পাখি এক্সপ্রেস
উৎসর্গ : কাকশালিখচড়াইগাঙচিল
মৃত শরীরের ঠোঙা পাহারায় অপরিচিত নিজ আত্মা। আমিও সামান্য এগিয়ে মুচকী হেসে অভিশাপ দিয়েছি তখনকার পরিস্কার অমাবশ্যায়। ততক্ষণে অস্তিত্বের মারা যাবার বিষয়টি নিশ্চিত হচ্ছিলাম। এমন একটি মধ্যরাত মেনে নিতে বিশেষ কোন অসুবিধা হয়নি। যদিও সাথে কোন প্রেতাত্মা বা তদসংশ্লিষ্ট ভুত প্রেত ছিলো না।
এসময় বনের ভেতর এতোটা নিরবতা থাকা স্বাভাবিক নয়। অন্তত একটি নির্বিষ সাপ আমাকে সঙ্গ দিতে পারতো। অথবা কিছু ডানাভাঙা হলুদ মাছি।
সেই আহলাদী নগরের ঘ্রানবিক্রেতাদের উদ্ভট পোশাকের চেহারায় রাস্তার দুপাশের গাছজিরানি এবং অল্পবিস্তর টায়ারপোড়া গন্ধ আমাকে কোন সাহসই দিতে পারলো না। অথচ একসময় নিয়মিত রেললাইনে কান পেতে মিছিলের শব্দ শুনতাম, তাদের কাছাকাছি থাকার ভান ধরতাম।
বিনা প্ররোচনায় জ্বলে পুড়ে যেতে চেয়ে ধোঁয়ার যন্ত্রনা মেনে নেয়ার মূল্য পরিশোধে একটিও বাড়তি পূর্ণিমার জন্ম হয়নি। পৃথিবীর কি বৈসাদৃশ্য উল্টোপিঠ! এভাবেই কি বখাটে দু:স্বপ্নরা সঞ্চয়ে মনযোগী হতো? কতোই না বিরল নৈ:শব্দ্য ঝরঝর ছন্দে ঝনঝন করে গেয়ে উঠতো। আঁধারের নিজস্ব সংগীত আছে- এমন আবিষ্কারও আমার পক্ষে সম্ভব হলো!
এ রাত সম্পর্কে সতর্ক করেছিলো বালিকার দৌড়ানি খাওয়া জোনাক। যারা কাঁচের বোতলে মলত্যাগ করতো। হলুদ সুন্দর আর ছায়ার আলোয় বালিকারা যৌবনের সন্ধান নিতো।
যৌনসুখে প্রচুর রাত থেমে যেতো তাদের হাতের মুঠে। ওসব সতর্কতা রোদপোহানো ভোরে উমের অত্যাচারে মারা যাওয়ার পর মাত্র এক ষোড়শীর ওড়নার ঘ্রাণ নিয়ে বিজয়ী হলাম। আমার নাম লেখা আছে জলপাই বনের কচিপাতাগায়ে। প্রতি সন্ধ্যায় একবার করে নবঘনজলে চোখ ধুয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। অলক্ষনের ছুতায় মধ্যরাতেই আমাকে জাগিয়ে নিতো সনাতন সংস্কার।
ভুতের চোখে লুকিয়ে পড়লে পৃথিবীর গায়ে দাউদাউ আগুন জ্বলতে দেখতাম।
বন্ধু,
তোদের ঘরে এবেলায় দলবেঁধে অভিশাপ প্রবেশ করে। জানিসতো আমি এখন মধ্যরাতেই পত্র লেখায় ব্যস্ত। আগত দল তোর শোবার ঘরে গিয়ে কয়েকটা পুজো শেষ করে মায়ের গালে কিছু অট্টহাসি ছুঁড়ে মেরে রাস্তায় নেমে পড়ে। পাড়ার সকল যুবকের ভাবনা ডাকাতি করে তারা পাশের গ্রামে চলে যায়।
ইতি
বন্ধু
যোগাযোগের সুযোগ থাকলে এমন কয়েকটি লাইন ক’দিন পরপরই পেতাম। জানি ঘরে রেখে আসা বড় খয়েরি টিপ, নিউজপ্রিন্টের সংলাপ আর একটি মাত্র লাল তারা কেউই খুঁজে পাবে না। এখবর কারো গল্পের যোগান দিবে না। আমি মুছে যেতে থাকবো কচিপাতা শরীরের মানচিত্র থেকে।
