শ্রেণীসংগ্রাম যেন নিয়মের ভাগ্যবান ঠাপ; আমাদের ঘরে তাই বিশ্বায়ন স্বামীর প্রতাপ
কবিতার উপজাত:
একদৃষ্টিতে অনুবাদ যেন দ্বৈতনৃত্য, দুই শরীক পরস্পরের নির্ভরশীল যেমন কিছু নাঁচে এই দুজনের এক্জন থাকে মূল ভূমিকায় আর অপরজন থাকে অনুসরণের - তারপরও পারস্পরিক তাৎক্ষণিক যোগাযোগের সুযোগের কারণে আর সেই দৃষ্টিতে এই তুলনাকে দেখলে নৃত্য অনেক সহজ
বিষয়টার ঠিক সমার্থক নিচের কবিতায় 'Prologue' এর উপযুক্ত/চলনসই অর্থ নিয়ে যে দ্বন্দ আমাকে ভাবিয়েছে। ধ্রুপদী শব্দের প্রতি কখনো কখনো প্রেম থেকে স্বীকার করব সবরকমের বিবেচনা বর্জন করা দরকার অনুবাদের সময়। যে কোন চিন্তা আর তার ফলস্বরূপ যে পরিবর্তন অনুবাদে আসে কে জানে তার কারণই হয়তো মূল রচনার সচেতন প্রয়াস, তখন? এতদিনে এত্টুকু বিদিত যে অনুবাদকের সীমা অনুবাদের রূপ নির্মাণ করে
'ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবার'এর সদস্যদের মধ্যে গঠনে অনেকসময় এতটাই সাদৃশ্য থাকে - 'ভাবানুবাদ' নামের পেছনে লুকানো যে কোন বহিরাগত শত্রু'র যে কোন প্রকার অজুহাতই অগ্রহণযোগ্য। আপাতত বাকি থাকল যে প্রশ্নগুলো তার একটা হলো শব্দের সঠিক সমার্থকতা নিয়ে, এক্ষেত্রে এর থেকেও জরুরী বিষয় মানি সমার্থক গুলোর পেছনের আবেগ আর নাজিলের মুহুর্তের সংশ্লেষণ। আরে শেষ বাক্যাংশটা তো দেখি আরেক দ্বিধার জন্ম; এই দ্বিধান্বিত সময়ের সিদ্ধান্ত নির্ভর করে একাধিক বিষষের উপর আর সেগুলোই হলো অনুবাদকের সীমানার স্থানাংক
মূলকবিতা:
চৌবায়ু ভবন
জন বাকানের একটি উপন্যাসের দশমিকীকরা
নান্দী
দার্শনিক ইতিহাসবিদ,
ঘটনার ক্রমে অনাবৃত রাত,
সাধারণ পাখি, বারূদ,
পেঁচার নির্ভুল অবস্থা।
জেনারেল ম্যানেজারের মনোবৈকল্য
নিয়ে রায় দেয়া
আর গ্রীষ্ম বিলম্ব করা
কড়া পাহারার কারাগারে। এলিসন,
আমি আজো ভুলি নাই সেই আদার
সিগারেট আর প্রতিত্তুরে
মরিসের মুখ। আমি অসুস্থ ছিলাম্
তুমি সভ্য করেছো সেই একাকীত্ব।
ব্যক্তিগত প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রথা
নিয়ে যাও পৃথিবীর আর্তনাদের বাইরে।
আমাকে কবিতায় একটা উপশম লেখো।
দূরে যাও। আরো দূরে।
খোজো সেই ঝলক।
অধ্যায় ১ - উত্তাপ
বীচেনের সরাইখানা।
গরম রাইয়ের পনির আর পেঁয়াজের রুটি,
একটা চওড়া লাল পথ
বিট আর পানি শাকের ক্ষেতে।
মানচিত্র নেই, শুধু পোকা আর নক্ষত্র
আর পাইন গাছ, জার্মান আবহাওয়া
আনন্দদায়ী অথচ জৌলুসহীন।
চাষিটা হেসেছিল। উপায়হীন।
কিছু একটা তার অপেক্ষায় আছে,
তীব্র নীল চোখের একটু ধ্বংস,
ধাঁধার উদারতা
আর রাজনৈতিকের ঝগড়া।
তার হৃদয়ের কথা বলেছিল অচেনা জিভ।
অধ্যায় ২ - শিকার
দিনের আলো আর মখমলী প্রভাত,
ডিম ভাজি আর নীল গ্রানাইট।
আর মন ছিল কালো এক পাথর।
সত্যি কি সেখানে ছিল কোন লাশ?
হয়তো শয়তানী মনোভাব
নয় সুডৌল আর নরমকে ভেঙে ফেলা?
