আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিধাতা

Honesty is an expensive thing, Don't expect it from cheap people...

বাঘের বড় উপদ্রব। মানুষ অস্থির হইয়া উঠিল। গরু, বাছুর, শেষে মানুষ পর্যন্ত বাঘের কবলে মারা পড়িতে লাগিল। সকলে তখন লাঠি সড়কি বর্ষা বন্দুক বাহির করিয়া বাঘটাকে মারিল। একটা বাঘ গেল, কিন্তু আর একটা আসিল।

শেষে মানুষ বিধাতার নিকট আবেদন করিল -- ভগবান, বাঘের হাত হইতে আমাদের বাঁচাও। বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা। কিন্তু পরেই বাঘরা আসিয়া বিধাতার দরবারে নালিশ জানাইল, আমরা মানুষের জ্বালায় অস্থির হইয়াছি। বন থেকে বনান্তরে পালাইয়া ফিরিতেছি কিন্তু শিকারী কিছুতেই আমাদের শান্তিতে থাকিতে দেয় না। ইহার একটা ব্যবস্থা করুন।

বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা। তৎক্ষণাৎ নেড়ার মা বিধাতার নিকট আবেদন পেশ করিলেন, বাবা, আমার নেড়ার যেন একটি টুকটুকে বউ হয়। দোহাই ঠাকুর, তোমায় পাঁচ পয়সার ছিন্নি দেব। বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা। হরিহর ভট্টাচার্য মামলা করিতে যাইতেছিল।

সে বিধাতাকে সম্বোধন করিয়া বলিল, আজীবন তোমার পুজো করে এসেছি। উপবাসে দেহ ক্ষীণ করেছি। শালা ভাইপোকে আমি দেখে নিতে চাই। তুমি আমার সহায় হও। বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা।

সুশীল পরীক্ষা দিবে। সে রোজ বিধাতাকে বলে, ঠাকুর, পাস করিয়ে দাও। আজ সে বলিল, যদি স্কলারশিপ পাইয়ে দিতে পার, পাঁচ টাকা খরচ করে হরিরলুট দেব। বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা। হরেন পুরকায়স্থ ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান হইতে চায়।

কালী পুরোহিতের মারফত সে বিধাতাকে ধরিয়া বসিল, এগারোটা ভোট আমার চাই। কালী পুরোহিত মোটা রকম দক্ষিণা খাইয়া ভুল সংস্কৃত মন্ত্রের চোটে বিধাতাকে অস্থির করিয়া তুলিল। ভোটং দেহি, ভোটং দেহি -- বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা, আচ্ছা। কৃষক দুই হাত তুলিয়া কহিল, দেবতা জল দাও। বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা।

পীড়িত সন্তানের জননী বিধাতাকে প্রার্থনা জানাইল, আমার একটি মাত্র সন্তান, ঠাকুর কেড়ে নিও না। বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা। পাশের বাড়ির ক্ষেন্তি পিসি উপরোক্ত মাতার সম্পর্কে বলিলেন, বিধাতা, মাগীর বড় দেমাগ। নিত্য নতুন গয়না পরে ধরাকে সরা জ্ঞান করছিল। ছেলের টুঁটিটি টিপে ধরে বেশ করেছ দয়াময়।

মাগীকে বেশ একটু শিক্ষা দিয়ে দাও তো। বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা। দার্শনিক কহিল, হে বিধাতা, তোমাকে বুঝিতে চাই। বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা। চীন দেশ হইতে চিৎকার আসিল, জাপানীদের হাত থেকে বাঁচাও প্রভু।

বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা। বাংলাদেশ হইতে এক তরুন ধরিয়া বসিল, কোন সম্পাদক আমার লেখা ছাপিতেছে না। 'প্রবাসী'তে । আমার লেখা ছাপাইতে চাই। রামানন্দবাবুকে সদয় হইতে বলুন।

বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা। একটু ফাঁক পড়িতেই বিধাতা, পার্শ্বোপবিষ্ট ব্রক্ষাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনার বাসায় খাঁটি সরষের তেল আছে? ব্রক্ষা বলিলেন, আছে। কেন বলুন তো? বিধাতা। আমার একটু দরকার। দেবেন কি? ব্রক্ষা।

(পঞ্চমুখে) অবশ্য, অবশ্য। ব্রক্ষার বাসা হইতে ভাল সরিষার তৈল আসিল। বিধাতা তৎক্ষণাৎ তাহা নাকে দিয়া গাঢ় নিদ্রায় অভিভূত হইয়া পড়িলেন। আজও ঘুম ভাঙ্গে নাই। [লেখকঃ বনফুল, প্রকৃত নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়]


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।