অবৈধ ব্যবহারের কারণে নকল ও ভেজাল ওষুধে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। সেই সুবাদে ফার্মেসিগুলোতে অহরহই অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ।
ফার্মেসির লোকজন অধিক মুনাফা লাভের আশায় এসব ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ রোগীদের গছিয়ে দিয়ে থাকে। এসব ওষুধ রোগ প্রতিরোধ তো দূরের কথা, বরং নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এতে করে রোগীরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে নানারকম জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
নিম্নমানের ওষুধ এবং ওষুধে ভেজাল নির্ণয়ের জন্য রয়েছে একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি। প্রতিমাসে বিভিন্ন জেলা ও থানা পর্যায়ে নিয়োজিত সরকারি ড্রাগসুপারভাইজার বা ওষুধ তত্ত্বাবধায়কদের পাঠানো ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করা এ প্রতিষ্ঠানের একটা নিয়মিত কাজ।
এসব পরীক্ষায় দেশে তৈরী ও আমদানি করা ওষুধের নমুনা থেকে প্রচুর পরিমাণে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ শনাক্ত করা হয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন যাবৎ লোকবল সংকট এবং প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়ন না করায় যথাসময়ে সঠিক ও নির্ভুলভাবে ভেজাল নির্ণয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের। ওষুধের নমুনা পরীক্ষায় অনেক সময় ভেজাল ও নিম্নমান প্রমাণিত হলেও এর বিরুদ্ধে কার্যক্রম ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের বিস্তৃতি ঘটে অকল্পনীয়ভাবে।
রমরমা ব্যবসা ও অধিক মুনাফা লাভ অনেককেই ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠায় প্রলুব্ধ করছে।
নিয়মনীতি ছাড়া দিন দিন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে এ শিল্প প্রতিষ্ঠান। ওষুধ শিল্পের অভাবনীয় উন্নতি ঘটলেও সুষ্ঠু তদারকির অভাবে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এ অবস্থায় রোগীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ নির্মূলে আরো কঠোর ও যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করা উচিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।