আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিয়েতনাম_হো চি মিন সিটি-২



ক্যামেরা হাড়িয়ে তো আমার আধা মরা অবস্থা! নীচে রিসেপশনে গিয়ে হাজারও হাও কাউ করে কোন লাভ হলো না। ওদের নীর্লিপ্ত ভাবে এক কথা " আমরা জানিনা কিছু। পুলিশ ডাকা হলো। পুলিশ ব্যাটা এক বর্ণ ইংরেজি বোঝে না। কেয়ারটেকার মহিলা ওকে ট্রন্সলেশন করে কি বলল একমাত্র ওরাই জানে।

পুলিশ শালা ( মাফ করবেন এটা লেখার জন্য, এর চাইতে ভাল কথা আমার মাথায় আসেনা ওদের জন্য) উপরে গিয়ে রুম চেক করে আমাদের বলল থানায় গিয়ে রিপোর্ট করতে। সে কিছু করতে পারবে না জানাল। থানায় গিয়ে দেখি করুন আবস্থা থানার। একজন অফিসারও এক বর্ণ ইংরেজি বোঝেনা, বলে না। আবারও সেই হোটেলের কেয়ার টেকার মহিলা তর্জনা শুরু করল আমার কথা।

আল্লাহই জানে কি বললো। একটু পরে ও আমাকে বলে যে আমি নাকি রাতে সাবাই যখন ঘুমিয়ে তখন চুপি চুপি নীচে গিয়ে আমার বয় ফ্রন্ডকে ক্যামেরা পাচার করে দিয়েছি আর এখন বলছি আমি ক্যামেরা রুম থেকে হাড়িয়েছি। শালীর ( মাফ করবেন আবারও) কথা শুনে আমার তো হতভম্ভ অবস্থা, রাগে মাথা জ্বলতে লাগলো। এই কথার উত্তর কিদেব বুঝতে পারছিলামনা, মনে মনে কষে চড় মারার প্রচন্ড ইচ্ছেটা চাপা দিলাম। হাইডি এগিয়ে এসে ওর কথার প্রতিবাদ করা শুরু করল।

আবশেষে কেয়ারটেকার হাল ছাড়ল আমাকে উল্টা দোষ দেবার প্রচেষ্টায়। এমন সময় জ্যমা আর গ্রেসের টয়লেট চাপল। হাইডি ওদের নিয়ে থানার টয়লেটে গিয়ে দেখে ওখানে নামে মাত্র একখানা গর্ত, যা কিছু করার তা করবার জন্য তাও আবার উপচে পরছে। ফিরে এসে বাচ্চাদের নিয়ে ভেতরে বসতে এক অফিসার এসে বলে যে ও বাচ্চাদের নিয়ে ভেতরে বসতে পারবে না। অভদ্রের মতা বাচ্চা দুটেকে নিয়ে থানা থেকে ওদের তিন জন কে বের করে দিল।

তিন বেচার গরমে নোংড়া, ব্যস্ত রাস্তায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো আমার। আমাকে দিয়ে ওরা তিনবার রিপোর্ট লেখালো আর ঐ কেয়ারটেকার শালীকে দিয়ে তার অনুবাদ লেখালো গড নোজ হোয়াট দ্যা হেল সি রোট। আবার পাচ ইউ এস ডলার ঘুষও নিলো তাড়াতারি কাজ করে দেবার জন্য। এই করতে ই আমাদের দুপুর। মন প্রচন্ড খারাপ।

সব মিলিয়ে আমার সিংগাপুর ডলার ৩,০০০ এর মত গেছে ক্যামেরা আর লেন্স সহ। বেরানোর মজাটাই চলে গেল। আবার ভাবলাম আজ মাত্র প্রথম দিন আরো ১৩ দিন থাকব এই দেশ, এভাবে যদি মন খারাপ করে থাকি তাহলে হাইডি আর বাচ্চাদের বেড়ানোটাও নষ্ট হয়ে যাবে। আর মন খারাপ করলেত ক্যামেরা ফিরে আসবেনা। তাছাড়া সান্তনা আমার ইনস্যুরেন্স করা আছে তাই কিছু টাকা ইনস্যুরেন্স কাভার করবে।

আমারা চার জনই টায়ার্ড আর ক্ষুধার্ত ছিলাম। খাবার দোকানে গিয়ে কিছু খাওয়ালাম বাচ্চাদের। আমি আর হাইডি দুটো করে সিংগাপুর স্লিং নিলাম মাথা ঠান্ডা করবার জন্য। এসবের মাঝে পিচ্চি দুটেোর নন স্টপ মাড়ামাড়ি, কান্না কাটি, ঘন ঘন পানি পিপাসা আর টয়লেট চাপছে। আমাদের মাথা ঠান্ডা রাখা সেই মুহুর্তে সবচাইতে ইমপর্টেন্ট ! আর সিংগাপুর শ্লিং ওখানে $৩ ।

এত সস্তা কল্পনাও করা যায়না সিংগাপুরে। আমরা তো তিন লাফ এর পর থেকে ব্রেক ফাস্ট করার সিদ্ধান্ত নিলাম সিংহাপুর স্লিং দিয়ে.... মাথা ঠান্ডা করে ঠিক করলাম সব ভুলে আমরা এখন বেরাবো। চালক সহ মটরসাইকেলের পিঠে চড়ে রওনা দেব ওয়ার মিউজিয়াম দেখতে। এখন দুই পিচ্চিই ওদের মা'র সাথে যাবে, এদিকে এক মটরসাইকেলে একজন এডাল্ট ও একজন বাচ্চা নেবে মাত্র । মহা ঝামেলায় পড়লাম।

