আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাচ কা সামনা!- অর্থ কি এতই আরাধ্য যে নিজেকেও বিকিয়ে দিতে হবে?

সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত...............।

আপনাকে আপনার জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত কয়েকটা বিষয়ে ৬টি পর্যায়ে সর্বসাকূল্যে ২১টি প্রশ্ন করা হবে। যতই গোপনীয় আর অস্বস্তিকরই হোক, আপনি যদি সবগুলোর সত্য উত্তর দিতে পারেন, তবে আপনি হবেন এক কোটি রূপীর মালিক! এই থীমের উপর ভিত্তি করে ভারতীয় টিভি চ্যানেল 'ষ্টার প্লাসে' শুরু হয়েছে এক নতুন রিয়েলিটি শো l সাচ কা সামনা 'Sacch Ka Saamna : Face the truth' ; সোজা বাঙলায় সত্যের মুখোমুখি। অনুষ্ঠানটি আবার আরেক কলম্বিয়ান রিয়েলিটি গেইম শোয়ের নকল; (সভ্য জগতে অবশ্য এখন নকল বলে না, বলে অনুকরন ) একজন মানুষ মহাপুরুষ নন। তাঁর অনেক গোপনীয় ব্যাপার থাকে।

কিছু কিছু ব্যাপারের সাথে শুধু তিনি নিজেই নন, বরং অন্য একজন মানুষের আবেগ-অনুভূতি এমনকি গোটা সমাজের ভাবমূর্তি ও জড়িয়ে থাকে। তাই, কারো ব্যাপারে যেটুকু না জানলে কারো ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই বরং জানলেই ক্ষতি বেশী। ; সেসব বিষয় খুঁচিয়ে বের করে আনা কখনোই কোন কাজের বিষয় হতে পারে না। আর এ অকাজটাই মহা সমারোহে করে চলেছে এই শো। আমার কাছে অবাক লাগে যখন দেখি আমন্ত্রিত ব্যক্তি তাঁর চরম গোপনীয় কথাও অবলীলায় বলে দিচ্ছেন কোটি জনতার সামনে।

টাকা কি এতই আরাধ্য যে নিজেকেও বিক্রি করে দিতে হবে? আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে, যতদুর দেখলাম মানুষ কিন্তু হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এটা দেখার জন্য। অবশ্য, মিডিয়া জগতের মানুষগুলোর ব্যক্তিগত কথা জানার জন্য যেখানে টাকা খরচ করে ট্যাবলয়েড পত্রিকা কিনেও নিশ্চিত সংবাদ পাওয়া যায় না, সেখানে মিডিয়ার মানুষটিই যখন নিজে থেকেই জানিয়ে দিচ্ছেন, কখন তিনি কুমারীত্ব হারিয়েছেন, কখন তিনি নিজের স্ত্রীর সাথে ধোঁকাবাজি করেছেন, তখন স্থুলরুচির জনগন তো হুমড়ি খাবেই! যাঁরা ইতিমধ্যেই দেখেছেন, তাঁরা তো জানেনই। আর যাঁদের এখনো দেখার দূর্ভাগ্য হয় নি, তাঁরা দুয়েকটা প্রশ্নের ধরন শুনুন, "আপনি কি কখনো আপনার মেয়ের বয়সী কারো সাথে শারিরীক সম্পর্কে জড়িয়েছেন?" (বলাবাহুল্য, উত্তরদাতা মঞ্চে আর তার তরুণী কন্যাটি তখন পাশেই দর্শক সারিতে উপবিষ্ট এবং ভদ্রলোকের উত্তর ছিল 'হ্যাঁ') "আপনি কি কখনো কোন নারীকে চুপিচুপি স্নান করতে দেখেছেন?" কিছুক্ষন দেখার পরে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে চ্যানেল বদলালাম। আমার মনে হলো, এ ও কি সম্ভব? নূন্যতম সামাজিক দায়বদ্ধতাও কি থাকতে নেই? পরে ভাবলাম, আসলে তো এটাই স্বাভাবিক। অর্থই যদি সর্বক্ষেত্রে মানুষের স্ট্যাটাস নির্ণয়ের মাপকাঠি হয়, তবে এত সব নীতি-নৈতিকতার ধার ধারে কোন পাগলে? এ অনুষ্ঠান আর কিছুই নয়, আধুনিক পুঁজিবাদী মানুষের অর্থলিপ্সার উত্তুঙ্গু বহিঃপ্রকাশ মাত্র এবং এ তো কেবল শুরু; ভবিষ্যতে হয়তো মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সব কিছু (আহার-নিদ্রা-মৈথুন) লাইভ শোয়ের পণ্য বলে গন্য হবে।

আজ যে আমি এই লেখায় এমন অনুষ্ঠানের প্রতিবাদ জানাচ্ছি, সেদিন হয়ত সেই আমিই ঐসব অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবো! টাকার বড়ই দরকার রে ভাই। Disclaimer: আমি টেলিভিশনের অনিয়মিত দর্শক। মাঝে মাঝে কিছু ইংরেজী-হিন্দি মুভী দেখি; সিরিয়াল ওয়ালা চ্যানেলের ধারেকাছেও যাই না! গতসপ্তাহে পত্রিকায় বিনোদ কাম্বলীর কিছু আজাইরা কথা পড়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। কী একটা রিয়েলিটি শো তে প্রিয় খেলোয়াড় শচীনের নামে হেন তেন অনেক কিছু বলেছে। কী বলেছে, তাই জানার জন্য দুই এপিসোডের কিয়দংশ দেখেই এই পোষ্ট লিখার কথা মাথায় এলো।

মানুষের এই যে টাকা-পয়সা নিয়ে কামড়াকামড়ি, দেখে আমার সবসময় দু'টো পংক্তি মাথায় ঘোরে, "একজন আরেকজনের চাইতে বেশী পাবার লোভ তোমাদের এতোই ভুলিয়ে রাখে যে, সে অবস্থাতেই তোমরা কবর পর্যন্ত পৌঁছে যাও!" আল-কুরআন(১০২ : ১-২)। ধন্যবাদ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।