আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন গোয়েন্দার দৈত্যাকৃতির পিঁপড়েখেকোর কথা শুনুন [Giant anteater]

I realized it doesn't really matter whether I exist or not.
মূল বিষয় তৃতীয় প্যারাগ্রাফে একসময় (যেই সময়টা আমার জন্য এখনও আছে) রকিব হাসানের লেখা সেবা প্রকাশনীর "তিন গোয়েন্দা" পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটায়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এখনও তিন গোয়েন্দার বইগুলো আগের মতোই জনপ্রিয় যদিও নতুন গল্পগুলো ততোটা ভালো হয় না। ব্যাটা শামসুদ্দিন নওয়াব কী সব লেখে পড়তে আগের মতো ভালো লাগে না। শামসুদ্দিন নওয়াব ফ্যান্টাসি লিখেন। রকিব হাসানের মতো প্রতিটি কাহিনীর সুন্দর একটা সমাপ্তি টানতে পারেন না।

সেজন্যই তিন গোয়েন্দার প্রতি আগ্রহ হারিয়েছি আমি। যাই হোক, তিন গোয়েন্দা সিরিজের পুরনো বইগুলো পেলে এখনও পড়ি। রহস্য আর রোমাঞ্চ (আর রোমান্স ) ছাড়াও তিন গোয়েন্দা পছন্দ করার অন্যতম কারণ হলো, তিন গোয়েন্দা গল্পের মধ্যে অনেক সঠিক তথ্য যুক্ত করা হয়। গ্লোবাল, হিস্টোরিক ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে রকিব হাসান তার নিজের জ্ঞান কল্পিত গল্পের মধ্যে ঢুকিয়ে গল্পকে করে তুলেন অসাধারণ। এ জন্যই তিন গোয়েন্দা আমার বেশি পছন্দ।

তো সেদিন তিন গোয়েন্দার ভীষণ অরণ্য গল্পটি পড়লাম কম্পিউটারে। গল্পের একটা জায়গায় জায়ান্ট অ্যান্টইটার বা পিঁপড়েখেকোর কথা বলা আছে। পড়ার সময়ই আমি জানতাম যে তথ্যটি সঠিক। কিন্তু কখনো যাচাই করতে পারিনি। তখন ইন্টারনেট ছিল।

তাই জায়ান্ট অ্যান্টইটার আসলেই কোনো প্রাণীর নাম কি না, এটা খুঁজের বের করতে গিয়ে বেরিয়ে পড়লো চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। জায়ান্ট পিঁপড়েখেকো নামে সত্যিই একটা প্রাণী আছে এবং এটার দৈহিক বর্ণনা তিন গোয়েন্দায় লেখা বর্ণনার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। তখন মুসার মতো আমিও অবাক হতে বাধ্য হলাম, এতবড় প্রাণীটা শুধু পিঁপড়ে খেয়ে বেঁচে থাকে? উত্তরঃ হ্যাঁ। তবে শুধু পিঁপড়ে না, পিঁপড়ের সমশ্রেণীর প্রায় সব কীটপতঙ্গই খেয়ে থাকে জায়ান্ট পিঁপড়েখেকো ভাইজান। আর না খেয়েই বা কী করবে! শাকসব্জি কিংবা মাংস খাওয়ার জন্য দাঁত নেই বেচারার।

তাতে কী? গবেষণার রিপোর্ট অনুসারে, বালু এবং ছোট আকৃতির প্রচুর পাথর পাওয়া গেছে পিঁপড়েখেকোর পাকস্থলীতে। এবারে আসুন জায়ান্ট পিঁপড়েখাদক সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জানা যাক। এই মিয়া এক দিনে প্রায় ত্রিশ হাজার কিংবা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক পিঁপড়ে ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ খেয়ে থাকে। সেন্ট্রাল এবং দক্ষিণ আমেরিকার বন-জঙ্গলে এদের বসবাস। বৈজ্ঞানিক নাম Myrmecophaga tridactyla ।

পিঁপড়ে ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ খুঁজে বের করতে এরা ঘ্রাণশক্তির সাহায্য নেয়। প্রাণীবিজ্ঞানীদের ধারণা মতে, জায়ান্ট পিঁপড়েখেকোর দৃষ্টিশক্তি খুবই দুর্বল। খাবারের মেনুতে শুধু পিঁপড়েজাতীয় কীটপতঙ্গ থাকলেও এদেরকে শক্তিশালী প্রাণী বলে আখ্যায়িত করা হয়। অন্যান্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে এরা। জায়ান্ট পিঁপড়েখেকো মাটি বা অন্যান্য স্থান থেকে পতঙ্গ খেতে বা ধরতে জিহ্বা ব্যবহার করে থাকে।

এদের জিহ্বা লম্বায় প্রায় দুই ফুট হলেও প্রস্থে মাত্র দুই বা এক ইঞ্চি। আঠালো তরল পদার্থ ব্যবহার করে এরা যে কোনো স্থান থেকে জিহ্বার সাহায্যে পিঁপড়ে ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ মুখে নিয়ে থাকে। প্রতি মিনিটে এদের জিহ্বা ১৫০ বারেরও বেশিবার বের হতে এবং মুখের ভিতরে ফিরে যেতে সক্ষম। মা পিঁপড়েখেকোরা বাচ্চাকে জন্মের পর প্রায় ছয়মাস পিঠে নিয়ে বয়ে বেড়ায়। বাচ্চা মায়ের দৈহিক আকৃতির অর্ধেক হওয়ার আগ পর্যন্ত মায়ের পিঠেই থাকে।

আশ্চর্য এই প্রাণীটি কিন্তু "অতি বিপন্ন প্রজাতি" (ঢাকা চিড়িয়াখানায় নিশ্চয়ই দেখেছেন নোটিশটি) হিসেবে ঘোষিত। জরিপের ফলাফল অনুসারে, সমগ্র পৃথিবীর বন-জঙ্গলে মাত্র ৫ হাজার জায়ান্ট অ্যান্টইটার বেঁচে রয়েছে। অবশ্য শুধু সেন্ট্রাল ও সাউথ আমেরিকার জঙ্গল ছাড়া অন্য কোথাও এই প্রাণী পাওয়া যায় না। আর মানুষের নজরদারির মধ্যে অর্থাৎ, চিড়িয়াখানায় রয়েছে মাত্র ৯০টি পিঁপড়েখেকো। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় তাদেরকে রাখা হয়েছে এবং এই প্রজাতির বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

সান্তা বারবারা চিড়িয়াখানায় জায়ান্ট অ্যান্টইটার।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।