ঠাস, ঠাস, ঠাস। পরপর তিনটি চড় মেরে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেলেন অমিয়বাবু , নিশ্চই সোজা গিয়ে হেডস্যারের ঘরে ঢুকবেন।
ছেলেটা তখনও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। একফোঁটাও কাঁদেনি। কোন প্রতিবাদও করেনি।
নীরবে মার খেয়ে গেল। তাকিয়ে থাকল সারের গন্তব্যস্হলের দিকে। এক্ষুনি হয়ত ডাক পড়বে। হেডস্যার হয়ত আজ খুব মারবেন। পরপর পাঁচদিন পড়া না পারার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
আসলে কমল ছেলেটা খুব সরল। কিন্তু ওর পড়তে ভালো লাগে না। ও কোনদিন বই খুলেছে কিনা সন্দেহ। সাধারন বুদ্ধির জোরে কোনরকমে পরীক্ষায় পাশ করে যায়। তবে ও সবসময় ভাবে বড় ফুটবলার হবে।
বড় বড় ক্লাবে খেলবে। সে তার ভবিষ্যতের কল্পনাকে রঙ্গিন স্বপ্নজালে সাজিয়ে রাখে। কিন্তু কমলরা খুব গরিব। তার বাবা নেই। শুধু সে আর তার মা।
তার মা কোনরকমে সংসারটাকে টেনে নিয়ে যান। এইভাবে কি আর কারোও সপ্ন সত্যি হয়? তবুও সে হাল ছাড়ে না। যখন তখন বাড়ির পাশে ছোট্ট মাঠটিতে একটি কাগজ ও ন্যাকড়ার মোড়ককে বল মনে করে খেলতে থাকে।
একদিন তার স্বপ্ন সত্যি হতে চললো। তাদের স্কুলের নতুন খেলার মাস্টারমশায় গোপালবাবু তাঁকে কাছে ডাকলেন।
তিনি কমলের ফুটবল খেলা দেখেছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন ওর প্রতিভা আছে। ভালোমতন প্রশিক্ষন পেলে উঠে দাড়াবে। তিনি ভাবলেন কমলের মার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কমলকে নিজের কাছে রেখে ট্রেনিং দেবেন।
কমলের মা প্রথমে রাজী না হলেও ছেলের জেদের ফলে শেষপর্যন্ত রাজি হলেন।
গোপালবাবু কমলকে একটা বল ও একজোড়া বুট কিনে দিলেন। ফুটবল খেলার নিয়মকানুন সংক্রান্ত একটা বইও কিনে দিলেন। প্রতিদিন বিকেলে স্কুলের মাঠে পুরোদমে চলতে থাকলো কমলের প্রশিক্ষন।
তারপর কিছুদিন পরের কথা। কমল এখন স্কুলটিমের ক্যাপ্টেন।
খুব ভাল খেলে সে। ইতিমধ্যে অনেক প্রাইজ পেয়েছে। খেলার জন্য বৃত্তি হিসেবে স্কুল থেকে মাসে মাসে কিছু টাকাও দেওয়া হয়। একদিন সে স্কুলের মাঠে প্র্যাকটিস করছে। এমন সময় পাশের বড় রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ দাড়িয়ে পড়লো একটা জিপগাড়ি।
তার আরোহী এক বিখ্যাত ক্লাবের খ্যাতনামা কোচ। কোচ কমলের একটি সুন্দর ব্যাকভলি দেখতে পেয়ে গাড়ি থামালেন। কমল একমনে খেলে যাচ্ছে। কখন যে অন্য একজন তার পাশে এসে দাডিয়েছেন, সে হুশ তার নেই। কোচ কমলকে ডাকতেই কমল খেলা বন্ধ করে এগিয়ে এলো।
কোচ মনে মনে ভাবলেন, তিনি এক রত্ন খুজে পেলেন। একে তার ক্লাবে নিলে ক্লাবের উন্নতি হবে। কমলকে তিনি তার ক্লাবে খেলার প্রস্তাব দিলেন। কমল এক কথাতেই রাজি। সে তো এমন সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো।
কোচ তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে ক্লাবে যোগ দিতে বললেন। কমল মাকে অনেক বুঝিয়ে রাজী করালো। কমল সহরে এলো।
অবশেষে এল কমলের জীবনে সেই বহু প্রতীক্ষিত দিন। আজ তার সামনে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।
আজ তার দল চার্মস গোল্ড কাপের ফাইনালে খেলবে। মূলত তার কাঁধে ভর করেই দল ফাইনালে উঠেছে। তার নাম এখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তার খেলা দেখতে শুধু কয়েক হাজার লোকই নয়, তার মা ও গোপালবাবুও এসেছেন। মা,গোপালবাবু ও কোচকে প্রনাম করে মাঠে নামলো কমল।
খেলা শুরু হল। বিপরীত দলও খুব ভালো। বল নিয়ে এগিয়ে আসছে ও দলের একজন নামকরা খেলোয়াড়। এবার নির্ঘাত গোল। হলও তাই।
এবার কমলের পালা। কমল বল নিয়ে উঠছে। তিনজনকে কাটিয়ে সোজা গোলে দুর্দান্ত একটা শট খেললো। এবং গোল। অপুর্ব এই গোল দেখে দর্শকেরা অনেক্ষন ধরে হাততালি দিলো।
খেলা শেষের কিছুক্ষন আগে পর্যন্ত ফলাফল ড্র ছিল। শেষ বাশী বাজার ঠিক আগের মুহুর্তে কমল এক দুর্ধর্ষ ব্যাকভলিতে জয়সূচক গোলটি করল্। গো-ও-ল !গো-ও-ল! হর্ষধ্বনি ও করতালিতে সারামাঠ মুখরিত। আনন্দ-আবেগে কমল শুয়ে পড়ল মাটিতে। কিছু ধুলা মেখে নিলো নিজের গায়ে।
আজ সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। আজ সে সত্যিই সফল ফুটবলার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।