আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রৌদ্র-ছায়ার লুকোচুরি খেলা-

কত আজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই দূরকে করিলে নিকট,বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।
বাসার সবাই মিলে যাচ্ছি তিন দিনের ছুটিতে ঠাকুরগাঁও চা বাগানে। কাল অফিস থেকে এসেই লেগেছি গোছগাছ করতে। তিনটা বাচ্চা আমি ও জানু- মোট পাঁচ জন। বাচ্চাদের কি কি লাগবে তা জোগাড় করা সেই সাথে তাদের কি কি খাবার লাগবে সেই গুলির বন্দোবস্ত করা।

বাচ্চারা কোন পোষাকে যাবে, সেখানে যেয়ে রাতে কোন পোশাক পরে ঘুমাব্‌ আবার পরদিন কি পরবে, এই সব হিসাব তো আছেই সেই সঙ্গে আছে কাপড় নষ্ট করলে ? তাই বাড়তি দুটো জামা প্যান্ট নেয়া। বাচ্চাদের যখন তখন ক্ষুধা লাগে তাই ওদের জন্য দুধ পাউরুটি বিস্কিট কলা ইত্যাদি সঙ্গে নেবার ব্যাবস্থা করলাম, সেখানে যেয়ে কি কি লাগবে এটা সেটা আরও কত কি? । উফ্‌ কোথাও যাওয়া মানে তো মহাযজ্ঞি । বাচ্চা বেশী হওয়াতে ঝামেলা বেশী আবার মাঝে মাঝে মনে হয় বাচ্চাগুলি বড় হয়ে যাচ্ছে আমি তাহলে কাকে নিয়ে থাকব আবার একটা বাচ্চা নিয়ে নেই। একটা তো ছোট থাকবে আমার সাথে সাথে থাকবে।

কিন্তু যখন যজ্ঞ বাধে তখন মনে হয় কেন যে এত গুলি বাচ্চা নিতে গেলাম??। যাই হোক রাত ১টা পর্যন্ত গোছগাছ করে ঘর বাড়ি পরিস্কার করে যখন ঘরে এলাম তখন বাসার সবাই গভীর ঘুমে অচেতন, ঘড়িতে এলার্ম দেয়া হল যেহেতু ৭টার সময় গাড়ি আসবার কথা বলা হয়েছে তাই এলার্ম দিলাম ভোর পাঁচটায় কারন সকালের নাস্তা বানাতে হবে। বাচ্চারা কেউ এত সকালে ঘুম থেকে উঠে খাবে না । ছয় ঘন্টার জার্নি রাস্তায় খাওয়াতে হবে। ঠিক সময় মত ঘড়িতে এলার্ম বাজল।

ঘুম থেকে উঠে সব গোছগাছ শেষ করলাম। একটা একটা করে বাচ্চাকে ঘুম থেকে তুলে রেডি করালাম । সব কাজ শেষ করতে করতে সাড়ে সাতটা বেজে গেল। এমন সময় জানুর চোখ পড়ল আমার উপর। আমি এখনও রেডি হই নি।

আমাকে দেখেই সে বেশ উচ্চস্বরেই বলল “আরে তুমি এখনও রেডি হওনি??!! কি করলে এতক্ষন। “ আসলেই তো কি করলাম আমি এতক্ষন কিচ্ছু না, নিজের জন্য কিচ্ছুই তো করিনি। কাল অফিস থেকে আসার পর থেকে আমি কি নিজের জন্য কিছু করেছি। রাতে সবার খাবার শেষে খেতে যেয়ে দেখি তরকারী নেই তাই এক গ্লাস দুধ খেয়ে রাতটা পার করে দিলাম। সকাল থেকে একের পর এক কাজ করে যাচ্ছি নিজের জন্য কি কিছু করেছি? জানু কি পরবে সেই কাপড়টা পর্যন্ত বের করে রেখেছি।

আর আমার জন্য সময় কোথায়। প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলাম রেডি হতে । দুই চোখ ফেটে কান্না চলে আসছে। আমি একাই সব করবো কেন? জানু কি পারতো না আমাকে একটু সাহায্য করতে?? কই ওতো তা করেনি?!! সারাক্ষন শুধু কম্পিউটার, টিভি এবং বাচ্চাদের নিয়েই খেলল। হ্যাঁ করেছে-- বাচ্চাদের সাথে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে এবং ঘুম পাড়াতে যেয়ে নিজেও একঘুমে রাত পার করেছে।

এটুকু না করলে আমার রাতে শুতে শুতে তিনটা বেজে যেত। আজ সকালে আমিই তো তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে রেডি হতে বললাম। সে বাথরুম থেকে বের হয়ে চা খেতে খতে আমাকে বলছে আমি রেডি হই নি কেন??? আমি কি করলাম সারাক্ষন--এতক্ষন। !!?? একটা পায়ের শব্দ আসছে ঘরের দিকে। দৌড় দিয়ে বাথরুমে ঢূকে গেলাম।

আমার চোখের পানি যেন কেউ না দেখে। যতটুকু পারা যায় দুই চোখে পানি দিয়ে মুখটা ধুলাম। কাপড় পরে বের হয়ে এসে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলাম। আয়নায় দেখছি চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। জানু বিছানায় বসে আছে।

জানুকে বললাম “আমি রেডি যাও গাড়িতে উঠো দরজায় তালা দিয়ে আমি আসছি। “ জানু আমার কাছে এল, দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল “আমার কথায় রাগ করেছ ? আমি তো এমনি বলেছি। আমি তো জানি, তুমিই সব কর --তা দেখেই তো আমি কিছুই করি না, আর আমার কথায় তুমি রাগ করলে আমি কই যাই। “ আমি ওর বুকে মাথা রেখে প্রবল আবেগে হু হু করে কেঁদে ফেললাম। যতক্ষন কান্না থামলনা ও আমাকে জড়িয়ে ধরেই থাকল।

মাথাটা শক্ত করে বুকের মাঝে চেপে ধরে বলল “পাগলী আমার, আমার কথায় এত্ত মাইন্ড করে??” আমি মাথা সরিয়ে বললাম “চল যাই দেরী হচ্ছে। “ ও বলল “হোক দেরী তুমি আগে হাসো। “ওর কথা শুনে এবং বলার ভঙ্গীতে দিলাম হেসে। জীবনতো এটাই । ।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।