আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবি লুবনা চর্যা-এর কিছু কবিতা ও তার প্রকাশিত/পুনর্লিখিত বই "চর্যাচর্যবিনিশ্চয়" হতে ২টি পদ



বাই প্রোডাক্ট-১৪৬ মানুষ নামক অতীন্দ্রীয় একপ্রকার জীবের সাথে দ্যাখা হয় স্বপ্নদর্শনে। উঠে বসি ওহী পাওয়া নবীর মতো। তার আকৃতি কী বিরাট! ম্যামোথ তাড়া করেছিল বহুকাল আগে। সেই অনুভূতি আবার শরীরে জাগে। বিধাতার কাছে আকুতি করি এক্ষুনি যেন আমাকে হরিনজন্ম দ্যায়, যাতে গেরুয়া চামড়ায় বৃস্টিকণার কথা ভুলে গিয়ে একা অন্ধকারে বাইশ হাত করে লাফাতে পারি।

বন্ধু বা স হচর কিন্তু দৃশ্যত যুদ্ধবাজ নয়। তবু তার রয়েছে বুনো জংলী গাছের খাড়া হওয়া কাটা বা নীল তিমির ফসলের মতো রণসজ্জা। তবু এসব বায়বীয় বস্তুর প্রমাণ দিতে পারি না বিজ্ঞান আলয়ে জনসমক্ষে। ফলে একা একা ভাবি, এই মানুষ শেখা সম্পূর্ণ নয়। তাহলে জীবন সংগ্রাম শব্দটা কেন আসবে।

বাই প্রোডাক্ট- ১৪৭ মৃতদের সাথে আমরা থাকি। তাদেরও ঈর্ষা ও শুচিবাই আছে। দূরত্বের অনু ভুতিগুলো অনুভব করি মজা করে। যদি ও হাত মেলালেই মিলন। কিন্তু বিদায়ের আগে সব ঠিকঠাক করে করে দিয়ে যেতে হবে তা বুঝি।

আত্ননির্ভরতা আমাদের দাস বলে অস্থিরতা প্রায় নেই। অনেকক্ষন উদাস থাকার পর টের পাই দিন এবং রাত চলছে। অতএব কিছু কাজ করতে হয়। কিন্তু মৃতদের অভিমান বেশি এবং তারা যৌক্তিক হলেও একরোখা। ফলে শুন্য হয়েও আমাদেরকেই বাস্তববাদী হতে হয়।

বাইপ্রোডাক্ট-১৫৬ হাতুড়ির ঘায়ে বেটে হতে হতে যে লৌহশলাকার মাথা চ্যাপ্টা হয়ে যায়, তার কবরে অন্ধকারবিতাড়ক একটা মোমবাতি জ্বেলে দাড়াতে ইচ্ছা করে। মেঘের ট্রেনে চড়ে পতিত জমিতে লাগিয়ে আসি অনেকগুলো গাছ,বর্ষা পেলে বেঁচে যাবে। তবু ব্যস্ততা হীন উন্মাদনায় সারাক্ষণ ঘুরে ফিরে তারই শোকগীতিকা আলোর সামনে উইপোকার মতো উড়ে। চিরদিনের ব্রাত্য ঝিঝিরাও কোরাস ধরে এই হাহাকারে। কারো কারো ক্ষেত্রে স্মৃতি কেচোর মতো নীরবে মাটিতে হাল চষে চলে।

ফলে ,ঠান্ডা ঢুকবে এই ভয়ে জানালা বন্ধ করার মতো সে ভবিষ্যৎ এটে দ্যায়। ইনস্টলমেন্ট-৯ প্রশাসন তো বহু পিছে থাকে। বহু দুরে দুরে থাকে। মনের মানস জলের মতো প্রতিবিম্বের মালা গেঁথে এগিয়ে যায় সামনে। সমান্তরালভাবে যায় না, ঢেউয়ে ঢেউয়ে যায়।

ক্যাংগারুর লাফের মতোন যায়। বীর দ্রাবিড়ের নাচ বা স্পন্দনের মতো যায়। প্রশাসন তখন অর্ধঘুমে। অর্থাৎ এসব সূত্রের কাছা দড়ির টেলিফোন তার কানে আসে, কিন্তু সে অনুভব করে না। ঠ্যাকাতে যাওয়ার ঝামেলা করবে না বলে প্রায়শই হস্তক্ষেপ করে না।

