দেশে থাকি এবং দেশ গড়ি
............. মুঠোফোনের এই সভ্যতায় মুঠোফোন আমাদের জীবনকে কত ভাবেই না প্রভাবিত করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নব্য মাত্রা সৃষ্টির সাথে সাথে আমাদের জীবনের অনেক অনাকাঙ্খিত বাস্তবতাকে বাস্তব রুপে ধরা দিচ্ছে। এর সফলতায় আমার কোন দ্বি-মত নেই। দ্বি-মত হচ্ছে এর ব্যবহারে।
প্রেম নামক যে প্রিয় জিনিসটি আমাদের কাছে বর্তমানে অপ্রিয় হিসেবে ধরা দেয়, সে প্রেমকে আরো সহজতর করে দিয়েছে মুঠোফোন।
মুঠোফোনের এই সহযোগিতায় এমনি এক ভালোবাসার জন্ম নেই দুই কপোত কপোতির মনে। ছেলেটি ঢাকায় পড়াশুনা করে। মেয়েটির বাড়ি কুমিল্লা। সবেমাত্র ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষা শেষ করে ঢাকায় চাচার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। তাদের সম্পর্ক দীর্ঘ ছয় মাসের।
এতে দু’জন দুজনের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে এবং তারপর ভালোবাসা। ছেলেটি ঢাকায় ব্যাচলার থাকে। রাতের পর রাত কথা বলে তাদের কত নির্ঘুম রাত কেটেছে তার কোন হিসেব নেই। হিসেব ছিল শুধু ছেলেটার একটায়। আর তা হলো ছেলেটি কত বার কল করে মেয়েটির মোবাইল ওয়েটিং পেয়েছিলো।
এ রকম কত ঘটনায় হর হামেশায় ঘটে যাচ্ছে তার কোন সংবাদ ছেলেটির জানা ছিলো না। জানা ছিলো শুধু “আমি ওকে পাগলের মত ভালোবাসি। আর আমার ভালোবাসা কেও ছিনিয়ে নিতে আমি দেবোনা তা আমার প্রানের বিনিময়ে হলেও। ” এমনই ভাষ্য ছিলো ছেলেটির। কিন্তু ভালোবাসার মাঝে কেনো হিংসা, বিদ্বেষ।
এটা কি কোন সমাধান হতে পারে? নদীর এপার কয় ছাড়িয়া নিঃশ্বাস ওপারেতে স্বর্গ সুখ আমার বিশ্বাস। ঠিক তেমনি সব দোষ কি মেয়েটির ঘারে ফেলা যায়? মায়েটির ওয়েটিং হতে পারে কোন পুরনো বন্ধু, ভাই যাদের সাথে কথা বলে সে শুধুমাত্র তার এমন চাহিদা মেটাতো যা ভালোবাসা থেকে অনেক দুরের। ভালোবাসার সাথে তাকে মিলানোও পাপ। হতে পারে ছেলেটির ধারনাটায় সত্য। ছোট ছোট ক্ষোভ আর গাঢ় ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটল মেয়েটির ঢাকায় আসার পর দু’জনের প্রথম সাক্ষাতে।
কিন্তু সাক্ষাতে আসল ভিন্ন মাত্রা যদিও তা খুব পরিচিত। মেয়েটি তো কোনমতেই বাসা থেকে বের হতে পারছেনা। এ সময় বুদ্বি আসল ছেলেটির মাথায়। প্লান করল। ছেলেটি তার এক মামাতো বোনকে পাঠালো কোন মতে মেয়েটিকে ঘর থেকে বের করার জন্য।
বোন তাতে রাজি হয়ে গেল ভাইয়ের ভালোবাসার প্রতি পাগলামো দেখে। মেয়েটিকে ঘর থেকে যে কোন কথা বলে বের করে ভাইয়ার সাথে দেখা করিয়ে দিলে এমন কোন অপরাধ হবে না ভেবে। মেয়েটি তার চাচীকে বান্ধবীর ভাবি প্রেগনেন্ট বলে হাসপাতালে দেখতে যাবে বলে বান্ধবীর(ছেলেটির মামাতো বোন) সাথে বের হল। ছেলেটির সাথে দেখা হল শাহবাগে। ছেলেটি তার মামাতো বোনকে আগেই বলে রেখেছিলো যে তারা জাতীয় যাদুঘরে যাবে।
মামাতো বোনও সেই মত চলে আসল। কিন্তু সেই দিন যাদুঘর বন্ধ ছিল। ছেলেটি তার মামাতো বোনকে বিদায় করে দিয়ে মেয়েটিকে সি এন জি করে রওনা হল সদরঘাটের উদ্দেশ্যে। মেয়েটি সদরঘাট কেন জিজ্ঞেস করায় উত্তর পেল, তারা আজ লঞ্চে উঠবে কিছু সময় অতিক্রম করার উদ্দেশ্যে। দু’জনের এটি প্রথম দেখা বলে মেয়েটি না করতে পারল না।
সদরঘাট গিয়ে কিছুক্ষন বসে থাকার পর তারা গিয়ে উঠল লঞ্চের একটি ভাড়া করা কেবিনে। কাবিন ভাড়া করা হয়েছে পুর্বেই ৮.৩০ মিনিটের লঞ্চের জন্য যা মেয়েটির কল্পনায়ও ছিলো না। এতকিছু হয়ে যাচ্ছে কিন্তু মেয়েটি তাদের সাক্ষাতকে অন্য বান্ধবীদের কাছ থেকে শুনা সাক্ষাতের মতই ভাবছে। তারপর দরজা বন্ধ করে একই কক্ষে তাদের বাস অনেক সময়। মেয়েটি ধীরে ধীরে সব বুঝতে পারল।
সময় অনেক দূর পার হয়ে গেছে এখন সে একেবারে নিরুপায়। তার ইচ্ছা অনিচ্ছার আর কোন মুল্য নেই। সবকিছু বিশ্বাসের দরজায় ঠেলে দিয়ে এখন সে দিশেহারা। ছেলেটি লঞ্চ ছাড়ার পর মেয়েটিকে পরিচয় করিয়ে দিল তার বন্ধুদের সাথে যারা তাকে ইন্দন যুগিয়েছিল, তারা ঘটনার মূল হোতা না হলেও কম হোতা নয়। তারপর আবার দরজা বন্ধ করে দীর্ঘ সময় ক্ষেপন।
নিরীহ হরিনের মত বাঘের থাবা থেকে মুক্তি পেল না মেয়েটি, খাঁচায় বন্ধী হরিন। রাত ১২.০০ টার দিকে উপস্থিত হলো ১৫০ টাকার স্ট্যাম্প আর কাজী সহ ছেলেটির বন্ধুরা। মেয়েটির আর বিন্দু মাত্র বুঝতে কষ্ট হলো না যে, সবই ছিল ছেলেটির পুর্বের প্লান করা। মেয়েটি এতটাই আসহায় ছিল যে আকাশের ওপারে থাকা বিশ্ববিধাতার কাছে তো দূরের কথা ছমছম করা জলের কাছেও সে সময় নিরর্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে তার প্রার্থনা। আসহায় হাত গুলোও তার সাথে যেন প্রতারনা করছে স্ট্যাম্প গুলোর উপর হাত চালিয়ে।
মালা বদল হল। প্রশ্ন জাগলো মনে মেয়েটির- একি বিশ্বাসের মাল্য?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।