আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খন্ড-বিখন্ড হয়েই জমুক অনুপ কেন্দ্রীক যত ভাবনা, স্মৃতি-অনুভূতি



অনুপ মানে আমার প্রিয় বন্ধু মার্শেল অনুপ গুদার অকাল প্রয়ানের বয়স আজ এক বছর অতিক্রম করলেও মাঝে মাঝেই কেন যেন মনে হয় ও আজও আছে, আগেরই মত। হয়ত একটু পরই পিছন থেকে এসে কাঁধ চাপড়ে বলবে 'কি খবর দোস্ত..?' অবশ্য একটু পরই সম্বিত ফিরে পাই। ফিরতে হয় বাস্তবতায়। নাহ, ও যে আর কখনোই আসবে না। অথচ তখনও মনে প্রশ্নের দোলাচল "আসলেই কি আসবে না..?" এত দিনে কত কি বদলেছে।

কত আগাছা আর বুনো ঘাস-ফুলে ঢাকা পড়েছে অনুপের কবর। শুনলাম ওর প্রিয়তমা বউ 'বিনীতা'র আবার বিয়ে ঠিক হয়েছে; প্রবাসী এক পাত্রের সাথে। শুনে একটু হালকা লেগেছিল। অনুপটা যেখানেই থাক সে'ও নিশ্চয়ই জানে এ খবর। আর এ খবরে তারও তো খুশিই হওয়ার কথা।

নাকি অতৃপ্ত আত্মারাও ঈর্ষাকাতরতায় ভোগে..? জানিনা... খুব অল্পতেই মানুষকে আপন করে নেয়ার সহজাত বৈশিষ্ট নিয়ে যে সব মানুষ জন্মায়, অনুপ ছিল তাদেরই দলে। অগণিত বন্ধু ছিল তার। আর তারা ছিল সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর। কেউ কোটিপতি আবার কেউ রিক্সাচালক। আর এই বন্ধুটার সাথে আমার এত্ত বেশী স্মৃতি যা আমাদের দু'জনকেই যারা চেনে, তারাই শুধু জানে।

গতকাল 'মানষ' মানে অনুপের চাচাতো ভাই-বন্ধু ওর কত গুলো পুরনো (২০০৫ সালের) ছবি ফেসবুকে আপলোড করেছিল। আর ঐ ছবি গুলো দেখে অতীতের কোন গলির বাঁকে যে পৌছে গিয়েছিলাম, তা কি করে বোঝাই। ওকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কিছু লেখার মত মানুষিক অবস্থায় আমি এখনো নাই। তাই ভাবছি, না হয় এমন খন্ড-বিখন্ড হয়েই জমুক অনুপ কেন্দ্রীক আমার যত ভাবনা, স্মৃতি-অনুভূতি। অনুপের দুটি ছবি এবং ওকে নিয়ে ইতিপূর্বে সৃষ্ট দুটো লেখা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।

প্রথম লেখাটি ওর প্রথম মৃত্যুবার্ষীকির দিন লেখা আর পরেরটি তার ও আগের। আমার সাম্প্রতিক কবিতা সিরিজের প্রথম দিকের। ওহ, আরেকটি কথা- ছবি গুলোর জন্য সকল ধন্যবাদ মানষের প্রাপ‌্য। ধুর শালাহ, তুই ঠিক করিসনি... ঠিক এক বছর আগে শেষ চৈত্রের এই দিনেই বিদায় নিয়েছিল অনুপ... কত অভিমানি বিদায় এই প্রাণের বন্ধুটার...কত এলো মেলো বিদায়... বুঝিনি সে সবাইকে আর কতটা অবাক করতে চেয়েছিল আজ শূণ্য কোলে কেমন আছে তার মমতাময়ী মা, গম্ভীর সরল বাবা বা ছোট ভাইটার জ্বালাতনের অভাবে কেমন আছে দিদি আর তার প্রিয় আশিশ পাগলা (বড় ভাইকে এমনই সম্বোধনে ডাকত সে) জানা হয়নি। খোঁজ নেয়া হয়নি ওর পিচ্চি লাজুক বউটার।

যার পাথর পরিণতি দেখতে হয়েছে সেই এক বছর আগেই। তবে সেই চুতমারানি মোহিনীর মন আজও বদলায় নি.. সিলিংয়ের সাথে ঝুলানো নিথর দেহটাকে কোলে জাপটে বের করতে করতেই মানষ বুঝে গিয়েছিল ওর না থাকার কথা...কিন্তু আসলেই কি সে এখনো নেই। মানষটা কি আগের মতই আছে, নাকি ওর গিটারের ফ্রেডে ধূলো জমে গেছে বা ছিঁড়ে গেছে জংধরা তার। তার সুর করা পাঁচ ডজন গান আজ তার মতই মৃত। গত এক বছরে তেমন কিছুই লেখা হয়নি অনুপকে নিয়ে হয়ত ফুসরত মেলেনি বা ইচ্ছা হয়নি কখনো।

আসলে কেন যে লেখা হয়নি তা নিয়ে লেখতে বসলেও বহুদূর গড়াবে। বরিশালের সাগরদী খ্রিষ্টান গোরস্থানে তার কবরটিতে এতদিনে জংলার চাষবাস আর কেঁচোর রাজত্ব। আত্মহত্যাকারীদের আত্মার নাকি মুক্তি নেই। তাই অনুপের সে অতৃপ্ত আত্মাটাও খুব দূরে নেই ভেবে ভালই লাগে। ধুর শালাহ, কি যে লিখলাম, কি যে লিখব, কি যে লিখতে চাচ্ছিলাম... কিছুই হচ্ছে না...হবে না হয়ত... শুধু বলতে পারি – ‘তুই ঠিক করিসনি, আমাকে একা ফেলে পালানো তোর ঠিক হয়নি... দ্বান্দিক ভাবনা বিষয়ক আজাইরা প‌্যাঁচাল-৪৩ -কবে...? -হবে, বাছা হবে... -ধুর বাল, আর ভালা লাগেনা.. -এত জলদি অধৈর্য হইলা মামা.. জানো না সবুরে মেওয়া ফলে -চুপ কর বাঞ্চোত।

আতলামি বাদ দে... -হা..হা..হা.. -তুমি আসলেই অস্থির আছো -হবে হয়ত... -যাক..মাথা ঠান্ডা কর... -আচ্ছা করলাম। -তবে এখনো অমন গজরাচ্ছো কেন..? -তোরে আমার খাইয়া ফালাইতে ইচ্ছা হইতাছে শালা.. -হা..হা..হা.. আচ্ছা আমি তাইলে ভাগি, যদি বাঁইচা থাকি পড়ে একদিন হইবো দোস্ত... অনুপের সাথে আমার শেষ কথা গুলো এমনই ছিল। এরপর আমরা দুজন দু'দিকে; ও কথা রাখেনি...আবার রেখেছে পরে আর কখনো হয়নি কারন ও'তো ছিলই না। শেষবার কফিনের মাঝে যখন ওর মুখটা দেখি... তখনও ঠোঁটের কোনে সেই হাসি যেন বলছে... বন্ধু, এখন পারিনি তাতে কি... তুইও আয়, ফের হবে দু জনে মিলে মৌজ মেরে চুটিয়ে জল গিলব আর চিৎকার করে বলব- ঈশ্বর... আমায় অতৃপ্ত কর আমাদের অসুখ দাও কারন তুমি... যা চাই তার উল্টোটাই তো দাও। ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।