সে দশ মিনিট থামল গাড়ির কারখানার পাশে
যেখানে সাইদকে পোড়ানো হয়েছিল।
সে পরখ করেছে যুবরাজের হাত
কায়রো, বীস্, ভার্বেনা
আগাপ্যানথাস-এ, সেই তপ্ত নি:শ্বাস।
সে পূর্ণ হয়েছে ।
কিন্তু তারপর?
অধ্যায় ৩ - নিয়তি
স্ট্রবেরি, ফিরোজা তুষারের ঢেউ,
তৃপ্তিকর গরম খাবার, সেই একই কুমড়া
শুকাচ্ছে চৌকাঠে, সবুজ পানি।
বিকাল প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল
গন্ধক স্নানে নিরানন্দ হওয়ার কথা ভেবে
তার(স্ত্রী) ইংরাজ বন্ধুর সাথে। চিঠি
বলিভিয়া, উরুগুয়ে, স্কটল্যান্ড বরাবরে।
আত্মার নিবিড় প্রত্যাখ্যান।
অধ্যায় ৪- কঠিন
মানে কিছু না।
কিছুই না।
বুঝতে হলে তোমাকে যেতে হবে
ঝিকিমিকি আলোর তৃণভূমি।
অধ্যায় ৫ - বিগত
সূর্য, পথ, পৃথিবী,
শরীর, খাদ্য, ঘুম, প্রশ্ন,
বিচার, ওষুদ,
একটা রাইফেলের গুলি, অনন্ত চলা,
ওয়াল্টার স্যাভেজ ল্যান্ডরের কাজ,
জনতার ঘর, বাছুরের মাংশ, ছাগল, চা,
সঠিক সরকার , বেঠিক সরকার,
পুরনো জাদু, নতুন ঝাড়ু,
দেয়ালের সামনে এক গুলিবিদ্ধ রমণী,
চুক্তি, বিমান, ঘটনার
যুক্তি, ঐ ভাবগম্ভীর নদী,
সীমানার উপরে একটি সমাধিফলক।
অধ্যায় ৬ - বরষা
তারা স্বাচ্ছন্দ্য প্রত্যাশা করে নি।
তারা ঘুরে দাড়াল
বর্ণহীন গ্যাসের দীপ্তিতে,
জনাবের সন্দেহ
আর সমতল জার্মান পরিখায়।
তার (স্ত্রী) গাড়ি মেরামত অযোগ্য।
সে কফির প্রস্তাব দিল।
'আমি আপনাকে চিনি। ' 'কিভাবে?'
'যুবরাজ, সেই সন্ধ্যায়...'
প্রশ্ন। উত্তর।
দু:সংবাদ।
তার নীল চোখের আলো
ভেদ করে হৃদয়।
অধ্যায় ৭ - বিহীন
পরিস্থিতির কোমনীয়তা।
একটা জাতির যৌবন।
যশের খেলনার দোকান।
পুরাতন, ভয়ানক খেলা।
উন্মত্ত হাততালি।
কারণের প্রতি নিষ্ঠা।
একটি ট্রেনের ধোঁয়া।
ভূট্টাক্ষেত সমতল।
নেকড়ের পেয়ালা।
ঝুলে থাকা খামার বালক।
হৃদয় একটা পাথর।
বছরেরা একাকী।
একটা মুখের ছবি।
মানুষের আলিঙ্গনের করুণা।
অধ্যায় ৮ - মেরামত
বস্তাটা তার মাথার উপর।
তার শেষ মুহুর্ত,
নেড়ি কুত্তার মতো দেখে।
পায়খানাঘর, রক্ত,
দুটো পোড়া তার।
কেমব্রিজের স্মৃতি,
ছাঁদের উপরে সোডার পানি,
একটি নিদ্রালু বেড়াল।
ট্রিগারের শব্দ
তার মাথার পেছনে।
একটা খোলা জানালা।
বন্দুক। একটি কচ্ছপের ঝাঁপ।
অধ্যায় ৯ - রজনী
আমরা আশা করি এক ধরনের,
কিন্তু একমাত্র সঙ্গীত
হলো পাগলাটে শব্দ,
দর্শন আর দুর্ঘটনার,
দুর্যোগ আর পরিবর্তনের,
এক দুর্লভ কালো কৌতুক
কদাকার বিষয়
আর রাগান্বিত আলোর
নিকটবর্তী এক মাঠে।
অধ্যায় ১০ - অলৌকিক আভা
এত ছোট বিষয়
যে নিদ্রার ক্ষুদ্র পরিসর,
তথাপি তা গোপন ছিল তার সাথে।
সে হেটেছিল ফাঁকা রাস্তা।
ঝলসানো তপ্ত নি:শ্বাস।
নর্দমার আবর্জনা।
একটা সাইকেল।
পরিবর্জিত
নক্ষত্রের মশাল।
অধ্যায় ১১ - খুন
