আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপন ভুবন: স্যারের নাম কী?

!!!
ডিসেম্বরের সকাল। হাড়কাঁপানো ঠান্ডা উপেক্ষা করে লেপের উম থেকে বের হতে হলো। প্রচন্ড মানসিক চাপ নিয়ে ৯টার পূর্বে ডিপার্টমেন্টে হাজির হলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষার শেষ দিন। অর্থাৎ ভাইভা।

সতীর্থরা অনেকেই হাজির হয়েছে। নিজেদের মতো করে শেষ মুহূর্তে বইপত্রে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। আগের সপ্তাহে একদিন পর পর ৩দিন প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে। এক্সটারন্যাল এক্সামিনার হিসেবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক এসেছেন। এবং একটা আইটেমে উনি মতামত দিলেন এটার হিসাব নতুনভাবে করতে হবে - আমরা যে নিয়মে শিখেছি সেভাবে নয়।

মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। কারণ ঐ আইটেমে ২০ নম্বর আছে। যাই হোক ঐ আইটেম চেষ্টা করলাম উনার নির্দেশনা মতো করতো। কিন্তু পরে জানলাম একজনের মাত্র হয়েছে। আর কারো হয়নি।

মার্ক সম্পূর্ণ কাটা যেতে পারে অথবা নিয়ম যতটুকু ঠিক হয়েছে ততটুকু নম্বর পাওয়া যেতে পারে। তবে তা নির্ভর করছে এক্সটারন্যাল এক্সামিনারের উপর। সেই অনিশ্চয়তা নিয়ে ভাইভায় হাজির হওয়া ! যথারীতি ভাইভা শুরু হলো। একজন পরীক্ষার্থী বের হওয়ার পর সবাই হামলে পড়েছে তার উপর কী প্রশ্ন করা হয়েছে জানতে। কিন্ত বিধি বাম ! টের পেয়ে গেলেন শিক্ষকরা।

অতএব অপেক্ষমানদের এমন একটা রুমে স্হানান্তর করা হলো যেখান থেকে ভাইভা বোর্ড থেকে বের হওয়া কোন পরীক্ষার্থীর নাগাল পাওয়া যাবে না। কিন্তু এর মাঝেও জানা গেল বোর্ডে একটা প্রশ্ন সবাইকে করা হচ্ছে। সেটা হচ্ছে এক্সটারন্যাল এক্সামিনারের নাম কী? এবং উত্তর না পারার দরুন তিরস্কার করা হচ্ছে এই বলে যে, যিনি বাইরে থেকে এসে আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন তাঁর নাম না জানাটা অনুচিত। সবাই দৌড় দিল প্রশাসনিক কর্মকর্তার রুমে নামটা জানার জন্য। নামটা একটু লম্বা এবং কঠিনও বটে।

সবাই লেখাপড়া বাদ দিয়ে সেই অধ্যাপকের নাম মুখস্ত করতে শুরু করলো। আমি দেখলাম আমার এক বন্ধু দূরে দাড়িয়ে খাতায় ক্রমাগত কী লিখে যাচ্ছে। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে বললো - মাথা জ্যাম হয়ে আছে। কিছুই মনে রাখতে পারছি না। তাই এক্সটারন্যাল এক্সামিনারের নামটা খাতায় কয়েকবার লিখে নিচ্ছি যাতে ভুলে না যাই !!! আমার পালা এলো।

সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে প্রবেশ করলাম রুমে। দেখলাম সবাই বৃত্তাকার একটা টেবিলে বসে আছেন। একটা চেয়ার খালি আছে। সেটাতে পরীক্ষার্থী বসার ব্যবস্হা। বসতে বলা হলো।

বসলাম। আমার মুখোমুখি চেয়ারম্যান স্যার ও এক্সটারন্যাল এক্সামিনার। প্রথমেই আমার ডান পাশ থেকে একজন শিক্ষক প্রশ্ন করলেন - স্যারের নাম কী? (আমাকে পায় কে? প্রথমেই প্রশ্ন কমন পড়েছে ) বেশ খুশী মনেই উত্তর দিলাম - আবু আহমদ আব্দুল মুহসি। আবার একই প্রশ্ন এবং একই উত্তর দিলাম। দেখলাম সবাই মুখ চাওয়াচাউয়ি করছেন।

চেয়ারম্যান স্যার চোখ গোল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। এক্সটারন্যাল এক্সামিনার মিটিমিটি হাসছেন। বুঝলাম কিছু একটা গড়বড় করে ফেলেছি। কিন্ত কী সেটা ধরতে পারছি না। ঘাম ছুটা শুরু হলো।

চেয়ারম্যান স্যার প্রায় ধমকের সুরে বললেন - আরে এটাতো এক্সটারন্যাল এক্সামিনারের নাম। তোমার নাম কী সেটা বলো? প্রশ্নকর্তা শিক্ষক বললেন - তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব্বোর্চ ডিগ্রী নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছ। আমিতো তোমাকে সম্মান করে স্যার অ্যাড্রেস করেছি। এক্সটারন্যাল এক্সামিনারের নাম জানতে চাইনি। বুঝলাম ধরা খেয়ে গেছি।

আমার লাইফ শেষ!!! অনেক প্রশ্ন করা হলো। বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম উত্তর দিতে। শেষ হলো একসময় ভাইভা। বের হওয়ার পর বাইরে দাড়ানো ব্ন্ধুরা জানতে চাইলো কেমন দিলাম ভাইভা। রাগ, দুঃখ চেপে রেখে দাঁত কেলিয়ে বললাম- ভাল হয়েছে !!! প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় সঠিকভাবে উত্তর না দেয়া, ভাইভা বোর্ডে সঠিকভাবে রেসপন্স না করা সব মিলিয়ে নিশ্চিত ধরে নিয়েছিলাম ফলাফল বিপর্যয় ঘটবে।

কিন্তু একমাস পর যখন চূড়ান্ত ফলাফল বের হলো দেখা গেল ঐসব বিষয় আমার কাঙ্ক্ষিত ফলাফলে কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। ফলে ঘটনাটি আমার জীবনে একটি মজাদার ঘটনা হিসেবেই রয়ে আছে উল্লেখ্য এক্সটারন্যাল এক্সামিনার জনাব আবু আহমদ আব্দুল মুহসি আমাদের বর্তমান অর্থমন্ত্রীর ভাই।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।