আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পচা ডিম ( নামেই যার পরিচয় )

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

লোকটা কামরুলের বড় ভাই। তিনিও কামরুলের মতো সব দিক দিয়াই মোটা। লোকটার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, তিনি সব সময় ঘামে ভেজা থাকতেন। মনে হত, এই মাত্র তিনি পুকুর থেকে উঠে এসেছেন। তবে তিনি সৌখিন ছিলেন।

পরতেন আদি কাপড়ের পাঞ্জাবি। সেই পাঞ্জাবি সব সময় গায়ের সাথে লেপ্টে থাকত। ভূড়িটা বড় হওয়ায় সুবিধা হয়েছিল। পাঞ্জাবির বেশ খানিকটা ভুড়ির উপর পড়ে থাকত। ভদ্রলোকের নাম আমার মনে নাই।

অসংখ্যবার কামরুলের কাছে উনার নাম শুনলেও মনে রাখতে পারি নি। কারণ উনার একটা জনপ্রিয় নাম আছে। সবাই তাকে এই নামেই ডাকে। তার পিতা-মাতার দেয়া নামটা কেউ বলতে পারে না। তার জনপ্রিয় নামটা হল - পচা ডিম।

কেন লোকে তাকে পচা ডিম নাম দিয়েছিল সেটার একটা ক্ষুদ্র ইতিহাস আছে। তার বিশেষ বায়ুতে নাকি পচা ডিমের গন্ধ এবং কোন মজমা হলে তিনি সেই বায়ু ত্যাগ করে বিশেষ আনন্দ পেতেন। মহল্লার পঞ্চায়েতের সভায় তিনি প্রায় এই কাজ করেছেন। এ জন্য যথেষ্ট ধনী মানুষ হওয়ার পরও তাকে পঞ্চায়েত থেকে বিদায় করে দেয়া হয়েছিল। এক সময় তিনি এত বিখ্যাত হয়েছিলেন যে, মহল্লায় যাওয়ার সময় রিক্সাওয়ালারা জিজ্ঞেস করত, কোন জায়গায়, পচা ডিমের বাড়ির সামনে ? তখন ক্লাস টেনে পড়ি।

আমি সাধারণত কামরুলের মহল্লায় যেতাম না। কারণ ওখানে আমার বন্ধুবান্ধব তেমন ছিল না। সে দিন মফিজের সাথে দেখা। মফিজ বলল, চল, খায়া আসি। আমি জিজ্ঞেস করি, কোথায় ? চল না, গেলেই দেখবি - মফিজ তাড়া দেয়।

মফিজ আমাকে কামরুলের বাড়িতে নিয়ে যায়। গিয়ে দেখি বিশাল আয়োজন। বিয়ে বাড়ির মতো বিশাল প্যাণ্ডেল টানিয়ে খাওয়া দাওয়া চলছে। আমি মফিজকে জিজ্ঞেস করি, কার বিয়ে ? মফিজ বলে, জানি না, দাওয়াত দিছে, আইছি। কামরুলকে খুঁজলাম।

কেউ বলতে পারে ও কোথায়। যাই হোক, আমি আর মফিজ খেতে বসলাম। খাওয়ার মাঝামাঝি সময় ঘটল সেই নাটকীয় ঘটনা। বর বসার জন্য যেমন স্টেজ করা হয় তেমনি একটি স্টেজ করা হয়েছিল। সেই স্টেজে এসে উঠলেন কামরুলের বড় ভাই ওরফে পচা ডিম।

সবার দিকে তাকিযে নাটকীয় ভঙ্গিতে বললেন, ভাইয়েরা আপনাদের সবাইকে আজ দাওয়াত দিছি একটা কথা বলতে। আল্লাহর রহমতে আমার দুইটা পয়সা হইছে। সমাজে মান সম্মানও হইছে। আমারে লোকজন ইজ্জত দেয়। তাই আপনাগো কাছে হাতজোড় কইরা অনুরোধ জানাই, আজকা থিকা আমারে আর পচা ডিম বইলা ডাইকেন না।

লোকজন সব বলে উঠল, না, না, আমরা কেউ আপনেরে পচা ডিম কমু না। কোন শালা কয় দেইখ্যা নিমু। ভদ্রলোক সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে স্টেজ থেকে নামলেন। টেবিলের সামনে এসে খাতির করে খাওয়ালেন। আমরা পেটপূর্তি করে খেয়ে বেরিয়ে এলাম।

বাইরে এসে দেখি বিশাল ঘটনা। লোকজন আরও আসছে। যারা খেয়ে বেরুচ্ছে, তারা বলছে, আহ, পচা ডিমে যা খাওয়াইল না, এই রহম বহুত দিন খাই নাই রে। সেই ঘটনার পর থেকে ভদ্রলোক পচা ডিম হিসেবে আরও বিখ্যাত হয়ে গেল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।