আমার সম্পর্কে বলার মতো কিছু নেই।
৬ আগষ্ট হিরোশিমায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পৃথিবীর প্রথম আণবিক বোমা বর্ষণ দিবস
পৃথিবীর প্রায় সবদেশের শিশুরাই সারাদিন হৈ-হুল্লোড় করে রাত্রিতে যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন হয়তো স্বপ্ন দেখে এক সুন্দর পৃথিবীর৷ সবুজ প্রকৃতির মাঝে নানা রঙের পাখির কিচিরমিচির শব্দে শিশুরা খেলা করে সেই ধরায় ৷ কিন্তু এমন সুন্দর স্বপ্নের মাঝে কেউ যদি তাদের পিঠে দুম করে একটা কিল বসিয়ে দেয় তাহলে কেমন লাগবে ? নিশ্চয়ই স্বপ্নভঙ্গের কষ্টে খুব খারাপ লাগবে-তাই না ?
পৃথিবী নামক গ্রহে তেমনি চলছে ভাঙা-গড়া,মানবতা বিরোধী আর সভ্যতা ধবংসের নিষ্ঠুর খেলা ৷ আর এ আধিপত্যবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দানবরা হচেছ কিছু শক্তিশালী দেশ -যারা বিশ্বব্যাপী স্রেফ আধিপত্য আর বাজার দখলের জন্য অন্য দেশগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে সেগুলো ধবংস করে দেয় ৷ তারা গরীব শ্রমজীবী মানুষদের মানুষ বলেই মনে করে না ৷ অপরের সম্পদকে কিভাবে লুট করা যায় সে চিন্তায় তারা সব সময় ব্যস্ত থাকে ৷ বর্তমান বিশ্বে এমনি এক শক্তিশালী এবং পরধন লোভী দেশের নাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৷ আর এ দেশটির প্রধান সহযোগী হিসেবে পরিচিত দুটি দেশ হচেছ, বৃটেন ও ইসরাইল৷ এদের কাজই হলো কিভাবে অন্যের সম্পদ লুট করা যায়;কিভাবে বিশ্বের সকল দেশের শাসকদের নিজেদের গোলামে পরিণত করা যায়৷ তাদের এ অসৎ লক্ষ্যের শিকারে পরিণত হয়ে আজ ইরাক,আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন ও লেবাননে অশান্তির আগুন জ্বলছে৷ এসব দেশের শিশুরা মায়ের কোলে বসে ঘুম পাড়ানি ছড়া শোনার পরিবর্তে হায়েনাদের গুলির আওয়াজ শোনে; তারা ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য কোন সুন্দর স্বপ্নও দেখে না৷ শৈশবেই বাবা-মা এমনকি পরিবারের সবাইকে হারিয়ে তারা অনিশ্চয়তা, ভয় কিংবা আতংকের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে৷ কিন্তু তাদের মনেও তো ভালোভাবে বাঁচার ইচেছ জাগে; তাদেরও তো ইচ্ছে হয় নির্ভয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেতে কিংবা বন্ধুদের সাথে খেলা করতে ৷ কিন্তু হায়েনাদের বন্দুকের গুলি তাদের স্বপ্নকে প্রতিনিয়ত ধুলিস্যাৎ করে দিচ্ছে৷
সবাই একথা স্বীকার করে যে , বিভিন্ন দেশে হামলা চালানো, গুপ্ত হত্যা করা, সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করা ও বোমা মেরে মানুষ হত্যা করার ক্ষেত্রে আমেরিকার জুড়ি নেই। আমেরিকাই একমাত্র দেশ যারা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরের পারমাণবিক বোমা মেরে জাপানের লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিল। প্রতিবছর ঐ ঘটনাকে স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় হিরোশিমা ও নাগাসাকি দিবস।
হিরোশিমা ও নাগাসাকি দিবসের আলোচনা করতে গেলে একটু পেছনে নজর দিতে হবে।
