এই ব্লগের সব লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
এতদুর আসতে হবে আগে জানলে আসার আগে দু বার চিন্তা করে নিতাম নিশ্চয়ই, তার উপরে ওর বাসায় প্রথম যাচ্ছি ...কিন্তু জঙ্গলের মাঝের এভাবে ধুলোবালি মাখা অতিথি দেখার পরে সে কি যে বলবে, কি করবে কে জানে ... আপনারা ভাবছেন কার কথা বলছি ? ... দাড়ান বলছি, সে আর কেউ না আমাদের সবার পরিচিত বড় বিলাই আপি ....
আপি টা অনেক দিন থেকেই বাসায় দাওয়াত দিয়ে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছিলো যাওয়ার জন্য, কিন্তু ইজি কাজে বিজি থাকার কারনে ওর বাসায় সময় বের করাই মুষ্কিল হয়ে পড়েছিল ... শেষ পর্যন্ত যখন ফাইনাল পরীক্ষার ২ সপ্তাহ খানেক বাকী তখনই মনে হল এইটা সবচেয়ে উত্তম সময় ওর বাসায় বেড়াতে যাওয়ার ... যেই ভাবা সেই কাজ, পড়া বাদ দিয়ে সোজা রওনা হলাম ওর বাসার উদ্দেশ্যে ... ওর বাসায় আবার মুড়ির টিনে ছাড়া যাওয়া যায় না, চিড়ার টিন বা তেলের টিন হলে চলবে না ... মুড়িট টিনেই যেতে হবে ... এই প্রগৈতিহাসিক জিনিস এবার আমি কৈ পাই, তাইলে কি ওর বাসায় যাওয়া ক্যান্সেল করতে হবে নাকি ? ... মনে মনে দৃড় প্রতিজ্ঞা নিলাম ভাঙবো কিন্তু মচকাবো না ... যেমনেই হোক ওর বাসায় যেতেই হবে আমাকে, অতঃপর জিঞ্জিরা জাদুঘর থেকে শেষ মুড়ির টিনটা নেয়ার ব্যাবস্হা করে ওটাতে চেপে চললাম বিলাইপুর বাড়ি দিকে ... অতঃপর সাত বালির সমুদ্র আর তের কালাপানির নদী পার হয়ে ওর বাসার সামনে এসে দু হাতে ধুমধাম বাড়ি দিয়ে মাথা আর জিন্সের প্যান্ট থেকে মন খানেক ধুলো ফেলে ঘন্টা বাজালাম .... ডিং ডং
ভেতর থেকে আওয়াজ এলো >>> কে রে ?
আমি জবাব দিলাম ---- আমি অন্তু
>>> কোন অন্তু ?
--- দরজা খুলেই দেখ কোন অন্তু
>>> দরজা জ্যাম লেগে গেছে , আজকের আর খুলবে না ,কালকে আসেন
--- আজকে খুলবে না মানে কি ... খুলবা নাকি দরজা ভাঙ্গবো আমি ?
>>> আপনি ০১৭৫*****২ নং চিনেন ? এই এলাকার ওসি কইলাম আমার ছোট বোনের বড় দুলাভাই, এইটা তার নম্বর, দিমুনি একটা কল? নাকি মানে মানে ভাগবেন এখন ?
--- ধুর আপি, এমন করো ক্যান এতদুর থেকে আইসি, কোথায় দরজা খুলে ভাইটারে ঢুকতে দিবা না, কাহানী শুরু করসো
>>> আরে অন্তু তুই ? আগে বলবি না ?
--- আগেই তো বলেছি এইটা আমি, নাম কি ভুল শুনেছ নাকি ? এখনো দরজা খুলো না ক্যান ?
>>> আচ্ছা পরে করিস ঝগড়া, এখন দরজার একটা ঠেলা দে, খুলে যাবে ...
ঠেলার ও দরকার হলো না, হালকা ধাক্কায় দরজা খুলে যেতেই দেখি লাঠি হাতে রনরঙ্গিনীরুপে বিলাইপু দাড়িয়ে আছে ...তাই দেখে জিজ্ঞেস করলাম ...
--- কি হইসে, এমন করে দাড়ায়ে আছো ক্যান, আর দরজা খোলাই তো ছিল তো কইলানা ক্যান ?
