সখা, নয়নে শুধু জানাবে প্রেম, নীরবে দিবে প্রাণ, রচিয়া ললিতমধুর বাণী আড়ালে গাবে গান। গোপনে তুলিয়া কুসুম গাঁথিয়া রেখে যাবে মালাগাছি। এই ব্লগের©শান্তির দেবদূত।
১.
বন্ধু দস্তগীরের নামটা কিভাবে খস্তগীরে রুপান্তরিত হয়েছিলো সেটা আজও এক বিরাট রহস্য। যতটুকু মনে পড়ে, খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে তার এমন কোন বিশেষ আসক্তি ছিলো না যে 'দ' এর স্হলে 'খ' হয়ে যাবে।
"দর্শনশাস্ত্র দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ শাস্ত্র, মাদার অফ অল সায়েন্স, এই শাস্ত্র না থাকলে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জন্মই হতো না", প্রথম ক্লাসেই এমন লেকচার শুনে আমাদের পঁচিশ-পঁচিশ-পঁচিশ পেটা শরীর তখন বিয়াল্লিস-পঁচিশ-পঁচিশ অবস্হা। মুটামুটি সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি যে, বাঁচি আর মরি; জীবনে দর্শন ছাড়া আর কোন শাস্ত্রের নিকটবর্তীও হবো না; সে অংকশাস্ত্র কি কামশাস্ত্র, তখনই আমাদের ত্রাণকর্তা হিসাবে দাড়িয়ে যায় বন্ধু দস্তগীর উরফে খস্তগীর।
-ম্যাডাম, প্লিজ দর্শনশাস্ত্রকে দর্শনশাস্ত্র বলবেন না, খোদা না করুন কোন ভাবে যদি হাটু ভাঙ্গা 'দ' দাড়িয়ে গিয়ে বড় 'ধ' হয়ে যায় তখন দর্শনশাস্ত্র কি শাস্ত্রে পরিনত হবে ভেবে দেখেছেন ? বরং বলুন, "ফিলোসফি", আহা ! "ফিলোসফি"
এই হলো আমাদের খস্তগীর, সেই হিসাবে তার নাম ধস্তগীর হওয়াই বেশি যুক্তিযুক্ত ছিলো, কিন্তু কোন এক বিচিত্র কারনে তা আর হয়ে উঠেনি।
কিছুদিন আগে পুষ্পমেলায়, প্রায় বিশ বাইশ বছর পরে অকস্মাৎ দেখা কলেজের সেই বন্ধু খস্তগীরের সাথে। জুলফির নিচে চুলে একটু আধটু পাঁক ধরেছে এই যা, তাছাড়া আর সব আগের মতোই আছে।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে ওকে চেনা চেনা মনে হচ্ছিল, কিন্তু আসল নাম ভুলে শুধু "খস্তগীর" নামটাই মনে আসছিলো, তাই ডাকার সাহস পাচ্ছিলাম না। শত হোক বিশ বাইশ বছর পরে খুঁজে পাওয়া বন্ধুকে তো আর বিকৃত নামে ডাকা যায় না হঠাৎ করে। আমি তার পিছু পিছু ঘুরছি আর মনে মনে চলছে ওর নামটা মনে করার আপ্রাণ চেষ্টা।
কিছুক্ষণ অনুসরন করে ওর মধ্যে কেমন একটা অপ্রকৃতস্হ ভাব লক্ষ করি, প্রতিটা স্টলে যায় আর আশপাশ উঁকিঝুকি দিয়ে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে টুপ করে ফুলের একটা পাঁপড়ি ছিড়ে মুখে দেয়, তারপর কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে মুখ উচিয়ে দাড়িয়ে থাকে। কৌতুহল হচ্ছিলো, কিন্তু কিছুতেই নামটা মনের করতে না পেরে মনে মনে অস্হির হয়ে উঠছি, এমন সময় আমার দিকে চোখ পড়তেই, "আরে তুই" বলে এগিয়ে এসে আমাকে কোন সুযোগ না দিয়ে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরে যে আমার ত্রাহি মধুসূদন অবস্হা, আমিও বোকা বোকা হাসি দিয়ে পরিস্হিতি স্বাভাবিক করার চেষ্ট করি।
আমি প্রথমে না চিনার ভান করে বলি, "স্যরি, আসলে আপনাকে ঠিক চিনতে..."
আরে আমাকে চিনতে পারছিসনা ! আমি খস্তগীর !
২.