১৯১৮ সালের ২৮শে জুন বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো শহরে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্কডিউক ফার্ডিনান্ড সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হলে অস্ট্রিয়া সার্বিয়াকে এই হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী করে ৷ শুধু দায়ী করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, হত্যাকান্ডের মাত্র এক মাস পর অর্থাৎ ২৮ শে জুলাই সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ৷ স্বাভাবিক কারণেই দু'দেশের বন্ধু দেশগুলোও এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ৷ অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী, তুরস্ক, জামার্নীকে নিয়ে কেন্দ্রীয় শক্তি এবং সার্বিয়া, ফ্রান্স, রাশিয়া,বৃটেন, জাপান, ইতালি ও আমেরিকাকে নিয়ে গড়ে ওঠে মিত্র শক্তি ৷ এ যুদ্ধে জার্মানীর নেতৃত্বাধীন বাহিনী পরাজিত হয় ৷ ইতিহাসে এই যুদ্ধই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ৷ ১৯১৪ সাল থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত চলে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ৷
অবশেষে ১৯১৯ সালের ১০ই জানুয়ারী ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়৷ দীর্ঘস্থায়ী এই যুদ্ধে ৮৫ লক্ষ মানুষ নিহত এবং ২ কোটি ১০ লক্ষ লোক মারাত্মকভাবে আহত হয় ৷
এ যুদ্ধ শেষ হবার মাত্র বিশ বছর পর আবারো বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা ৷ প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে অপমান আর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জার্মানী পোলান্ড আক্রমণ করে এ যুদ্ধর সূচনা করে ৷ এ যুদ্ধে জাপান জার্মানীর পক্ষে অবস্থান নেয়৷ জার্মানী, ইতালি, জাপান, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়াকে নিয়ে গড়ে উঠে অক্ষশক্তি৷ অপরদিকে আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, নরওয়ে ও ডেনমার্ককে নিয়ে গড়ে ওঠে মিত্রশক্তি ৷ টানা ৬ বছরের যুদ্ধে জাপান,জার্মান ও ইতালীর নেতৃত্বাধীন অক্ষশক্তি পরাজিত হয় ৷ তবে জাপান আত্মসমর্পন করতে দেরী করায় আমেরিকা জাপানকে সমুচিত শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনার জন্ম দেয় ৷
১৯৪৫ সালের ৬ ই আগষ্ট ৷ মার্কিন বোমারু বিমান -২৯ বি থেকে জাপানের সুন্দর শহর হিরোশিমার উপর মার্কিন পাইলট টিবেটস্ ‘লিটল বয়' নামে একটি পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করলো ৷ ওই দিন সকাল ১১টায় হিরোশিমা শহরে দেখা গেল অসংখ্য মানুষের লাশ আর আহতদের চিৎকার ৷ মুহূর্তের মধ্যে শহরটির প্রায় ৬০ ভাগ ধবংসস্তুপে পরিণত হলো৷ নিহত হলো ৭৫ হাজার মানুষ৷ বোমা নিক্ষেপকারী পাইলট টিবেটস্ বিমান থেকে শহরের ভয়াবহ ধবংসের দৃশ্য দেখে ভয়ে-আতংকে চিৎকার করে বলে উঠলো - হায় ঈশ্বর এ কী করলাম !
এখানেই কিন্তু শেষ নয় ৷ এ মর্মান্তিক ঘটনার মাত্র তিনদিন পর অর্থাৎ ৯ই আগষ্ট মার্কিন মেজর চার্লস সুইনি জাপানের নাগাসাকি শহরে ‘ফ্যাটম্যান' নামে দ্বিতীয় আনবিক বোমাটি নিক্ষেপ করল৷ তবে বোমা নিক্ষেপকারী মেজর সুইনি পরবর্তীতে উম্মাদ হয়ে যায় ৷ যখনি এ অপকর্মের কথা মনে হতো তখনি সে অসংলগ্ন কথা বলতো ৷ যা হোক, হিরোশিমার মত নাগাসাকিতেও হাজার হাজার মানুষ মারা যায়৷ বোমার তেজস্ক্রিয়তায় শিশুদের মাথার চুল পর্যন্ত উঠে যায় ৷ শিশুরা খাওয়ার শক্তি হারিয়ে ফেলে ৷ আর বোমার আঘাতে আহতরা দীর্ঘদিন কষ্ট ভূগতে ভূগতে এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ৷ ১৯৫০ সাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখে পৌছে ৷
