আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রঙ মাখা অতীত

i want to live simple and die simple

১। পড়ালেখার একেবারে শুরুর কথা মনে পরে না । খালি একটা ছবি মাথায় আসে ( সত্যি মিথ্যা ধরতে পারি না ) যে - বড় ভাই কে গ্রামের বাড়িতে একটু দুরে একটা স্কুলে পরতে দেয়া হয়েছে এবং আমি মাঝে মাঝে গিয়ে স্কুলের আশে পাশে ঘুড় ঘুড় করতাম । ২। এরপর আমরা ঢাকা চলে আসি ।

প্রথমে নাকি আমরা উত্তরমুসুন্দিতে (পুরান ঢাকা ) কোন এক বাসায় ছিলাম । ওই এলাকাতে নাকি তখন খুব বানরের উৎপাত ছিলো তখন । দুঃখের বিষয় উত্তরমুসুন্দিতে থাকাকালিন কোন স্মৃতি ই আমার মনে নাই। স্মৃতি মাঝে মাঝে খুব রহস্য করে । ৩।

প্রথম স্কুল ছিলো বাসার খুব কাছেই । স্কুলে দিয়ে এসে গার্জিয়ান বাসায় আসতে না আসতেই আমি সুযোগমত বাসায় ফিরে আসতাম । আবার ধরে বেন্ধে কোক , চিপস আর পোলার আইসক্রিমের ঘুষ দিয়ে স্কুলে দিয়ে আসা হতো । ৪। পড়াশোনার গোড়ার দিকের কথা ।

প্লে গ্রুপ আর নার্সারীর গন্ডি পেড়িয়ে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হলাম নতুন এক স্কুলে। কিছু পরিমান নতুন বই -খাতা কেনা হল । প্রথম দুই/এক দিন নতুন টিচার আর ক্লাসমেট দেখতে দেখতেই কেটে গেলো । এর পর একদিন এলো সিরিয়াস পড়াশোনার ক্লাস । ম্যাডাম আমাদের যে ক্লাস ওয়ার্ক করতে দিলো তা ছিলো আমার কাছে বেশ সোজা ।

দ্রুত শেষ করে হাত তুললাম । আর আমার পাশের জন তখন কোনমতে দ্বিতীয় লাইন লিখছে । এভাবে যে কাজ ই দিচ্ছে আমি ঝটপট করে দিচ্ছি । আমার পাশের ক্লাসমেট এরকম সুপার ডুপার পারফর্মেন্স দেইখা বার বার চোখ গোল গোল করে তাকাচ্ছে ; ম্যাডাম কিছুটা খুশি , কিছুটা বিস্মিত । আমি ও খুব ভাব এ আছি ।

এর মাঝে বুকলিস্ট দেয়া হলো । বুকলিস্ট পেয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ । আমার অগ্রিম কেনা কোন বই এর সাথেই মিলছে না । বাসায় আইসা তো উল্টা ঝাড়ি নিলাম - কি বই কিনা দিসো ? এখন নতুন কইরা আবার কিনা লাগবে ! এদিকে আর্থিক ক্ষতির বেপারটা তো আছেই । আমাদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্তের পক্ষে এক সেট বই আবার কেনা কষ্টসাধ্য বিলাসিতা ।

পরের দিন একজন গার্জিয়ান (সম্ভবত খালা ছিলো ) ব্যপারটা কি দেখতে স্কুলে গেলো । কথায় কথায় ধরা পরলো ভুলটা । প্রথম দিন ভুল করে আমি ক্লাস ওয়ানের পরিবর্তে নার্সারী এর ক্লাসে ঢুকে গিয়েছিলাম এবং এরপর থেকে রোজ ওখানেই ক্লাস করছিলাম ! যাই হোক কয়েকদিন ছাগলের রাজ্যে বাছুর রাজা হয়ে বেশ ছিলাম। ৫। খুব ছোটবেলায় টিফিন কেনার টাকার বালাই ছিল না ।

খালি টিফিন বক্স ব্যাগে নিয়ে বেরোতাম সকাল বেলায়। স্কুলে যাবার পথে দোকান থেকে বাটারবন কিনে তিন টুকরা করে কেটে টিফিন বক্সে ভরে দিয়ে দেয়া হতো । কখনো কখনো এর পরিবর্তে জুটত কাপ-কেক । বেশ মজা লাগতো । কাপ কেকের মাথায় একটা মোরব্বা লাগানো থাকতো ।

পুরো কেকটা খাবার পর , মোরব্বাটা মুখে নিয়ে চুষে চুষে অনেকক্ষণ ধরে খাওয়া চলতো । মাঝে মাঝে প্লেইন কেক ও পেতাম । আর বিকল্প হিসাবে মাঝে মাঝে – ক্রিম রোল , নুডুলস ( উমম ) , মিষ্টি টোস্ট , বাটারবন বা জেলি মাখান রুটি থাকত । টিফিন বক্সের সাথে অনুষঙ্গ থাকতো পানির ফ্লাস্ক । স্ট্র দিয়ে চুক চুক করে পানি খেতে হত ।