বন্ধু খস্তগীর আমাকে টেনে পাশের চায়ের স্টলে নিয়ে বসায়। এত বছর পর দেখা, কিন্তু ওর মধ্যে কোন জড়তা নেই, তার সেই শিশুসুলভ সারল্য আজও অটুট আছে।
জিজ্ঞেস করলাম, "তোর ছেলে মেয়ে কয়জন, কোথায় পড়াশুনা ?"
-আরে বিয়েই তো করিনি, ছেলে মেয়ে হবে কি করে ? আর আমি গবেষক মানুষ, সারাদিন গবেষণা নিয়ে পড়ে থাকি, বিয়ে করলে বউকে সময় দিবো কিভাবে, সাথে উটকো ঝামেলা।
মানে ? তুই কিসের উপর রিসার্চ করছিস ?
-আমার প্রশ্ন শুনতেই পায়নি এমন ভাব করে সে বলে,"এখানের চা টা খুব ভালো বানায়, তাই না ?"
স্পষ্ট বুঝতে পারি মুখ ফসকে বলে ফেলেছে, এখন ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে। আমার প্রশ্ন শুনতে না পারার শিশুসুলভ কাঁচা অভিনয় দেখে হেসেই দিলাম।
-হাসছিস কেন ?
কিছু না, বাদ দে।
ভিতরে ভিতরে আমিও কৌতুহলী হয়ে উঠি কিছুক্ষণের মধ্যে, কথায় আছে, "বিড়াল মরে কৌতুহলে" যেহেতু এইখানে বিপদ ঘটার মতো কোন কারন আপাতত চোখে পড়েনি তাই কৌতুহল নিবারনের চেষ্টা করাই সমীচীন বলে মনে হলো। বন্ধু খস্তগীরকে ভালো মতোই চিনি, ব্যাটা ঘটনা বিস্তারিত বলার জন্যে মনে মনে ফেটে পড়ছে, কিন্তু আমি চেপে ধরলেই ভাব নিবে। এখন ঘটনার আশপাশ দিয়ে একটু খোঁচাতে হবে; এই যা ।
তোকে দেখলাম স্টলে স্টলে ঘুরে ফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে ?
-ও! দেখে ফেলেছিস ? তাহলে তো আর লুকানোর কিছু নাই।
ওর চেহারায় তৃপ্তির একটা ভাব ফুটে উঠে, প্রাণপন চেষ্টা করেও খুশি খুশি ভাবটা আড়াল করতে পারেনি।
-আসলে আমি স্বাদ সূচক নিয়ে গবেষণা করছি।
হঠাৎ বিষম খেলাম, কাশতে কাশতে বললাম, "কী ! কি সূচক?"
-আরে স্বাদ সূচক, স্বাদ; "টেস্ট স্কেল। "
ও
-পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমস্যা কি জানিস ? পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো খাদ্য সমস্যা, আর আমার এই গবেষণা সফল হলে পৃথিবীতে খাদ্যের সমস্যা চিরতরে দুর হয়ে যাবে।
ছোটবেলা থেকে খস্তগীরকে আদ্যপন্ত চিনি, ওর হাতে সমগ্র বিশ্বের খাদ্য সমস্যার সমাধান এটা বিশ্বাস করতে সেই কারনে একটু বেশি কষ্ট হচ্ছিলো।
-আমার গবেষণা প্রায় শেষ করে এনেছি, মাঠ পর্যায়ের কিছু ডাটা দরকার ছিলো বলে আজকে মেলায় আসা। ব্যাপারটা তোকে খুলে বললেই বুঝতে পারবি, পানিবৎ তরলং।
জলবৎ তরলং
-ঐ হলো, একই ব্যাপার। এখন বল, আমাদের মৌলিক স্বাদ কয়টা ?
তিন, না না চারটা মনে হয়।
-না, আমাদের মৌলিক স্বাদ আসলে পাঁচটা, টক, ঝাল, নোনতা, মিষ্টি ও তিতকুটে।
যখন কোন খাবার আমাদের জিহ্বায় ছোঁয়াই তখন জিহ্বার অনুভূতি সেন্সরগুলো ঐ পাঁচটি স্বাদের একটা বা একাধিক মিশ্রণ অনুভূতি আমাদের মস্তিষ্কের স্বাদ প্রক্রমন কেন্দ্রে পাঠায়। মস্তিষ্কের এই অংশ স্বাদগুলোকে প্রসেস করে একটা বাইনারী মান আমাদের মস্তিষ্কের মূল কেন্দ্রে পাঠায়। আমার কথা বুঝতে পারছিস ?
