আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামুরাই-জ্যানিসারিঃ বাংলাদেশের জন্য লেসন



আজ আবার টমক্রুজের লাস্ট সামুরাই দেখছিলাম । দেখতে দেখতে কেন যেন ইউরোপের ত্রাস জ্যানিসারি বাহিনীর কথা মনে পড়ে গেল । ছবিটা আগেও দেখেছি কিন্তু এই ছবির সাথে ঐ বাহিনীর কথা কখনো মনে পড়েনি । আজই প্রথম মনে পড়ল । ১৯৯৩ সাল ।

তখন আমার প্রিয় বিষয়গুলোর মধ্যে একটা ছিল ইতিহাস । সে সময় একটি বই আমার হাতে আসে । ডঃ শেখ মুহম্মদ লুৎফর রহমানের লেখা 'উসমানীয়া সালতানাত' । বইটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে মাত্র দুই দিন সময় লেগেছিল । চমৎকার উপস্থাপনা বা সাবলিল লেখার কারনে নয় - ইতিহাসের প্রতি আমার প্রবল আগ্রহের কারনে ।

উসমানিয়া সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা উসমানের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন মেজ ছেলে ওরখান (১৬২৯-৫৯) । বড় ভাই সুলায়মান এবং সেকান্দর আলী নামক জনৈক অফিসারের পরামর্শক্রমে তিনি জ্যানিসারি বাহিনী গঠন করেন । বিজিত খ্রীষ্ঠান অঞ্চল থেকে ছোট ছোট খ্রীষ্ঠান ছেলেদের ধরে এনে মুসলিম বানিয়ে তাদেরকে দিয়ে গঠন করা হয় ইউরোপের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ এই বাহিনী । জ্যানিসারি বাহিনী একসময় তুর্কীদের বিজয়ের প্রতীকে পরিনত হয় । পাশাপাশি এই বাহিনী উসমানীয়া সালতানাতকেও কম ভোগায়নি ।

বিভিন্ন সময়ে বিদ্রোহ করার পাশাপাশি তারা ছিল সেনাবাহিনীতে সব ধরনের সংস্কারের বিরোধী । সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ চেয়েছিলেন ইউরোপীয় স্টাইলে আধুনিক বাহিনী গড়ে তুলতে । সে লক্ষ্যে তিনি জ্যানিসারি বাহিনীর এক-চতুর্থাংশকে (১৮২৯) নতুন বাহিনীতে যোগ দিতে বলেন । কিন্তু উগ্র এ বাহিনী তার আদেশ উপেক্ষা করে । সুলতান গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় প্রতিষ্ঠার প্রায় ৫০০ বছর পর এই বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলেন ।

এমনকি সরকারি সকল নথিপত্র থেকেও এ বাহিনীর নাম মুছে ফেলেন । যে বাহিনীর কারনে ইউরোপে এত বছর ধরে রাজত্ব করে এসেছিল, যে বাহিনী তিন মহাদেশ জুড়ে একটি মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল, যে বাহিনী ছাড়া উসমানীয় সালতানাতের কথা চিন্তাই করা যায়না- সে রকম একটি বাহিনী ধ্বংস করে তাৎক্ষণিকভাবে সুলতান মুরাদ দুর্বল হয়ে পড়লেও এটা যে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল তা পরবর্তিকালের সবাই স্বীকার করেছেন । অথচ আমার দেশে পুরাতনকে আঁকড়িয়ে ধরার কী জানবাজী কসরৎ ! কে বর্তমানে কী করছে তার হিসাব দেয়ার চেয়ে অতীতে কে কী করেছিল তার ফিরিস্তিতে ভরা থাকে সকল আসর । এই অতীতমুখীনতাই বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে । যেমন মুসলমানদের ক্ষতি করছে সোনালী অতীত নামের পদার্থটি ।

জাপানীরা যদি সামুরাই যোদ্ধাদের নির্বাসনে পাঠাতে পারে, তুর্কীরা যদি জ্যানিসারি বাহিনীকে অস্বীকার করতে পারে আমরা কেন পারবনা অতীতের পথে না হেঁটে সামনের দিকে হাঁটতে ? যে মুসলমানরা রাসুল (সাঃ) এর স্বর্ণালী দিনগুলোকে আউড়িয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন তারা কখনো মুসলমানদের স্বর্ণালী ভবিষ্যৎ গড়তে পারবেনা । যে বাংলাদেশী/বাঙালীরা টাকায় ৮ মন চাল পাওয়ার গল্প করে অলস সময় কাটান তারাও কখনো সমৃদ্ধ দেশ গঠনে এগিয়ে আসবেনা এ আমি নিশ্চিত বলে দিতে পারি । সব কিছুকে ডিজাটাল অবজ্ঞার চোখে না দেখে প্রয়োজনে প্রতিবন্ধক অতীতকে মুছে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে নিশ্চিত সাফল্যের সোনালী ভবিষ্যতের দিকে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।