এটা দিয়ে মাঝে মাঝে ফ্লাস্ক-ফাইট (ফ্লাস্ক লড়াই ও করা যেত ) । প্রায়শঃই স্কুল শেষে তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে ফ্লাস্ক ভুলে রেখে আসতাম ( কখনো টিফিন বক্স) । পরের দিন গিয়ে ফেরত পেতাম কখনো (আয়া বা দারোয়ান রেখে দিত ) । আর যখন পেতাম না – কপালে জুটত বকুনি । ছোটবেলায় বাবা বিদেশ থেকে এলে নানা ধরনের ইরেজার , পেন্সিল , শারপনার নিয়ে আসত ।

পর্যাপ্তই আনত । কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই সব খুইয়ে ফেলতাম । ফলে চলতো মায়ের টেস্ট গজগজানি । এ সময় বাবার বিদেশ থেকে আনা এক ধরনের মেটালিক শার্পনার খুব বাজার পেয়েছিল । এর কাটিং প্লেট টা তে জিভ ছোঁয়ালে একটা ঝাঁঝালো অনুভুতি হতো ।

খুব ই মজা লাগতো এটা। ছোট ক্লাসে আমাদের পেন্সিল দিয়ে লিখতে হত । কলম ছিল বড়দের ব্যাপার । তাই বিদেশ থেকে বাবা ভালো কলমের সেট আনলে তার কোনটা কে দখল করবে তা নিয়ে সূক্ষ্ম কূটকৌশল শুরু হয়ে যেত ভাই –বোনের মধ্যে। তাই প্রথম যেদিন ফাউন্টেন পেন ( ঝরণা কলম ! ) পেলাম, আকাশ যেন হাতের মুঠোয় এলো ।

যদিও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কালি ছড়িয়ে অনেক কেলেঙ্কারি ঘটেছিল ( সে কথা না-ই বলি ) । আরও পরে “ পার্কার” ব্রান্ডের ঝরণা কলম পাবার পর আমি যেন আকাশেই উড়ে গেলাম । ছোটবেলায় বিদেশ থেকে আনা জিনিসের তালিকায় সস্তা দরের ক্যাসিও ঘড়ি ও ছিল । দুই ভাই পেতাম দুই টা ঘড়ি আর বোন পেত – লেডিস ঘড়ি । বলাই বাহুল্য যে – সবার আগে যার ঘড়িটি নষ্ট হতো সেটা হল আমার ।

ঘড়ির কালো লেখাগুলো কোথা থেকে কিভাবে আসে এটা জানার খুব ইচ্ছা ছিল । আর ভাবতাম ঘড়ি খুলে আবার ঠিক আগের মত লাগিয়ে ফেলতে পারব । তাই ঘড়ি খুলতাম । কিন্তু সবসময় আগের মতো লাগেতে না পারায় , অনেক ঘড়িকেই আমার হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে । সোলার প্যানেল সহ এবং একই সাথে ক্যালকুলেটর ওয়ালা একটা ঘড়ির সখ ছিল অনেক ( ওগুলো একটু দামি ছিল ) ।

কিন্তু বিভিন্ন ঘড়ির উপর আমার বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফল দেখে আব্বা হয়তো সেটা কিনে দেবার দুর্বুদ্ধি করেন নাই । ( এখন চাইলেই এরকম একটা ঘড়ি কিনতেই পারি । অথচ সে শখ ও নাই ! আমি যে ঘড়ি ই পরি না এখন ! ) আমার গবেষণার তালিকায় বাবার আনা খেলনাগুলো ও থাকতো প্রথমদিকেই । তাই গাড়ির ভেতরে থাকা মোটরের আশায় প্রথমে গাড়িটা লণ্ডভণ্ড করতাম ( মোটরটা পাওয়া খুব জরুরি । কারন ওটা দিয়ে ফ্যান বানিয়ে ঘুরানো যাবে )।

মোটর দিয়ে ফ্যান বানিয়ে ঘোরাতাম । এই মজা শেষ হলে মোটরটার পেট ফাটাতাম – ওর ভিতরে থাকা কালো সোনা ( চুম্বক) এর আশায় । ছোটবেলার এক মহা বিস্ময় ছিল এই চুম্বক। কেন এটা লোহাতে লেগে থাকে ? কী কী জিনিস এ চুম্বকে লাগে তা পরীক্ষা করতে থাকতাম । লোহতে পেঁচিয়ে বিদ্যুৎ চালালে চুম্বক হবে কিনা বা রেললাইনের পাতের উপর একটা পয়সা ফেলে রাখলে এবং তার উপর দিয়ে ট্রেন চলে গেলে পয়সাটা চুম্বক হয়ে যাবে কিনা তা নিয়ে জোর তর্ক চলতো ।