>>> ( কইরা আপি কয় ) দরজার ছিটকিনি টা নষ্ট, তাই একটু ভঙ নিলাম তোর লগে, এমনটা না করলে চোর ডাকাত আইসা তো সব কিয়া যাইব বুঝোস না ?
--- হইসে হইসে অনেক বুদ্ধি তোমার, এইবার একটু শরবত দিবা? ভীষন তেষ্টা পেয়েছে
>>> এই এক্ষুনি নিয়ে আসছি, কিন্তু তুই ফাইনাল পরীক্ষার আগে আসলি ক্যান ? পড়াশুনা শেষ নাকি ?
--- আরে নাহ আপি, পড়ায় ফাকি দেয়ার এর চেয়ে ভাল কোন উপায় পাইলাম না , এ জন্য আর কি ...
>>> দাড়া একটু শান্ত হয়ে বস, এর পরে তোর খবর করতেছি আমি ...
--- দেখা যাবে ...
একটু পরে দু গ্লাস লেবুর সরবত হাতে আপি ঘরে ঢুকে একটা গ্লাস আমাকে আরেকটা নিজে নিলো ... ফ্রিজ থেকে কয়েকটা আইস কিউব এনে গ্লাসে ফেলে দিতেই মনটা ভরে গেল ঠান্ডায় ... কিন্তু শরবত মুখে দিতেই কেমন জানি মিষ্টি কম লেবু বেশী লাগছিল ... বললাম
--- এই জঙ্গলে চিনি দাম কি অনেক বেশী নাকি ?
>>> ক্যান ? কম হইসে নাকি ?
--- না মানে শরবতের নমুনা দেইখা এরকমই মনে হইলো
>>> তাই বলে তুই আমারে এমনে বলবি ?
--- তাইলে চিনি নিয়ে আসো আরেকটু
>>> কিচেনে আছে নিয়ে নে নিজে নিজে ... কিন্তু শোন ...
--- অল্প নিতে বলবা তো ? ঠিকাছে অল্পই নিবো
>>> না, অল্প না , অন্য কিছু বলতে চাইছিলাম, শুনবিনা যখন তখন যা, নে গিয়ে নিজে নিজে
বিলাইপু আমারে কি অল্প নিতে কইতে চাইছিল নাকি চিন্তা করতে করতে দেখি সামনেই খোলা পড়ে আছে চিনি লেখা বড় একটা কৌটা ... মনে মনে বললাম, আমার লগে কিপ্টামী ,দাড়াও আজকে গ্লাস ভরে চিনি খাব ... যেমন বলা তেমন কাজ, টেবিল চামচে গোটা পাচ ছয় বার চিনি শরবতের মধ্যে ফেলে ৩২ দন্ত বিকশিত করে নাড়তে নাড়তে হাজির হলাম আপুর সামনে ... দেখি সেও মুচকি মুচকি হাসতেছে , কইলাম
--- কি হইসে ?
>>> (খিক খিক করে হেসে) নে এইবার মনের আনন্দে খা
ওরে খিক খিক হাসি দেখে এক নিঃশ্বাসে ঢকঢক করে হাফ গ্লাস শরবত শেস করতে করতে মনে হইলো আমি কোন শরবত না বরং বঙ্গোপসাগরের মধ্যে মুখ ডুবায়ে পানি খাচ্ছি ... লবনের ঠেলায় আমার তখন জান যায় যায় অবস্হা আর ঐ দিকে আপি টা হেসে গড়াগড়ি ... বললো
>>> তোরে ঐটাই বলতে যাচ্ছিলাম যে, আমি কালকে চিনি লেখা কৌটায় ভুল করে লবন রেখে দিসিলাম, চিনি আছে খোলা একটা প্যাকেটের মধ্যে ... খিক খিক খিক
তক্ষুনি আমার আকাশ বাতাস কাপায়ে ঝনঝন শব্দে কানে তালা লেগে যাওয়ার মত অবস্হা, কোন রকমে চোখ খুলতেই দেখি সেল ফোনে সকাল ৮ টার এ্যালার্ম বাজছে ... ক্রীং ক্রীং ক্রীং
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।