যদিও কিছু আমার মাথায় ঢুকছে না, তারপরও বিজ্ঞের মত মাথা নেড়ে বললাম, পানিবৎ তরলং। শুধু একটা জিনিস বুঝি নাই, বাইনারী মান বলতে কি বুঝচ্ছিস ? শুন্য আর এক? কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক তো আর কম্পিউটার না !
-হুমম, কে বলেছে এই উদ্ভট কথা? আমাদের মস্তিষ্ক দুনিয়ার সবচেয়ে জটিল কম্পিউটার। যাক সেই কথা, এখন এই বাইনারী '০' আর '১' কি সংকেত পাঠাচ্ছে সেটাতো বুঝেছিস ? শুন্য মানে হলো খাবারটা অখাদ্য নয় আর এক মানে হলো সুখাদ্য।
-তারমানে দাড়াচ্ছে, পূর্ণাঙ্গ স্বাদের অনুভূতিকে যদি একটা ফাংশন মনে করি তাহলে এর পাঁচটি চলক হচ্ছে টক, ঝাল, নোনতা, মিষ্টি ও তিতকুটে। এই চলকগুলোর মান শুন্য থেকে অসীম পর্যন্ত হতে পারে। আর এই ফাংশনের মান হলো শুন্য '০' অথবা '১' । এখন এই ফাংশনের ডিফানশিয়াল ইকুয়েশন সমাধান করলেই আমরা মুল সমীকরন পেয়ে যাবো। সাথে পাবো পাঁচটা ধ্রুবক রাশি।
এই ধ্রুবক রাশিগুলো কি কি হতে পারে অনুমান করতে পারছিস ?
না
-হাসির পরিধি কর্ণ প্রায় বিস্তৃত করে সে বললো, একটা ধ্রুবকের মান হলো খাদ্যে বস্তুর ঘ্রাণের সমমান। এখন নিশ্চই বুঝতে পারছিস, আমাদের স্বাদ অনুভূতির সাথে ঘ্রাণের একটা যোগসূত্র রয়েছে ? আর একটা হলো উষ্ণতা, যেমন ঠান্ডা গরমের অনুভূতি। আর বাকি তিনটা ধ্রুবকের মান এখনো মানুষের অজানা।
মুখে করুন হাসিটা কোন রকমে ধরে রেখে বললান, পরিষ্কার বুঝতে পারছি। কিন্তু এই সমীকরনের সাথে দুনিয়ার খাদ্য সমস্যা সমাধানের সম্পর্ক কি ?
আরে এতক্ষণের এটাই বুঝতে পারিসনি ! আরে এখন আমি এই ইকুয়েশনটি ইলেকট্রিক সিগনালে রুপান্তরিত করে এর চলকের মান কম বেশ করে যেকোন স্বাদের অনুভূতি জিহ্বা থেকে মস্তিষ্কের পাঠাতে পারবো।
ফলে আমরা যেকোন কিছুকে সুস্বাদু খাবারে রপান্তরিত করতে পারবো। তখন ঘাস, পাতা, গাছের বাকল, ইঁদুর, কেঁচো ইত্যাদি যেকোন জৈবিক বস্তু মানুষ অত্যন্ত সুস্বাদু খাবার হিসাবে খেতে পারবে।
আমি ভিতরে ভিতরে ভীষণ চমকে উঠলাম ! কি ভয়ংকর ! সভ্যতা কোন দিকে যাচ্ছে ? বন্ধু খস্তগীরের গবেষনার টেকনিকেল দিকগুলো কিছু না বুঝলেও এর ফালাফল বিবেচনা করে আমি শিউরে উঠি।
আর কিছুক্ষণ গল্প করে, বন্ধু খস্তগীরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি। ধীরে ধীরে ব্যাস্ততার কারনে আর যোগাযোগ করতে পারিনি ওর সাথে, কালে ভুলেই গেলার তার কথা।
কি জানি হয়ত আমার অবচেতন মন এটাই চাচ্ছিলো।
৩.