এ পথ ধরে বাণিজ্যে যাওয়া বণিকের গতির সাথে গোল্লাছুটের কোন মিল নেই।
যেবার প্রচুর বাণিজ্যিক রঙ ঘরের দেয়ালে ভবিষ্যত আঁকার অপচেষ্টা করেছিলো, নিরবে একবার ওইসব বণিকের দুর্দশা দেখার লোভ হয়েছে। এখন ওসব ভুলে গেছি। কখনোই পানীয় আর প্রেমের মতো দু’টি প্রিয় বিষয়কে পাশাপাশি রাখার সাহস হয়নি বলে জলসাঘরের সদর পেরোনো সম্ভব হয়নি। তাই বলে দৃষ্টির ভুলে লাল তারার দিকে তাকিয়ে পতাকা অথবা মনচিত্র নির্মাণের মতো দু:সাহস দেখাইনি। মিছিল অথবা মুষ্টিবদ্ধ হাত এবং অনেক দূর পর্যন্ত পায়ের যানযট দেখার আশা করতাম।
সামান্য পিছুটান রাখতেও মন চাইতো। এসব চাওয়া একেবারেই অন্দরের, একেবারেই কাছের।
কখনোই শারিরীক অস্তিত্বে মায়ের কপালে চুমু খাইনি। নিজের বেশিরভাগকে নিয়ন্ত্রনে রেখেই কিছু উষ্ণতা বিলিয়ে দিতাম এবং মায়ের খুশি হওয়া দেখার আগেই অন্য কোথাও, যেমন- শিমুল গাছের কাঁটার ফাঁকে ফাঁকে রোদ কুড়াতে চলে যেতাম। তেমনই এক দুপুরে কপালের খয়েরি টিপের প্রশংসা করতেই আমার হাতে টিপ বিসর্জন দিয়ে চলে গেলো।
সামান্য স্পর্শ না হয় নাই হলো, আমার চোখের কোনের নিরীহ নরোম রোদটুকু নিয়ে যেতে পারতো। এতো অল্পতেই তুষ্ট হওয়া অন্যায়, ভীষণ অন্যায়।
অপ্রত্যাশিত শুভকামনা আমার জন্য, অন্যায়ে মাথানত করা বিচ্ছিন্ন তারার হাত থেকে; যারা আকাশের উল্টোপিঠে গেঁথে রেখেছে থোক থোক অন্ধকার- যেখানে আত্মাখানি লুকিয়ে আছে। নেমে যেতে পারতাম সমুদ্র ফাঁদে, ভেঙে দিতে পারতাম রাত পোহাবার ভয়, ডোরাকাটা ট্রাফিক দাগে আরো কয়েকবার রক্তবমি এবং সে পথে তার আসা যাওয়া থামিয়ে দিতে পারতাম। একবারও মনে হচ্ছে না যে, আমি খুব দয়া করে ফেলেছি।
শহর ছেড়ে আসা সে মধ্য রাতে শহরের মাত্র কয়েকটি রিকশার মধ্যে কোন একটির সাথে ধাক্কা খেতে পারতাম, ছুঁয়ে দেখা উচিত ছিলো স্বাভাবিক ঢংয়ে বলে যাওয়া ওসব কথার শরীর। অপবিত্র করে দিতে পারতাম একমাত্র মায়ের অপেক্ষার দৃষ্টিকদম। হুম, ওখানেই শেষ হতে পারতো আমার দ্বিতীয় মৃত্যু যা আরো অনেক পরে সার্থক করতে পারে।
যারা আমাকে ছোটগল্পের মতো জীবনের পোশাক পরতে প্ররোচিত করেছে, ওদের জন্য এখন একাধিক সূর্য শ্রম দিতে রাজি হয়েছে কিনা- এমন খবর এখনো এ পথে ছড়ায়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।