সুষমা উচ্চ শিক্ষিত।
এই উচ্চতা ছোটখাটো নয়। মোটামুটি পর্বতাকার। মামুন সাহেবের তুলনায় সেটা অবশ্য হিমালয় সদৃশ বলা চলে।
সুষমার এ নিয়ে বড়ই মনোকষ্ট!
কিন্তু বিয়ের সময়, সেটা কি আর সে বুঝতে পেরেছিলো? নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে; মামার কাছে থেকে মানুষ।
কোনরকমে এস এস সি পাস করে বসে ছিলো। সাথে জুটেছিলো মামীর নিত্য গঞ্জনা আর খোঁটা। তাই, ছোটখাটো আকারের হলেও(মোটে পাঁচ ফুট এক- সুষমা আরো ৫ ইঞ্চি বেশী)- চাকুরীজীবি, ডিগ্রীপাস জামাই পেয়ে, সে ভেবেছিলো; এবার বুঝি বাঁচা গেলো।
ভালো ভাবেই বেঁচেছে!
সংসারে মানুষ বলতে ছিল তারা দুটি প্রাণী। মামুনও তার মতো এতিম বলা চলে।
বিদেশী মাল্টি ন্যাশনালের স্টোর কিপার; চাকুরীতে কোন উন্নতি বা অবনতি নেই, তবে বেতন মোটামুটি মন্দ নয়। অফিসে ঢিমে তেতালে মাছি মেরেই, তার দিনের অনেকটুকু সময় কাটে বলা চলে। তার পীড়পিড়িতেই সুষমা আবার পড়াশোনা শুরু করেছিলো।
সেই দৌড় থামলো পনের বছর পরে পি এইচ ডি তে এসে!
যারা ভ্রু কুঁচকে ভাবছেন.......... "যা, গাঁজা!" - দয়া করে ২০২৭ সনের ঢাকা ভার্সিটির পি এইচডি প্রাপ্তদের তালিকাটা দেখে নেবেন। 'সুষমা খন্দকারের' নামটা সোস্যাল স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের প্রথম দিকেই পাবেন।
তা, যা বলছিলাম। ভালোভাবে বেঁচেও যে আনন্দ নেই, সেটা সুষমার চাইতে ভালোভাবে আর কেউ উলব্ধি করেছে বলে, সে মনে করে না।
কারণটা মামুন।
সে নিজে এখন বড় একটা এনজিও তে কন্সাল্টেন্ট হিসাবে কাজ করছে। মাসকাবারী বেতন যা পায়, তাতে মামুনের ছমাসের বেতন হয়ে যায়!
এটাই তার সবচেয়ে বড় কষ্ট!
মামুনের কোন বিকার নেই।
সে তার, নিজের চাকরীতে, মহা সুখেই আছে বলে- মনে হয়! এমনকি সুষমার ছোকড়া কলিগরা যে মামুনকে আড়ালে 'দেড়ব্যাটারী দুলাভাই ' ডাকে , সেটা জেনেও, সে মোটেই খেপে না!
"মানুষটা এমন কেন?"- সুষমা ভেবে পায়না।
মামার সংসারে থেকে সে ভুলেই ছিল যে, গড়পড়তা বাঙালী ললনার চাইতে তার গড়ন বেশ দীঘল, গৌড়। নাকে-মুখেও বেশ স্নিগ্ধতা মাখানো।
ভার্সিটি জীবনে বেশ কিছু হৃদজনিত টানাপোড়েন এড়াতে তার বেশ কষ্টই হয়েছিলো।
মামুনের ভেতরের মানুষটাকে হয়তো চিনে বলেই, সেই কৈশোরী ভালোবাসার টানটুকু এখনো থেকে থেকে জানান দেয়।
লোকটার কোথায় যেন একটু অন্যরকম! আর দশটা মধ্যবিত্ত আটপৌড়ে চাকুরীজীবির মতো নয়। আড্ডাবাজীতে নেই; পান সিগারেটের নেশাও নেই। তবে পড়ে, খুব পড়ে। আর ভাবে!
ভাবনার কথাগুলি অবশ্য তার জানা নেই, তবে সে বুঝতে পারে মামুন কখন আনমনা থাকে আর প্রায়সই দেখে কিসব হিবিজিবি নোটস রাখতে থাকে সময়ে সময়ে।
ঘরের সময়টুকু সুষমা একমাত্র মেয়ে লুবনিকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতো।
সে ক্যাডেট কলেজে চলে যাবার পর থেকে সেটুকু সময় কাজের জায়গাতেই কাটিয়ে আসে।
যাইহোক; এই দুঃখবিলাসের (!) জীবনেই হঠাৎ করে এতো বড় পরিবর্তন চলে আসবে সেটা তার ভাবনাতেও ছিলনা।
কদিন ধরে মামুনকে বেশ অস্থির দেখাচ্ছিল। সচরাচর যেটা হয়না।
"কি ব্যাপার, চাকুরী নিয়ে ঝামেলা হলো নাকি?" - সুষমার আশাবাদী প্রশ্ন।
মামুন চাকরীটা ছেড়ে দিলে তার মান যদি কিছুটা বাঁচে!
