পথ বাঁধতে চেয়েছিল বন্ধনহীন গ্রন্থি...
দিনে দিনে মূল্য বিনে,
সে যে আমায় নিল কিনে...
এ মনে যতন করে বিফল প্রেমের বীজ বুনেছে হায়
বিনা কারনে...
হায়রে...এরকম গান যদি কেউ আমার জন্য কখনও গাইত...ভেবেই খালি আফসুস খাই...আমরা মোটামুটি কাছাকাছি বয়েসের চার খালাতো বোন, আররা সবাইই গান পাগলা, আর আমাদের চার জনেরই মনের গোপন একটা ইচ্ছা যে আমাদের বর আমাদের গান শুনাবে...একজন তো বলেই বসেছে যে যত ঝগড়াই হোক না কেন শ্রীকান্তের মত এমন মসৃন গলায় যদি এক লাইন গানও তার বর তার জন্য গায় তাহলে সে সব ভুলে যাবে...আমার এক বোন ইংলিশ মিডিয়ামের, ও আমাদের বাকি ৩জনের মত শ্রীকান্ত প্রেমে পাগল না হলেও ওর কাছে জোশুয়া র্যাডিন বা রিচার্ড মার্ক্স ধরনের মানুষও একই রকম আবেদনময়। আমি নিজেও বহুদিন গান শিখেছি। বাফা আমার মত গাধা পিটিয়ে ঘোড়া বানাতে না পারলেও আমার গান শোনার কানটাকে তৈরী করে দিয়েছে, এখন আম্মু যখন টিভিতে বিবিধ গানের অনুষ্ঠান দেখে তখন অন্য রুমে যাবার মাঝপথে থেমে বিজ্ঞের মত এর ওর তাল বা লয়ের ভুল ধরিয়ে দিতে বেশ লাগে!...আমার অনেক ভাগ্য যে টিভি ওয়েব ক্যাম না, তা হলে যাদেরকে আমি এভাবে তুলোধনা করেছি তারা দাঁত খিচিয়ে আমাকে রাস্তা চিনিয়ে দিত...মাঝে মাঝে যখন নিজের মনে গুনগুনিয়ে উঠি তখন অনেক সময় নিজের বেসুরো গলার আওয়াজে চমকানো মনটাকে প্রবোধ দেই এই বলে যে অনার্সটা খালি শেষ হোক, আবার আমি বাফাতে ভর্তি হয়ে গান শিখব...
আমি আর আমার বোন শিখতাম রবিদাদুর গান মেজর হিসেবে আর উচ্চাংগসঙ্গীত মাইনর হিসেবে। বুড়ো দাদুতো মাশাল্লাহ সব অনুভূতি নিয়ে গান লিখে ফাটিয়ে দিয়েছে! কিন্তু আমাকে টানতো উচ্চাংগসঙ্গীত...বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন রাগ আমার মনে যে সুরের মায়াজাল তৈরী করত তা এখনও কাটেনি...সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল বিশাল বিশাল বারো চোদ্দ ষোল মাত্রার তানগুলিকে কোনও মানুষের তৈরী মনে হতনা, কেমন যেন অলৌকিক লাগত...সবচেয়ে মজার কথা হল যে আমি তিন বছর বাফাতে গান শিখেছি এই তিনবছরে খুব কম দিনই সমস্বরে গান গাওয়া শেষ হবার পরে যখন একে একে গান ধরা হয় তখন আমাকে দিয়ে কেউ গাওয়াতে পেরেছে...যখনি আমাকে বলা হত যে এবার তুমি গাও, আমি বলতাম, 'আমার গলা ভাঙ্গা।' আমার নাম হয়ে গিয়েছিল জাপান, কারন ক্রমাগত ভূমিকম্পে আমার গলা ঠিক হতেনা হতেই আবার ভেঙ্গে যেত। খুব রাগ হত তখন। কিন্তু তাও সবসময় খুব লাফিয়ে বেড়ানো আমি যাকে আবৃত্তি বা নাচের স্কুলে না বলতেই ঝাপিয়ে পড়ত, গান গাবার কথা আসলে মিইয়ে যেত ন্যাতানো মুড়ির মত। গান আমার স্বত্ত্বা, আমি শুধু আমার জন্যেই গাই, সেখানে রুমভরা মানুষের সামনে গান গাইতে গিয়ে কোনও ভুল করে ফেললে কেউ যদি আমাকে কিছু বলে তাহলে সেই দুঃখে বিবাগী হতে চাইনা দেখেই কখনই ম্যাডামের হাজার অনুরোধেও আমি মুখ খুলিনি... যায় যাক প্রাণ, আমার সম্মান আমি খোয়াতে পারিনা...
[বাফার কথা মনে করে মনটা ভীষণ বিলা হয়ে গেল...তখন পড়তাম ক্লাস নাইনে, জেবনডা কত্ত রঙ্গীন ছেল...এত্তো তাড়াতাড়ি বুড়া হয়ে গেলাম বিশ্বাসই হয়না...মন খারাপ ...
আমি জানি আলো আসবেই, আমি সেদিনের অপেক্ষাতেই আছি {আলোকে আনতে আমিইতো এয়ারপোর্টে যাব...}]
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।