আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন সান সু কিঃ বিবেকের বন্দী দুত

একলা হতে চাইছে আকাশ মেঘগুলোকে সরিয়ে দিয়ে ভাবনা আমার একলা হতে চাইছে একা আকাশ নিয়ে...
১৯৪৫ সালের ৯ই জুন। মায়ানমারের অবিসংবাদিত নেতা ইউ অন সাং এবং কিন কি এর ঘরে জন্ম নিল তাদের তৃতীয় সন্তান। কি নাম দেয়া যায়? মায়ানমারে আবার বাবা-মায়ের নামেই সন্তানের নাম দেয়ার বেশ চল আছে। বাবা মা সবাই চায় তার নামেরই প্রাধান্য থাকুক। অবশেষে নাম দেয়া হল বাবার নাম থেকে “অন সাং” (Aung San)এবং মা’র নাম থেকে “কি” (kyi)।

এদিকে দাদীও চায় তার নামও থাকুক নাতনীর নামের সাথে। তাই দাদীর নাম “সু”(Suu) ও ঢুকানো হল। অবশেষে নাম দাড়ালো “অন সাং সু কি”। অন সাং পরিবার অন সাং সু কি’র বয়স যখন মাত্র দুই বছর, কোন কিছু বুঝতে শেখার আগেই বাবা অন সাং শিকার হলো হত্যাকান্ডের। দুই ভাই এবং মা’ই তার পৃথিবী।

সু কি’র বয়স যখন আট, বড় ভাই অন সাং লিন মারা গেল পানিতে ডুবে। এদিকে সদ্য স্বাধীন বার্মার একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হিসেবে আবির্ভুত হন মা কিন কি। ১৯৬০ সালে মা কিন কি কে ভারতে বার্মিজ এমব্যাসাডার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। স্বপরিবারে চলে এলেন দিল্লীতে। সু কি পড়াশুনার জন্য ভর্তি হলেন দিল্লীর শ্রী রাম কলেজে।

অতপর উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান নিউইয়র্কে। গ্রাজুয়েশন করেন দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে। এদিকে ১৯৬২ সালে নিজের দেশে সামরিক সরকার ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। ১৯৭২ সালে সু কি বিয়ে করেন ড. মাইকেল এরিস কে। পরের বছরই জন্ম হল পুত্র আলেজান্ডার এরিসের।

’৭৭ এ আসল ২য় সন্তান কিম। কিম এর জন্মের কিছুদিন পর তিনি পিএইচডি শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে লাভ করেন পিএইচডি ডিগ্রী। স্বামীর সাথে সু কি ১৯৮৮ সালে সামরিক সরকার জনগণের তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করলে নতুন একটি সামরিক সরকার ক্ষমতা গ্রহন করে। সে বছরই অং সান সু চি অসুস্থ মা’কে দেখতে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

এবং তৈরী করেন "ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি" নামে একটি রাজনৈতিক দল। অচিরেই সামরিক সরকার গৃহবন্দী করেন সুচি কে। ১৯৮৯ সালে সামরিক জান্তা তার গৃহবন্দীত্ব অবসানের ঘোষনা দেয় তাঁর দেশ ত্যাগের শর্ত সাপেক্ষে। কিন্তু সু কি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৯০ সালে মায়ানমারের সামরিক জান্তা নির্বাচনের ডাক দেয়।

সু কি’র “ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি" (NLD) বিশাল বিজয় পায় এই নির্বাচনে। কিন্তু এনএলডি দেশ পরিচালনায় যথেষ্ট mature নয় এই অভিযোগে ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকার করে মায়ানমারের সামরিক জান্তা। গৃহবন্দী অবস্থায় তিনি ১৯৯১ সালে পান নোবেল পুরস্কার। নোবেল কমিটির বক্তব্য ছিল এরকমঃ “নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি এবছর (১৯৯১ সালে) গনতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে আপসহীন নেত্রী অং সান সু কি কে নোবেল পুরস্কার দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। ..... অং সান সু কি নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের এক বিমূর্ত প্রতীক।

......সু কি’র নোবেল পুরস্কার বিশ্বজুড়ে গনতন্ত্র ও মানবাধিকার সংগ্রামকে আরও গতিশীল করবে এবং একটি শান্তিময় পৃথিবী গড়ার ক্ষেত্র একটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। “ ----------অসলো, ১৪ অক্টোবর, ১৯৯১ ১৯৯৫ সালে তাঁকে গৃহবন্দীত্ব থেকে মুক্তি দেয়া হ্য়। তবে এইশর্তে যে তিনি যদি তাঁর পরিবারের সাথে দেখা করতে লন্ডন যান, তবে তাঁকে ফিরতে দেয়া হবে না। এমনকি তাঁর প্রোস্টেট ক্যান্সারে আংক্রান্ত স্বামীর মৃত্যুবরণ করার সময়ও তাঁকে যেতে দেয়া হয়নি। মাইকেল এরিস মারা যান ১৯৯৯ সালে।

সুকি তার দুই সন্তানের থেকেও দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন। মানানমার কারাগারে এখন সু কি সহ ২১০০র ও বেশী রাজনৈতিক বন্দী রয়েছে, যারা ভিন্ন মতালম্বী রাজনৈতিক বিশ্বাস পোষন করে। অন সান সু কি গত ২০ বছরের মধ্যে ১৩ বছরেরও বেশী সময় গৃহরীণ অবস্থায় থেকেছেন। গত ২৭ মে ২০০৯ তার গৃহ অন্তরীণ থাকার আদেশ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু ১৮ মে তারিখে তাকে গ্রেফতার করে এক প্রহসনমূলক বিচার কার্য শুরু করে আবারও কারারুদ্ধ করে সামরিক জান্তা। সম্প্রতি ডও অং সান সুচি-কে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০০৯ সালের ‘অ্যাম্বাসেডর অফ কনসায়েন্স’ বা বিবেকের দূত উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।

আয়ারল্যান্ডের রক গানের ব্যান্ড ইউ২ ডাবলিনে এই ঘোষণা দেয়। অং সান সুচিকে বিবেকের দূত ঘোষণা দিয়ে বিশ্বখ্যাত গায়ক বোনো উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তার অপরাধ তিনি যদি নির্বাচনে অংশ নিতেন, তবে তিনি জয়ী হতেন। এই সপ্তাহে তাকে কারারুদ্ধকারী (মায়ানমারের) নৃশংস বাহিনী একটি প্রহসনমূলক বিচারের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে যার মাধ্যমে তাকে পরবর্তী পাঁচ বছর কারাগারে বন্দী রাখা যাবে। এই অবস্থায় আমরা আর চুপ করে থাকতে পারি না। এখনই সময় জাতিসংঘ ও সকল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এক কণ্ঠস্বরে আওয়াজ তোলা দরকার: অং সান সুচি-কে মুক্তি দিন।

’ এসময়ে বোনো গান গাইতে গণতন্ত্রকামী বার্মিজ নেতাদের মুখোশ পড়ে মঞ্চে অবস্থানকারী অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কয়েক ডজন কর্মীর সঙ্গে যোগ দেন, তখন মঞ্চের সামনে ৮০,০০০ দর্শক অবস্থান করছিলো। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব আইরিন খান বলেন, ‘অং সান সুচি শুধুমাত্র মায়ানমারের জনগণের জন্যে নয়, বিশ্বের সকল মানুষের জন্যে আশা, সাহস ও মানবাধিকার রক্ষার চিরন্তন সাহসের প্রতীক। ’
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।