"ঠিক তা নয়। তবে ভাবছি চাকরীটা ছেড়ে দিবো কিনা। "
মামুনের গলায় দ্বিধা। সুষমা নিজের কানকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলো না! এই চাকরীটা করা না করা নিয়ে মামুনের সথে তার কম লাগেনি।
সেদিন সন্ধ্যায় সুষমা বেশ সাজগোজ করেই মামুনকে জোর করে বাসা থেকে বের করলো; দুজনে বুফে ডিনার করবে, ক্যান্ডেল লাইট! তার বেশ ফুরফুরে লাগছে নিজেকে, মামুনকে ভবিষ্যতে কি কাজে লাগানো যায়, এ নিয়ে অনেক আইডিয়া এসেছে তার মাথায়।
আজকে তার একটু টাচ দিতে হবে তাকে।
"আমি একটা আদম অফিস খুলবো"!
সুষমা বিষম খেলো! কোঁত করে লব্স্টারের একটা বড় টুকরা গিলে ফেল্লো!
"আদম অফিস মানে?! তুমি কি আদম ব্যাবসা শুরু করার ধান্দা করছো নাকি?" পিএইচডি ম্যাডামের শব্দের বাছাই এ, সেই মফস্বলের কিশোরী সুষমার ধাঁচ।
মামুন কখনো মাথা গরম করে কথা বলেনা। সে সময় নিয়েই তার পুরো পরিকল্পনাটা খুলে বল্লো।
সুষমা কখনোই ভাবতে পারেনি মামুনের ভাবনার দৌড় এতোটুকু।
তার কথা শুনতে শুনতে সে লবস্টারের প্রিয় ডিশটার বাকিটুকু চেখে দেখতেও ভুলে গেলো।
মামুনের ভাবনার মূলে আছে বেশ কিছু থীওরি, যা সে ইতিমধ্যেই অনলাইনে যাচাই করে, কাকে কাকে দিয়ে যেন পরীক্ষাও করে ফেলেছে। তার প্রস্তাবের জটিল ব্যাখ্যাগুলি বাদ দিলে, ব্যাপারটা দাড়ায় অনেকটা এমন-
বিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সের মানুষের শরীরের অভ্যন্তরে মেটাবলিজম এর কারণে যেই শক্তি সঞ্চালিত হয়, সেটাকে নির্দিস্ট কিছু যান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সহজেই বিদ্যুত শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব। আর তাতে, স্বল্প খরচে, বিপুল পরিমাণ বেকার জন গোষ্ঠি থেকে বিশাল মাত্রার বিদ্যুত উৎপাদন করা যাবে। এখানে আদম সন্তানের কোন কাজ নেই! খালি বসে বসে সার্কিটে যুক্ত থাকা আর মাস শেষে মোটা অংকের টাকা গুণে নেয়া!
সব শুনে সুষমার মনে হলো- মামুন ছাড়া এই বুদ্ধি আসলেই আর কারো মাথায় আসা সম্ভব ছিল কিনা! এই প্রথম তার মনে হলো 'দেড় ব্যাটারী দুলাভাই' সম্ভোধনটা কি মামুনই তার কলিগদের শিখিয়েছিল কিনা!
সুষমার ভাবনাটা আমাদের আর না জানলেও চলবে।
তবে পরবর্তী ছমাসে তাদের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আসলো!
এখন মামুনের কাজ হলো পাওয়ার সাপ্লাই করা!
তার কোম্পানীর লোকেরা বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করে; উৎপাদিত বিদ্যুত আবার তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ন্যাশনাল গ্রীডে যোগ হয়! তার নিজস্ব্য প্যাটেন্ট করা প্রযুক্তি বিধায়, ব্যাবসাটা একতরফা এবং রমরমা!
সুষমা তার কোম্পানীর চেয়ারম্যান; এনজিও এর চাকরীটা সে আগেই ছেড়ে দিয়েছে। আজকাল উঁচুতলার পার্টিতে তার বেশ ঘন ঘন আনাগোনা! সেখানে সে নিজের পরিচয় এভাবেই দেয়- "
"আমি সুষমা মামুন, চেয়ারম্যান; ডি.বি.লিমিটেড !"
ও হ্যাঁ, মামুনের কোম্পানীর নাম দেড় ব্যাটারী লিমিটেড!
নামটা সুষমার পছন্দেই হয়েছে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।