সমুদ্র-বিবমিষা, ঝিমঝিমে মাথা,
ভীষণ স্ফীত, মৌচাক
মেঘ ছড়িয়ে পড়ছে। সময়ের
অনুবীক্ষণ। নিছক পুরাকীর্তির ধুলা
তার(স্ত্রী) প্রেমিক এখন। সে(স্ত্রী) ছিল এক নেকড়ে,
বিচিত্র, বেপরোয়া।
রমণীরা
ছিল ঘোড়ার মত, খন্ডিত হবার লক্ষ্যে।
অস্বাভাবিক মেয়ে তা হলুদাভ বাদামী চুল
জোর করে বেধে রাখে, কম্পমান
কাউন্টেস, জ্যানেট, ছবির মতো
মিস স্কোআর... সেই মরিয়া
তপ্ত বিশ্বাস। তার(স্ত্রী) হৃদয়ের ভারসাম্য
ছোঁ মারা বাজপাখির মতন।
সঙ্গমের বন্য নিবৃত্তি।
অধ্যায় ১২ - রশি
ইংরাজ লোকটা বাড়িটাকে পর্যবেক্ষণে রাখে
আর শেষে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসে।
সতর্কভাবে করা তাই নেই সংকেত।
সেখানে মানুষের উপস্থিতির কোন প্রমাণ নেই।
তাহলে দূরের ঘন্টার মানে কি দাড়াল?
সেই বিকট নিশ্চয়তা। থেমে থাকা অজ্ঞান চিরকুট।
দ্বিখন্ডিত চুনাপাথর।
ঘোরানো সিড়ি। আলো।
একটা খোলা দরজা। ভেতরে, পঁচাতক্তা
আর কাগজ খসে দেয়ালে, গন্ধটা
নাপিতের দোকানের, ধীর গতিতে
ছাদের পানি আর ঐ ক্লিক,
যেন গড়িয়ে পড়ছে ঘড়ি।
অধ্যায় ১৩ - গৃহ
শহর জ্বলে উঠল দিনের আলোয়
যখন ওয়েটার নিয়ে এল সকালের কাগজ,
সেখান থেকে তাকাল এক মুখ...ওহ,
সেটা উদ্ভদ হাস্যকর।
তার(স্ত্রী) স্নায়ু,
ডাক্তার বলল, নাজুক।
সে ছিল সভ্য, ইশ্বরের কৃপা,
যদি হুইস্কির-গন্ধ। কিন্তু... লোকটা
ছিল চেনাজানা। তার নাম...
কি? দাড়ি, সকালের পোশাক...
সে(স্ত্রী)দ্বিধান্বিত। দূরবর্তী ভূগর্ভ।
পুরুষ আর নারীর এক দীর্ঘ শিখা
দিল মগ্ন চুম্বন, সেই হাজার গর্জন
হৃদয়ের ভেতর।
শেষের স্তবক
প্রায় অন্ধকার। শেষ গ্রাবরেখা।
উত্তল, সন্ধ্যালোক, সম্ভাবনা।
আলো, বাহন, মালসামান।
তোমার স্বপ্ন শেষে
অনুভব করেছ সাধারণ মন্ত্র
এসব তোমাকে করেছে আবার যৌবন।
তুমি হতে পার নশ্বর এখন।
উপরের কবিতাটি মার্ক হ্যাডনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'সবাক ঘোড়া আর বিষাদ বালিকা আর সাগরতলের গ্রাম' ( The Talking Horse and the Sad Girl and the Village Under the Sea) থেকে নেয়া। হ্যাডনের কবিতার অন্ধকার কৌতুক আমার নজরে পড়ে। 'চৌবায়ু ভবন' ( The House of the Four Winds) কবিতাটির ভাষা/ভাব কতটা সরল/ঘন এসব প্রশ্নের বাইরে তথ্যগত বিষয় হলো এটা একটা উপন্যাসকে পাঁচ পৃষ্ঠায় ধরায় প্রচেষ্টা, সফল কি বিফল তা বোঝা যাবে না মূল উপন্যাস না পড়লে, যা তেমন জরুরীও নয়।
আর আমার তরফ থেকে জানাই নামের(ব্যক্তি, স্থান সবকিছুর) অনুবাদকে আমি গ্রাহ্য করি না, বিষয়টা আমার কাছে হাস্যকর লাগে। আর বন্ধনীর ভেতরে শব্দ ব্যবহার করেছি কয়েক জায়গায় বাংলা সর্বনামের তুলনামূলক দুর্বলতা'র কারণে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।