আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্মসমালোচনা-১ :: আমার লেখালেখির অযোগ্যতা

আজি হতে শতবর্ষ পরে কে তুমি পড়িছো বসি আমার ব্লগখানি কৌতুহল ভরে

(এ লেখাটির পুরোটাই বাস্তবতা , বিনয়ের যে কোন প্রকাশ এখানে অনুপস্থিত) ভাল লেখক হতে না পারার দুঃখটা আমাকে যতটা তাড়িত করে , অনেকের বেলায় হয়ত সিকিভাগও হয় না । অথচ ভাল লেখার তাড়নায় যা যা করা প্রয়োজন , অন্যের বেলায় যতটা চেষ্টা থাকে , আমার বেলায় তার সিকিভাগও নেই । আরও ব্যাখ্যা করলে ব্যাপারটা পরিস্কার হবে: গভীরভাবে অনুভব করি , ভাল লিখতে চাইলে ভাল লেখার পাঠক হতে হয় । ছোটবেলার যে সময়টায় সাহিত্য সংস্কৃতির দিকে ঝোঁক জন্মাবে , তার পুরো সময়টাই আমার কেটে গেছে বিদেশে । ফলে , আমার ভেতরের লেখালেখির শেকড়টাই অস্তিত্বহীন ।

দেশে এসে তবে কি করলাম ? চারপাশের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতেই কেটে যায় ৩/৪ বছর । দু'টো স্কুল বদলে , বন্ধু জুটিয়ে সবে থিতু হয়েই নিজেকে আমি দশম শ্রেণীতে আবিস্কার করি। ঢাকার নামকরা স্কুলে পড়াশোনার প্রবল চাপের মাঝেও বই পড়ার নেশাটা সবে মাত্র আমায় গ্রাস করে নিতে শুরু করেছে । ১০ম শ্রেণীর দিনগুলো আমাকে যেন নতুন দুয়ার খুলে দেয়, পাঠ্যবইয়ের ভেতর লুকিয়ে দেদারসে সাহিত্যের নানা অঙ্গনের বই পড়তে শুরু করি । দুর্ভাগ্যজনক ভাবে , আমার ভেতরকার নতুন জগতটা উন্মোচিত হওয়ার আগেই তার নির্মম প্রয়াণ হয়।

এসএসসি পরীক্ষার অব্যবহিত পরেই ঘরে আসে নতুন কম্পিউটার । সাহিত্য, সংস্কৃতি আর সৃজনশীলতা চিরতরে শেলফে আটকে যায় , কম্পিউটার গেমসের জালে বাঁধা পড়ে যাই । দশম শ্রেণীর সেই ৭/৮ মাস , আমার পাঠক জীবনকালের ব্যাপ্তি । সেইটুকু সম্বল নিয়েই দু'চার লাইন লিখি , কিন্তু অনুভব করি , লেখালেখি করার মত যথেষ্ট শক্তি সামর্থের কিছুই আমার নেই । পুরনো লেখালেখির জের টেনে অনেকে লিখে চলেছেন ব্লগিস্ফিয়ার , সেক্ষেত্রেও আমি অন্তসারশূন্য ।

ব্লগে আসার আগে ২২ বছরের আমার জীবনে একটা লেখারও সৃষ্টি হয়নি । ব্লগে আগমন কেবল পাঠক হিসেবে , কালক্রমে কয়েকবার লেখার চেষ্টা করেছি , সেগুলো গুণগত মানোত্তীর্ন কিনা সে বিতর্কে না গিয়ে বরং বলতে পারি , নিয়মিত ধারায় ভাল লেখা লিখতে পারা নিয়ে আমার সংশয়বাদী । শব্দচয়নের বেলায় চেয়ে বেশি প্রতিকূলতা অনুভব করি । মস্তিষ্কের স্বল্প শব্দ ভান্ডার শব্দস্বল্পতা হেতু উপযুক্ত শব্দের ব্যবহার আমার লেখনীতে সবসময়ই অনুপস্থিত । যারা অনেক পড়াশোনা করেন , সহজাত বৈশিষ্টের কারণেই কোন না কোন লেখকের লেখার ঢং নিজের মাঝে ধারণ করে চলেন ।

কারও কারও বেলায় , লেখকী ঢংটা একাধিক লেখকের দ্বারা প্রভাবিতও হতে পারে । আমার যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক পাঠাভ্যাস নেই , আমার লেখনী কোন নিয়ম মেনে চলে না , সুবিন্যস্ত গন্ডির মাঝে লেখাগুলো কখনও সাজাতেও পারি না । বিশ্ব সাহিত্য থেকে শুরু করে বাংলা ভাষার মাস্টারপিস গুলো নিয়ে যখন গুরুগম্ভীর আলোচনা হয় , তখন আমি শুধুই শ্রোতা । সে আলোচনায় নিজেকে শামিল করার লোভের কথা অস্বীকার করার সাধ্য নেই আমার , কিন্তু নিজের অপরিমিত ক্ষমতার কথা ভেবে , সেসব থেকে দূরত্ব বজায় রাখাই শ্রেয় মনে করি । অনেকের লেখার মাঝে কবিতা আর গানের অবাধ প্রয়োগ আমার মাঝে ঈর্ষা জাগায় ।

