জীবন্ত মানব সত্তার অস্তিত্বই নিঃসন্দেহে মানবের সকল ইতিহাসের প্রথম আরম্ভ...
সামহোয়্যারে নতুন গ্রুপ দ্যা অল্টারনেটিভ খোলা হয়েছে। সমাজ প্রগতিতে বিশ্বাসী, মুক্ত ভাবে চিন্তার অনুসারী সবাই কে এই গ্রুপে যোগ দেবার আমন্ত্রন জানানো হচ্ছে। বিশেষ করে যারা ভাবতে চানঃ আগামী দিনের বাংলাদেশকে আমরা কি রকম দেখতে চাই...?
কি ধরনের রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্র-ব্যবস্থার পক্ষে আমরা দাঁড়াতে চাই, যাতে করে নিশ্চিত হতে পারি নাগরিক হিসাবে এই রাষ্ট্র আমার ব্যক্তির বিকাশ, গনতান্ত্রিকতার চর্চা আর স্বাধীন মত প্রকাশ সহ আমার যাবতীয় নাগরিক অধিকারের স্বপক্ষে দাঁড়াবে।
আমাদের পুর্ববর্তী প্রজন্ম যারা প্রত্যক্ষ ভাবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামের সাথে যুক্ত ছিলেন, অস্ত্র হাতে জীবন বাজী রেখে লড়ছিলেন,— তাদের পক্ষে সেরা সুযোগটা ছিল একটা গনতান্ত্রিক বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। শত শত বছরের অন্ধত্ব, কুপমন্ডুকতাকে ঘুচিয়ে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করে বিজ্ঞানমনস্ক মুক্তিবুদ্ধির চর্চার সহায়ক একটা গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র আদায় করে নেওয়ার।
আমাদের মহান স্বাধীনতার সংগ্রামের অর্জন অসামান্য। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি সৈনিকের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা অপরিসীম। কিন্ত মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৪ দশক পেরিয়ে যাচ্ছে...... আমরা পরিস্কার ভাবে জানি গনতান্ত্রিক অধিকার দুরের বস্তু, লক্ষ কোটি মানুষের জন্য নুন্যতম একটা জীবন মানও আমরা নিশ্চিত করতে পারি নাই। আশাব্যঞ্জক কোন আগামীর স্বপ্ন, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে পারি নাই। আমরা নিজেই জানি না—আমাদের জন্য অনাগত দিন কি নিয়ে অপেক্ষা করছে।
সমাজে অরাজনীতিকরন দিনের পর দিন প্রকট হয়ে উঠছে। আর এই অরাজনীতিকরনের ফলে সৃষ্ট রাজনীতিহীনতার শুন্যতা দখল করছে দলবাজী। আজকের বাস্তবতা হচ্ছে, সংগ্রামী জনগন আছে, আছে লড়াকু তরুন বুদ্ধিজীবি। কিন্ত তাদের কোন সংঘবদ্ধ প্রকাশ নাই। তাদের লড়াইয়ের আপোষহীনতাকে ধারন করতে পারে... বাংলাদেশে আজ সে রকম কোন রাজনৈতিক দলই নাই।
বিকাশমান সমাজ সত্ত্বাকে কিভাবে আমরা ব্যাখা বিশ্লেষন করব, মানুষের উৎপাদন এবং তার নিজকে পুনরুৎপাদনের কর্মতৎপরতার ভেতর দিয়ে যেভাবে তার জীবনকে প্রকাশ করে, তার ব্যাখা আমরা কিভাবে হাজির করবো...এই মৌলিক প্রশ্ন গুলোর উত্তর খোঁজার সর্বজন গ্রাহ্য কোন পথ আজ অগম্য হয়ে গেছে। বিগত দশকগুলোর তুলনায় তরুন সংবেদনশীল বুদ্ধিজীবিদের মাঝে মার্কসীয় তত্ত্বের চর্চা সীমিত হয়ে এসেছে...... আজকের তরুনদের কাছে মার্কসবাদ দ্বিধাহীন অনুসরনীয় কোন ধারা নয়। মার্কসবাদের নামে তোলা জয়ধ্বনির সোচ্চার কন্ঠ আজ স্তিমিত হয়ে এসেছে।
