আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আরও কিছু অগোছালো কথা



এক পিচ্চিকে কোলে নিয়ে মা এসেছে, দূর থেকেই দেখছিলাম গাবদু গুবদু বাচ্চাটাকে (মাশাল্লাহ), খুব সুন্দর, হাসিখুশী, আর স্বাস্থ্যও ভালোই। হয়তো ঠান্ডা লেগেছে, তাই এখানে এসেছে। কাছে আসার পর জিজ্ঞেস করলাম, কি সমস্যা? তার মা বলল, দেখেন না ম্যাডাম, আমার পোলাডা খালি দিন দিন শুকায়া যাইতাছে, কিসসু খায় না। আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই আমার চশমার পাওয়ার বাড়াতে হবে। আবার ভালো করে দেখলাম পিচ্চিটাকে।

যথেষ্ট স্বাস্থ্যবান, বরং আর একটু কম হলে স্বাভাবিক হত। চিন্তা করতে থাকলাম কি বললে বাচ্চার মা মাইন্ড করবেন না। পরে বললাম, বাচ্চারা এমনিতেই আস্তে আস্তে সব খাওয়া শিখে যায়, এটা নিয়ে টেনশন করবেন না। এরকম আরও কিছু ভং চং মার্কা কথা বলে বিদায় করলাম। একটু পর আবার ফিরে আসল, একটা ভিটামিনের ফাইল লিখা দেন, যাতে খাওনের নুচি (রুচিকে নুচি বলে এখানে) আসে।

এই জিনিসটা এদের মধ্যে খুব কমন, আর কিছু হোক না হোক, একটা ভিটামিনের ফাইল খেতে পারলে খুব খুশী। প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুশ রোগী আসে যাদের ৯০% এর সমস্যা হল, সারা শইলে ব্যাতা। মনে মনে বলি, ওষুধ দিমু কোতা? এদেরকে যে ওষুধই দেয়া হোক না কেন (আয়রন বা এন্টাসিড), কয়েক দিন পর এসে বলবে, আপনের ঐ ওষুধে অনেক উপকার পাইছি। কয়েকজন আবার একটু বেশী চালাক, বুঝে ফেলে এইসব চালাকি। এদেরকে সোজা করতে হালকা পাতলা ঝাড়ি দেয়া লাগে।

একদিন হাসপাতালে আমার রুমে ঢুকেই দেখি এক মহিলা আগে থেকেই রোগী দেখার বেডে শুয়ে আছে, আমাকে দেখে কাতরানো শুরু হয়ে গেল। আমি চেয়ারে বসার পর সে উঠে আসল। কাতরাতে কাতরাতে বলল, আমার অবস্থা খুবই ছিরিয়াছ, আমারে আগে দেখেন। বললাম, তাই নাকি, তা সমস্যাটা কি শুনি? বলল, আমার সর্ব শইলে ব্যতা, আহ, মইরা যাইতাছি ব্যতায়, সোজা হয়া খাড়ায়া থাকতে পারতাছি না। আসলেই একটু বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়েছিল মহিলা।

বললাম, হাসপাতালে এই মুহূর্তে ব্যথার ওষুধের সাপ্লাই নাই। সাথে সাথে সব কাতরানি শেষ, সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ও, তাইলে আমারে কয়ডা পাতলা পায়খানার ওষুধ দেন। বোঝ অবস্থা। আর একদিন রোগীর প্রচন্ড ভিড়। আমি টিকিট জমা নিয়ে একজন একজন করে সিরিয়ালি দেখছি।

এর মধ্যে এক বুড়ি ভয়ংকর চেঁচামেচি শুরু করল, আমি ছয় ঘন্টা ধইরা খাড়ায়া রইছি, আমারে ডাকে না, আমি এত্ত অসুস্থ, খাড়ায়া থাকতে পারি না, আর আমারে রাইখা অন্যদের ডাকে, আমি মইরা যাইতাছি, কেউ দেখে না। অথচ বুড়ি মা এসেছে মাত্র ১৫-২০ মিনিট হয়েছে। ছয় ঘন্টা কোথায় দাঁড়িয়ে ছিল কে জানে। আমি তার চেঁচামেচিতে বিন্দুমাত্র কান না দিয়ে সিরিয়ালি রোগী দেখে যাচ্ছি। এক সময় তার ডাক পড়ল।

সে কিন্তু এতক্ষণ এক মুহূর্তও চুপ ছিল না, ভাঙা রেকর্ড চালিয়েই যাচ্ছিল। তার নাম ডাকার পর সে হঠাৎ চুপ মেরে গেল। হা করে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। আমি বললাম, বলেন আপনার কি হইছে যে মইরা যাইতেছেন। সে তাও চুপ।

তখন আশে পাশের অন্য রোগীরা তাকে ঝাঁকুনি মেরে বলে, কি চাচী, কন না ক্যা? তখন বুড়ি বলে, আমার খিজলি হইছে খিজলি, সারা গা চুলকায়। সবাই হো হো করে হেসে দিল। আমি বললাম, এই রোগে আপনে মইরা যাইতেছিলেন? আপনার চিল্লাপাল্লায় তো মরা মানুষও উইঠা আসতে নিছিল। সব কথার শেষ কথা: ডাক্তাররা সব কসাই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।