মাঝে মাঝে করে খুব ভয়ংকরভাবে। তখন যুদ্ধ বাধে, তখন অবরোধ হয়। তখন ছেলেমানুষ চাঁদকে গর্ভবতী করে মেরে ফেলা হয় । এবং H2S এর মতো দুর্গন্ধে ভরে যায় উপত্যকার অন্ধকারে মেশা নিস্প্রভ আকাশ। আমরা কিন্চিৎ বিরক্ত হয়ে উঠি।

তারপর সচেতন হই সর্বইন্দ্রিয়ে। এটা আমাদের দিককার ভয়ংকর পর্যায়। উল্টোমুখী কাঠের গাধাকে দড়ি দিয়ে টানা প্রশাসন ব্যবস্থার সাথে পাগল সাথে পাগল ও পচাদের ভাবনা ও কাজের সংকর পদার্থের গোল বাধে। তাই অনেক রণ গেম খেলতে হয়, অনেক বাকশক্তি ব্যবহার বা বৃথা ব্যবহার করতে হয়। তাত, করতে তো হয়ই! (লুবনা চযার উপরোক্ত কবিতাগুলো তারই সম্পাদিত ছোটকাগজ- "সহজ" এ প্রকাশিত) (লুবনা চর্যা’র প্রকাশিত ২য় বই জিওগ্রাফি, ইন অ্যা জ্যু...এর প্রথম কবিতা) ও লেজ কাটা ঘুড়ি,যতো খুশি উড়ি কোথায় যে যাই! মাঠভরা লাটিম ঘোরে তোর চোখের জঙ্গলে, আমি চেনাজানা চাঁদ আর কুয়াশর ঘর এখন ইচ্ছে করে ভুলে যাই।

যে ঘর অন্ধকার কিন্তু খুব ধোয়া ওঠে, নদী থেকে ফেরার পথে একটু থামি সন্ধ্যার ডানা ভাজ করে। যে তুই নিষ্ঠুরতায় হার মানাস কোনো শিকারী পাখিকে, অকারণে আমি ফিরে যাই তারই নিষ্পৃহ অনমনীয়তার দিকে। চিরহরিৎ বনে কল্পনার পাতা কুড়াতেও হঠাৎ কান্ত লাগে। ইমেজের সরাসরি প্রাপ্তি ছাড়া সবকিছু স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে। কিংবা যখন মৃত ও জীবন্তের পরিবেশে সমন্বয় করে ফেলি আর নিজেকে নিমজ্জিত হতে দেখি নাবিকের ছুড়ে দেওয়া ভোতা অ্যান্টিকাটারের মতো নীল অতলে, তখনই জিজ্ঞাসার প্রাণবন্ততা হারাই।

বহু বহু দূর ছুটে মেঘের দলটা বুঝতে পারে, বাতাসের তারনা ধারণাটাই আদতে উড়–ক্কু.... তাই রৌদ্রচিলের সাথে বেদনাকথা উজাড় করতে যাই না আর গহীন আকাশে। ধীরে ধীরে বিদেহী জীবানুরা আমাকে গ্রাস করছে। তাদের প্রিয়পাত্র হই বৈপরীত্যে, উদ্ভট প্রেম-প্রকরনে। আভপীড়নের কারণেই বেশিদিন যুদ্ধপ্রবন মৎস গোত্রে অবস্থান করা হলো না। যদিও গীতা এ সম্পর্কে ভার লাঘব করতে পারে অনেকখানি, তবু ওসব ধুনফুন চাতুর্যে আমার পোষায় না।

সমুদ্র আর আকাশের রং যেখানে একই ব্রাশ দিয়ে ঘষা হয়, আমার ইচ্ছামৃত্যু সে দেয়ালের অভ্যন্তরেই নিরাপত্তা পায়। আমি পারফর্ম করি পারলৌকিক আবেগগুচ্ছের। শুরু ছাড়া শেষ করা যায় না বলে মানুষেরা প্রত্যেকেই ুদে ঐতিহাসিক। তারা সৌন্দর্যসচেতন করার জন্য আমার হাতে একটা আয়না এনে দিয়েছে, বিনিময়ে প্রত্যাশা করেছে কিছু মানবিক পারিশ্রমিক। হয়তো এবার জন্মদিনেও আত্নহত্যা করা হবে না ! চূড়ায় চূড়ায় ফুটে থাকা কদম, কৃষ্ণচূড়া, জারুল বা রাধাচড়া আমাকে যে উচ্চতর অনিবার্যতার প্রজ্ঞা দিয়েছে- তা পরাজিত হউক আমি চাই।

