আজ জাতীয় কবি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ২৭ আগস্ট ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে সকালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় পিজি হাসপাতালে ( বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল) মৃত্যুবরণ করেন। ঐদিনই বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর একটি গানে এমন অনুরোধই তিনি করেছিলেন-
মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই।
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।
।
১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ মোতাবেক ২৪ মে ১৮৯৯ মঙ্গলবার ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে নজরুল জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কাজী ফকির আহমেদ, মাতা জাহেদা খাতুন। কাজী ফকির আহমেদের ছিলো ২ স্ত্রী, ৭ পুত্র ও ২ কন্যা। কবিরা সহোদর ৩ ভাই ১ বোন।
জ্যেষ্ঠ কাজী সাহেবজান, কনিষ্ঠ কাজী আলী হোসেন ও বোন উম্মে কুলসুম। নজরুল ছিলেন দ্বিতীয় পক্ষের দ্বিতীয় সন্তান। সাহেবজানের পর ৪পুত্র অকালে মারা যাবার পর নজরুলের জন্ম। এই দু:খের পর জন্ম বলেই হয়তো তাঁর ডাকনাম রাখা হয় দুখু মিয়া।
৮ বছর বয়সে পিতার মৃত্যু তাঁকে অকাল জীবন সংগ্রামে নামিয়ে দেয়।
সেই থেকে সংগ্রাম আর অনিশ্চয়তাই তাঁকে বোহেমিয়ান করে তোলে। মক্তবে মাস্টারী,মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাজ, লেটো দলের গায়ক/গীতিকার, রুটির দোকানের কাজ,সৈনিক হয়ে যুদ্ধযাত্রা, পত্রিকা সম্পাদনা/পরিচালনা, রাজনীতি, সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ ( ও বিপুল ভোটে পরাজয়) ,চলচ্চিত্রে অভিনয়/সঙ্গীত পরিচালনা/কাহিনীরচনা এরকম বহুবিচিত্র কর্মযজ্ঞে শোভিত ছিলো তাঁর চির অনিশ্চিত বোহেমীয় জীবন।
রবীন্দ্রনাথের বলয়ে থেকেও প্রচলিত কাব্যরচনার ছন্দ/রীতি মেনেই তিনি সুস্পস্টভাবে রবীন্দ্রনাথ থেকে স্বতন্ত্র। বাংলা কবিতায় সর্বাধিক ব্যবহৃত অক্ষরবৃত্তের চেয়ে স্বরবৃত্ত,মাত্রাবৃত্তের ব্যবহারের প্রতি পক্ষপাতিত্ব, শব্দ ব্যবহারে নতুনত্ব,অভিনভত্ব,দ্রোহের গতিময়তা তাঁর কাব্যকে স্বতন্ত্র করে তুলেছে। বিদ্রোহ,প্রতিবাদ, তীব্রপ্রেম ও অভিমান, মানবতাবাদ, সাম্যবাদ,ভক্তিবাদ তাঁর কবিতাকে মহিমান্বিত করেছে।
বাংলাগানের এ প্রবাদপুরুষ সর্বাধিক সংখ্যক গান রচনা/সুরারোপ করেছেন। নজরুল ইন্সটিটিউট প্রকাশিত নজরুল সঙ্গীত অভিধানে নজরুলের ৩০৮৬টি গানের প্রথম ছত্রের উল্লেখ আছে। ধারনা করা হয় নজরুল সাড়ে তিন থেকে চার হাজার গান লিখেছেন। এখনো তাঁর সবগানের হদিস পাওয়া যায়নি। অথচ প্রকৃতপক্ষে ২২ বছরের সাহিত্যজীবনে তিনি গানের জন্য সময় ব্যয় করেছেন মাত্র ১১ বছর।
গানের বাণীতে ধ্বনির অপূর্ব ব্যবহার, সুর বৈচিত্র্য,অভূতপূর্ব মেলোডি,নতুন রাগসৃষ্টি,একইগানে বিচিত্র সুর/তালের মিশ্রন তাঁর গানকে অনন্য করে তুলেছে। তিনিই শুধু একা দুই ধর্মের ধর্মীয় সঙ্গীত (ইসলামী/ভজন,কীর্তন) রচনা করেছেন।
বাংলা উপন্যাসের প্রথম পর্বের একজন হয়েও সৃজনশীলতার ছাপ রেখেছেন। তাঁর ''বাঁধনহারা'' বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম পত্রোপন্যাস।
গল্পেও রেখেছেন বৈচিত্র্যের ছাপ।
রোমান্টিকতা, কাব্যময় শব্দের ব্যবহার, আধিভৌতিকতা এবং রূঢ়বাস্তবতার চাঁছাছোলা ব্যহার তাঁর গল্পে বৈচিত্র্য এনেছে।
নজরুলের শিশুতোষ রচনা, রসরচনা, নাট্য রচনা, চলচ্চিত্রজগতের কর্মমুখরতা, সাংবাদিকতা, রাজনীতি ইত্যাদি তাঁর কর্মবৈচিত্র্যের পরিচয় বহন করে।
১৯৪২ সাল থেকে ১৯৭৬ সালে মৃত্যু পর্যন্ত অজানা ব্যধিতে আক্রান্ত নজরুল এক জীবম্মৃত করুণ জীবন যাপন করে গেছেন। তাঁর গানের বানী এমন ট্র্যাজিকভাবে তাঁর জীবনে সত্য হয়ে উঠবে ( ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি) তা হয়তো তিনিও ভাবেননি। তাওবা বলি কী করে ? ''বাতায়ন পাশে গুবাকতরুর সারি'' কবিতায় যে বলছেন-
নিশ্চল নিশ্চুপ
আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ !
জীবন যুদ্দে আজীবন পুড়ে ছাই হওয়া এ মহান কবিতে মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই অনেক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা।
ভালো থাকুক এ ''ঝাকড়া চুলের বাবরী দোলানো'' সৃস্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা মহান পুরুষ"।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।