তবু হাইডি জোড় করে জ্যমাকে আমার কোলে দিয়ে রওনা দিতেই জ্যমা গলা ফাটিয়ে চীৎকার জু্ড়ে দিল আর চলন্ত বাইক থেকে লাফিয়ে পড়ার চুড়ান্ত পর্যায়ের চেষ্টা চালাল। অবশেষে বাদ্ধ হয়ে ওকে চলন্ত বাইক থেকে ট্রান্সফার করা হলো হাইডির বাইকে সে এক দৃশ্য আর কি। পরে অবশ্য ও আর এমন করে নি। ওয়ার মিউজিয়ামে গিয়ে অবাক হয়ে দেখলাম আমেরিকা ভিয়েতনামের যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক, মরটার সব ওরা সাজিয়ে রেখছে। প্রচুর অত্যাচারের কাহিনি সহ কত শত ছবি ।

অমানবিক ভাবে আমেরিকানদের সাধারণ মানুষ আর সাংবাদিকদের উপর অত্যাচার আর খুনের ছবি। ওখানে সেই যুদ্ধে মৃত সৈনিকদের ব্যবহার করা নিজের নাম আর কোন অস্ত্র সে ব্যবহার করছে তা খোদাই করা লাইটার দেখলাম। ওগুলো ওরা বিক্র করছে। এত সৈনিক মারা গেছে যে এখনও বিক্রি করে শেষ করতে পারেনি। আমি ক্লিফের জন্য একটা কিনলাম।

লাইটারটা হাতে নিতেই যেন শত শত কষ্টের ইতিহাস আর এক যোদ্ধা সৈনিকের সংগ্রাম আর ইমোশোন অনুভব করলাম। এক পিঠে ওতে খোদাই করে লেখা আছে : VIETNAM BIEN HOA 67-68 FIGHTER BY DAY LOVER BY NIGHT DRUNKARD BY CHOICE SOLDIER BY MISTAKE অন্য পিঠে : একটা যুদ্ধ ট্যাঙ্কের ছবি খোদাই করা আর তার উপর খোদাই করে লেখা: ARMOR. মিউজিয়ামের একটা আর্ট গ্যালারি আছে যেখানে আজকের প্রজন্মের শিশুরা নতুন দিনের প্রত্যাশা নিয়ে ছবি একেছে যুদ্ধের আঘাতে ভেংগে যাওয়া জাতীর জন্য। হাইডি জ্যমা আর গ্রেসকে তা এক্সপ্লেইন করে বলল। চমৎকার সব ছবিতে পুরোটা দেয়াল ভরা। যেকোন বাচ্চা সেখানে ছবি পাঠাতে পারে।

এর পরে গেলাম রিভার সাইডে। একটা ছোট নদীর পাড়ে কিছু বড় বড় হোটেল আর রেস্ট্ুরেন্ট গড়ে উঠেছে। চমৎকার খোলা মেলা, পরিস্কার আর সুন্দর জয়গাটা। কিছু কিছু রেস্টুরেন্ট ছোট ছোট বোটের ভেতর সুন্দর করে লাইট দিয়ে সাজানো। চমৎকার আলোক সজ্জা হয় রাতে।

রিভার সাইডে একটা আর্ট গ্যালারিটে ঢু মারলাম যেখানে বাচ্চারা লেগে গেল ছবি বাধানোর কাজে সাহায্য করতে । বিশাল লম্বা একটা ছবি দেখলাম দেয়ালে টাংগানো ২০/২৫ ফিট লম্বা, পুরেো হো চি মিন সিটি তাতে ধরা !! ওদেশে রাস্তা পেরবার কোন পেডিস্ট্রয়ান সিগনালের ব্যবস্থা নেই। যে যেমন ভাবে পারে রাস্তা পেরয় আর কেউ কাউকে পথ দেয়না, পারলে গায়ের উপর উঠে আসে। যেটা কেম্বডিয়ায় দেখেছি সবাই খুবই আন্ডারস্টানডিং মাইন্ডের, সবাই সবাই কে সাহায্য করে পথা করে দেয়। এখানে সেই কার্টেসিটা কোথাও খুজে পেলামনা।

দুই পিচ্চিকে নিয়ে রাস্তা পেরতে আমাদের নাজেহাল অবস্থা প্রত্যেক বার। রাতে হোটেলে ফিরতেই কেয়ারটেকার আরেক দফা আমাকে আক্রমনের অপচেষ্টা চালালো.....চোরের মায়ের বড় গলা আর কি !!! মন ছিল না ওকে কিছু বলার, আবারও ওকে থাপ্পড় মাড়ার ইচ্ছেটা চাপা দিয়ে আমরা ঘুমাতে গেলাম। পরের দিন সন্ধে ৭টায় আমাদের হানোই যাবার ফ্লাইট !!!! হানোই ভিয়েতনামের আরেকটা শহর। হো চি মিন থাকে ২ ঘন্টার ফ্লাইট..... চলবে.....।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।