শিল্পকলার এদিকটাতেও আমি ভীষণ পিছিয়ে । ভীনদেশি গানের বেলায় আমার অভিজ্ঞতা অনেক কম হলেও , দেশী গানের বেশ ভালই ভক্ত আমি । কিন্তু সেখানে অন্য বাধা , যত শতবার একটা গানই শুনি না কেন , কোন গানের ২ টা লাইন শুদ্ধ করে মুখস্ত বলার ক্ষমতা আমার নেই । ঠিক একই কথা খাটে কবিতার বেলাতেও । তাই আমার লেখার মাঝে কবিতা আর গানের অলংকরণ সযতনে এড়িয়ে চলি ।

লেখালেখিতে আমার পশ্চাৎপদতার অন্যতম কারণ ফিকশন লিখতে পারার অযোগ্যতা । কেবল ফ্যাক্টসের উপর আমি দু'চারটা লাইন লিখতে জানলেও ,ফিকশন লেখার মত কল্পনাশক্তি কখনও আমার মাঝে বেড়ে ওঠেনি । প্রকৃতিগতভাবেও আমি লেখক হওয়ার বেলায় অযোগ্য । অসম্ভব কম ধৈর্যশক্তির কারণে আগে থেকে ভেবে কোন লেখার জন্ম আমি কোনদিন দিতে পারিনি । আমার সব ক'টা লেখাই মুহুর্তের খেয়ালে লেখা , একটানে , কোন রিভিশন ছাড়াই ।

সে কারণেই হয়ত কোন ফিকশন , বা গল্পের প্লট সাজানোর মত সময় বের করা আমার জন্য অসম্ভব । অনুভব করি , সত্যিকার লেখক লেখা নিয়ে অনেক ভাবেন , মনের ফ্রেমে প্রথমে লেখাটা গেঁথে ফেলেন , তারপর সেটাকে অক্ষরে সাজান । এর পুরোটাই আমার মাঝে অনুপস্থিত । প্রশ্ন হতে পারে , সব কিছুতে পিছিয়ে থাকা আমার ইচ্ছেশক্তিগুলো কি কোথাও পরিণত হয়ে ওঠেনি ? অস্বীকার করব না , আমার পাঠাভ্যাসের মাঝের প্রায় পুরোটাই পত্রিকা কেন্দ্রিক । বিশ্ব রাজনীতি , দেশীয় রাজনীতি নিয়ে আমার আগ্রহ সেই ছোটবেলা থেকেই ।

পত্রিকায় যেহেতু লেখালেখির কোন সুযোগ নেই বা তৈরি করারও চেষ্টা করিনি , আর ব্লগ প্লাটফর্মে এখনও এসব লেখালেখির ভাল ক্ষেত্র তৈরি হয়নি , সেকারণে এসব নিয়ে লেখালেখির সম্ভাবনাও কখনও জেগে ওঠেনি । আমার পছন্দের অন্যতম ক্ষেত্রে খেলাধুলা , পত্রিকার বাইরে স্পোর্টস নিয়ে আলাপ করার সুযোগ ব্লগে সেভাবে নেই । উপরন্তু পত্রিকার পাতায় সাহিত্য মেশানো খেলার খবরের বিরুদ্ধে আমি নিজেই সোচ্চার কন্ঠ , সে কারণে সেটা থেকে বিচ্যুত হয়ে খেলাধুলা নিয়ে আলাপ করা আমার নীতি বিরুদ্ধই হয়ে যায় । বই পড়ার চেয়ে অডিও-ভিজুয়াল মিডিয়া আমাকে সবসময় বেশি আকৃষ্ট করে । ভাল সিনেমার দিকে অসম্ভব ঝোঁকের কারণে সিনেমার উপর দু'একবার লেখার চেষ্টা করেছি ।

তবে , যে দৃষ্টিকোণ আর সিনেমামনস্ক বিষয়-আশয় সিনেমাসংক্রান্ত লেখায় উল্লেখ করতে হয় , অনভিজ্ঞতার কারণে সেসবও সম্ভবত আমার লেখায় খুঁজে পাওয়া যাবে না । বইয়ের চাইতে সিনেমা আরেকটা দিকে পিছিয়ে থাকে ..... সিনেমায় খন্ডচিত্র মিলে কেবল , পুরোটা পেতে বইয়ের দিকে ঝুঁকতেই হবে । কিন্তু খুব বেশিক্ষণ মনযোগ রাখতে পারিনা বলে , সিনেমার দিকে ঝোঁকটা সবসময় বেশি । এতে করে জ্ঞানের সংখ্যাগত উৎকর্ষ বাড়লেও , গভীরতা খুবই কম । সবশেষে বলি , নিজের পড়াশোনা বা চাকরির সাথে লেখালেখির সমন্বয়ের ব্যাপার ।

এক্ষেত্রেও আমি যোজন যোজন পিছিয়ে আছি । মূলত আলসেমির কারণে পড়াশোনা বিষয়ক বা কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ক লেখালেখি পরীক্ষার খাতা বা থিসিস পেপারের বাইরে ব্লগ বা প্রিন্ট মিডিয়াতে আনার ব্যাপারে আমার উৎসাহ শুন্যের কোঠায় । এককথায় কেবল বলা যায় ...... "গুণাগুণ মেনে ভাল লেখালেখির বেলায় আমার কোন অতীত , বর্তমান বা ভবিষ্যত নেই" বিঃদ্রঃ লেখালেখি নিয়ে তেমন সিরিয়াস হওয়াটা অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না , রাইটিং ফর প্লেজার টাই আসল , আমিও একইভাবে দেখি । তবুও নিজের স্বার্থেই আত্মসমালোচনা । মনের কোণে ঠিকই অপেক্ষা থাকে সেই সকালের ,শিশিরবিন্দুগুলো যখন লেখাটা একবার ভাল বলে ছুঁয়ে যাবে


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।