হিরোশিমা বর্তমানে শান্ত হলেও পৃথিবী কিন্তু ভীষন অশান্ত ৷ যারা হিরোশিমায় বোমা ফেলোছিলো তারাই এখন আরব দেশগুলোতে বোমা ফেলছে ৷ তাদের বোমার কালো ধোঁয়া সূর্য্যের আলো পর্যন্ত ঢেকে দিচ্ছে ৷ তাই সেইসব বোমাবাজদের মুখোশ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে। কবি আনজির লিটন তার হিরোশিমাকে মনে পড়ে কবিতায় লিখেছেন,
আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে বোমা শিশুর চোখে জল
জেনে রেখো, আর কিছু নয় সব বড়দের ছল ৷
বড়রাই তো তুলছে গড়ে সভ্যতা এখন
বড়রাই তো ধবংসলীলায় দেয় জড়িয়ে মন৷
তাইতো দেখ, যায় হারিয়ে আমার খেলার সাথী
আলোর ভূবন অন্ধকারে হারায় সুখের বাতি ৷
দালান-কোঠা, জীর্ণ-বাড়ি, ভাঙছে কত স্কুল
গাছের সবুজ হচেছ উধাও রং হারাচেছ ফুল৷
বড়দেরই চিন্তাগুলে লঙঘন হয় সীমা
অথচ আজ ছোট'র মনে কাঁদছে হিরোশিমা৷।
সেই যে কবে জাপান ভূমি অগ্নিবোমায় পোড়ে
আজও দেখ, পৃথিবীটা ধোঁয়ার পাশে ঘোরে৷
কে বাঁচাবে পৃথিবীকে? পৃথিবী আজ কালো
কালো ধোঁয়া আকাশ ঢাকে সূর্যের সব আলো ৷
হিরোশিমা শান্ত জানি, জ্বলছে অনেক দেশ
যুদ্ধবাজ সব বড়রা আজ খুলো বোমার বেশ ৷
হিরোশিমা ও নাগাসাকির ঘটনাবলীর পর এবার আমরা বর্তমান বিশ্বে আমেরিকা যুদ্ধবাদী নীতি সম্পর্কে কিছু কথা বলবো। কিছুদিন আগে স্টকহম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা সিপরির বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমান বিশ্বে একজন মানুষের পেছনে সামরিক খাতে ব্যয় হয় ২০২ ডলার ৷ গত এক দশকে বিশ্বে সামরিক খাতে ব্যয় হয়েছে ১৩শ ৩৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশী । এর মধ্যে আমেরিকা একাই ব্যয় করেছে মোট সামরিক বাজেটের ৪৫ ভাগ।
গত বছর দেশটির সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৫৪৭ বিলিয়ন ডলার ৷ এর পরই রয়েছে ব্রিটেন, চীন, ফ্রান্স ও জাপান ৷ বন্ধুরা, এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো যে, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলে আমেরিকা কেবল নিজেদের যুদ্ধকামী নীতিকেই বাস্তবায়ন করছে।
শুধু আরব দেশ নয়, তাদের আগ্রাসনের শিকার হয়েছে পৃথিবীর অসংখ্য দেশ ৷ আমেরিকার একজন লেখক উইলিয়াম ব্লাম তার Killing Hope: US Millitary & CIA Interventions Since World War-Two বইতে মার্কিন সরকারের আগ্রাসী ইতিহাসের একটি তালিকা তুলে ধরেছেন৷ ওই তালিকায় দেখা যাচ্ছে আমেরিকা এ পর্যন্ত ২৩টি দেশে বোমা হামলা করেছে ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তারা ২০টিরও বেশী দেশে সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে অভ্যুত্থানে সহায়তা করেছে ৷ বিভিন্ন দেশে নিজেদের স্বার্থে তারা কমপক্ষে ৭৫ বার সৈন্য প্রেরণ করেছে ৷ এছাড়া মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ কয়েকটি দেশের রাজনৈতিক নেতা--নেত্রী হত্যায় সরাসরি ভূমিকা পালন করেছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ যারা পারমানবিক বোমার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে৷ তারাই একমাত্র দেশ যারা পারমানবিক অস্ত্র গবেষনায় প্রতি বছর ২৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। সুতরাং আমেরিকার মতো কোন দেশ যখন বলে আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করছি তাহলে পাগলেও তা বিশ্বাস করবে না। আর এজন্যই শান্তির কথা বলে আমেরিকা যখনই কোন দেশে হামলা চালাচ্ছে তখনই বিশ্বের শান্তিকামী মানুষেরা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।