আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জন্মদিন

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....

এ দেশের কৃষক, জেলে, কামার, কুমারসহ পল্লীর শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা, সংগ্রাম, সমস্যা ও সঙ্কটকে ক্যানভাসে নিখুতভাবে তুলে ধরার জন্য এস এম সুলতান বিখ্যাত। তার ছবির অনুষঙ্গ হিসেবে এসেছে খড়ের ঘর, খালবিল, গাছপালা, সনাতন চাষের উপকরণ, মাছ ধরার সরঞ্জাম, সংগ্রামের প্রতীক ঢাল, সড়কি, রামদা, বল্লম, লাঠি ইত্যাদি। সুলতান বাংলার কৃষক-কৃষাণীকে বীর হিসেবে দেখতেই পছন্দ করতেন। তাই তিনি তাদের আকতেন পেশিবহুল শক্তিশালী মানুষ হিসেবে। কৃষক সমাজকে বলবান হিসেবে একে তিনি চিত্রকলায় নতুন এক ধারার সূচনা করেন।

এ দেশের চিত্রশিল্পে যুগ প্রবর্তক শিল্পী হিসেবে এস এম সুলতান পরিচিত। আত্মপ্রচার বিমুখ এ শিল্পী ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামে এক নিম্নবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পাচ বছর বয়সে এস এম সুলতান স্থানীয় স্কুলে ভর্তি হন। দারিদ্র্যের কারণে অল্প দিন পরই তিনি স্কুল ত্যাগ করে বাবার রাজমিস্ত্রির কাজের সহকারী হিসেবে নিয়োজিত হন। এ সময় তিনি নিজে নিজে ছবি আকা শেখেন।

কাঠ কয়লা, কাচা হলুদ ও পুই গাছের ফলের রস দিয়ে তিনি ছবি আকতেন। এসব ছবি স্থানীয় জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের দৃষ্টিতে পড়ে। পুরস্কারস্বরূপ তিনি ছবি আকার কিছু সরঞ্জাম কিনে দেন এবং স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থাতেই বিখ্যাত রাজনৈতিক ও শিক্ষাবিদ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিকৃতি একে সুলতান খ্যাতি অর্জন করেন। স্কুলের শেষ পরীক্ষায় পাস করার আগেই সুলতান বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতায় চলে যান।

কলকাতায় তিনি শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর বাসায় আশ্রয় নেন। সুলতানের পূর্ব নাম ছিল লাল মিয়া। শাহেদ সোহরাওয়ার্দী এ নাম পাল্টে শেখ মুহম্মদ সুলতান রাখেন। তিনি সুলতানকে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু খেয়ালী এ শিল্পী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় আবদ্ধ থাকেননি।

মাত্র তিন বছর পরই আর্ট স্কুল ত্যাগ করে ভবঘুরে জীবন শুরু করেন। এস এম সুলতান দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় পাচ-দশ টাকার বিনিময়ে গোরা সৈন্যদের ছবি আকতেন আর ভারতের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়াতেন। দেশ বিভাগের পর কলকাতা ত্যাগ করে তিনি পাকিস্তানে চলে যান। কিছুদিন লাহোরে থাকেন এবং করাচি আর্ট স্কুলে দুই বছর শিক্ষকতা করেন। এরপর তিনি ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন শহর ভ্রমণ করেন।

এসব শহরের ছবি একে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং চিত্রা নদীর তীরে জন্মভূমি নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামে স্থায়ী আবাস স্থাপন করেন। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর তিনি মারা যান। আজ ১০ আগস্ট শিল্পী এসএম সুলতানের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে গভীর শ্রদ্ধা জানালাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।