তাপে চুম্বকত্বের কি দশা হয় তা পরীক্ষা করতে গিয়ে দুই একটা মহামূল্যবান চুম্বক নষ্ট করেছি । লোহাকে ঘষে ঘষে চুম্বক করতে চেয়েছি । কখনো লোহার গুঁড়া কাগজের উপরে রেখে নিচে চুম্বক রেখে , চুম্বক সরিয়ে সরিয়ে খেলেছি । এই পর্যায়ে একটি মজার খেলা ছিল দুইটি চুম্বকের দুই সমমেরু একত্র করার ব্যর্থ চেষ্টা ; একটা আরেকটা থেকে যেভাবে মুখ ঘুরিয়ে নিতো তা দেখতে মজা লাগতো । শক্তিশালি চুম্বক পেলে তা হাতের মুঠোতে লুকিয়ে হাতের উল্টা পীঠে পয়সা বা অন্য কোন ছোট লোহা জাতীয় জিনিষ আটকে রাখার জাদু দেখানো যেত ।

এ সময় কুড়িয়ে পাওয়া চুম্বক নিজের দখলে রাখার জন্য ভাইয়ের সাথে লড়াই করেছি । স্কুলের এক ছেলে দুইটা বড় বড় চুম্বক এর বিনিময়ে আমার কষ্টে জমানো একশ টাকা নিয়ে নেয় , ( ওই সময় একশ টাকা আমার কাছে হাজার টাকার চেয়ে বেশি ) ; তবু মনে হয়েছিলো – আমি জিতেছি , ব্যাটা ডাহা লস খাইসে ! ৬। কিছুটা উপরের ক্লাসে ( ঠিক মনে নাই টু বা থ্রি তে হতে পারে ) দুই টাকা পেতাম টিফিনে । এক টাকা চার আনা দিয়ে একটা বাটার বন বা ক্রিম রোল কেনার পর বাকি বারো আনা ( জি বারো আনা । তিনটা চার আনায় বারো আনা হত ।

এখনকার জেনারেশন চার আনাই মনে হয় দেখে নাই ! ) কখনো জমাতাম কখনো তিন প্যাকেট আচার কিনতাম । আমাদের স্কুলের দোকানে মনসুর নামক একটা মিষ্টি পাওয়া যেত ( দাম মনে হয় এক টাকা বা বারো আনা ছিল ) , সেটা তাড়িয়ে তাড়িয়ে খেতে ভালো লাগতো । এ সময়ের আর এক হিট আইটেম ছিল – বম্বে রিং চিপস । চিপসের প্যকেট খুলে হাতে তুলে চিপস খাওয়া হল সাধারন লোকের কাজ । তাই আমরা চিপস খেতাম একটু অন্যভাবে ।

প্রথমে রিং চিপস( চিপস গুলা দেখতে ও রিং/ আঙটির মত ছিল ; মাঝখানে ফাকা ) পাঁচটা পাঁচ আঙ্গুলে পরে নিতাম । এরপর কামড়ে খেতাম । এ সময় বারো আনার ট্রাই-কালারড ( তিনরঙা ) সন্দেশ পাওয়া যেত । সন্দেশটা কিনেই তিন রঙের তিন অংশ আলাদা করে ফেলতাম , এরপর খেতাম । যাদের সাথে বেশি ভাব ছিল তাদের এক অংশ দিতাম খেতে।

আরও পরে ডালের কিমা দেয়া বন রুটি পাওয়া যেত ( বারগার ? ) সঙ্গে একটা মরিচ । স্কুলের দারোয়ানকে ফাকি দিয়ে বা অনুরোধ করে বাইরে যেতে পারলে কখনো খেতে পারতাম – ফুচকা বা চটপটি । তখন আমাদের সাধ-আহ্লাদের পরিধিটা ছিল অল্প অথচ প্রাপ্তিতে পরিতৃপ্তির গভীরতাটা ছিল বেশি । তাই বেড়াতে এসে কোন আত্মিয় যদি খরচ করার জন্য ৫০ / ১০০ টাকা দিত তখন নিজেকে মনে হতো বিল গেটসের বাপ। ( এ টাকাটার একটা বিশেষ অর্থনৈতিক গুরুত্ব ছিল এই জন্য যে , এই টাকাটার উপর গুরুজনের শাসনের ট্যাক্স তেমন পড়তো না ।

যেমন চাই তেমন খরচ করতে পারতাম । এরকম আরেকটা করবিহীন টাকা পেতাম বছর শেষে পুরাতন বই-খাতা সের দরে বিক্রি করে। হিসেব করে প্রত্যেককে প্রত্যেকের টাকা দিয়ে দেয়া হতো । তার থেকে কিছু টাকা মাকে দিতাম । বাকি টাকা সব আমার ! ) আজকে ক্লান্ত হইসি ।

রাত ও হইসে । । পারলে পরে লিখব । পার্ট -২। অথবা এটাই এডিট করবো ।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।