আদর্শটাকে আপাতত তালাবন্ধ করে রেখেছি
পেঁয়াজ কাটার পরপরই বুঝে গেলাম- আজকে হবে।
বাসায় বাসামেট নাই। পুরা বাসায় একা। এই অবস্থায় সাধারণত কখনও রান্নাবান্না করি না, রেস্টুরেন্টেই খেয়ে নিই। আজকে ভাবলাম- একটা ট্রাই করি।
রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখি চাল নেই। টিশার্টটা কাঁধে ফেলে নিচে গিয়ে পাঁচ কেজি চাল কিনে আনলাম।
বাসায় ফেরার পর মনে হলো- আগামী কয়েকটা দিনও তো একাই থাকতে হবে। খাবো তো সেই রেস্টুরেন্টেই। পাঁচ কেজি চাল দিয়ে একা আমি কী করবো?
মহাধুমধাম করে রান্না চড়াতে বসলাম।
চাল ধুলাম, ডাল ধুলাম। এদিক-ওদিক উঁকিঝুকি মেরে দেখি এক কোণায় লাল টুকটুকে টমেটো হাসছে। বেটিকে কাটলাম। আলু তো আলু, ওইটা এইখানে ক্যাল আলু - ওইটাকেও কাটলাম। কাচামরিচ কাটলাম।
বাকি থাকলো পেঁয়াজ।
মোটামুটি আধাঘণ্টা কসরত করে দুটো পেঁয়াজ কাটতে পারলাম। আর তখনই মনে পড়লো- হবে, আমাকে দিয়ে আজকের রান্নাটা হবে। এর মধ্যেই পেঁয়াজের শোকে কম করে হলেও ছয়বার কাঁদলাম। বেচারা ইন্ডিয়া থেকে এসেছিলো...
একটু আগে যে মরিচ কেটেছিলাম, সেটার কথা মনেই ছিলো না- হাত দিয়ে চোখের পানি মুছলাম, ফলে যা হওয়ার তাই হলো, ছিনতাইকারীর কবলে না পড়েও চোখ দিয়ে মরিচের ঝাল খেতে হলো...
সবকিছু একসাথে মিশিয়ে যখন চুলায় বসাতে গেলাম, তখনি আবিষ্কৃত হলো- তৈল নাই।
দুনিয়ায় কত মানুষ কতোজনকে কতোভাবে তেল দিচ্ছে, আর বাসায় আজকে এমন কেউ নাই যে আমারে একটু তেল দিতে পারে!
অগত্যা আবার টিশার্ট কান্ধে ফেলে ছয় তলা থেকে নামা...
যাক, এইবার রান্না শুরু হলো। মোটামুটি আধাঘণ্টা সময় নিয়ে জাতীয় সম্পদ গ্যাস খরচের পর হাড়ি থেকে যে বস্তুটি নামলো, সেটি দেখে বাঙালী জাতির গর্ব মামা হালিমের কথা মনে পড়লো...
ছবি তুলে রাখতে চাইছিলাম, কিন্তু মনে হলো দেশের মানুষ এখন টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজে। তাদের হাসি দেখলে পিত্ত জ্বলতে পারে...
আর ঠিক তক্ষুণি মনে হলো কবির সেই অবিস্মরণীয় লাইনটি- শত হোক তবু ভাই পরেরও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাচা ঘর খাসা...
আমি গুণগুন করতে লাগলাম- শত হোক তবু বউ নিজেরও বাসা, তোমার হাতের রান্না নেই, এটাই বড় বাঁচা...
ল্যাপটপে মডেম লাগিয়ে লগইন করে সচলের লেখা পড়তে পড়তে যেই লোকমাটা মুখে দিয়েছি, তখনই মনে হলো- বাজারে লবণের দাম কমেছে। কিছু স্টক করে রাখা দরকার।
টিশার্ট আবার কান্ধে পড়লো।
ছয় তলা বেয়ে আবার নামলাম, লবণ কিনলাম, উঠলাম। পাতে লবণ নিলাম। সচলের লেখা পড়তে পড়তে যে জিনিসটা খেলাম, ছবি তুলে রাখা হলে আপনারা সেটাকে বলতেন- মামা হালিম, ছবি না দেখে রন্ধনপ্রণালী শুনে আমি নিশ্চিত, আপনারা এটার নাম দিয়েছেন- খিঁচুড়ি। আমি বলি কি- এটা হচ্ছে সবজি-ভাতের দোপেঁয়াজা।
এতো কষ্ট করলাম- নতুন খাবার উদ্ভাবনের এই স্বীকৃতিটুকু নিশ্চয়ই আপনাদের কাছ থেকে পাবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।