কত আজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই দূরকে করিলে নিকট,বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।
সেদিন ছিল এমনই ঝরঝর ধারা। আকাশটা কালো। না সকাল থেকে এমন ছিল না । আকাশটা কালো হলো হঠাৎ করে।
তখন ইডেন কলেজে বাংলা ক্লাশ চলছিল। ক্লাশ নিচ্ছিলেন দিলারা হাফিজ ম্যাডাম। পড়াচ্ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হৈমন্তী। আকাশটা হঠাৎ করে এত কালো হয়ে গেল যে মনে হলো হৈমন্তীর দুঃখের সাথে কাঁদবার জন্যই আকাশটা হঠাৎ করে এমন হয়ে গেল।
দুই দুইবার পিছনের দরজা দিয়ে পালাবার চেষ্টা করেও পালাতে পারিনি।
তৃতীয় বারে যদিও দরজা পেরিয়ে বারান্দার কিনারায় পিলারের আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে বান্ধবীদের আসার অপেক্ষা করছি, এমন সময় বান্ধবীদের বদলে এলেন দিলারা হাফিজ ম্যাডাম স্বয়ং।
আমাকে বললেন-- তুমি অনেক্ষন থেকে চেষ্টা করছিলে ক্লাশ থেকে বের হোতে, বের হয়ে এখানে এসে দাঁড়িয়েছ কেন?? কি হয়েছে??
কিছু খুঁজে না পেয়ে সত্য বললাম--- ম্যাডাম আকাশ কালো করেছে??
ঃতো কি হয়েছে? বাড়িতে যাবে??
ঃনা, বৃষ্টিতে ভিজব।
ঃএই কলেজ ড্রেস পরে??
দেখলাম ম্যাডামের মুখের কাঠিণ্য দূর হয়ে যাচ্ছে।
ম্যাডাম বললেন-- বৃষ্টির দেরী আছে ক্লাশে আস। আজ কিছু বলব না কিন্তু এর পরে এমন করলে শাস্তি দেব।
ম্যাডামের পিছনে পিছনে ক্লাশে ঢুকতে ঢুকতে বললাম --------বৃষ্টিতে ভেজার একটা প্রিপারেশন আছে না ম্যাডাম।
ম্যাডাম দিলেন হা হা করে হেসে। । বললেন --যাও বৃষ্টিতে ভিজ়ো , আজ আর ক্লাশ নেব না। ।
আমি ও ঊর্মী দুইটা চকবার আইসক্রিম কিনে নিয়ে রিক্সায় চাপলাম। আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পরছে। আমরা দুইজন রিক্সার হুট ফেলে দিয়ে আইসক্রিম খেতে খেতে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাসায় ফিরছি। কি যে মজা!!??? জীবনের সবটুকু মজাই যেন পাচ্ছিলাম এই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে।
বিধাতার বোধ হয় আমার এই আনন্দটুকু সহ্য হলো না।
আমাদের বাসার গলিতে ঢুকবার আগেই মেইন রোড়ে একটি বাসকে সাইড দিতে যেয়ে রিক্সাটা কাত হয়ে পরল -একটা গর্তে। গর্তটা আবার একটা ডাস্টবিনের পাশে। আমি রিক্সা থেকে পরে গেলাম ডাস্টবিন উপচানো ময়লার মধ্যে, যা বৃষ্টির পানিতে হয়েছে কর্দমাক্ত।
যখন উঠে দাঁড়ালাম আমার শরীরের ওজন হয়েছে আমার চেয়ে দ্বিগুন। দুর্গন্ধে গা গুলীয়ে উঠছে, নাক ধরবো সেই উপায় নাই কারন দুই হাতেই ময়লা।
পায়ের ওজনে হাঁটতে পারছিনা। রিক্সায় চড়তে গেলাম রিক্সাওয়ালা বলল --------আপা এইটুকু রাস্তা আপনি হেঁটেই আসেন।
আমার পাশ দিয়ে যেই যাচ্ছে সেই নাক ধরছে। আর নাক চেপে ধরে ঘুরে ঘুরে আমাকে দেখছে। পরিচিতজনেরা কিছুক্ষন আমাকে দেখার পর যখন চিনতে পারছে তখন হা হা করে হাসছে, আর তাদের হাসি দেখে আমিও মা কালীর প্রতিমূর্তি হয়ে সাদা দাঁত বের করে হাসছি।
অপরিচিত লোকজনও ঘুরে ঘুরে আমাকে দেখছে আর হাসছে। আমিও খালি ক্ষেপছি আর হাসছি, হাসি চাপাতে পারছি না। ঊর্মি রিক্সায় বসে নাক চেপে ধরে যাচ্ছে আর আমি ওর রিক্সার সাথে সাথে হেঁটে যাচ্ছি।
বাসার কলিং বেল চাপলাম। দরজা খুলে দিয়েই মার চিৎকার --এই কেরে তুই!!? উহ্ কিসের দূর্গন্ধ।
বাসা শুদ্ধ সব করে ওয়াক! ওয়াক!!
আমার মেজাজ ততই খারাপ হয়। আবার সবাই হাসে আমিও হাসি।
আমি কোন রকমে ঢুকলাম যেয়ে বাথরুমে।
আমি যত মাথা ধুই তত কাঁদা বের হয়। যত শ্যাম্পু করি তত গন্ধ বের হয়।
গায়ে সাবান দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেলাম। গন্ধ কিছুতেই যায় না। মা বললেন-- গন্ধ যাবে আগে বাথরুমটা ধোও?!- তা হলে গন্ধ কম লাগবে।
এই বাথরুম ধোয়া মুখের কথা ??!! কালো কালো কাঁদা আর ঝাঁটা হাতে আমি। ডেটল, স্যাভলন এমন কি ফিনাইল দিয়ে মা আমাকে গোসল করিয়েছে।
উহ্ সে যে কি কাহিনী !!এখনও মনে হলে প্রান খুলে হাসি।
আমার মাথার চুল এখন কমে যাচ্ছে। চুল পরে যাবার কথা উঠলেই মাকে ক্ষেপাই ওই যে তুমি আমাকে ফিনাইল দিয়ে মাথা ধুইয়েছিলে, তাইতো চুলগুলি সব যাচ্ছে ডাস্টবীনে !? মা সাথে সাথে উত্তর দেন-- সে তো যাবেই সবাই যায় আমেরিকা, ইউরোপ আর তুমি যাও ডাস্টবীনে?? সেই মূহুর্তেই হাসির রোল পরে যায়। । সবার মনে পরে সেই স্মৃতি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।