এই পরিস্থিতির একটা উৎসাহব্যাঞ্জক দিকও থাকতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেন। মার্কসবাদের নামে যে সব দর্শন এ যাবৎ কাল চর্চা হয়ে এসেছে—যাদের কাছে মার্কসবাদ ছিল অনেকটা ধর্মের মতন, আর এতে মজবুত ভাবে ঈমান আনার মধ্যেই আমাদের মুক্তি নিহিত, বলে যারা বিশ্বাস করতো... সেই সব সক্রিয়তা আজ বিলুপ্তির পথে।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে সেই সব ক্ষতিকর ধারার অন্ততঃ অপমৃত্যু ঘটানো গেছে, এটা অবশ্যই আশার কথা।
ফলে আজ আমরা সত্যিই জানি না, আমাদের আগামীদিন সমাজতন্ত্রের নাকি সাম্যবাদের নাকি অন্য কিছুর। আমাদের আগামী রাজনীতি কোন বৈপ্লবিকতায় মোড় নেবে, কোন উলম্ফনের রুপান্তরে আমাদের অনাগত আগামী বিনির্মিত হবে। দৃশ্যমান নিশ্চিত কোন পথের দিশা আমাদের সামনে উপস্থিত নাই। আর এই পরিস্থিতিতে নতুন পথ খোঁজার দ্বায়িত্বটা নিতে হবে আমাদেরই— আমরা যারা দার্শনিকতার চর্চা করি যাবতীয় পুর্বানুমান, সংস্কার আর প্রচলিত গৎবাধা রাস্তার বিপরীতে......, কৌতুহল অনুসন্ধিৎসা আর বিশ্লেষনী পদ্ধতিতে, আমাদের মুক্তবুদ্ধির পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে।
বাংলা ব্লগ আজ মুক্তবুদ্ধির চর্চার উল্লেখযোগ্য মাধ্যম, সেই ধারায় সামহোয়্যার ইন ব্লগে আমরা দেখছি নিরন্তর অজস্র ধরনের মতামতের প্রকাশ, সমচিন্তার ব্যক্তিদের আরো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। সামগ্রিক সেই চিন্তাগত ঐক্যের যুথবদ্ধতায় আরও সক্রিয় অবদান রাখতে গঠিত হয়েছে গ্রুপ দ্যা অল্টারনেটিভ।
সামহোয়্যার ইন ব্লগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নতুন চিন্তার সেই সব একাকী কন্ঠস্বরগুলোকে সমস্বরে পরিনত করতে চায়, দ্যা অল্টারনেটিভ গ্রুপ।
আমরা যা বিশ্বাস করি—তা সৎ ভাবে উপস্থাপন করা, অন্যের মতামত বিশ্বাসকে প্রকাশের সুযোগ করে দেওয়া, এই সব মতামত বিশ্বাস নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা, যুক্তি তুলে ধরা...... আমাদের বিশ্বাস এই বিতর্ক আর পর্যালোচনার মাঝ থেকেই বেড়িয়ে আসবে আমাদের আগামীর দিক নির্দেশনা। আমরা বিশ্বাস করি মতামত প্রকাশের গনতান্ত্রিক অধিকারের সেই ধ্রুপদী শ্লোগানঃ তোমার মতের সাথে আমি একমত পোষন নাও করতে পারি, কিন্ত আমার জীবন বাজি, কাউকে তোমার গলা টিপে ধরতে দেব না...
মানুষের অসামান্য শক্তি আর ক্ষমতার ওপর আমাদের আস্থা আছে, আমাদের বিশ্বাস মানুষের সৃজনশীলতার ব্যপ্তির প্রতি... আমরা তাই মূর্ত নির্দিষ্ট ভাবেই জানি— মানুষ কখনও কখনও ভেঙে পড়ে, কখনও কখনও সে হতাশ হয়... কিন্ত চুড়ান্ত বিচারে মানুষ কখনও পরাজিত হয় না।
আমাদের সভ্যতার ইতিহাস স্বাক্ষী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।