চলমানতা নৈরাশ্যের ঢেউ দ্যায় বলে আমি নেতিবাচক ভাবনা ভাবি। আমি নেতিবাচক ভাবনা ভাবি বলেই বিয়োগান্তক বৃষ্টির ছড়াছড়ি! অগ্নিকান্ডে জাহাজ ডুবে গেলে বরপের স্তুপে কালো ছাতার মতো অসংখ্য গম্ভীর ভ্যাম্পায়ার চলে আসে। তারা প্রার্থনা করে তোর আত্না এবং দেহ। অথচ গভীর অস্বীকৃতি জানালে তুই হতে পারবি তো বিপন্নতামুক্ত। সূর্যঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলাম, রাত ১২ টায় সে আমাকে জন্মদিনের মিউজিক শোনায়।

মৃত্যু-তন্ময়তা ভেঙে গেলে শরবনে ছুটি কিছু বাশি তৈরির জন্য। বন্ধুরা এলে সবাইকে একটা করে দেবো। একা থাকার পরিবর্তে সম্মিলিতে মিলে থাকার প্রতীক হচ্ছে বাশি। একাকী নিরবতায় কার সাথে বলো আমি ফাইট করি ? সংস্কার করার আগে বিতর্কের হাওয়াই সেতু পর্যবেণ করা চাই। তাই সেতুতে ওঠার জন্যে স্পোর্টিং কারের ভঙ্গিতে হালকা ও শলাকার আট পা বাড়াই।

লুবনা চর্যার প্রথম বই চর্যাচর্যবিনিশ্চয় -এর বুক কভার চর্যাচর্যবিনিশ্চয় লুবনা চর্যার প্রথম বই পুনর্লিখন : লুবনা চর্যা প্রকাশ : জানুয়ারী ২০০৭ পদ - ২ কাছিমের দুধে, কী ভয়ঙ্কর, উপচে পড়ে ভাঁড়! শোন, তোমার দেহবৃক্ষের তেতুঁলই যোগ্য খাবার কুমীরটার। ঘরের মধ্যে চাইলেই আঙ্গিনা আছে, অবধূতি রে! তথা গভীর মৌন রাতে কানের ঝুমকো নিয়ে গেলো এক চোরে। বুড়ো শ্বশুর ঘুমায়, কিন্তু বউয়ের যে ঘুম নেই। সহজে চোরটা পেয়েছে যা, চোরেই নিক তা, তাতে বউয়ের কী! দিনের আলোতে যে কূলবধূ সামান্য কাকের ভয়ে কাঁপে, রাতে সে ই একাকী অভয়চিত্তে হাঁটে কামরূপের জন্য! এমন কাব্য কুক্কুরী পা গাইলো-দেখি, কোটিতে একজন বুঝলো এই শূন্য। (কুক্কুরী পা) পদ-৩ একই শুঁড়িনি জোছনা আর রোদ্দুরের ঘরেতে প্রবেশ করে প্রজাপতির দুই ডানার মতোন।

প্রজাপতির সরু দেহের মতোই অতি চিকণ ছালে সে মদটা ধরে রাখে। সহজে স্থির হতে আগে চেস্টা করো, পরে মদ চোলাই কইরো। তাতে অমর-অজর হবে,হবে দৃঢ়স্কন্ধ। আকর্ষণ কিন্তু দশমী দুয়ারে- সবার চোখ খোঁজে গোপন চিন্হ আঁকা যেখানে। খদ্দেররা সেখানে স্ব-ইচ্ছাতে ই ঢোকে।

কিন্তু একবার ঢুকলে কারো বেরোবার আর থাকেনা খবর। নীলপদ্মের চৌষট্টি ছোট ছোট পাঁপড়ির মতো চৌষট্টিটা পানপাত্র। আর প্রত্যেকটাতে টলমল করছে অনিন্দ্য অমৃত। সেই যে একটা পানপাত্র, ভীষণ সুক্ষ্ম হে তার নলটা! পা বিরু বলে , সাবধানে ঢেলে ঢেলে জোটো। (বিরুবা পা) কবি লুবনা চর্যা (লুবনা চর্যার নিবাস খুলনায়, প্রকাশিত গ্রন্থ দুটি, প্রথমটি চর্যাপদের পুনর্লিখন আর দ্বিতীয়টি তার নিজস্ব কাব্যগ্রন্থ "জিওগ্রাফী ইন আ জ্যু"।

তার লেখা কিছু কাব্যনাটক আছে অপ্রকাশিত। তিনি একজন কবি ও চিত্রশিল্পী। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।