গতকাল হঠাৎ বাজারে বন্ধু খস্তগীরের সাথে দেখা। দেখি সে বাহাতে জ্যান্ত একটা কবুতর ধরে রেখে ডান হাতে ঘুষি দেয়ার ভান করছে। হাত দুরে সরিয়ে নিয়ে আবার হঠাৎ করে বিপুল বেগে মুষ্টি এগিয়ে নিয়ে আসছে। বুঝতে পারলাম নতুন কোন গবেষণার অংশ হবে এটা।
আমি পিছন থেকে কাঁধে হাত রেখে বললাম, "বন্ধু, দস্তগীর, কি খবর?"
এইবার তার মধ্যে কেমন যেন একটু পালিয়ে যাবার তাড়া দেখলাম, আমিও ছাড়বার পাত্র নই, জোর করে পাশের এক রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলাম। আজকে কোন তাড়া নেই, অনেকক্ষণ গল্প করা যাবে। প্রথমেই জিজ্ঞেস করলাম , "তোর স্বাদ সূচকের খবর কি"?
-গলার স্বরটা নিচু করে মিন মিন করে বললো, তোর কাছে কি আর গোপন কববো, তুইতো সবই জানিস। আসলে হয়েছে কি আমি রিসার্চের একদম শেষধাপে পৌঁছে গিয়েছিলাম। স্বাদসূচক বানানো শেষ, পরীক্ষা পর্যায় চলছে, একটা তার ক্লিপ দিয়ে জিহ্বার দুই পাশে কানেকশন লাগিয়ে পাওয়ার সাপ্লাই অন করে দিয়ে ভাবছি কি স্বাদ পরীক্ষা করবো।
তুই তো জানিস ছোট বেলা থেকে আইসক্রিম আমার খুব পছন্দ, তাই প্রথম পরীক্ষা হিসাবে আইসক্রিমের স্বাদ চেখে দেখার সিদ্ধান্ত নেই। কতগুলো গরুর হাড্ডি সিদ্ধ করে, স্বাদসূচকে আইসক্রিমের মান সেট করে মুখে পুরে দেই, আহ্ ! কি স্বাদের আইসক্রিম! একটা, দুইটা করে পাঁচটা আইসক্রিম স্বাধের হাড্ডির টুকরা খেয়ে ফেললাম, কিন্তু তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হসপিটালে। দুই সপ্তাহ শুধু রক্তলানীতে স্যালাইন দিয়ে খাওয়া খাওয়াতে হয়েছে আমাকে। আসলে হয়েছিলো কি, যতোই আমি অনুভূতি সংকেত পরিবর্তন করি না কেন, বস্তুর ভৌত অবস্হাতো আর বদলাবে না।
তাই আমার মস্তিষ্ক আইসক্রিমের স্বাদ পেলেও গরম হাড্ডি পুড়িয়ে দেয় পরিপাকতন্ত্রের সবকিছু, জিহ্বা, খাদ্যনালী, পাকস্হলীর কিছু অংশ।
কিন্তু তারপর গবেষণা চালিয়ে যাসনি কেন?
-চালাবো কিভাবে? হসপিটালে থাকতেই মা আমার রিসার্চের সবকিছু সের দরে বিক্রি করে দিয়েছে, আর বলেছে এইসব পাগলামী বাদ দিয়ে বিয়ে করতে। বলে মুচকি মুচকি আসছিলো বন্ধু খস্তগীর।
বুঝতে পারলাম, নারীকুল জগতের মুল সমস্যাগুলোর একটা হলেও, এবার কোন এক মহিয়সী নারী জগতকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত হতে বাঁচিয়েছে।
আরও কিছুক্ষণ টুকটাক কথাবার্তা বলে খাবারে বিলটা দিয়ে বের হয়ে আসি রেস্টুরেন্ট থেকে।
আমার মন তখন বেশ ফুরফুরে, বিশ্বের খাদ্য সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে আমাদের বন্ধু খস্তগীর বিশ্বকে যে সমুহ বিপদের মধ্যে ফেলবার উপক্রম করেছিল আপাতত তা থেকে রক্ষা।
ঐদিকে বন্ধু খস্তগীর বকবক করেই যাচ্ছে, আমিও হু, হা, হ্যাঁ করে যাচ্ছি সাথেসাথে, কিন্তু কোন কথা মাথায় ঢুকছে না ।
তবে "পৃথিবীতে আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে গরম গরম আইসক্রিমের স্বাদ চেখে দেখেছে, সে এক অপার্থিব স্বাদের অনুভূতি, বন্ধু, কাউকে বলে বুঝানো যাবে না" তার এই কথাগুলো মনের মধ্যে গেঁধে গেছে একেবারে।
[ছবি সূত্র: অন্তঃজাল]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।