বঙ্গবন্ধু স্কোয়ারের একপাশ ঘিরে কয়েকজোড়া কৌতুহলী চোখ। বাচ্চাকাচ্চাগুলো ব্যাপক উৎসাহে লাফাচ্ছে, ওই আউব্বা এইডারে কি কয়?
কমবয়সী বাচ্চাকাচ্চাগুলোর বেশি বয়সী বাপ উত্তর দেয়, এইডা অইতেছে ঝন্না। এইডা থেইক্কা পানি পড়ে। ছিডা ছিডা পানি।
বাচ্চাকাচ্চাদের চেহারায় বিষন্নতার কালো ছাপ পড়ে গেল।
তাদের হয়তো 'ছিডা ছিডা পানি' দেখতে ইচ্ছে করছে।
বাচ্চাকাচ্চাদের মা খুজে সে দিকে তাকালাম। তার মুগ্ধতা এখনও যায়নি। সে কথা বলছে না। আর সে হয়তো এটা ধরে নিয়েছে এতো বড় বিষয় নিয়ে কথা বরার বুদ্ধি তার কুলোবে না।
রাস্তা পার হওয়ার সময় একটু সময় করে এটতুকুই বৈচিত্র দেখার সুযোগ হলো।
এরপর আর জানা হলো না এই গুলিস্তানে তাদের আর কী কী দেখার সুযোগ হয়েছে?
এমনি শতশত নবাগত লোকের পদাভারে প্রতিদিন মুখরিত হয় গুলিস্তান। আর এ কারনেই গুলিস্তান এতোটা বৈচিত্রপূর্ণ। গুলিস্তানের আশেপাশে প্রবেশ করতেই প্রথম যে শব্দগুলো ভেসে আসবে। তা হচ্ছে আহবান।
আসেন আমাদের গাড়ীর নিকট দেখুন আমাদের মলমগুলো। আবার অন্য দিক থেকে আসেন আমাদের গাড়ীর নিকটা দেখুন আমাদের কলমগুলো। দিনভর মোটামুটি কলম আর মলম বিধৌত অঞ্চল-ই থাকে গুলিস্তান। যারা, জীবন বাচাতে আর জীবন সাজাতে গলা ফাটিয়ে যান। জীবন বাচাতে দ্রুত কার্যকরী মলম আর জীবন সাজাতে কলম নিয়ে আমাদের সেবায় বসে থাকেন।
বহুমাত্রিক মানুষের আশ্রয়স্থল এই গুলিস্থান। তবে এর এক তৃতীয়াংশ মানুষই বাস ধরার জন্য দৌড়ের উপর থাকে। আর এক তৃতীয়াংশ থাকে খোজার উপর, আচ্ছা ভাই ওমুক জায়গার বাসটা কোনখান থেইকা ছাড়ে।
এই শ্রেনী হচ্ছে সবচেয়ে ঝামেলায় থাকা অংশ। যারা দীর্ঘক্ষণ হেটে হেটেও নির্দিষ্ট গন্তব্যের বাস ধরতে পারেনা।
কারন তারা যাদেরই জিজ্ঞাসা করে তারা সবাই খুব কনফিডেন্টলী ভুল উত্তর দেয়, ওই যে ওদিক।
সস্তা মার্কেটিংয়ের জন্যও গুলিস্তানের বিকল্প নেই। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, কোনো মানুষ দিনভর দামাদমি করেও গুলিস্তান থেকে কেনাকাটায় জিতে যেতে পারেনা।
আপনি যে বস্তুর দাম শুনলেন, চারশ টাকা। না কিনলে সেটা ভয়ে পঞ্চাশও বলতে পারবেন না।
কারন, দিয়ে দিবে।
আর গুলিস্তানের বিখ্যাত কাটিং ম্যান। সরি আমি গুলিস্তানের রমনা ভবণের টেইলার্সের কাটিংম্যানদের কথা বলছি না। পকেটা কাটা ম্যানদের কথা বলছি। এই গুপ্তঘাতকরা সর্বদাই স্নেহে আগলে রাখে।
রাখে চোখে চোখে। যাদের সুচারু কুটির শিল্পের ফাদে পড়ে আপনি নিমিষেই সর্বশান্ত। যাই হোক গুলিস্তা নিয়ে বলে শেষ করা যাবেনা একটা গল্প বলে শেষ করি। এক লোক গুলিস্তানের বিখ্যাত পকেটমারদের কথা শুনে পকেটে পাচশ টাকার একটা নোট নিয়ে ঘুরছে। এক ঘন্টা পর চেক।
দুই ঘন্টা পর চেক। না নিচ্ছেনা। টাকার জায়গায় টাকা আছেই। অবশেষ বিকেলবেলা হতাশা নিয়ে এক জায়গায় চা খেতে দাঁড়িয়ে পাশে দাড়ানো এক ভদ্রলোককে বলল, ভাই গুলিস্তানের পকেটমারদের এতো কথা শুনেছি। কই দেখলাম না তো কিছুই।
পকেটের টাকা পকেটেই আছে।
পাশের ভদ্রলোকটি জবাব দিল, পকেটে জাল টাকা নিয়ে ঘুরলে কে নেবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।