আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ড. ইউনূসের জন্মদিনে

পরে

খুব চমৎকার কোনো বিষয় নিয়ে লিখতে পারলে খুব ভালো লাগত। লিখতে হচ্ছে আশাহীনতার কথা। গত পরশু আমার দাদার বাড়ি গিয়েছিলাম। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট থানার নাজিম খাঁ ইউনিয়নের 'মমিন' গ্রাম। আমার মেজ চাচাকে আমি 'লক্ষ্মী কাকু' ডাকি।

লক্ষ্মী কাকুর সঙ্গে 'সাপ্তাহিক ২০০০'-এ আনু মুহাম্মদের গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়ক লেখাটা নিয়ে আলাপ হচ্ছিল। কাকু 'সাপ্তাহিক ২০০০' পড়েন না। আমি তাকে জানালাম, এই লেখাটার জন্য পরে ঐ পত্রিকার সম্পাদককে মাফ চাইতে হয়েছে। লক্ষ্মী কাকু বললেন, তাই নাকি। তারপর বললেন, এই গ্রামের শরিফার বাপকে চেন? আমি বললাম, কেন? 'শরিফার বাপ গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ১০০০০ টাকা নিসিল।

টাকা তাকে দিতে হয়েছে শরিফার বিয়ের যৌতুক হিসেবে। এখন জোসনারা গিয়া শরিফার বাপকে গাইল পাড়ে। কারণ জোসনাদের বরাত দিয়া শরিফার বাপ গ্রামীণ ব্যাংক থেকে টাকাগুলা পাইসিল। সুদসহ শরিফার বাপের ঘাড়ে এখন অনেক টাকার দায়। 'মানুষ এই টাকাগুলা কখন নেয় জানো? ধর, রাস্তা দিয়া তুমি যাইতেস।

তোমার ভীষণ পায়খানা চাপল। তুমি কিন্তু যেভাবে পার, রাস্তার পাড়ে হইলেও, কাজটা সারবা। প্রয়োজন মানুষকে দিয়ে যে কোনো কিছু করিয়ে নিতে পারে। মানুষ যখন অভাবে পড়ে, তার কিন্তু তখন কোনো বিচার-বুদ্ধি থাকে না। সে গিয়ে হাত পাতে।

ঋণ নেয়। শোধ কী দিয়ে করবে, মাথায় থাকে না। ' বিকাল বেলা ঈদগাহ মাঠে হবিবর চাচার সঙ্গে আমার আর লক্ষ্মী কাকুর দেখা। আমার একটু কৌতূহল ছিল। লক্ষ্মী কাকুকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কি ডিফল্টার? লক্ষ্মী কাকু বললেন, না, হি ইজ আ ওয়াইজ ম্যান।

হবিবর চাচা জানালেন, মুই ওগুলা লোনের ভিতরত নাই বাপ। মোক কইসিল নেওয়ার জন্তে। মুই কইনু, মোর টাইম নাই! শরিফার বাপ তো নিসল ট্যাকা। সেদিন যায়া দেখং গ্রামী ব্যাংকর সাত-আটজন আসি য়ুয়ার ঘরত খ্যাতা-বালিশ পাড়ি শুতি আসে। লোনের টাকা না নিয়া যাবান্নয়।

গ্রামীণ ব্যাঙ্কের লোকজন এসে শরিফাদের বাসায় আসন গেড়ে বসেছিল। লোনের টাকা না নিয়ে তারা ফিরবেন না। এই হলো হবিবর চাচার ভাষ্য। তিনি আরো জানালেন, মমিন গ্রামের ৩ জন পুরুষ ঢাকায় পালিয়েছে, ঋণের টাকা শোধ করতে ব্যার্থ হয়ে। তবে মজার ব্যাপার হলো, ঢাকায় পালিয়েও তাদের উদ্ধার হয়নি।

গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কর্মীরা ঠিকই তাদের খোঁজ বের করেছে। এক্ষেত্রে তাদের সহায় হয়েছে মোবাইল ফোন। (আমি বললাম, গ্রামের মানুষকে প্রকৃত অর্থেই তথ্য প্রযুক্তির আওতায় আনা গেছে!) তো, ঢাকা থেকে এখন তাদেরকে সপ্তাহান্তে কিস্তি শোধ করতে হচ্ছে। এই কিস্তি সপ্তাপ্রতি ২০০ টাকার মতো। হবিবর চাচা বললেন, মুই এইসব দেখিয়া আর গ্রামী বাঙ্কর দিক ঘুরিয়াও তাকাং না বাহে।

আমার দাদার গ্রামে যা দেখলাম, আনু মুহাম্মাদ তার প্রবন্ধটাতে ক্ষুদ্র ঋণের এসব নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কথাই বলেছিলেন। ঋণের টাকায় যৌতুক, ঋণগ্রহিতাদের শহরমুখিতা--এইসব। আমার মনটা ভারী হয়ে গেল। শরিফার বাপকে, কিংবা ঢাকায় পালিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে কী ভারী একটা চাপ নিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠতে হয়। কে জানে, এই ভার তাদের আজীবন বয়ে যেতে হবে কি-না।

কিংবা, এই ভারের কব্জামুক্ত হতে গিয়ে তারা জীবনের হাত থেকেই পালাতে চাইবে কি-না। আজ (২৮ জুন) ইউনূস সাহেবের জন্মদিন। ওনাকে নিয়ে পশ্চিমে অনেক লাফালাফি হচ্ছে। ওনাকে বলা হচ্ছে, 'সেইন্ট ইউনূস'। শব্দটা নিয়ে আমি ভাবছি।

সেইন্ট, সন্ত, ঋষি। শরিফার বাপ ইউনূস সাহেবের জন্মদিনে কী ভাবছেন? ২৮ জুন, রংপুর।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।